কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_২৫ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
358

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৫
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

‘কিছু বললেন চেয়ারম্যান সাহেব?”

মেহবিনের কথায় শেখ শাহনাওয়াজ এর ধ্যান ভাঙলো। তিনি বললেন,,

“না তেমন কিছুই না। অনেক দিন ধরেই ছেলেপক্ষ চাচ্ছিল এঙ্গেজমেন্ট টা করে ফেলতে শুক্রবার একটা ভালো দিন তাই ঐ দিনটাই সিলেক্ট করলাম।”

“ওহ আচ্ছা!”

“সেদিন আপনি থাকলে ভালো হতো। মিশুকে নিয়ে সমস্যা হতো না। আসলে ও তেমন মানুষজনকে ফেস করতে পারে না ও স্বাভাবিক থাকতে পারে না। ও যদি হায়পার হয়ে সেদিন কিছু করে।”

“তো কিছু করলে কি হবে? আপনার আর আপনার বাবার মাথা নিচু হয়ে যাবে। তার জন্যে আপনার বাবা কারো সামনে ফুলকে আনতে চান না। যে কোন ভালো ওকেশন বা ভালো মানুষজন থাকলে মিশুকে আটকে রাখার নির্দেশ দেন। আপনার কোন আইডিয়া তখন ফুল কি ফিল করে ? একটা পাখিকে যখন প্রথম প্রথম খাঁচায় আটকানো হয় তখন সেই পাখি টা যেভাবে বের হওয়ার জন্য ছটফট করতে থাকে ফুল ও ঠিক তেমনটাই করে। ওর ব্রেনে কতটা চাপ পরে তার ধারনাও আপনাদের নেই। তার জন্য ফুল আরো সুস্থ হতে দেরি করছে।”

শেখ শাহনাওয়াজ অসহায় চোখে মেহবিনের দিকে তাকালেন। কিন্তু আবার অন্যদিকে ঘুরে বললেন,,

“আমি মিশুকে আটকে রাখতে চাই না। কিন্তু ও মাঝে মাঝে এমন পাগলামি করে তার জন্য বাবা ওকে শাস্তি হিসেবে ওকে আটকে রাখেন।”

“বাবার বাধ্য সন্তান হতে যেয়ে নিজের মেয়ের ক্ষতি করবেন না চেয়ারম্যান সাহেব। মেয়েটা আপনার তাই আপনাকেই প্রটেক্ট করতে হবে অন্যরা রক্ত রক্ত বলে ঠিকই চিল্লাবে কিন্তু কেউ তার দায় নেবে না। আপনার মেয়ে তাই দায়টা আপনার।”

“হুম আপনি ঠিক বলেছেন আমার মেয়ের দায় আমার সেই দায়টা অন্য কেউ নেবে না। তবে আমি আবারও বলছি আপনি থাকলে ভালো হতো।’

” সেদিন জিনিয়ার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সামনে ফুল ছিল তো সেদিন তো কোন সমস্যা হয় নি। এঙ্গেজমেন্ট এর দিনও হবে না ইনশাআল্লাহ।”

“সেদিন তো আপনি বলে গিয়েছিলেন যাতে মিশু গুড গার্ল হয়ে থাকে। তাই সে ভালো মেয়ের মতোই ছিল তাছাড়া সেদিন তো তেমন কেউ ছিল না আমরা আমরাই। কিন্তু এঙ্গেজমেন্ট এর দিন অনেক লোক থাকবে তাই চিন্তা হচ্ছে উঁহু আমার সম্মানের জন্য নয়। বরং মিশুর জন্য যদি ওর বাচ্চামোর জন্য ওকে কেউ কিছু বলে দেয়। আর ও নিজেকে সামলাতে না পারে।

“আমি আপনার কথা বুঝতে পারছি। তবে এখানে আমার কিছু করার নেই আমাকে যেতেই হবে।”

“তাহলে আর কি করার।”

“আপনার বাবা ফুল কে থাকতে দিতে রাজি হয়েছে?”

