#পদ্মমির
#পর্ব_25
#ইলমা_বেহেরোজ
আপনি নিশ্চিত কিছু হবে না?’ সে বিচলিত।
ডাক্তার আমিরকে আশ্বস্ত করল, কিছু হবে না। প্রথম যে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল, তিনিও ঘুমের ঔষধ দিতে চাননি। আমির চেনা ডাক্তার থেকে ঘুমের ঔষধ এনেছিল। গতকাল পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়াতে আবার ঘুমের ঔষধ দিতে হয়েছে। এরপর থেকেই সে দুশ্চিন্তায় আছে। এখন নিশ্চিত হলো। এমন পরিস্থিতি আর আসতে দিবে না, যাতে পদ্মজার সামান্য ক্ষতিরও ঝুঁকি নিতে হয়।
রাত নয়টায় মুজ্জা কলোনিতে ঢুকতেই জাদতের সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে। আমির কিছু ফলমূল দেয় তার হাতে।
জাদও সন্ধ্যার ঘটনা খুলে বলতে গিয়েও বলতে পারল না। আমিরই প্রশ্ন করল, ‘কিছু হয়েছে?”
জাদও সন্ধ্যার ঘটনা পুরোপুরি খুলে বলার পূর্বেই, আংশিক শুনে আমির উলটো দিকে দৌড়াতে থাকে।
মুজ্জা কলোনির বেশ কয়েকজন শুকতারায় রয়ে গেছে। সন্ধ্যার ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তারা পদ্মজাকে একা রেখে যাচ্ছে না। এতো রাত হওয়ার পরও আমির না ফেরায়, পদ্মজা শুকতারা থেকে বেরিয়ে পড়ে। গেইটের সামনে আসতেই দেখতে পায় আমির উদ্ভান্তের মতো ছুটে আসছে।
পদ্মজার পরনে বোরকা, নিকাব। সে নিকাব তুলল।
আমির ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। ফিসফিস করে বলল, ‘ঠিক আছো তুমি?’ ভয়ানক চমকে উঠল পদ্মজা। বিজলির গতিতে এসে জড়িয়ে ধরেছে আমির! তার কণ্ঠ শুনে আনন্দে বুক ভরে গেল। গভীর আবেগ আর ভালোবাসায় আমিরকে
জড়িয়ে ধরে বলল, ঠিক আছি।’
আমিরের চোখে ভেসে উঠে, অপহরণকারীরা কীভাবে পদ্মজাকে বস্তায় ভরেছিল। দলিলে সই করে দেয়ার পরও ওরা এরকম একটা কাজ করল! রাগে-ক্ষোভে জ্বলে উঠে আমিরের বুকের ভেতরটা।
সে পদ্মজার কপালে চুমু খেয়ে বলল, ‘কসম তোমার, দ্রুত
সব ঠিক করব। আমরা বাড়ি ফিরে যাব।’
রাতে খেতে বসলে পদ্মজা বলল, ‘ভুবন সারাদিন বাসায় আসেনি। ওর কোনো খোঁজখবর পেলেন?”
‘ও এরকমই। বেশিদিন কোথাও থাকে না। হুট করে যা মন চায় করে ফেলে। ও নাকি গ্রামে চলে গেছে।’
‘সুরুজ ভাই বলেছে?”
‘ছ। চিন্তা করো না। ও এরকমই।’
পদ্মজার মন খারাপ হয়। এতো আদর করল তাও ভুবন চলে গেল! আমির আড়চোখে পদ্মজাকে দেখে।
পদ্মজা ঘুমাবার পর সে ভুবনকে সরিয়ে দেয়ার জন্য নিচে নেমেছিল। কিন্তু রুমে গিয়ে দেখে এক অপ্রত্যাশিত দৃশ্য। সামনে লাশ নিয়ে ভুবন থরথর করে কাঁপছে।
শুকতারায় রাতে দুজন লোক ঢুকেছিল। একজন আগে, আরেকজন পরে। শেষে যে ঢুকেছিল তাকে ভুবন মাথায় কুড়াল দিয়ে আঘাত করে খুন করেছে। লোকটার হাতে অস্ত্র দেখে পূর্বস্মৃতি মনে পড়ে যায় ভুবনের। বোনের হত্যা চোখের পর্দায় ছুটতে থাকে। পদ্মজাকেও কেউ খুন করতে এসেছে ব্যাপারটা মাথায় ঢুকতেই সে এলোমেলো হয়ে পড়ে। ডিসওর্ডারের প্রভাব শুরু হয়। সামনে কুড়াল পেয়ে তা দিয়েই আঘাত করে বসে গুপ্তঘাতককে। আমির ভুবনের পাশে বসে, তাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে।
বাইরে তখন তারস্বরে ঝিঝি ডাকছিল। আমির ফিসফিসিয়ে বলে, ‘ভয় পাস না, ভয় পাস না। কাউকে এ কথা বলব না, কেউ জানবে না।’
ভুবন একটি হত্যার বিনিময়ে নিজের জীবন রক্ষা করেছে। রাতেই পুলিশের ভয় দেখিয়ে, পুলিশ থেকে বাঁচানোর আশ্বাস দিয়ে দূরে পাঠিয়ে দেয়া হয় ভুবনকে। এই গল্প কখনো পদ্মজা জানতে পারবে না।
আমির পদ্মজাকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে জানায়, পুলিশ গুপ্তঘাতকের পরিচয় শনাক্ত করেছে। এবার ধরার পালা। তারপর তারা বাড়ি ফিরে যাবে। এ কথা গুনে, পদ্মজা ভীষণ খুপি হয়। গুপ্তঘাতককের পরিচয় জানার ইচ্ছে প্রকাশ করে। আমির আরেকটি গল্প বানায়। তা অন্ধের মতো বিশ্বাস করে পদ্মজা।
বাতাসের ধাক্কায় হাট করে খুলে যায় জানালা। রফিক ধড়ফড় করে উঠে বসে। জানালা লাগাতে গিয়ে দেখে আকাশে দিশাহীন কালো মেঘের ওড়াউড়ি। আলগা আলগা দখিনা বাতাস। বিছানা থেকে অর্ধনগ্ন জুনি জড়ানো পলায়
শুধায়, ‘উঠলে কেন?’ রফিক বাথরুমের দিকে যেতে যেতে ছুঁড়ে দিল কথা, ‘রাতটা যে থেকেছি সেটাই তোমার কপাল।’
সকাল সকাল এরকম আচরণ পেয়ে জুনির মুখজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে বিষন্নতা। সে রফিকের তৃতীয় স্ত্রী। গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা, চোখের। মণি কালো, স্বাস্থ্যবতী। স্বাস্থ্য অত্যাধিক বেড়ে যাবার পর থেকে রফিকের সাথে তার সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না। এ নিয়ে রফিক সবসময় খোঁটা দেয়, অসন্তুটি প্রকাশ করে।
কিছুক্ষণ যেতে না যেতেই ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। রফিক অপেক্ষা করে। বাতাসের গতি কমতেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ময়নার বাড়ির উদ্দেশ্যে। পাঁচজন স্ত্রী আর তিনজন রক্ষিতা নিয়ে তার জীবন। এদের মান-অভিমান, ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে করতে কাহিল হয়ে ভেবেছিল, আর কখনো কোনো নায়ীক সংস্পর্শে যাবে না। কিন্তু পদ্মজাকে দেখার পর থেকে সব স্ত্রী-রক্ষিতার,,,,,,
চলবে,,,,,,