#পদ্মমির
#পর্ব_15
#ইলমা_বেহেরোজ
তাই বাধ্য হয়ে এই শ্বশান ঘাট বেছে নিতে হয়েছে। সাদিক মনে মনে, আমিরকে কঠিন গালি দিল।
একটা কালো ছায়া হেঁটে আসছে। বাতাসের সঙ্গে তখন বজ্রপাত হচ্ছিল। সাদিক টর্চ জ্বালিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। টর্চের আলো কালো ছায়াটির হাতে থাকা কাচের বৈয়ামে পড়ে। বৈয়ামে রক্তাক্ত সদ্য কাটা দশটি মনুষ্য আঙুল, দুটি চোখ, জিহবার অর্ধেক। শ্বশানের সামনে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য দেখে কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য সাদিক তালগোল পাকিয়ে ফেলল। আমিরকে যে গালি দিয়েছে সেটা যদি কোনোভাবে আমির জেনে যায়? পর মুহূর্তে নিজেকে বুঝাল, মনে মনে কী বললাম আমির কী করে জানবে?
আমির এসেই বৈয়ামটি সাদিকের হাতে দিয়ে বলল, ‘পরে নেব।’
সাদিক বৈয়ামটি নিয়ে দ্রুত কাঁধের ব্যাগে ঢুকাল।
আমির তাড়াহুড়ো করে বলল, ‘ওদিকের কী অবস্থা?’
সাদিক খ্যাঁক করে গলা পরিষ্কার করে বলতে শুরু
করল, ‘কুতুবউদ্দিন গোপন সূত্রে জেনেছে, আদাকত
তার বড় ছেলের ফাঁসির রায় দিবে। উনি চেষ্টা
করছেন ফাঁসি আটকানোর। ছোট ছেলেকে পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। তার বর্তমান অবস্থা নাজেহাল। বেশ কিছুদিন ধরেই এসব চলছে। মুমিনুল সাহেব কুতুবউদ্দিনকে শর্ত দিয়েছেন, যদি কুতুবউদ্দিন নিজের পদ ছেড়ে দিয়ে সেই পদে মুমিনুলের বড় ছেলেকে বসার সুযোগ করে দেয় তবে সে কুতুবউদ্দিনের দুই ছেলেকে রক্ষা করবে।’
‘কী মনে হয়, রাজি হবে কুতুবউদ্দিন?’
‘আমার মনে হয় রাজি হবে। এমনিতেও তার পদ টিকবে না বেশিদিন। তার থেকে মুমিনুলের কথায় এখন অবসর নিলে দুই ছেলেকে বাঁচাতে পারবে।’
আমির আশার আলো দেখতে পায়। তাহলে অনেকদিন ধরেই কুতুবউদ্দিন ঝামেলায় আছে। চারপাশ থেকে বিপদ আঁকড়ে ধরেছে তাকে। এমতাবস্থায় আমিরকে হুমকি দেয়ার মতো কাজ কীভাবে করল? করলে করতেও পারে। ইয়াকিসাফির অর্ডারের মাধ্যমে যে টাকা পেত তাতে পরিস্থিতি হয়তো পরিবর্তন করতে পারত। যখন পেল না রেগে গেল আমিরের উপর। কিন্তু জাহাজ কেন চাইবে? কুতুবউদ্দিনের জাহাজের অভাব নেই। সে জাহাজ চাইতে যাবে কোন দুঃখে? নাকি ছোট ছেলেকে দেশ থেকে বের করার জন্য তার একটি জাহাজ প্রয়োজন? যে জাহাজ নিরাপদ! হঠাৎ আমিরের মাথায় একটা ব্যাপার আসল।কুতুবউদ্দিনের কোনো লোককে আমার অফিস কিংবা বাড়ির আশেপাশে দেখা গেছে?’