“আমি এখনো উনার সাথে কথা বলি নি।”

“হুম তার সাথে কথা বলুন। ফুল এই বিয়ে নিয়ে অনেক এক্সাইটেড। যদি ওকে আঁটকে রাখেন তাহলে ওরই ক্ষতি হবে। আর যেটা আমি চাই না। আর হ্যা আমি তার আগে গিয়ে আপনার বাবার সাথে কথা বলবো।”

“হুম আজ আসছি।”

“কিছু খেয়ে যান। বসলেন ও তো না।

“সমস্যা নেই আর আমি খেয়েই বেরিয়েছি। আসি আল্লাহ হাফেজ।”

“হুম আল্লাহ হাফেজ।”

উনি যেতেই মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেহবিন মিশুর অনুষ্ঠানে থাকা নিয়ে কিছু বলতো না। যদি না মিশু ওকে রিকুয়েস্ট করতো। মিশু জিনিয়ার বিয়ের কথা শুনেই মেহবিনের কাছে বলেছে সে সবসময়কার মতো ঘরে আটকা থাকতে চায় না তার অনেক কষ্ট হয়। সে ভালো মেয়ের মতোই চুপ করে থাকবে কিছুই করবে না তাও মেনে ওকে যেন অনুষ্ঠানে থাকতে দেয়। এক পর্যায়ে গিয়ে মিশু কান্নাই করে দেয় তার জন্য মেহবিন ওকে বলেছিল সে ব্যবস্থা করবে। কথাটা শুনে মিশু যে কতটা খুশি হয়েছিল তা বলার মতো না। খুশিতে মেহবিন কে জড়িয়েও ধরেছিল।

অনেক দিন পর আজ সকাল দশটার দিকে”কাব্যের বিহঙ্গিনী” পেজ থেকে নতুন পোস্ট করা হয়েছে।

“যেকোনো পরিস্থিতিতে খুব ভেবে চিন্তে এমনভাবে সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করা উচিৎ। যাতে পরিস্থিতি প্রতিকূলে গেলেও জীবনে বিরুপ প্রভাব না পরে।”

পোস্ট টা করার পরেই বেশিরভাগ প্রশ্ন ছিল এটা, এতদিন সে কোথায় ছিল? আর তারপর কমেন্ট সবথেকে বেশি ছিল ঠিক বলেছেন, সহমত ইত্যাদি। হাজার খানেক লাইক শ খানেক কমেন্ট আর শেয়ার ও হয়েছে। পোস্ট টা আরবাজ আর মুখরের চোখ ও এড়ালো না।

দুপুরের দিকে মেহবিনের ফোনে কি যেন করছিল তখন একটা নোটিফিকেশন এলো। নোটিফিকেশন টা অন করতেই দেখলো বিহঙ্গিনীর কাব্য আইডি থেকে নতুন পোস্ট হয়েছে। সেখানে লেখা,,

“সে বোধহয় জানতো তার জীবন তার প্রতিকূলেই চলতে চায়। তাই তো সে এমনভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্ৰহন যে প্রতিকূল থাকা সিদ্ধান্তগুলোও তার অনুকূলে চলে আসে। কি বলবো সবাই তো আর বিহঙ্গিনীর মতো এতো বুদ্ধিমতি নয়।”

মেহবিন বুঝতে পারলো এখন লাঞ্চ টাইম চলছে তাই এখন পোস্ট করা হয়েছে। মেহবিন মুচকি হেঁসে লিখলো,,

“জীবন তো একটাই তাইনা তাই প্রতিটা পদক্ষেপ একটু ভেবেচিন্তেই নেওয়া উচিৎ সবার।”

ওপাশ থেকে তৎক্ষণাৎ রিপ্লাই আসলো,,

“হুম তাই তো খুব ভেবেচিন্তে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তাই তো দেখো আজ পরিস্থিতি প্রতিকূলে তবুও জীবনে খুব একটা বিরুপ প্রভাব পড়ছে না।”

“আমাকে বিয়ে না করে অন্য কাউকে বিয়ে করলে হয়তো আপনার জীবন আপনার প্রতিকূলে যেতো না। আচ্ছা আপনার কি আফসোস হয় কখনো?

