ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_১১

0
155

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_১১
.
“এত ভালো লাগছে যে আমার তো মন চাইছে উঠে লুঙ্গি ড্যান্স দেই।হসপিটালের বেডে এইভাবে শুয়ে থাকতে আমার কী যে অনুভূতি তা আমি কিভাবে বোঝাই তোমাকে?

মুগ্ধতা আহান এর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,” দাড়া তোর লুঙ্গি ড্যান্স করাচ্ছি।” বলেই মুগ্ধতা আহান কে মা’রা’র জন্য হাত উঠাবে তখনই আহান আঘাত পাওয়া হাতে নিজের মুখ ঢেকে নিয়ে বলে,”আজব আমাকে কেনো মারছো?”

“তোকে মারবো না তো কী করবো?এমন বাহাদুরি করে যাওয়ার প্রয়োজন কী ছিল?বেশি করে গার্ড নিয়ে গেলি না কেনো?এরকম হসপিটালে পড়ে থাকতে হতো?এমন না করলে বরং এখন বাসায় বসে সবার আদর যত্ন পেতি।”

“র’ক্তে র’ক্তে বাহাদুরি আমাদের।আমার ইনফরমেশন অনুযায়ী আমরা বেশি গার্ড নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু কোন জায়গা থেকে হঠাৎ ওদের লোক বেড়ে যায়।যাইহোক আমার হায়া বোন টা কেমন আছে?”

মুগ্ধতা বেডের পাশে টুল টেনে বসে বলে,” তোমার বোন তো তোমার মতই এত বাহাদুরি করে এখন অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। জ্বর এসেছে তার।”

আহান চট করে উঠে বসে বলে,” কী বলছো বোনের জ্বর!এখন কেমন আছে?আমি বাড়ি যাবো এখনি।”

মুগ্ধতা আহান কে ধমক দিয়ে বলে,”চুপ,একদম চুপ।তোর কোনো ধারণা আছে তোর হাতে গু’লি লেগেছে এক সপ্তাহ ডক্টর তোকে হসপিটালে থাকতে বলেছে।”

“এই সামান্য গু’লি’তে আহানের কিছু হয় না।আমি বাড়ি যাবো প্লিজ আপু।”

মুগ্ধতা হাত উঠিয়ে বলে,” একদম মেরে ঠ্যাং খোঁড়া করে রেখে দিবো বেশি যাই যাই করলে।”

সেই মুহূর্তে দরজা ঠেলে দুইজন আহান এর কেবিনে প্রবেশ করে।মুগ্ধতা হাত নামিয়ে দরজার দিকে দৃষ্টি নিতেই চমকে বলে উঠে,” আহির আপনি।” ( আহিরের পরনে ফরমাল ড্রেস আপ।বাম হাতে অ্যাপ্রোন ঝুলিয়ে রাখা।)

আহির মুগ্ধতা কে দেখে অবাক হয়ে যায়,এগিয়ে গিয়ে বলে,”মুগ্ধ তুমি এইখানে?”

মুগ্ধতা চোখের ইশারায় আহানকে দেখিয়ে বলে,”একে দেখতে এসেছি।কিন্তু আপনি এইখানে কেনো বললেন না?”

আহির ভ্রু কুচকে আহান এর দিকে তাকালো অতঃপর বলল,”এই হসপিটালের চারতলায় হৃদ বিশেষজ্ঞদের কেবিন।আমারও চারতলায় কেবিন।আমার বন্ধু রাশেদ রাউন্ডে বের হয়েছিল ওর সাথে কথা বলতে বলতেই চলে এসেছি এই কেবিনে।”

“ওহ।”

আহান তীক্ষ্ণ নজরে আহিরকে দেখে নেয় অতঃপর গলা খাকারী দিয়ে বলে উঠে”এইযে এক্সকিউজ মি ডক্টর রাশেদ আমাকে যেতে দিন আজকেই আমাকে ডিসচার্জ করুন।”

ডক্টর রাশেদ এগিয়ে এসে আহান এর মাথার কাছে দাড়িয়ে বলে,”আপনি আর একটা কথা বললে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখবো।কাল রাত থেকে জ্বালাচ্ছেন।”

আহান আড় চোখে ডক্টর রাশেদের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার মত সুস্থ রোগীকে এইভাবে রেখে দিলে আমি জ্বালাবো না তো কি আপনার বউ জ্বালাবে আপনাকে?”

