#পদ্মমির
#পর্ব_1
#ইলমা_বেহরোজ
ভয়াতুর ষোড়শী মেয়েটি কাঁপা গলায় বলল, ‘কে আপনি? খালি বাড়িতে কেন ঢুকেছেন?’
কালো ছায়াটি থেকে কোনো জবাব না পেয়ে পুনরায় ভেজা কন্ঠে বলল, ‘বলুন না, কে আপনি?’
হঠাৎ একটি ম্যাচের কাঠি জ্বলে উঠল। সেই আলোয় দুটি গভীর কালো চোখ বিভ্রম নিয়ে তাকিয়ে রইল ওর দিকে। শীতল, স্পষ্ট কণ্ঠে চোখের মালিক বলল, ‘আমির হাওলাদার।’
দৈবাৎ দমকা হাওয়ায় আগুনের শিখা নড়ে ওঠে।
হলুদ আলোয় আমির আবিষ্কার করে, পদ্মজার দুই চোখ বেয়ে রক্ত নির্গত হচ্ছে। কিছু বুঝে উঠার পূর্বে কতগুলো কালো হাত অক্টোপাসের মতো আঁকড়ে ধরে পদ্মজাকে; টেনে নিয়ে যেতে থাকে অন্ধকার গহব্বরে। আমির পিছু নিতে গিয়ে টের পেল কেউ তাকে ধরে রেখেছে। সে প্রাণপণে ছোটার চেষ্টা করে। গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে, ‘পদ্মবতী
ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে আমির। ওর হৃৎপিণ্ডের কম্পন এবং শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত চলছে। শরীর থেকেদর দর করে ঘাম ঝরছে। বিন্দু বিন্দু ফোঁটার মতো ঘাম জমাট বেঁধে রয়েছে চিবুকে! অসহিষ্ণু চোখে ডানে-বামে তাকিয়ে নিজেকে একটি বিলাসবহুল এপার্টমেন্টে আবিষ্কার করল। স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে পেল, দুই সপ্তাহ ধরে ও কুয়েতে আছে। এতক্ষণ তাহলে দুঃস্বপ্ন দেখছিল! আমির দুই হাতে মুখ ঢেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ো বুকের ভেতর কী এক অঙ্কিতা বিরাজ করছে! কেমন আছে পদ্মজা?
আমির হাত বাড়িয়ে বালিশের নিচ থেকে একটা ছবি বের করল। ছবিতে –
ড্রয়িংরুমের সোফায় শুয়ে বই পড়ছে পদ্মজা, তার লম্বা বিণুনি মেঝে ছুঁইছুই। পরনের শাড়ি গোলাপি রঙের। কত সুন্দর নারী সে; কী ভীষণ মায়াবী!
ছবিটির দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমির সিদ্ধান্ত নিল, দুইদিনের মধ্যে দেশে ফিরবো আরো এক সপ্তাহ কুয়েত থাকার কথা ছিল কিন্তু পদ্মজার শূন্যতা ক্রমে তাকে উম্মাদ করে তুলছে। হুটহাট বিষণ্ণ হয়ে পড়ছে। আর দূরে নয়, দ্রুত ফিরতে হবে।
তখন মধ্যরাত। দুটি বেডরুম ও ডাইনিং, ড্রয়িং নিয়ে
এপার্টমেন্টটি। আমির যে রুমটিতে আছে, সেটি সাদা
রঙের; রুমে বিশাল ডাবল বেড। বিছানাদার চাদর সাদা। রাতে এপার্টমেন্টে ফিরে গোসল সেড়ে রোব পরিহিত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েছিল। জাগল দুঃস্বপ্ন দেখে।
সিগারেট হাতে নিয়ে কাচের বিশাল জানালার নিকটে গিয়ে দাঁড়াল আমির। তখন দরজায় টোকা পড়ে, উর্দু ভাষায় ভেসে আসে, ‘আসতে পারি?’
আমিরের অনুমতির অপেক্ষা করল না নারীটি।
দরজা ঠেলে ভেতরে চলে এলো। রুমে তখন আবছা
আলো। তার পরনে ঘুমের ছোট পোশাক। পোশাক
বললেও ভুল হবে, এক টুকরো কাপড়। রক্ত উষ্ণ করে
দেয়ার মতো সুন্দর সে। তার সবচেয়ে বড় পরিচয়, সে
বিখ্যাত ইয়াকিসাফির রক্ষিতা। ইয়াকিসাফি ঔষধ
শিল্পের সেরা দশ ব্যবসায়ীর মধ্যে একজন। তার
কোম্পানির শাখা রয়েছে একশোরও অধিক দেশে। এ
সবকিছুর আড়ালেও রয়েছে তার আরেকটি রাজত্ব;
বিশ্বের বৃহৎ মাদক ল্যাব। যেখানে মাদক প্রস্তুত করা
হয়। তার অনেকগুলো ল্যাবের মধ্যে প্রধান ল্যাবটি
তৈরি করাহয়েছে একটি দ্বীপের বহু বছর পুরনো
বাড়ির বেজমেন্টে। সেখানে কাজ করে ছয়শ’রও
অধিক কর্মচারী।
ইয়াকিসাফি দেখতে মাঝারি আকারের। চওড়া কাঁধ।
গায়ের রং ফর্সা, খাড়া নাক, ধূসর চোখে ঠিকরে পড়ে বুদ্ধিমত্তা। অপরাধ জগতের মানুষ তাকে হাস্তান নামে চিনে। খুব কম মানুষই তার আসল নাম এবং পরিচয় জানে। যারা জানে, তারা ইয়াকিসাফির বিশ্বস্ত ও পছন্দের। তিনি হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, মাদক প্রস্তুত করা কর্মচারীদের মনোরঞ্জনের জন্য প্রতিটি ল্যাবে একটি করে হেরেমের ব্যবস্থা করবেন। সেখানে থাকবে অসংখ্য সুন্দরী নারীরা। যাদের এই পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আজীবনের জন্য চলে আসতে হবে। কখনো সেই ল্যাব থেকে ফিরতে পারবে না। যেচে কোনো নারী এই শর্ত মেনে নিবে না। ইয়াকিসাফির প্রয়োজনের কথা কানে যেতেই বেশ কয়েকটি দেশের নারী ব্যবসায়ী এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যে একজন আমির হাওলাদার বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জনের সম্ভাবনা কি অবহেলা করা যায়?
কুয়েত আসতে তার কিছুদিন বিলম্ব হয়েছে। ফলস্বরূপ সুযোগটি অন্য আরেকজন প্রায় ছিনিয়েই নিচ্ছিল কিন্তু শেষ অবধি নিজের বুদ্ধিমত্তা ও চতুরতা দিয়ে সুযোগটি নিজের করে নিয়েছে। ইয়াকিসাফির সঙ্গে এটা তার পঞ্চম ডিল!
আমির কিছু বলার পূর্বে মেয়েটি তার কাছে এসে,
বুকে এক হাত রেখে কামুক চোখে তাকাল। আমির সিগারেট জ্বালাতে অন্যদিকে ফিরতেই মেয়েটি পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেল ঘাড়ে।
চলবে…