#পদ্মমির
#পর্ব_21
#ইলমা_বেহেরোজ
নিটোল চাঁদ তার ঝলমলে আলোর পসরা নিয়ে প্রকৃতিপ্রেমী পদ্মজার মনে বিচিত্র ভাব ও উদ্দাম আনন্দের সঞ্চার করে। এক গান থেকে অন্য গান শুরু হবার পূর্বে মিনিট খানেকের বিরতি ঘটে। সেই বিরতিকালীন সময়ে পদ্মজা আমিরকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরতেই আমির নাটকীয় ভঙ্গিতে বলে উঠল, ‘কেউ দেখে ফেলবো। পদ্মজা ভ্যাবাচেকা খেয়ে ছেড়ে দিল। আমির হো হো করে হেসে ফেলল। পদ্মজাও না হেসে পারল না।
তারা দুজন পাশাপাশি পাটিতে বসে। পদ্মজা বলে, ‘গতকাল আর আজকের ঘটনার জন্য আমি অনুতপ্ত।’
‘বহুবার বলে ফেলেছ।’
‘আমার খুব অনুশোচনা হচ্ছে।’
গান শুরু হয়ে যাওয়াতে কথোপকথন থেমে যায়। পদ্মজার কোলে মাথা রেখে আমির চোখ বুজল।
চাঁদটা আরো কাছে চলে এসেছে। রাতের খাবারের জন্য
গানবাজনা থেমে গেল। তখন আমির বলল, ‘জ্যোৎস্নার রাতগুলো সবসময় সুন্দর হয়।’হুম।’
আমির পদ্মজার ঠোঁটের দিকে তাকায়। শীতল পরিবেশ, ঝিরিঝিরি বাতাস এমন এক মুহূর্তে স্বীয় বধূকে কামনা করা থেকে বিরত হতে পারছে না।
ওর অভিলাষ টের পেয়ে পদ্মজা একটু দূরে সরে বসে চারপাশ দেখতে দেখতে বলল, ছাদগুলোতে হয়তো মানুষ আছে।’
‘তাতে কী।’ আমিরের নির্বিকার উচ্চারণ:
পদ্মজা অবাক হয়ে বলল, ‘তাতে কী মানে?’ ‘এতদিন হলো
বিয়ের সবসময় আমিই তোমাকে প্রলুব্ধ করি, তুমি কেন করো না?’
পদ্মজা কণ্ঠে বিস্ময় ঢেলে বলল, ‘প্রলুব্ধ?’
‘হ্যাঁ, সিডিউস।’ আমির চোখ টিপল। পদ্মজা লজ্জা পায়। সে কন্ঠ খাঁদে নামিয়ে বলে, ‘প্রয়োজন পড়েনি।’
‘বলো, পারো না।’
পদ্মজা পিঠ সোজা করে বসে বলল, ‘সব মেয়েই পারে।’
‘বলো, পারো না।’
‘কিন্তু তুমি না।’
‘অবশ্যই পারি।’
‘দেখার সুযোগ হয়নি।’ আমির ঠোঁট উল্টাল।
‘দেখানোর সুযোগ পাইনি। তার আগেই তো-‘
পদ্মজা লজ্জায় নুইয়ে যাচ্ছে। ইশ, কীসব নিয়ে কথা হচ্ছে! আমির হাসল। এটা সত্য, পদ্মজা কখনো নিজে থেকে ঘনিষ্ঠ হবার কিংবা আকৃষ্ট করার সুযোগ পায়নি তার আগেই সে আকৃষ্ট হয়ে এগিয়ে গেছে।
আবারও গান শুরু হয়। ওরা কথা থামিয়ে চুপচাপ বসে থাকে। মাঝেমধ্যে দুজনের চোখাচোখি হতে থাকে। যতবার চোখে চোখ পড়ে একসঙ্গে হাসে।
বাড়ির পাশের রাস্তা অন্ধকারে ঢাকা। শুধু দূরের মেলায় বাতি
জ্বলছে, গানবাজনা হচ্ছে। চাঁদের আলোয় চারপাশ ঝকমক করলেও তারা দুজন কিছুটা আড়ালে বসে আছে। হঠাৎ আমিরের মনে হয় অন্ধকার রাস্তা দিয়ে কেউ শুকতারার দিকে আসছে। তার বুকের ভেতরটা ধক করে উঠে। ঘাবড়ে যায়। মেলায়ও মনে হচ্ছিল, পিছনে কেউ ছিল। লোকটি। লোকটি গেইট পেরিয়ে বাড়িতে ঢুকল। আমির ধীরে ধীরে পদ্মজাকে বলল, ‘টয়লেট থেকে আসছি।’
পদ্মজা শুনতে না পেয়ে বলে, ‘কী বললেন?’
