#পদ্মমির
#পর্ব_27
#ইলমা_বেহেরোজ
কেনো এই কাঁপুনি তিনি জানেন না। ছেলের জন্য মন ছুটে চলছে আবার কোথাও যেন মনে হচ্ছে যাওয়া ঠিক হচ্ছে না। তিনি দ্বিধান্বিত। গন্তব্য আর চলার মধ্যে কোথাও যেন একটা টানাপোড়েন চলছে তার মাঝে। সে টানাপোড়েন শেষ পর্যন্ত চলার গতিতে কোনো ব্যঘাত ঘটাতে পারেনি। জঙ্গলের গভীরে পৌঁছাতে পৌঁছাতে বৃষ্টি থেমে যায়, সন্ধ্যে হয়ে আসে। বাকি পথ হেঁটে পৌঁছালেন লোহার গম্বুজের সামনে। চারপাশ দেখে নিলেন এক পলক। বাহিরে এক স্থানে পঁড়িতে শার্ট টানানো বৃষ্টিতে ভিজে গেছে ছেলেটা বড্ড খামখেয়ালি! কতদিন ধরে আছে এখানে? জঙ্গল থেকে অজানা পাখির ডাক ভেসে আসছে। চারপাশ বড় নির্জন। লোহার গম্বুজে কোনো জানালা নেই, একটামাত্র দরজা। তিনি একজনকে বাহিরে রেখে বাকি দুজনকে নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন। নাকে এসে লাগে পেট্রোলের ঘ্রাণ। একটা অস্বস্তি হয় গায়ে। চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। তিনি নরম সুরে ডাকলেন, ‘হামজা… হামজা?’ কোনো সাড়াশব্দ নেই। গম্বুজের ভেতর একটি ছোট ঘর আছে। কুতুবউদ্দিন গরটিতে ঢুকে দেখলেন একপাশে হারিকেন জ্বলছে। মৃদু আলোয় তারা একজনকে আবিষ্কার করল। দেয়ালের দিকে মুখ করে চেয়ারে বসে আছে কেউ। কুতুবউদ্দিন টর্চ জ্বালিয়ে ডাকতে ডাকতে সেদিকে গেলেন, ‘হামলা, কথা বলছিস না’ কথাটি শেষ করার পূর্বেই চেয়ারে বসে থাকা মানুষটির মুখ দেখে চমকে উঠলেন তিনি। অস্ফুটম্বরে বললেন, পারভেজ।’ গলা কেটে হত্যা করে চেয়ারে বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে তাকো তিন ঘন্টা আগেই না কথা হলো। ব্যাপারটা ধরতে ধরতে ঘরের বাহির থেকে তীব্র আলো ভেসে আসে। তিনি দৌড়ে ঘর থেকে বের হলেন। চারপাশে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। গম্বুজ থেকে বের হওয়ার জন্য পা বাড়াতেই একটি দীর্ঘদেহী মানব ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। মানবটির মুখ এক পলক দেখে যা বোঝার বুঝে গেলেন কুতুবউদ্দিন। সেইসঙ্গে হঠাৎ করেই মনে পড়ল, এই লোহার গম্বুজ সম্পর্কে একজন জানত। সে হচ্ছে বাড়ির পুরনো দারোয়ান উল্লাহ! কিন্তু ততক্ষণে সময় ফুরিয়ে গেছে। যেভাবে ষড়যন্ত্র করে নিজের ভাইকে পুড়িয়ে মেরেছিলেন ঠিক সেভাবেই তাকে ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে। এই মৃত্যুর খবর কেউ জানবে না। হাজার চেষ্টা করেও সেখান থেকে বের হতে পারলেন না কুতুবউদ্দিন। তার করা বিকট চিৎকারে আঁতকে উঠে জঙ্গলের জীব ও কীটপতঙ্গরা।
পদ্মজা হাঁটুতে থুতনি ঠেকিয়ে জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। ওর চোখ জুড়ে অভিমান। আমিত্র এখনো বাড়ি ফিরেনি। বিকেলে অফিসের পিওন এসে বলে গিয়েছিল, ‘স্যার বলেছেন, আজ ফিরতে দেরি হবে।’ কেন ফিরতে দেরি হবে তা জানায়নি। পদ্মজা অভিমানী হয়ে ভাবছে, ‘গতকাল আমার সঙ্গে ভয়ংকর একটা ঘটনা ঘটে গেল তবুও আজ সারাদিন উনি বাইরে থাকলেন, রাতে ফিরতেও এতো দেরি করছেন। আমাকে নিয়ে কী চিন্তা নেই? অচেনা একটা এলাকায় একা ফেলে রাখতে পারল? আমার থেকে বেশি কাজটাই বড় হয়ে গেল?’
চলবে,,,,