“এখনো অব্দি কখনো হয়নি। তবে এখানে সবথেকে বড় কথা এটা নিয়ে আফসোস এর কিছু নেই। এটা আমাদের তকদিরে ছিল তাই হয়েছে।
আমার তকদিরে তুমি আর তোমার তকদিরে আমি ছিলাম বলেই আজ আমরা হতে পেরেছি।”

“হুম সেই জন্যই আমারও কখনো রিরুপ কিছু মাথায় আসে নি। কারন আমি আমার রবকে বিশ্বাস এবং ভরসা করি। জীবনে কি হলো না হলো সেটা নিয়ে আফসোস বহুদিন আগেই ছেড়ে দিয়েছি। জীবন সবসময় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই থাকে আমার জীবন অনুকূলে আনা আমাদের সিদ্ধান্তের ওপর ডিপেন্ড করে।”

ওপাশ থেকে কিছুক্ষণ রিপ্লাই আসলো না। মেহবিন ভাবলো হয়তো আর আসবে না। তাই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিন্তু তার কিছুক্ষণ পরেই আবার কমেন্ট এর রিপ্লাই হলো,,

“তাহার রবের প্রতি এতো ভরসা, বিশ্বাস আর ভালোবাসাই আমাকে তাহার প্রতি বারংবার মুগ্ধ করে।”

মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,

“পৃথিবীর সকল দরজা বন্ধ হলেও ঐ একজনের দরজা কখনো বন্ধ হবে না। তার বান্দার প্রতি তার অসীম দয়া। তিনি তার বান্দার সবকিছুই লক্ষ্য করেন এবং দেখেন। যদি কখনো কোন বান্দা আকাশের দিকেও তাকায় তখন আল্লাহ তায়ালা বলেন,,

“আকাশের দিকে তোমার বার বার তাকানোকে আমি অবশ্যই লক্ষ করি!”
(সূরা বাকারা – ১৪৪)

তাহলে বলুন আমরা আল্লাহর তায়ালার ওপর ভরসা করবো না তো কাকে ভরসা করবো। মানুষ মানুষকে কখনো কখনো ভালোবেসে ধোঁকা খায় কিন্তু আল্লাহ কে ভালোবাসলে কখনো ধোঁকা খাবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন ‘তার কোন বান্দা যদি তার দিকে এক পা আগায় তিনি(আল্লাহ) তার বান্দার দিকে দশ পা আগান।

“নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়া’লা ধৈর্যশীল দের সাথে আছেন’
যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে, তার জন্য আল্লাহ-ই যথেষ্ট”
~সূরা তালাক-২-৩

ওপাশ থেকে হাসির ইমুজি ওয়ালা একটা রিপ্লাই আসলো। তার সাথে লেখা “আল্লাহ তায়ালা সবাইকে হেদায়েত দান করুক আর তার ওপর তাওয়াক্কাল করে জীবন যাপন করার তওফিক দান করুক।”

মেহবিন মুচকি হেসে লিখলো,,

‘আমিন।”

_____________

বিকেলে মুখর আসলো তবে আজ সিভিল ড্রেসে নয় আর মুখে মাস্ক ও নেই। আজ পুলিশের ইউনিফর্ম পরা। মেহবিনের বাড়ির দিকে পুলিশ আসতে দেখে সবাই এগিয়ে এলো। মুখর তা দেখে একটু অবাক হলো। ও গেটের কাছে এসে দাড়াতেই একজন জিজ্ঞেস করল,,

‘ছার আপনে এনে কিসের জন্য আইছেন? কেউ কি কিছু করছে ছার?