ডক্টর রাশেদ বলে উঠে,” আমার বউ তো বাড়িতে জ্বালিয়ে আমার চুল ছিঁড়ে ফেলে।তোমার মত রোগী আরো জ্বালালে আমি তো বেলু হয়ে যাবো!”

আহান বলে,”হয়ে যান বেলু আপনাকে দেখতে অস্থির লাগবে।ফাটাফাটি লাগবে।”

মুগ্ধতা আহান কে ধমকের স্বরে বলে,”তুই চুপ করবি নাকি আমার পদ্ধতিতে তোর মুখ বন্ধ করবো।”

হঠাৎ আহিরের ফোন বেজে উঠে।আহির ডক্টর রাশেদের দিকে তাকিয়ে বলে,”রাশেদ আমি বাহিরে যাচ্ছি।”
.
আহির কেবিনের বাহিরে চলে যায়,ফোন রিসিভ করে বলে উঠে,”কী ভেবে এই আহির কে ফোন দিলেন জাহাঁপনা।”

ঐপাশ থেকে হাঁসির শব্দ ভেসে আসলো।একসময় হাঁসি থামিয়ে বলে,”এই আহনাভ কারণ ছাড়া আহিরকে ফোন দেয় না।”

“তা তো আমি অনেক ভালো করে জানি।তো কেনো ফোন করা হয়েছে?”

“আহির ভাই তুই আমার জীবনের সব জানিস আমাকে সবসময় সামলে নিস।এইবার আমি তোর থেকে একটা পরামর্শ চাই।”

“ও মাই গুড নেস,কেউ আমাকে জম্পেশ একটা চিমটি কাট ভাই আমার বিশ্বাস হচ্ছে না আহিরের কাছে পরামর্শ নিতে এসেছে মিস্টার আহনাভ।”

“আহির আমি সিরিয়াস হলে তুই কেন এমন পা’গ’লা হয়ে যাস বুঝি না।”

“আসল কথা বলো মামা।”

“তোকে তো আমি হায়ার পা’গ’লা’মি’র কথা গুলো বলেছি।”

আহির হেঁসে ফেলে।হাসি থামিয়ে বলে,”হায়া কিন্তু তোকে ভালোই জব্দ করতে পারে রে।আমি তো ওকেই মিস্টার জায়ান আবরাহার আহনাভ এর বউ হিসেবে চাই।”

“বেশি ভেবে ফেলেছিস না।”

” সত্যি।তুই এইবার তোর আসল লাইনে আয়।”

“আমার কী উচিত হায়া কে একবার সুযোগ দেয়া?”

“অবশ্যই।”কথাটি বলেই আহিরের নজর যায় আহানের কেবিনের দরজার দিকে,মুগ্ধতা কেবিনের দরজা ঠেলে বেরিয়ে আসছে।আহির বলে উঠে,” তোকে পরে কল করছি দাড়া।” বলেই ফোন পকেটে গুঁজে মুগ্ধতার দিকে অগ্রসর হয়।

মুগ্ধতা আহিরের এইদিকে এগিয়ে আসতে দেখে দাড়িয়ে যায়।আহির মুগ্ধতার সামনে এসে দাড়িয়ে যায়।

“আহান কে তো চিনলাম না কে ও?সেইদিন তো তোমাদের পুরো পরিবার আসছিল ডিনারে তো ও তো ছিল না।”

“আহান আমার পাতানো ভাই।”

এহেন কথা শুনে আহির মুগ্ধতার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে আবার ঠিক হয়ে বলে,” ও আচ্ছা।ভাই তো ভাইই হয়।আচ্ছা চল সামনে একটা ভালো রেস্টুরেন্ট আছে ঐখানে গিয়ে কফি খাওয়া যাক আর কিছু কথা আছে তোমার সাথে আমার।”

“আমি তো আমার রেস্টুরেন্ট ব্লু বেরিতে যাবো এখন। তো ঐখানে যাওয়া যাক?আপনি গেলে আমি আজকে আপনাকে আমার স্পেশাল নুডলস বানিয়ে খাওয়াবো।”

“এত ভালো প্রপোজাল কে রিজেক্ট করে। চলো যাওয়া যাক।”

.
আহির টেবিলে বসে ফোন স্ক্রল করছে,আধ ঘণ্টা হয়ে গিয়েছে তারা এসেছে আর মুগ্ধতা তার স্পেশাল নুডলস বানাতে গিয়েছে।আহিরের যেনো এই অপেক্ষার প্রহর গুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