আমির জোরে বলল, ‘টয়লেটে যাচ্ছি, তুমি এখানে থেকো।’
আমির ছাদের দরজা দিয়ে নামার সময় ফাটা দেয়ালের অংশ দিয়ে দেখে, একজন চুপিচুপি বাড়িতে ঢুকছে, হাতে ধারালো অস্ত্র! গুপ্তঘাতক!
সে মুহূর্তে বেসামাল হয়ে উঠে। জাদত কোথায়? উকি দিয়ে পদ্মজাকে দেখে দ্রুতপদে রান্নাঘরে যায়, ছুরি না পেয়ে বটি নিয়ে বের হয়। আবার ছাদের দরজার দিকে তাকাল। আজ কী সব শেষ হয়ে যাবে? যদি পদ্মজা নেমে আসে? এতো নিরাপত্তা ব্যবস্থা করল, সেসব ভেঙে কীভাবে কেউ বাড়িতে ঢুকল?
গান থেমে গেছে। ওর মনে হচ্ছে, নিঃশ্বাস পাথরের
দেয়ালে বাড়ি খেয়ে ভৌতিক প্রতিধ্বনি তুলছে।
গুপ্তঘাতক নিঃশব্দে উঠে আসছে উপরে। সে তৃতীয়বারের মতো ছাদের দরজার দিকে তাকাল। মনে মনে কামনা করল, ‘এসো না, এসো না তুমি।’
পদ্মজার কাছে ধরা পড়ার আতঙ্কে ঠান্ডা হয়ে গেল আমিরের
গা। হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে বুকে, দুর্বল লাগল পা। কিন্তু দূর্বল হলে চলবে না, পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে।
গান শুরু হয়েছে। আমির স্বস্তি পায়, অন্তত শব্দ ছাদে যাবে না। সে সিঁড়ির কাছে ওঁৎ পেতে থাকে।
ছায়াটিকে দেখা যাচ্ছে। দেহটা উপরে চলে এসেছে। আমির শক্ত করে ধরে বটি। আরেকটু আড়াল হয়ে দাঁড়ায়। গুপ্তঘাতক আমিরকে দেখতে পেল না, সতর্ক দৃষ্টিতে হাতের ছুরিটি নিয়ে দ্বিতীয় তলায় থাকা রুমগুলোতে পদদ্মজাকে খুঁজতে থাকল। বেশি দেরি করলে পদ্মজা চলে আসবো আমির হাতের বটি সাবধানে মেঝেতে রেখে পিছন থেকে গুপ্তঘাতকের মুখ চেপে ধরে। গুপ্তঘাতক অস্ত্র ব্যবহার করতে গেলে আমির হাত ধরে ফেলে, গুপ্তঘাতকের হাত দিয়ে গুপ্তঘাতকের পেটেই ছুরি ঢুকিয়ে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে লোকটা আর্তনাদ করল। সেই শব্দ আমিরের কান অবধি কোনোমতে পৌঁছাল। আমি ছুরি দিয়ে পরপর বুকে-পেটে ঘা দিতে থাকে। রক্তের ছিটা এসে পড়ে তার চোখেমুখে। গুপ্তঘাতক গ্যারগ্যার শব্দ তুলে মারা যায়।
আমির দেয়ালে হেলান দিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে। গুপ্তঘাতককে কোনো জটিলতা ছাড়া কাবু করতে পেরে সে আনন্দিত। কিন্তু পরক্ষনেই হাসি মিলিয়ে যায় যখন খেয়াল হয়, লাশ নিয়ে ঠিক শোবার রুমের সামনে বসে আছে।
চলবে,,,,,