পদ্মমির #পর্ব_30 #ইলমা_বেহেরোজ

0
940

#পদ্মমির
#পর্ব_30
#ইলমা_বেহেরোজ

গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় জুনি। তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে আলমগীর ও মজিদ হাওলাদার। রফিকের কাছে সবকিছু দিনের আলোর মত পরিষ্কার হয়ে যায়। জুনি প্রতারণা করেছে। ছলনা করে তাকে হাসপাতাল থেকে বের করে শত্রুর হাতে তুলে দিয়েছে। পুলিশ আমিরের পক্ষে নয় বরং নিরপেক্ষ ছিল। কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই। যা ভুল হবার হয়ে গেছো আমির হিসহিসিয়ে বলল, ‘ভালোই হলো তখন মরিসনি। নিজের হাতে মেরে যে সুখ পাব, তা তখন মরে গেলে পেতাম না।’

রফিককে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ছুড়িকাঘাত করে হত্যা করে টুকরো টুকরো করে সেই হাওড়েই মাটিচাপা দিয়ে দেয়া হয়। চিরতরে গুন হয়ে যায় রফিক।
পদ্মনীড়ে প্রবেশ করতেই বেলি ফুলের ঘ্রাণ এসে লাগে নাকে। গতকাল তারা বাড়ি ফিরেছে। আমির কয়টা ফুল ছিড়ে শার্টের বুক পকেটে ভরে নিল।

কলিং বেল চাপতেই দরজা খুলল পদ্মজা। আমির বুকপকেট থেকে ফুলগুলো এগিয়ে দিল পদ্মজার হাতে।

পদ্মজা ঘ্রাণ এঁকে বলল, ‘আব্বাকে ট্রেনে তুলে দিয়ে এসেছেন?’

‘দিয়েছি।’ আমির অদ্ভুতভাবে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

পদ্মজা আমিরকে টেনে ভেতরে ঢুকিয়ে দরজা বন্ধ করল।

‘আলমগীর ভাইও চলে গেছে।’

‘ওমা! উনার না কিছুদিন থাকার কথা ছিল।’

আমির কিছু বলল না। আজ সে মিথ্যে বলতে চায় না। ঘড়ির কাঁটা বারোটায় ঠেকতেই আমির পদ্মজাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘শুভ জন্মদিন পদ্মবতী। শত বছর বাঁচো আর আমার হয়ে থাকো। তোমার জন্মদিনেও আমি আমার জন্য তোমাকে চাই। কত স্বার্থপর আমি তাই না?’

পদ্মজার মনেই ছিল না আজ তার জন্মদিন। সে আমিরের বুক থেকে মুখ তুলে বলল, ‘হ্যাঁ, ভীষণ। আর এমনই থাকবেন, স্বার্থপর। শুধু আমাকে চাইবেন।’

আমিরের দুই চোখ বেয়ে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে। কুতুবউদ্দিন, রফিক তাকে কত আতঙ্কে রেখেছে তবুও ভেঙে যায়নি। অথচ আজ যখন সব বিপদ শেষ তার ভীষণ কাঁদতে ইচ্ছে করছে। পদ্মজাকে হারিয়ে ফেললে কীভাবে বাঁচত সে?

পদ্মজার উৎকণ্ঠা, ‘কী হয়েছে? কাঁদছেন কেন?”

আমির হাসল। বলল, ‘জানি না। কাপড়চোপড় ব্যাগে ভরে নাও। আলো ফুটতেই আমরা বেরিয়ে যাব।’

‘আবার কোথায়?’

‘স্বপ্নের জগতে।’ আমির চোখ টিপল। বোট তৈরি। আগামী
দশদিন ওরা পদ্মা নদীতে কাটাবে।

পরিশিষ্টঃ

‘মিষ্টি রানি দুই রাজাকে তার অপকর্মের জন্য হত্যা করেছিল। তাই রানির কারাবাস হয়। তারপর কী হয়? এই গল্পের বাকি অংশ কোথায় জানব আপা?’ আলিয়া ঠোঁট উল্টে বলল।

নুড়ি আয়না থেকে চোখ সরিয়ে বলল, ‘মা জানে।’

‘মা তো বলে না।’

‘হয়তো গল্প শেষ, রানী এখনো কারাগারে আছে।’

‘কিন্তু মা তো বলল, গল্প বাকি।’

