পদ্মমির #পর্ব_24 #ইলমা_বেহেরোজ

0
1238

#পদ্মমির
#পর্ব_24
#ইলমা_বেহেরোজ

অনেক চেষ্টা করেও আমিরকে স্বাভাবিক করা গেল না। তাকে পাহারা দিচ্ছে রফিক। সে সূক্ষ চোখে আমিরকে পরখ করে ভাবছে, ‘আমির নিশ্চয়ই কোনো ফন্দি এঁটেছে। ওর মতো ধূর্ত লোেক মাতলামোর জন্য এখানে আসতে পারে না।’

দরজায় কড়া নাড়ছে কেউ। রফিক বলল, ‘ভেতরে আসো।’ পারভেজ উকি দিয়ে বলল, ‘কয়েচ আইছে।

রফিক ভ্রুকুঞ্চন করল। কয়েচ তার চতুর্থ নম্বর রক্ষিতা ময়নার বাড়ির দারোয়ান। তার আগমনের কারণ কী?

রফিক ইশারা করলে কয়ো। ভেতরে আসে। আমির মেঝেতে ভিখারির মতো ঘুমাচ্ছে রফিক বলল, ‘কেন এসেছ?”

কয়েচ নম্র কন্ঠে বলল, ‘ময়না আপা আপনেরে যাইতে কইছে। আরো কইছে, অনেকদিন ধইরা যাইবেন যাইবেন কইরাও যান নাই তার বাড়িতে। আইজ যদি না যান সে পুলিশের কাছে যাইবে।’

রফিক দাঁতে দাঁত খিচে মনে মনে ময়নাকে গালি দিয়ে বলল, ‘শালি মাতারি, আর কয়টা দিন যেতে দে, তোর হাল কী করি দেখবি। শকুনও তাকাবে না।’

মুখে বলল, ‘ব্যস্ততার জন্য যেতে পারি না। আমি তার জন্য অনুতপ্ত। তুমি ময়নাকে বলো, আগামীকাল সকালে আমি যেভাবে হোক পৌঁছাবো।

মিটিং শেষ করে কুতুবউদ্দিন উপরে আসে। আমির তখন দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে

ছিল। মাথায় চুল থেকে জল পড়ছে। নেশা তাড়াতে বালতির পর বালতি পানি ঢালা হয়েছে আমিরের মাথায়। তার হাতে সিগারেট, রফিকের থেকে চেয়ে নিয়েছে।

কুতুবউদ্দিন রুমে ঢুকেই গর্জে উঠলেন, ‘তোর সাহস কত বড়া’ আমিরের গলার শার্ট খামচে ধরে। টেনে তুললেন, ‘এখন এখানে গেঁড়ে ফেললে কে বাঁচাবে?”

আমির দাঁত বের করে হাসল। ধীরে ধীরে ওর হাসি প্রশস্ত লাভ করল। যেন উম্মাদ হয়ে গেছে। রফিক কুতুবউদ্দিনকে
বাধা দিয়ে বলল, ‘আমির সই করতে এসেছে।’ পদ্মামর

কুতুবউদ্দিন কলার ছেড়ে অবাক চোখে রফিকের দিকে

তাকালেন। রফিক মাথা ঝাঁকাল। আমির তাকে এটাই বলেছে।

কুতুবউদ্দিন নিশ্চিত হতে বললেন, ‘ইয়াকিশাফির সঙ্গে কাজের চুক্তি বাতিল করার জন্য সই করতে এসেছে?’

আমির ঠান্ডা সুরে বলল, ‘আমি আমার বউকে নিয়ে ভালো থাকতে চাই। তার জন্য যা দেতে হয় দেব।’

কুতুবউদ্দিন আমিরের দিকে তাকায়। আমির কী সত্যি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে? ভয় পেয়ে গেছে

না, যতক্ষণ সই না করছে বিশ্বাস করা যাবে না। রফিক দলিল আনতে যায়। ঘন্টা খানেকের মতো সময় লাগে দলিল আনতো৷ খানেকের মতো সময় লাগে দলিল আনতো কুতুবউদ্দিন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে আমিরের দিকে। এতো বড় চুক্তি বাতিল করবে শুধুমাত্র বউয়ের জন্য?

তাদেরকে বিস্মিত করে দিয়ে আমির সই করে দিল।
বলল, ‘বাকি যা যা চেয়েছেন, পেয়ে যাবেন। দুই তিন দিন সময় লাগবে। এই দুই-তিন দিনে কেউ আমার বাড়ির আশেপাশে যেন না যায়।’

শীতল কিন্তু ধারালো কণ্ঠ। তার চোখেমুখে কী যেন ছুটে বেড়াচ্ছে, কুতুবউদ্দিন নিজের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতেও সেটা ধরতে পারছেন না। আমির কী চাইছে? খালি চোখে যা সেটাই কী সত্য? নাকি অন্য। কিছু আছে। দেখছে

কুতুবউদ্দিন কেশে গলা পরিষ্কার করে বললেন, ‘ভালো সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছো তুমি।

আমার সঙ্গে যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছ এটা দিয়ে তার শোধ তুলে নিলাম।’

আমির চুপচাপ বেরিয়ে পড়ল। অর্ডারটা শেষমেশ হাত ফসকে বেরিয়ে গেল। ও প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেয়।

কখনো কখনো পিছিয়ে যেতে হয়, চূড়ান্ত বিজয়ের জন্য।

গাড়িতে উঠেই সে ঘোষণা করল, ‘কুতুবউদ্দিনের বাড়ির দারোয়ান উল্লাহ মিয়ার বাড়িতে খোঁজ নিতে হবে, বকুল নামে তার কোনো মেয়ে আছে কি না।’

কলম নিয়ে নোটপ্যাডে একটা ঠিকানা লিখল, ‘যদি থাকে, উল্লাহকে তুলে নিয়ে এই ঠিকানায় যাবে।’ আমির একটা কাগজ ধরিয়ে দিল আলমগীরের হাতে।মিয়ার বাড়িতে খোেজ নিতে হবে, নামে তার কোনো মেয়ে আছে কি না।’

কলম নিয়ে নোটপ্যাডে একটা ঠিকানা লিখল, ‘যদি থাকে, উল্লাহকে তুলে নিয়ে এই ঠিকানায় যাবে।’ আমির একটা কাগজ ধরিয়ে দিল আলমগীরের হাতে।

গোধুলি লগ্ন। আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছে সিঁদুর রাঙা মেঘ। সারাদিন বৃষ্টি হয়নি, রাতে হতে পারে। পদ্মজা জানালা দিয়ে আকাশ দেখছে। হাতে বিভূতি-ভূষণ

বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা চাঁদের পাহাড় বইটি। আজ কিছুতেই বইয়ে মন মজছে না। সকাল থেকে ভুবনকে কোথাও দেখতে না পেয়ে পদ্মজা চিন্তিত। এমনকি তার কাপড়চোপড়ও নেই বাড়িতে। এতিম ছেলেটা কোথায় গেল? আমির না আসা অবধি কিছু জানতেও পারবে না। আজ এতো দেরি করছে!

চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here