#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_১২
.
সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে কেটে গেলো এক সপ্তাহ।লায়ানা এখন পুরোপুরি সুস্থ সাথে আহানও।আজ আহানকে হসপিটাল থেকে ডিসচার্জ করে মুগ্ধতার বাড়িতে আনা হয়েছে।এই এক সপ্তাহ আহির ফোন করে লায়ানার খোঁজ খবর নিয়েছে।আহনাভ লায়ানাকে ফোন করার চেষ্টা করেছে বহুবার কিন্তু লায়ানার মধ্যে এক অভিমান জেগে উঠেছে যার দরুন আহনাভ বার বার ফোন করলেই কেটে দিয়েছে লায়ানা।
.
আজ লায়ানা,মুগ্ধতা আর আহান যাচ্ছে ফরিদপুর বৃদ্ধাশ্রমে সাথে রাফি,রুদ্রও আছে।এক ঘন্টা ত্রিশ মিনিটে সবাই মিলে কাঙ্ক্ষিত আশ্রমের সামনে এসে পৌঁছাল।পাঁচ জন গাড়ি থেকে নেমে দাড়ালো।লায়ানা ও মুগ্ধতার ঠোঁটের কোণে লেগে আছে এক অন্য রকম প্রসন্ন হাঁসি।
মুগ্ধতা বলে,” কানাডা থেকেই এই আশ্রমের দাদু দাদিদের জন্যই সাহায্য পাঠাতাম।আজ তাদের সামনা সামনি দেখবো খুব খুশি লাগছে।”
লায়ানা এক লাফ দিয়ে বলে,” আমার তো খুশিতে লাফাতে ইছে করছে।”লায়ানা থেমে গিয়ে আহান এর দিকে তাকিয়ে দাঁত কেলিয়ে বলে,” আর আহান তোর মনে হয় সবসময়ের মত লুঙ্গি ড্যান্স দিতে ইছে করছে।”
আহান লায়ানার পিঠে মৃদু থাপ্পড় দিয়ে বলে,” তুই যে আমার মনের কথা কীভাবে বুঝে যাস আমি তো মাঝে মাঝে ইমোশনাল হয়ে পরি।”
লায়ানা ঠোঁট উল্টে বলে,” থাক তোর ওই ঢংয়ের ইমোশনাল হওয়ার দরকার নেই।”
মুগ্ধতা ভ্রু কুচকে বলে,”এই তোদের মেলোড্রামা থামা তো।”
রুদ্র,রাফি গাড়ির ডিকি থেকে কত গুলো ব্যাগ বের করে নিয়ে আসে।রুদ্র,রাফি আসলেই পাঁচজন আশ্রমের ভিতরে প্রবেশ করে।
.
পাঁচজন আশ্রমে প্রবেশ করতেই সামনে চোখে পরে কিছু পরিচিত মানুষের মুখ।আহনাভ,আহির ও দুজনের বাবা মা আশ্রমের ভিতরে দাড়িয়ে আছে।পাঁচজন এগিয়ে যায় তাদের দিকে, আহনাভের বাবা মুগ্ধতা লায়ানাকে দেখতে পেয়েই অবাক হয়ে যায়,ঠোঁটের কোণে হাঁসি ঝুলিয়ে বলে,” মুগ্ধতা মা আর হায়াতি মা তোমরা!”
আহনাভের বাবার মুখে এহেন কথা শুনে আহনাভ, আহির দুজন সহ তাদের মা ফিরে তাকায় ওদের দিকে।
.
লায়ানা আহনাভকে দেখেই যেনো বুকটা ধুক করে উঠে।(আহনাভের পরনে শুভ্র পাঞ্জাবি,হাতার দিক টা ফোল্ড করা।ঝাঁকড়া চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে।চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে আছে।)লায়ানা আহনাভের পানে তাকিয়ে থমকে দাড়িয়ে থাকে,তার যে বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে এমন আহনাভকে দেখে।এই গোছানো মানুষটির সাথে এলোমেলো ভাবটি যেনো মারাত্বক লাগছে।
.
আর আহনাভ এক নতুন লায়ানাকে দেখছে,তার ঠিক সামনে শাড়ি পরিহিতা এক শ্যামবতী দাড়িয়ে।(সাদা রঙের ফুল হাতা ব্লাউজের সাথে,ওল্ড পিংক রঙের শাড়ি পড়েছে লায়ানা।হাঁটু অব্দি তার চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে।ঠোঁটে হালকা গোলাপী লিপস্টিক আর চোখে কাজল,কানে অক্সিডাইজড ঝুমকো।)
.