“এইযে চলে এসেছি।” মুগ্ধতার কণ্ঠের ধ্বনি আহিরের কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই আহিরের ঠোঁটের কোণে এক প্রসন্ন হাঁসি ফুটে উঠে।মুগ্ধতার পানে তাকিয়ে বলে,” অবশেষে।”

মুগ্ধতা টেবিলে খাবার গুলো সার্ফ করে নিজেও চেয়ার টেনে বসে বলে,”খাওয়া শুরু করুন।”

আহির খাওয়া শুরু করে, নুডলস মুখে পুরে নিতেই চোখ মুখ চিকচিক করে উঠলো।

“অসাধারণ।”

“আচ্ছা এইবার বলুন আপনি কী বলতে চেয়েছিলেন।”

“বলছিলাম কী আমি আমি।”

মুগ্ধতা ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে আহিরের দিকে। আহির আবার আমতা আমতা করে বলে,” মানে আমি তুমি আমি তোমাকে।”

মুগ্ধতা পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে আহিরের মুখে ছুড়ে মেরে বলে উঠে,”এইবার বলুন আমি তুমি তুমি আমি বলুন বলুন।”

আহির মুখ হা করে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে টেবিলের দিকে তাকালো পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে মুগ্ধতার মুখে ছুড়ে মেরে বলে , ” নাও ম্যাচ ড্র।”

মুগ্ধতা জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে আহিরের মুখে ছুড়ে মারবে তার আগেই আহির পানি ভর্তি পুরো জগ হাতে নিয়ে বলে,”এইবার তো তোমাকে পুরো পানি দিয়ে গোসল করিয়ে দিব।”
.
মুগ্ধতা গ্লাস রেখেই দৌড়।আহির পানির জগ নিয়ে মুগ্ধতার পিছন পিছন দৌড় লাগালো।
.
মুগ্ধতা রেস্টুরেন্টের পিছন দরজা দিয়ে রেস্টুরেন্টের গার্ডেনে চলে এসেছে।গার্ডেনে আসতেই মুগ্ধতার চোখে পড়লো গার্ডেনে পানি দেয়া হচ্ছে পাইপ দিয়ে। তা দেখে মুগ্ধতার চোখ মুখ খুশীতে চিকচিক করে উঠলো।মুগ্ধতা দৌড়ে গিয়ে পাইপ নিয়ে নিল।পিছন থেকে আহির এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে উঠে,”এইবার কোথায় যাবে মুগ্ধ রানি?”

মুগ্ধ পিছন ফিরতেই আহির পুরো ভিজে গেলো।আহির চেঁচিয়ে বলে উঠে,” মুগ্ধ পানির পাইপ সরাও আমি ভিজে পুরো গোসল করে উঠছি তো।”

“সরাবো না।এইবার কেমন লাগছে মিস্টার আফরান আবরাহার আহির।”

আহির ধীরে ধীরে মুগ্ধতার কাছে এগোতে থাকে,মুগ্ধতা খেয়াল না করেই পানির পাইপ আহিরের দিকে ধরে আছে।আহির এক সময় এগোতে এগোতে মুগ্ধতার একদম কাছে এসে খপ করে মুগ্ধতার হাত ধরে ফেলে।মুগ্ধতা চমকে যায়,হাত থেকে পানির পাইপ পড়ে যায়।আহির পানির পাইপ নিচ থেকে উঠিয়ে মুগ্ধতার দিকে ধরে পুরো ভিজিয়ে দেয় মুগ্ধতাকে।বলে উঠে,”সরি মুগ্ধ রানি।”

.
মুগ্ধ, আহির পাশের এক শপিং মলে ভিজে শরীরেই চলে এসেছে।দুজনেই মল থেকে জামা নিয়ে ট্রায়াল রুমে গিয়ে চেঞ্জ করে নিয়েছে।এখন দুজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়েছে কে জামার টাকা দিবে।

মুগ্ধতা তর্জনী তুলে বলে উঠে,” আপনি যদি মানি ব্যাগ থেকে টাকা বের করেছেন তো আপনাকে আমি তুলে এক আছার মারবো।”

আহির ভ্রু কুচকে বলে,”তুমি অফ দাও।আমি দিচ্ছি টাকা।”

“একদম না।”

“তুমি চুপ থাকো আমি বলছি না আমি দিবো।আমি তোমার থেকে বড় বয়সে তো আমার কথা শুনো।”

“আরেহ বুইড়া বেডা সরেন সামনে থেকে।”মুগ্ধতা আহিরকে সরিয়ে দিয়ে রিসেপশন এর মেয়েটির হাতে টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলে,” এই নাও টাকা।”

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here