মুখর বুঝতে পারলো পুলিশ দেখে সবাই একটু ভয় পেয়েছে আর একটু কৌতূহলও আছে সবার মনে। তবে ওনার মুখে ছার শুনে মুখর বুঝতে পারলো স্যার হিসেবেই ডেকেছে। মুখর হেঁসে বলল,,

‘না কেউ কিছু করে নি। আসলে সেদিন মারামারি হলো না ডাক্তারের সাথে সেই লোকগুলো কে তো ধরা হয়েছে। তাই কিছু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডক্টর মেহবিন এর কাছে এসেছি।”

আর কেউ কিছু বললো না। মুখর ভেতরে ঢুকলো বাকিরা সবাই চলে গেল একজন বাদে পুলিশ মানেই গ্ৰামের মানুষদের কাছে ভয়ের। সবাই চলে গেল তবে একেবারে গেল না বাড়ির ভেতরে ঢুকে লুকিয়ে দেখতে লাগলো। মুখরের সাথের একজন মেহবিনকে ডাকলো মেহবিন আর তাজেল বের হলো রুম থেকে। স্কুল থেকে ফিরেই সে মেহবিনের কাছে চলে এসেছে। মেহবিন মুখর কে দেখে বুঝতে পারলো ওর সাথে দেখা করার জন্যই এসেছে এমনিতেও সকালে বলেছিল। লোকটা মুখরের কথা জানিয়ে চলে গেল। মেহবিন মুখর কে নিয়ে ঘরে ঢুকালো না ও দেখতে পেয়েছে রাস্তার ওপাশ থেকে ওদের দেখছে তাই ও বারান্দায় দুইটা চেয়ার আনলো। মুখর কে বসতে বলল। মুখর বসতেই তখন তাজেল বলল,,

‘পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি এইহানে কি করতে আইছো?”

তাজেলের কথায় মুখর হেঁসে বলল,,

“তোমার ডাক্তাররে দেখতে এসেছি।”

“কিছু আনো নাই ডাক্তারের লাইগা? তোমার হাতে তো ফলটল কিছু দেহি না। তুমি জানো না অসুস্থ মানুষ রে দেখতে আইলে ফল আনা লাগে।”

তাজেলের কথায় মুখর ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। আর মেহবিন মুচকি হাসলো। কিছুক্ষণ ভেবে মুখর বলল,,

“আগে তুমি বলো এখানে কেন এসেছো?”

তাজেল হেঁসে বলল,,

‘ডাক্তাররে দেখতে।”

‘তুমি কি এনেছো তোমার ডাক্তারের জন্য।”

তাজেল আর মেহবিন বুঝতে পারলো মুখর তাজেলকে পিন্স মারছে। তাজেল ও কম যায়না সে দাঁত কেলিয়ে বলল,,

“আমি ছোট মানুষ কি আর আনুম তাও আমি বরই আনছিলাম। জিগাও ডাক্তার রে।”

তখন মেহবিন বলল,,

‘হুম হুম নেত্রী কিন্তু আমার জন্য আজ বরই এনেছিল। কিন্তু আপনি কিছুই আনেন নি। আবার আমাকে দেখতে এসেছেন।”

তখন মুখর বলল,,

“ওহ আচ্ছা। তাহলে কি আমাকেও কিছু আনতে হবে?”

তখন তাজেল বলল,,

‘হ হ আনতে হইবো। অসুস্থ মানুষরে দেখতে আইছো কিছু আনো নাই এইডা ভালো কথা না।”

“তাহলে তো আনতেই হয়। ঐ দেখো গেট এ কেউ একজন আসছে।”

তাজেল আর মেহবিন দু’জনেই সেদিকে তাকালো। সত্যিই একজন আসছে হাতে বড় একটা বক্স। মুখর মেহবিন কে এগিয়ে যেতে বলল মেহবিন লোকটার থেকে বক্সটা নিয়ে এলো। লোকটা মুখরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেল। মেহবিন ওটা এনে বারান্দায় রাখলো। তখন মুখর বলল,,