এইদিকে আহির এর চোখের পলক পড়ছে না মুগ্ধতার দিকে তাকিয়েই যেনো থমকে গেছে সে।তার কাছেও যেনো আজ এই মুগ্ধতা কে নতুন লাগছে।তাকে দেখে মনে এক শুভ্র অনুভূতি জেগে উঠেছে।(মুগ্ধতার পরনে কালো রঙের ফুল হাতা ব্লাউজের সাথে চিকন কালো রঙের পাড়ে সাদা রঙের শাড়ি, আঁচলে তিনটি রঙের মিশ্রণ এশ,কালো,সাদা।তার কোমর অব্দি চুল উন্মুক্ত।চোখে কাজল,ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক,দুই হাতে কালো চুড়ি,পার্ল এর সাধারণ নেকলেস গলায় আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে আছে।দুধে আলতা গায়ের রঙের সাথে এমন সাজ যেনো ফুটে আছে।)
মুগ্ধতা আহিরের পরিবারের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,” আঙ্কেল আপনারা এইখানে?”
আহনাভের বাবা বলে,” মুগ্ধতা মা,আসলে এই দিনেই আমার মা আমাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।আজ তার সপ্তম তম মৃ’ত্যু বার্ষিকী।আহনাভ,আহির এইখানে আসলেই এই বৃদ্ধাদের মধ্যে ওদের দিদুন কে খুজে পায় তাই এইখানে সবাই চলে আসি এই দিনে।তার সাথে তাদের জন্য কিছু উপহার নিয়ে এসেছি।”
“ওহ,আমরাও ওনাদের সাথেই দেখা করতে এসেছি।”
আহিরের বাবা নরম কণ্ঠেই শুধায়,”ঠিক আছে। অভ্রো ভিতরে চল আমাদের জিনিস গুলো দেয়া বাকি।মুগ্ধতা মা তোমরা ভিতরে গেলে চলো আমাদের সাথে।”
“জি আঙ্কেল।”মুগ্ধতা পিছন ফিরে তাকিয়ে বলে,” লায়ানা,আহান আয় আর রুদ্র,রাফি তোমরাও আসো।”
লায়ানা আহনাভ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়,আহানকে নিয়ে সবার সাথে আশ্রমের ভিতর চলে যায়।
.
আশ্রমের ভিতরের দিকে বাগানে ছোট পুকুরটির সামনে দাড়িয়ে আছে আহনাভ।হঠাৎ লায়ানা পাশে এসে দাড়িয়ে বলে উঠে,”এইভাবে নিজের চোখ মুখের অবস্থা এমন করে যে রাখে একজন,সে কী বুঝে না তাকে এইভাবে দেখলে আরেকজনের মনের মধ্যে ঝর বয়ে যায়,তার সব ওলট পালট হয়ে যায়।”
আহনাভ তার ফুলে যাওয়া চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশ পানে তাকিয়ে বলে,” হায়া আমি আমার দিদুন কে সবচেয়ে বেশি ভালবাসতাম।এখনও সবচেয়ে বেশি কাউকে যদি ভালোবাসি তা আমি আমার দিদুন কে।জানো হায়া আমার দিদুন আমাকে ছোট থেকে বড় করেছে,বাবা মায়ের থেকে বেশি সময় তার কাছেই থাকতাম আমি।আমার সব আব্দার দিদুনের কাছেই ছিল।আমি আমার প্রথম গান রিলিজ হওয়ার পর লান্ডনে কনসার্ট অ্যাটেন্ড করি।ভেবেছিলাম আমার দিদুন এইখান থেকে বসে আমাকে দেখছে।স্টেজে থাকা অবস্থায় আমি আমার দিদুনের মৃত্যুর সংবাদ পাই,আধ ঘন্টা আগেই স্টেজে ওঠার পূর্বে আমার দিদুন ফোনে বলেছিল আহু আমি কিন্তু অনেক এক্সসাইটেড ভালো করে পারফর্ম করবি।জানো হায়া ঐদিন আহনাভ আবার ভেংগে পড়েছিল, লিলীমার চলে যাওয়ার এক মাসের মাথায় দিদুনকে হারানো খুব বাজে ভাবে ভেংগে পড়েছিল এই আহনাভ।আমি সেইদিন স্টেজে কিছু পারফর্ম করতে পারি নি ওই স্টেজেই হাঁটু মুড়ে বসে ভুবন কাঁপানো চিৎকার করে বলেছিলাম ‘চলে গেলো আমার দিদুন তার এই আহু কে রেখে চলে গেলো,দিদুন কেন করলে এমন আমাকে সাথে নিয়ে গেলে না কেনো।তোমার এই আহু কীভাবে থাকবে একা,আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি দিদুন।তোমার এই আহু সব সহ্য করে নিবে কিন্তু তুমি নেই এইটা কিভাবে সহ্য করবে তোমার আহু।’ ”
আহনাভ কেঁদে উঠলো হাঁটু মুড়ে বসে পড়লো।আবার বলা শুরু করলো,”আমি আমার দিদুনকে খুব মিস করি হায়া খুব খুব খুব।কেনো আমাকে সবাই ছেড়ে চলে যায়।কেনো?আমি কী ভালোবাসার যোগ্য না?”
