পদ্মমির #পর্ব_16 #ইলমা_বেহেরোজ

0
1603

#পদ্মমির
#পর্ব_16
#ইলমা_বেহেরোজ

কেউ যেন পদ্মজা কলিজা চিপ মেরে ধরে ওমন করে আর্তনাদ করে উঠল, ‘ও আল্লাহ! কীভাবে হলো?’

‘টিনগুলো পড়ে ছিল। ঠিক করতে গিয়ে অসাবধান -‘

পদ্মজার চোখে অশ্রু দেখে আমিরের কথা থেমে যায়। রোদ উঠলেও যাতে পদ্মজা ছাদে বসে আকাশ দেখতে পারে সেজন্য গতকাল টিনগুলো আনা হয়েছিল ছাদের এক কোণে ছাউনি দিতে।

হাতে যন্ত্রণা হচ্ছে। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ধারালো টিনে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে। গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। তাৎক্ষণিক যুক্তিগত কী করবে ভেবে না পেয়ে এই কাজটা করতে বাধ্য হয়েছিল আমির। প্রাথমিক চিকিৎসা করেও যখন রক্তপাত বন্ধ হলো না, ফজরের আযানের সঙ্গে সঙ্গে ভুবন বেরিয়ে পড়ে ডাক্তার আনার জন্য। আমিরের আঙুল থেকে যত না রক্ত পড়ছে তার থেকে বেশি জল পড়ছে পদ্মজা চোখ থেকে। হাতের পীড়ায় মাথা ধরে যায় আমিরের। নতুন টিন হওয়াতে বেশি কেটে গেছে।

আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে শুকতারাতে ডাক্তার পৌঁছাল। তিনি ঈমানদার পুরুষ। তাহাজ্জুদ ও ফজরের নামায আদায় করে সবেমাত্র কোরান শরীফ নিয়ে বসেছিলেন তখনই ভুবন যায় সেখানে। রোগীর বিপদের কথা শুনে দৌড়ে চলে আসলেন। এসে দেখলেন, আমিরের বুড়ো আঙুল সহ হাতের তালু কালচে হয়ে গেছে। পর্ব দশ

সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। ডাক্তার চলে যাবার পর খাবার গরম করে আমিরকে খাইয়ে দিয়েছিল পদ্মজা। তারপর চুলে বিলি কেটে দেয়। আমির ঘুমানোর পর পদ্মজার দুই চোখও লেগে আসে। যখন ঘুম ভাঙল, জানালা দিয়ে বাইরে তাকালে মনে সন্ধ্যার অনুভূতি হয়। চারদিক ঘনকালো মেঘ। উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম কোন দিক দিয়ে যে বাতাস বইছিল তা ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না। পদ্মজা জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে মনোহর মুখখানা খানিকটা ভিজিয়ে নিল। যখন গ্রামে থাকত তখন এরকম বৃষ্টির দিনে বাড়ির পিছনের জানালা দিয়ে নদীর দিকে তাকিয়ে থাকত। চোখের সামনে নদীর জলে টুপটাপ বৃষ্টির ফোঁটা পড়ার দৃশ্য মন উদাসীন করে দিত। বাতাসের তোড়ে ঘাটে থাকা নৌকা দুলত এতগুলো বছর হলো শহরে আসার, এখনো গ্রামের জন্য মনটা আনচান করে। পদ্মজা আমিরের আহত হাতের ব্যান্ডেজে আলতো করে চুমু খায়।

টেবিলে বসে পেন্সিল আর সাদা পৃষ্ঠা নিয়ে দীর্ঘক্ষণ

সময় নিয়ে মনের মাধুরি মিশিয়ে একটা ছবি আঁকে।

আমির হালকা নড়তেই সে টেবিল ছেড়ে বিছানায় চলে আসল। আমির চোখ খুললে পদ্মজা উৎকণ্ঠিত হয়ে জানতে চাইল, ‘আঙুলে ব্যথা করছে?’

আমির হাত বাড়ায়, পদ্মজা ওর পাশে গিয়ে বসল। ‘কিছু খাবেন? কী রান্না করব বলুন। বাজার থেকে কিছু আনাব?’