‘না, সবাই রফিক মাওলার লোক।’
আমিরের চোখ দুটি জ্বলজ্বল করে উঠে। এমন নয়তো কুতুবউদ্দিন এ বিষয়ে জানেই না। ভাবনাটা মনে আসতেই আমিরের মেরুদণ্ড সোজা হয়ে গেল। যদি সত্যি এরকম হয়, রফিক মাওলাকে থামানোর পরিকল্পনা তার জানা আছে! কাজটা তার জন্য সহজ হবে। সে সাদিককে নিজের পরিকল্পনা বুঝিয়ে দিল। নিশ্চিত হতে হবে আগে, তার ধারণা ঠিক কি না। অফিসেও কিছু সমস্যা হচ্ছে। কাল একবার অফিসে যেতে হবে।
আমির বলল, ‘আলমগীর ভাই কাল যেন অফিসে থাকে।’
মুজ্জা কলোনির মাঠে আগামীকাল থেকে মেলা বসবে। গানের আসর হবে প্রতিদিন। তারই কাজ চলেছে সারারাত জুড়ে। গানের আসরের জন্য কয়েক পাড়া থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে। আমির মাঠের কাছাকাছি এসে বিপাকে পড়ে যায়। সবার সামনে দিয়ে যাওয়া যাবে না। আকাশের অবস্থা বিকাল থেকে মেঘলা। সন্ধ্যার পর গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হয়েছিল তারপর থেকে শুধু বাতাস হচ্ছে। যেকোনো মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে। রাতও প্রায় শেষ। তবুও এই লোকগুলো কাজ করে যাচ্ছে। ও এদিক-ওদিক খুঁজে একটা আগাছা ভর্তি পরিত্যক্ত পথ আবিষ্কার করে। ওই পথ দিয়েই শুকতারাতে পৌঁছায়। পদ্মজাকে দূর্বলতার ঔষধের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিল। এই কাজ করার পর থেকে অশান্তি হচ্ছে বুকে! কিন্তু সে নিরুপায় ছিল!
সিঁড়ির কাছাকাছি আসতেই পায়ের শব্দ শুনতে পায়। পদ্মজা কি জেগে গেছে? আমির টর্চ জ্বালাতে গিয়ে দেখে টর্চে রক্ত! গুদামঘরে রক্তের উপর টর্চ রেখেছিল! শার্ট পরিবর্তন করে অন্য শার্ট পরেছিল কিন্তু টর্চে যে রক্ত লেগেছিল ব্যাপারটা খেয়ালই করেনি। সে শার্টের বুকে খেয়াল করে দেখে, সেখানে রক্ত লেগে আছো পায়ের শব্দ আরো নিকটে চলে এসেছে। আমির দ্রুত শার্ট খুলে ফেলতে নেয় কিন্তু পরমুহূর্তেই মনে পড়ে, এখন ঠান্ডা পরিবেশ। পদ্মজাকে গরম লাগার অজুহাত দেয়া যাবে না। তবে মাঝেমধ্যেই ও রাতে বাড়িজুড়ে হাঁটে। সেটা বললে পদ্মজা বিশ্বাস করবে। কিন্তু এই রক্তের দাগ!
পায়ের শব্দ একদম নিকটো আমিরের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। দ্রুত টর্চ ফেলে পাশে রাখা টিনে হাত চেপে ধরে ও, তারপর সেই হাত বুকের সাথে চেপে ধরে সিঁড়িতে বসে পড়ে উল্টো হয়ে। ঠিক তখনই পদ্মজা নামল হাতে হারিকেন নিয়ে। আমিরকে বিছানায় না পেয়ে, নিচে নেমে এসেছে সো মাথাটা ঝিমঝিম করছে। হুট করে এতো ঘুম পেল! শরীরটা সত্যি খুব দূর্বল।
আমিরকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে পদ্মজা অবাক হলো। ডাকল, ‘শুনছেন?’
আমির চট করে তাকাল। যেন মাত্রই পদ্মজার উপস্থিতি অনুভব করেছে। বলল, ‘ঘুম ভেঙে গেছে?’
পদ্মজা নেমে আসল,’ এখনো ঘুম পাচ্ছে।’
ওর চোখ দুটি নিভে আসছে। আমির ডান হাতে পদ্মজাকে টেনে পাশে বসায়। হারিকেনের আলোয় আমিরের বাম হাতের রক্তাক্ত বুড়ো আঙুল দেখে পদ্মজা আঁতকে উঠে। রক্তে শার্টের উপরিভাগ
চলবে,,,,,,,