লায়ানার চোখে পানিতে টলমল করছে,এই বুঝি অবাধ্য চোখের পানি গড়িয়ে পড়বে।লায়ানা আহনাভের সামনে বসে পড়ে, আহনাভের মুখটি নিজের দুই হাতে আগলে নিয়ে বলে,”তাকাও আমার দিকে দেখো প্লিজ কেঁদো না আহনাভ।আমার সহ্য হয় না তোমার এমন এলোমেলো রূপ,তোমার কান্না।আমরা তো এই পৃথিবীতে চিরকালের জন্য আসি না যার যাওয়ার সময় চলে আসে তাকে চলে যেতে হয়।তুমি এইভাবে ভেংগে পড়লে দিদুন যে কষ্ট পাবে।কে বলেছে তুমি ভালোবাসার যোগ্য না আমি তো।”লায়ানা থেমে গেলো জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে আবার বলল,”এইযে শুনো লায়ানার ভবিষৎ জামাই এইভাবে ভে ভে করে কাঁদলে কিভাবে হবে?মানুষ তো উল্টো পাল্টা বলে বেড়াবে?”
আহনাভ হাতের উলটো পিঠে চোখ মুছে ভ্রু কুচকে তাকায় লায়ানার দিকে।
লায়ানার ফোন বেজে উঠে।আহনাভের গাল থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাড়ায়,ফোন রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে চলে যায় বাগানের গাছের নিচে।
.
আহনাভ মাটিতে বসে পড়লো,লায়ানাকে দেখ যাচ্ছে।দূরের গাছটির নিচে দাড়িয়ে কথা বলছে লায়ানা,তার কী মুখভঙ্গি একবার রাগছে তো আবার ফিক করে হেসে দিচ্ছে। আহনাভ অপলক তাকিয়ে রইলো লায়ানার পানে,আনমনে হয়ে বলে উঠে,”এই উন্মুক্ত কেশ এ শাড়ি পরিহিতা শ্যামবতী কে দেখেই যে কেউ ঘায়েল হয়ে যাবে হায়া।লিলীমা আমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার পর আমার দিদুন বলতো আমার বউয়ের রূপ নাকি ঘায়েল করার মত হবে।আমি নাকি তার সেই রূপে বারবার ঘায়েল হব শত বার তার প্রেমে পড়বো।তুমি তো সবসময় বলো আমার উপর তুমি ঘায়েল হয়ে যাও,তোমার উপর যে আজ কেউ একজন ঘায়েল হয়ে বসে আছে।”বলেই ভ্রু কুঁচকে ফেলে আহানাভ বলে উঠে,”তুমি আর এইভাবে শাড়ি পড়বে না হায়া।”
.
দূর থেকে আহির একটি বেঞ্চিতে বসে এতক্ষণ লায়ানা আর আহনাভ কে দেখছিল,তার চোখের কোণেও জল।আহির মনে মনে বলে,”ছেলেদের কাঁদতে নেই কিন্তু আমার ভাই মনে হয় তার দিদুনের জন্য শত বার কাঁদতে পারবে।আমারও তো দিদুন হয় কোথায় আমি তো কাদি না,নিজের মধ্যেই কষ্ট গুলোকে চাপা রেখেছি।আহনাভ কেনো পারে না কেনো বুঝতে চায় না এই পৃথিবীতে সবাই চিরকালের জন্য আসেনি।”
আচমকা পাশে এসে মুগ্ধতা বসে বলে উঠে,” মুখ টাকে এমন করে রাখবেন না।”
আহির চমকে মুগ্ধতার দিকে তাকায়।মলিন স্বরে বলে,”এমন করে রাখলে কী হবে?”