‘এখানে মাথা রাখো।’ নিজের ডান বাহু দেখিয়ে মৃদু গলায় বলল।

পদ্মজা তার বাহুতে মাথা রাখল। আমির বাম হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতে চাইলে সে আটকাল, ‘আমি জড়িয়ে ধরছি।’

বলেই সে আমিরের গায়ের উপর হাত রাখল। আমির আহত হাতের তর্জনী দ্বারা পদ্মজার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে বলল, ‘আমার সবকিছু মিথ্যে হলেও, তুমি মিথ্যে নও।’

‘কেউ কী বলেছে আমি মিথ্যে?’

ওর ঠোঁটে চুমু খেল আমির, ‘তুমি ভীষণ সুন্দর। চলো, আরেকবার বিয়ে করি।’পদ্মজা মজা করে বলল, ‘চলুন।’

‘সামনে তো তোমার জন্মদিন। সেদিন বিয়ে করা যায়, কী বলো?

পদ্মজা নিচের ঠোঁট কামড়ে মনে করার চেষ্টা করল, কবে ওর জন্মদিন। আমির বলে দিল, ‘এক সপ্তাহ পর।’

‘এতো দ্রুত! সেদিন না গেল। সময় কত দ্রুত চলে যায়।’

‘সময় যাচ্ছে ঠিকই কিন্তু তোমার বয়স বাড়ছে না: লাল বেনারসি পরবে? আমি শেরওয়ানী পরব নাকি-

‘থামুন। আপনি সত্যি বলছেন নাকি? বিয়ে করতে হবে না। ওইদিন সারাদিন আমার সঙ্গে থাকলেই হবে। গতবার তো থাকেননি।’ অভিমানী কণ্ঠে বলল পদদ্মজা।

‘ও কথা বলো না। অনুতাপ হয়। কাজের এতো চাপ পড়েছিল! কিন্তু এইবার আমি তোমার সঙ্গেই থাকব। কোনোকিছু আমাকে আটকাতে পারবে না।’

পদ্মজা আমিরের চোখের দিকে তাকাল। কী জানিকেন, আমিরের কাছে এলেই ওর পুরো পৃথিবী স্বর্গ মনে হয়। বাবা- মায়ের দাম্পত্যকলহ দেখে বড় হওয়াতে কখনো ভাবেনি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এতো প্রেম, ভালোবাসা, মায়া থাকতে পারে। ওর বন্ধুরা কেউই দাম্পত্য জীবনে পরিপূর্ণ সুখী নয়। প্রত্যেকে কিছু ত্যাগ করছে নয়তো মানিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু আমির অন্যরকম, সারাক্ষণ ভালোবাসে, যত্ন করে।

ও আমিরের গাল আলতো করে ছুঁয়ে প্রশ্ন করল, ‘কোন পুণ্যের ফল আপনি?’ পদ্মজার অন্তঃস্থলের আবেগ দারুণভাবে ছুঁয়ে যায় আমিরকে। সে কিছু বলল না। পদ্মজা ওর বুকে মুখ গুঁজে বলল, ‘জানেন, মাঝেমধ্যে আপনাকে হারানোর ভয়ে বুকের ভেতরটা তরটা বড় কাঁপে। নিজেকে এলোমেলো লাগে।’

বলতে বলতে পদ্মজার চোখ দুটি অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠল। মানুষটাকে সে কখনো হারাতে পারবে না। এবারও আমির কিছু বলল না। চিৎ হয়ে ডান হাতে পদ্মজাকে বুকের উপর টেনে শক্ত করে ধরে রাখল। পদ্মজা পরিষ্কার শুনতে পেল আমিরের হৃৎস্পন্দন।

ঘড়ির কাঁটা বলছে দুপুর হয়েছে। কিন্তু বেলা ঠিক

যেখানে ছিল সেখানেই আছে। এর মধ্যে বৃষ্টি

তার গতি বাড়িয়েছে। মেঘমালা জড়িয়ে রেখেছে

আকাশের কোল। অন্ধকার চারদিক। গতকালের

কাপড়গুলো পত পত শব্দে বারান্দায় টানানো রশিতে উড়ছে।

চলবে,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here