#পদ্মমির
#পর্ব_23
#ইলমা_বেহেরোজ
গিয়ে গা ধুয়ে পরনের শার্ট প্যান্ট জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিল। যেখানে ফেলেছে জায়গাটা শুকতারার অভ্যন্তরের অংশ। কোমরে গামছা পেঁচিয়ে বেরিয়ে আসে। দৌড়ে রুমে যায় লাশটা সরাতে। ততক্ষণে গান থেমে গেছে। আমির লাশ সরানোর জন্য যখনই উবু হবে তখনই পদশব্দ শোনা গেল। 10:26 পদ্মজা রুমে এসে দেখে আমির কোমরে গামছা বেঁধে খালি গায়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। পদ্মজার চুল বেণি করা ছিল, এখন খোলা। শাঁড়ির আঁচল চিকন করে কাঁধে রাখা। হারিকেনের হলুদ আলোয় আমিরের শক্ত, আকর্ষণীয় কাঠামোর শরীর দেখে তার বুকে ঝড় উঠো কিছুক্ষণ আগে, স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য নিজে থেকে এগিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিন্তু এই মুহূর্তে এসে সে নিজের মধ্যে তীব্র আকাঙ্খা টের পাচ্ছে। আমির মাঝেমধ্যেই শোবার আগে গোসল করে। তাই ব্যাপারটা অন্যভাবে নিল না। নিম্ন কণ্ঠে বলল, ‘ঠান্ডার দিন রাতে গোসল করার কী দরকার ছিল?’ আমির খালি হাতে চুলের পানি ঝেড়ে পদ্মজার কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলল, ‘সতেজ লাগলে যদি কারো নজর পড়ে, সেই আশায় অধমের রাত্রি স্নান।’ সে পদ্মজার কোমর চেপে ধরে নিজের কাছে টেনে আনল। আমির ভেবেছিল, পদ্মজা ঠান্ডা লেগে যাবে বলে চেঁচাবে, চুল মুছে দিবে, দ্রুত ঘুমাতে বলবে। কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে পদ্মজা আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়াল। আমিরের গলা জড়িয়ে ধরে তার ঠোঁটে চুমু খেল তারপর কণ্ঠমণিতে। অতল শিহরণে শিরশির করে উঠে আমির, পদ্মজার চোখের দিকে তাকায়। ওর দুটি চোখের তারায় স্পষ্ট, কাঙ্খিত মিলন। পদ্মজা পুনরায় চুমু খেল। আমির লাশ সরানোর অভিলাষকে একপাশে রেখে পদ্মজাকে পাজাকোলে নিতেই কনুই লেগে হারিকেন মেঝেতে পড়ে ভেঙে যায় কাচ। তাতে দুজনের কেউই ভ্রুক্ষেপ করলপ্রাণের স্পন্দন, দেহের স্পন্দনকে সঙ্গী করে শয্যায় গমন করে দম্পতি। উত্তাল দুটি দেহ মিত্রতা করে তীব্র ভালোবাসার আলিঙ্গনে। তাদের অভিসাস দেখে বোঝার জো নেই, বধর দেহে মগ্ন থাকা পরুষ মানুষটিকিছুক্ষণ আগে একটি হত্যা করেছে এবং লাশটি তাদের শয্যার খাটের নিচেই নিথর হয়ে পড়ে আছে। পর্ব চৌদ্দ ‘আরেকবার ভেবে দেখ, ঝুঁকি নেয়াটা কি ঠিক হবে?” আমির জবাব না দিয়ে সামনে চলে গেল। পেছন থেকে রবিন বলল, ‘ভাইয়ের পরিকল্পনাডা কী? আলমগীর আনমনা হয়ে বলল, ‘জানি না।’ গতকাল রাতে যা ঘটেছে এরপর আর ঘরে বসে থাকার মানুষ নয় আমির। সে কোনো পরিকল্পনা নিশ্চয়ই করেছে কিন্তু কাউকে বলছে না। আমিরকে এভাবে চুপ হয়ে যেতে দেখলে আলমগীরের দুশ্চিন্তা হয়। এমপি কুতুবউদ্দিনের বারিধারা বাড়িতে নেতারা একত্রিভ হয়েছে গোপন রাজনৈতিক মিটিং করার জন্য। কুতুবউদ্দিন তাড়াহুড়ো করে প্রস্তুত হচ্ছিলেন। গলার স্বর বাড়িয়ে কাউকে বললেন, ‘আমার জুতা জোড়া কোথায়? এখানে রাখা হয়নি কেন?” বাড়ির কাজের মেয়ে বকুল অন্তদন্ত হয়ে জুতা নিয়ে আসল। জুতার উপরিভাগে যালু দেখতে পেয়ে