“কেমন যেনো প্রেত আত্মার মতো দেখতে লাগে।”
আহির মুখ ফুলিয়ে বলে,”হোয়াট!এই প্রথম কেউ আমাকে বলল এমন করলে আমাকে নাকি প্রেত আত্মার মত লাগে”
“কেন আপনি কি গ্রীক গড এর মত হ্যান্ডসাম এরকম কেউ বলেছে?আপনি তো হুলু বানরের মত।”
“সব রেখে হুলু বানরের মত!এইটা বলতে পারলে আমাকে?”
“আমি সব বলতে পারি।আমার দ্বারা সবই পসিবল ।আমি তো ভবি যে আমাকে বিয়ে করবে ওর থেকে বড় ফুটা কপাল আর করো নাই।”
আহির মৃদু স্বরে বলে উঠে,”আহারে আহির তোর এত ফুটা কপাল রে।কী যে ভাগ্য করে পেয়েছিস এই কপাল !”
মুগ্ধতা ভ্রু কুচকে বলে,”আপনি কিছু বললেন ?”
আহির ঠাট্টার স্বরে বলে,”অবশ্যই বললাম কেন তুমি কী শুনতে পেলে না হায় হায় এত গুরুত্বপূর্ণ কথাটা তুমি শুনলে না কী করলে মুগ্ধ রানি।”
“আচ্ছা আমার নাম তো মুগ্ধতা আপনি আমাকে মুগ্ধ রানি কেনো বলেন?এমন গুরুত্বপূর্ন কথা বললেন আমি তো শুনি নি এইবার জোরে বলুন।”
“আমার ইচ্ছে তাই বলি।কেউ তো তোমায় এইভাবে ডাকে না।আমি আবার সবার থেকে আলাদা তাই একটু অন্য ভাবেই ডাকা যাক।আর আমি সেকেন্ড বার রিপিট করি না,রেখে দাও ঐটা শুনতে হবে না।”
“ওহ আমিও একি রকম সবাই যেইটা ডাকে সেইটা ডাকতে ইচ্ছে করে না।কিন্তু এই কয়েকদিনে আমার নিক নেম রেখে ফেললেন ভাবার বিষয়।আর আপনাকে রিপিট করতেই হবে বলুন কী বলেছিলেন বলুন নাহলে.. নাহ থাক এখন মারামারির মুড নেই।”
“হুঁ,খুব ভাবার বিষয় মুগ্ধ রানি।আমিও বুঝলে মারামারির মুডে নেই।”
“আমি শেষ বার বলছি।আপনি কী বলবেন?”
“যদি না বলি কী হবে?”
মুগ্ধতা উঠে দাড়ায় হাঁটা ধরে। আহির দাড়িয়ে চুলে হাত ডুবিয়ে ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে জোরে বলে উঠে,”আহারে আহির তোর এত ফুটা কপাল রে।কী যে ভাগ্য করে পেয়েছিস এই কপাল !”
মুগ্ধতা হাঁটতে হাঁটতে মুচকি হাসে। আহির পিছন থেকেই চেঁচিয়ে বলে উঠে,”আরেহ রাগ করলে নাকি মুগ্ধ রানি?”
মুগ্ধতা চলে যেতে যেতে জোরে বলে যায়,” হ্যা করেছি রাগ তাতে আপনার কী।”
.
লায়ানা ফোনে কথা শেষ করে পিছন ফিরবে সেই মুহূর্তে আহান পাশে এসে দাড়িয়ে বলে,” কীরে ওই ছেলেটা কে রে?”
লায়ানা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”কে?”
“কে আবার জার মুখ আগলে বসেছিলি।”
লায়ানা শরম শরম ভাব করে বলে,” আর বলিস না।”
লায়ানার শরম পাওয়া দেখে আহান ভুবন কাঁপানো হাসিতে ফেটে পড়ে।লায়ানা আহানের পিঠে থাপ্পড় দিয়ে বলে,” হাসিস কেন অ’স’ভ্য?”