নুড়ি বিরক্তি নিয়ে তাকাল। ওর বয়স ঘোল। মেদহীন, একহারা গড়ন। চোখজোড়া কালো, স্বপ্নময়। কালো রঙা কোঁকড়া চুল কোমর ছাপিয়েছে। ও বলল, ‘তাহলে অপেক্ষা কর, মা নিশ্চয়ই একদিন বাকি গল্প বলবে।’

আলিয়া কার্থী মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়ে। নুড়ি আনমনা হয়ে ভাবে, ‘মা যতদিন না বলছে আমি তোদের কিছু বলতে পারব না, সেই দুষ্ট রাজা আমাদের বাবা আর মিষ্টি রানি আমাদের মা। আমি কেন সব জেনে গেলাম বলতো? মায়ের কষ্ট যে আমার সহ্য হয় না।’

আজ আমির হাওলাদারের মৃত্যুবার্ষিকী। এই রাতটা পদ্মজা একা একা পাহাড়ের চূড়ায় বসে কাটায়। তীব্র জ্বরের কারণে আজ যেতে পারেনি। সন্ধ্যা থেকে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। হঠাৎ কর্ণগোচরে এলো, দরজায় ঠকঠক শব্দ। এই নিশি রাতে কে ডাকে?

জ্বরে কাঁপতে কাঁপতে পদ্মজা জানালার দ্বার খুলল। চাঁদের আলো লুটিয়ে গড়ে ওর গায়ে।একটা ভারী কন্ঠ বাতাসে ভেসে এলো, ‘আজ কেন আসোনি?’

পদ্মজার বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল। দ্রুত চোখে চশমা পরে দেখল, জানালার পাশে আমির দাঁড়িয়ে আছে। ওর পরনে সাদা পাঞ্জাবি আর সাদা পায়জামা। মাথার উপর চাঁদ। যেন চাঁদটা তার সঙ্গী।

পদ্মজা আবেগে আপ্লুত হয়ে বলল, ‘আপনি এসেছেন!’

‘না এসে থাকি কী করে? তোমায় ছাড়া কখনো থেকেছি আমি?”

পদ্মজার ঠোঁট দুটি ভেঙে এলো, ‘আমাকে ছাড়াই তো থাকেন।’

‘আমি সবসময় তোমার সঙ্গে থাকি। কখনো ছেড়ে যাই না।’

‘তাহলে সামনে কেন আসেন না? আমাকে কষ্ট দিতে ভালো লাগে? আপনি তো এমন ছিলেন না।’

‘ক্ষমা করে দাও। আর লুকিয়ে থাকব না।’

‘এবার কিন্তু আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবেন।’

নুড়ি পিছনে এসে দাঁড়ায়। পদ্মজাকে একা একা কথা বলতে দেখে ওর বুকের ভেতরটা হুহু করে উঠে। জ্বর বাড়লেই পদ্মজার হ্যালুসিনেশন হয়। তখন একা একা বকবক করে, তার অদৃশ্য শ্রোতা হয় আমির হাওলাদার। নুড়িকে দেখে পদ্মজা হাসল, ‘দেখ, তোর বাবা এসেছো আমাকে নিয়ে যাবে,,,,,,,,,

#পদ্মমির
#শেষ
#ইলমা_বেহেরোজ

পদ্মজার শরীর কাঁপছে। সে সম্পূর্ণভাবে জ্বরের নিয়ন্ত্রণে। নুড়ি পদ্মজার পায়ের কাছে বসে অনুনয় করে বলল, ‘ও কথা বলো না মা, তুমি চলে গেলে আমাদের কী হবে? আমরা কোথায় যাব?’

পদ্মজা নুড়ির মাথায় হাত রেখে আমিরকে অনুরোধ করে বলল, ‘আচ্ছা, কিছুদিন পরই যাব। আপনি কিন্তু আমাকে রেখে যাবেন না।’

নুড়ি বাইরে শুধু আকাশের চাঁদটাই দেখতে পাচ্ছে। সে পদ্মজাকে প্রশ্ন করল, ‘বাবা দেখতে কেমন মা?’

পদ্মজা মোহগ্রস্তের মতো ‘আমিরের দিকে তাকাল। আমির চোখ টিপতেই পদ্মজা হাসল, ‘সুদর্শন। ঘন কালো চুল, অন্তর্ভেদী কালো চোখ, থুতনিতে কাঁটা দাগ, বলিষ্ঠ শরীর, ধবধবে সাদা দাঁত আর ভীষণ রসিক – –

সমাপ্ত,,,,,,!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here