“এই যে সব এসে গেছে নেত্রী। আমি জানি আমি এ বাড়িতে আসলে সবাই যেভাবেই হোক দেখবে আমি যদি নিজের হাতে কিছু নিয়ে আসি তাহলে অনেকেই অনেক কিছু মনে করবে। তাই অন্য একজনের হাত দিয়ে নিয়ে আসলাম। আর হ্যা এখানে শুধু ফল না আরো অনেক কিছু আছে তোমার জন্য এক বক্স চকলেট ও আছে। আমি যাওয়ার পর তোমার ডাক্তারের থেকে নিয়ে নিও।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

“আইচ্ছা তুমি তো দেহি খুব চালাক পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা।”

“একটু চালাক না হইলে কি তোমার ডাক্তাররে বিয়া করতে পারতাম নেত্রী।”

” তুমি তো দেহি আমার মতো কথা কওয়া শুরু করছো পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা।”

“হ তোমার কথা আমার ভাললাগছে তাই। তা কেমন আছো দুজন?

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো!”

‘আমায় জিজ্ঞেস করবে না কেমন আছি?”

তখন তাজেল বলল,,

“তুমি ভালো আছো দেইহাই এনে আইছো তাই ডাক্তার জিগাস করে নাই।”

“এই তোমরা দুজন কি আমার সাথে মজা করছো?”

মেহবিন আর তাজেল দুজন দুজনের দিকে তাকালো আর একসাথে হেঁসে মাথা নাড়িয়ে বলল না আবার একে অপরের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলল হ্যা।এর মানে মুখর বুঝলো দু’জনে মিলে ওকে বোকা বানাচ্ছিল। মুখর হেঁসে বলল,,,

“তা আপনারা দুজন কি অতিথি আপ্যায়ন করেন না নাকি? কেউ বাড়িতে আসলে নাস্তা দিতে হয় এইটুকু ভদ্রতা নেই নাকি?

মুখরের কথা শুনে মেহবিন ভেতরে গেল আর একটা প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিয়ে এলো। মুখর হেঁসে ফেললো তারপর তিনজনে আরো কিছুক্ষণ কথা বলল। ওদের কে কেউ কেউ দেখছে বলে মুখর তাড়াতাড়ি চলে গেল। তবে কেউ ওরা কি কথা বলেছে সেটা শুনতে পায়নি। এরপর মেহবিন মুখরের দেওয়া বক্সটা নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো। বক্সটা খুলতেই সবার প্রথমেই একটা গোলাপ ফুলের তোড়া দেখতে পেল‌। সেটার ওপরে লেখা বিহঙ্গিনীর সাথে সাক্ষাতের জন্য। তার নিচে দুটো চকলেট বক্স একটা তাজেলের আরেকটা মেহবিনের। তার নিচে কয়েক রকমের ফল। তার নিচে মেহবিনের ফ্রেবারিট চিপস বিস্কুট। এগুলো দেখে তাজেল বলল,,

‘ পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা দেহি তোমারে মেলা ভালোবাসে ডাক্তার।”

মেহবিন কিছু বললো না শুধু মুচকি হাসলো। তারপর তাজেলের জন্য আনা চকলেট বক্স ওর হাতে দিল সাথে চিপসের প্যাকেট আর বিস্কুট ও দিল।

________________

“‘আপনি নাকি ফুল মানে মিশুমনিকে অনুষ্ঠানে থাকতে বারন করেছেন?”

মেহবিনের কথায় শেখ শাহেনশাহ মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তো কি করমু পাগল কে অনুষ্ঠানে নিজেদের মান সম্মান ডুবামু নাকি।”

“মিশু পাগল নয় ও একটু অবুঝ আর কিছু না। ”

‘এতো বড় দামরা মাইয়ার কাজ যদি পাঁচ বছরের পুলাপাইন এর মতো হয় তাইলে কি চলবো। তারে তো সবাই পাগলই বলবো তাই না। তাই মান সম্মান খুয়ানোর জন্য ওরে অনুষ্ঠানে রাখুম না।