“আচ্ছা এইখানে বস তারপর বলতো ওই ছেলের ব্যাপারে।”
লায়ানা আর আহান গাছের নিচটাতে বসে পড়লো।লায়ানার আহনাভকে প্রথম দেখা থেকে এই অব্দি আহনাভের সাথে প্রতিটি ঘটনা খুলে বলে।লায়ানা কথা শেষ করতেই আহান পাশে পরে থাকা বেলি ফুল থেকে একটা নিয়ে লায়ানার কানে গুঁজে দিয়ে বলে,”এখন লাগছে ঝাক্কাস পেত্নী।”বলেই আবার আহান ভ্রু কুচকে বলে উঠে,” ওই শা’লা’র সাহস কম বড় না তোকে কষ্ট দেয়।”
” ওর কোনো বোন নাই রে তাই তোর ওর কোনো শা’লা হওয়ার চান্স নাই।”
“ধুর মাইয়া।কিন্তু এইভাবে কিভাবে হয়।”
লায়ানা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,”হয়।আমার তো বলতে ইচ্ছে হয় আমি প্রথম যবে দেখেছি তোমায় এক না প্রকাশ করার মত অনুভূতি জেগে উঠেছিল আমার মনে।সেই অনুভূতি ধীরে ধীরে মায়া হয়ে উঠলো এখন এক ভয়ঙ্কর ভালোবাসায় পরিণত হয়েছে।তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি তোমার ধারণার বাহিরে গিয়ে তোমাকে আমি উন্মাদের মত ভালোবাসি।সবসময় হয়তো পুরুষ নারীর প্রেমে পরে এইবার নাহয় উল্টো কিছু হোক।তুমি যখন তাকাও উফ তোমার সেই চাহনি তীরের মত এসে আমার বুকে বিধে যায়।আর তোমার সেই রাগী মুখ খানা ঘায়েল করে দেয় আমাকে।এত না ঘুড়িয়ে তোমার জীবনে এই হায়া কে তুমি গ্রহণ করে নাও না।আর কত ধৈর্য ধরবে তোমার এই হায়া।”
পিছন থেকে কেউ জ্ব’লে পু’ড়ে যাচ্ছে।আহনাভ যখন ঐখানে বসে লায়ানাকে দেখছিল আহানকে লায়ানার কাছে আসতে দেখে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে থাকে যখন দেখে দুজন গাছের নিচে বসে পড়লো তখন এগিয়ে এলো আহনাভ।এখন রেগে গিয়ে ফুঁ’সে উঠে বিড়বিড় করে শুধায়,”আমি আবার ভুল করতে যাচ্ছিলাম হায়া।আমার মনে হচ্ছিল তোমাকে একটা সুযোগ দিয়ে দেখি।তোমার প্রতি এক ভালো লাগা কাজ করছিল কিন্তু কী মেয়ে তুমি কিছুক্ষন আগে আমাকে বলছিলে আমাকে ঐভাবে দেখে তোমার কষ্ট লাগে এখন অন্য একটা ছেলে তোমার কানে ফুল গুঁজে দিচ্ছে তাকে ভালোবাসার কথা বলছো তুমি,বাহ!সব মেয়ে যে একই তুমি তা আবার প্রমাণ করে দিলে।নারী আসলেই ছলনাময়ী” বলেই উল্টো হেঁটে চলে গেলো আহনাভ।
.
আহান মাটিতে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে আকাশ পানে তাকিয়ে বলে,”ওই আহনাভ তোকে কষ্ট দিলে আমি ওকে ছাড়বো না বলে দিলাম।আর তোর সাথে আমি সবসময় ছিলাম সামনেও থাকবো।তোর যদি ওকে এতই পছন্দ হয় প্রয়োজন পড়লে তুলে নিয়ে আসবো।”
লায়ানা ফিক করে হেঁসে দেয়।বলে,” এইতো আমার ভাই।”
.
মুগ্ধতা আহিরের মা বাবার পাশে গিয়ে বসে পড়ে।তারা সবাই বসে বৃদ্ধাদের সাথে গল্প করছিল আর সাথে চা খাচ্ছিল।মুগ্ধতা পাশে বসতেই অনামিকা মলিন হেসে বলে,”মুগ্ধতা মা চা খাবে?”
“এক কাপ হলে খারাপ হয় না।”
অনামিকা এক কাপ চা মুগ্ধতার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে,”নাও মা।”
.