বকুল ভয়ে বিচলিত হয়ে বের হতে গেলে রফিকের সাথে ধাক্কা খায়। রফিক রেগেমেগে একটা গালি দেয়। বকুলের চোখে অশ্রু জমে। আবেগ লুকোতে দৌড়ে অন্যদিকে চলে যায়। এই বাড়ির সবকটা মানুষ বদমেজাজি আর নিষ্ঠুর। তার ভালো লাগে না এখানে। রফিক রুমে প্রবেশ করে তাড়া দিল, ‘সবাই অপেক্ষা করছে। আমাদের এখুনি যেতে হবে।’ কুতুবউদ্দিন একটা কাচের ছোট বোতল এগিয়ে দিয়ে বললেন, আণটা কেমন?’ দুবাই থেকে আসা সুগন্ধির ঘ্রাণ এঁকে রফিক জানাল, ‘চমৎকার। চারপাশ মৌ মৌ করছে।’ কুতুবউদ্দিন খুশিতে গদগদ হয়ে গেলেন। সুগন্ধি সংগ্রহ এবং ব্যবহার করা দুটোই তার প্রধান শখ। বিভিন্ন দেশের, বর্যান্ডের সুগন্ধি তার সংগ্রহে রয়েছে। পোশাকে সুগন্ধি মেখে নিচ তলায় যাবার পথে বারান্দা থেকে দেখতে পেলেন, আমির বাড়ির গেইটের ভেতর ঢুকছে। তার হাতে মদের বোতল, চলতে চলতে এগিয়ে আসছে। কুতুবউদ্দিন আঁতকে উঠলেন, ‘ও এখানে কী করে?’ রফিক বিস্ময়ে কিংকর্তব্যবিমূঢ়। গতকাল রাতের ঘটনার পর আমিরের এখানে এভাবে আসার কথা না। কেন এসেছে? তাও ভরদুপুরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায়। কুতুবউদ্দিন চোয়াল শক্ত করে বললেন, ‘ও যেন বৈঠকখানায় যেতে না পারে। কেউ যেন না দেখে।’ রফিক দ্রুত অন্য দরজা দিয়ে বের হয় আমিরকে আটকাতে, ততক্ষণে আমির বাড়ির চৌকাঠ মাড়িয়ে ঢুকে পড়েছে বৈঠকখানায়। উপস্থিত নেতা ও কর্মীরা আমিরকে দেখে অবাক হয়। কেউ কিছু বলার আগেই আমির হাতের কাচের বোতলটি মেঝেতে ছুঁড়ে ফেলে ভেঙে চুরমার করে দিল। ইতিমধ্যে কুতুবউদ্দিন নিচে নেমে এসেছে। রফিক এসে 10:26 দাঁড়িয়েছে ওর পিছনে। আমির চিৎকার করে কুতুবউদ্দিনকে বলল, ‘চামচা দিয়ে হুমকি না পাঠিয়ে আমার মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস করুন।’ কথা শেষ হবার আগেই হাঁটুগেড়ে বসে পড়ল আমির। সে বিপর্যস্ত, নেশায় বুঁদ। কুতুবউদ্দিন অপ্রস্তুত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। উপস্থিত জনতার
চেহারায় ফুটে উঠেছে বিস্ময়। কয়েকজন
কুতুবউদ্দিন ভীষণ বকাঝকা করলেন তাকে।আমিরকে সাধারণ ব্যবসায়ী হিসেবে জানলেও বাকিরা আমিরের নারী ব্যবসা সম্পর্কে অবগত। তবে কুতুবউদ্দিন কি নিয়ে হুমকি দিল সেটা তারা জানে না। প্রত্যেকে প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে কুতুবউদ্দিনের দিকে তাকাল।
প্রত্যেকে প্রশ্নবোধক চাহনি নিয়ে কুতুবউদ্দিনের দিকে তাকাল। কুতুবউদ্দিন দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দিতে বললেন, ‘আমি শুধু বলেছি, আমার টাকা ফেরত দিতো নয়তো আমি পুলিশের কাছে যাব। এখানে হুমকির কিছু নেই। আমি শুধু আমার ন্যায্য চেয়েছি।’
আমির মেঝেতে ঢলে পড়েছে, কিছু একটা বিড়বিড় করছে। সকলে নিজেদের মধ্যে চাওয়াচাওয়ি করল। গুঞ্জন শুরু হলো চারপাশে। কী হচ্ছে এসব?
রফিক দুই জনকে নিয়ে আমিরকে ধরে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যায়। কুতুবউদ্দিন পরিবেশ ঠান্ডা করার জন্য প্রথমে খাবার পরিবেশনের সিদ্ধান্ত নিলেন। চিন্তায় আলমগীরের কপালের রগ দপদপ করছে। আমির আর কুতুবউদ্দিনের দা-কুমড়ার সম্পর্ক। বিগত বছরগুলোতে কেউ কারো মুখ স্বেচ্ছায় দেখেনি। এতগুলো বছর পর আজ আমির একা ঢুকে গেল ওই বাড়িতে। ওরা যদি আমিরের কিছু করে!
রবিন অধৈর্য্য হয়ে বলল, ‘ভাই কইলেই কিন্তু রফিক আর কুতুবরে এক মুহূর্তে উড়ায়া দিতে পারতাম। এতো ঝামেলার দরকার আছিল না।’
‘একজন নেতাকে খুন করা এতো সহজ নয়।’ আলমগীর ভেতরে যতটা না আতঙ্কিত, বাইরে ততটাই শান্ত।
রবিন বলল, ‘ক্ষুধা লাগছে, কিছু খাইয়া আসি আমি।’
অনেক চেষ্টা করেও আমিরকে স্বাভাবিক করা গেল না।
চলবে,,,,,,