“কোনদিন রেখেছেন কোন অনুষ্ঠানে যে বুঝবেন ও আপনার মান সম্মান ডুবাবে নাকি।”

‘আমাদের পারিবারিক বিষয়ে তোমার না কথা কওয়াই ভালো।”

‘আমি তো আপনাদের পারিবারিক বিষয় নিয়ে কিছু বলছি না শুধু মিশুকে নিয়ে বলছি। মিশু জিনিয়ার বিয়ে নিয়ে অনেক এক্সাইটেড তাই ওকে আটকে রাখবেন না।”

‘অনুষ্ঠানে কিছু হইলে তুমি তার দায় নিবা। তাছাড়া তুমি তো শুনলাম ঢাকায় যাইবা ওরে সামলাইবো কি রা?”

এ কথা শুনে মেহবিন একবার শেখ পরিবারের সদস্যদের তাকালো। মিশু ওর হাতটা শক্ত করে ধরলো। পাগল বলার পরও ও কিছু বললো না কারন মেহবিন বলেছে একটা কথাও না বলতে তাই সে চুপ করে আছে। পুরশুদিন শুক্রবার আর জিনিয়ার এঙ্গেজমেন্ট। তাই আজ এসেছে শেখ শাহেনশাহ এর সাথে কথা বলতে। কাল রাতেই শেখ শাহনাওয়াজ জানিয়েছেন তার বাবা রাজি নয় মিশুকে অনুষ্ঠানে রাখতে তাই আজ এসেছে হাসপাতাল থেকে সোজা এখানে। বাড়িতে এসে সবাইকেই পায় শুধু আরবাজ আর ওর কাকা মামা ছাড়া। মেহবিন সবার শেষে মিশুর দিকে তাকালো।তখন মিশু ফিসফিস করে মেহবিনের কানে কানে বলল,,,

“আমি গুড গার্ল হয়ে থাকবো কিছু করবো না প্রমিস।”

তা শুনে মেহবিন শেখ শাহেনশাহ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,,

“আমি না থাকলাম তবুও ওকে থাকতে দিন। কিছু হলে আমায় ফোন করবেন আমি চলে আসবো মিশুকে সামলাতে।”

“তোমার কথা শুইনা ওরে রাখতেছি কিছু হইলে তোমার দায় কিন্তু। আর মিশু যদি পাগলামি করে তাইলে এরপর থেইকা আর কোন অনুষ্ঠানেই ওরে রাখা হইবো না।”

শেখ শাহেনশাহ এর কথা শুনে মেহবিন হাসলো সাথে দুজনের মুখেও হাঁসি ফুটে উঠলো তারা হলো শেখ শাহনাওয়াজ আর মিশু। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,,

“আচ্ছা।”

এরপর মেহবিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দিল। বাড়ির সামনে আসতেই দেখলো নওশি দাঁড়িয়ে। ওকে দেখে মেহবিন বলল,,

“নওশি তুমি এখানে?”

‘আপনার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম।”

‘কেন?”

‘তাজেল,,”

তাজেলের কথা শুনে মেহবিন তাড়াতাড়ি করে বলল,,

“কি হয়েছে নেত্রীর?”

‘জানিনা কলেজ থেকে আসার পর দেখলাম চুপচাপ শুয়ে আছে। পরে শুনলাম স্কুলেও যায়নি। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম ও কিছুই বলেনি। ওভাবেই নাকি সকাল থেকে সারাদিন না খেয়ে শুয়েছিল। জোর করেও কেউ ওঠাতে পারে নি। পরে শুনলাম ওর,,

তাজেলের অবস্থা শুনেই মেহবিন তাজেলের বাড়ির দিকে হাঁটা ধরল। নওশি আর কিছু বলার সুযোগ পেল না তাই মেহবিনের পেছন পেছন চললো। মেহবিন যখন যাচ্ছে তার নেত্রীকে ঠিক সামলে নিতে পারবে তাই ভেবেই নওশি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

~চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here