আহির এসে অনামিকার আরেক পাশে বসে পড়ে।মুগ্ধতা আড় চোখে দেখে নেয়।আহির এক কাপ চা চাইলে আহিরের বাবা বলে উঠে,”নিজে নিয়ে খেয়ে নে।”
“ওমা বাবা তোমার সামনেই চায়ের কাপ টা একটু এগিয়ে দিলে তোমার কোমড় কী ভেংগে যাবে?”
“ব’দ’মা’ই’শ পোলা একদম চুপ থাক।আমি এখনও অনেক ইয়াং আছি কোমড় কেন ভাঙতে যাবে?”
অনামিকা মুখ বাঁকিয়ে বলে,”আহারে আমার বুইড়া রে।”
সবাই অনামিকার কথা শুনে হো হো করে হেঁসে উঠে।মুগ্ধতা হাসতে হাসতে বলে,”এমন বইলেন না আন্টি আঙ্কেল কিন্তু এখনও দেখতে হ্যান্ডসাম।”
অনামিকা বলে উঠে,”কে বলেছে সে হ্যান্ডসাম।চুল পেকে আধ বুড়ো হয়ে গিয়েছে,আর কিছুদিন পর ছেলে বিয়ে দিলে এক ডজন নাতি নাতনির মুখ দেখবে।আসল কথা এই বুড়ো বয়সে আমার বুইড়া জামাই একটু ইয়াং সাজতে চায় বুঝলে।”
.
জেরিন এর পাশে এসে আহনাভ বসে পড়ে।আহনাভকে দেখে সবাই ওর দিকে নজর দেয়।জেরিন আহনাভের চুলে হাত ডুবিয়ে দেয়,হাত দিয়ে চুল ব্রাশ করে এলোমেলো চুলগুলো ঠিক করে দিয়ে বলে,”দেখ আহনাভ তোর ছোট বাবাকে নিয়ে কিভাবে সবাই মজা করছে।”
আহনাভ ভ্রু কুচকে তাকায় সবার দিকে তারপর আহিরের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”ছোট বাবা কারো কথায় কান দিও না তো।তুমি হলে হ্যান্ডসাম ম্যান ইন দা ওয়ার্ল্ড।”
অনামিকা রেগে বলে উঠে,”আহনাভ আমার দলেও তো থাকতে পারিস সবসময় ছোট বাবার দলে চলে যাস।”
জেরিন হেসে উঠে,হাসতে হাসতে দরজার দিকে দৃষ্টি চলে যায় তার।জেরিন দরজার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,”আরেহ হায়াতি মা তুমি। আসো আসো বসে বসে পড়ো আমাদের সাথে।”আহনাভ তাকায় লায়ানার দিকে,লায়ানার পাশে আহান কে দেখে দ্রুত দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে।
লায়ানা খুশিতে গদ গদ করতে করতে জেরিন এর পাশে গিয়ে বসে পড়ে আর আহান লায়ানার পাশে বসে পড়ে।
জেরিন জিজ্ঞাসু স্বরে আহানের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,”কে ও হায়াতি মা?ওকে তো চিনলাম না।”
লায়ানা আহানের চুলে হাত ডুবিয়ে চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলে,”ও আমার ভাই আহান।”
জেরিন হেসে বলে,”ওহ।আহান বাবা তুমি দেখতে কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম,ইশ আমার একটা মেয়ে থাকলে তোমার সাথেই বিয়ে দিয়ে দিতাম।”
আহান চুল ঠিক করছিল হাত দিয়ে,জেরিনের এমন কথা শুনে এখন পারছে না শরমে নুয়ে যেতে।
আহনাভ তো অবাকের চরম শীর্ষে গিয়ে বসে আছে।মনে মনে আওড়াল,”এই ছেলে হায়ার ভাই হলে কিভাবে সম্ভব।হায়া তো এই ছেলেকে ওই কথা গুলো বলছিল।এই ছেলে ওর ভাই হলে কিভাবে ওকে ওই ভালোবাসার কথা বলতে পারে?”
.
এত গল্পের মাঝে আহির পারলো না মুগ্ধতার সাথে কথা বলতে।মুগ্ধতা তো এমন ভাবে বসে ছিল যেনো আহির নামের এই র’ক্ত মাং’সে’র মানুষটির কোন অস্তিত্ব নেই এখানে।
.
#চলবে।