#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#লেখিকা_Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_০৩
.
মুগ্ধতা নিজের কেবিনে বসে মনিটরের দিকে তাকিয়ে ৬৭০ নম্বর রুমে থাকা পেশেন্ট রোহান আর সোহার ঝগড়া দেখছে।
সোহার হাত ধরে রোহান বলছে ,”এই দেখ তোর শা’ক’চু’ন্নি’র মত লম্বা লম্বা দুইটা হাত , ব’ল’দ ছোট বেলায় বাবা মা সেইখায়নি কোনটা হাত কোনটা পা।আমি বলছি শুন এইটা তোর হাত ঐযে ওই দুইটা তোর ঠ্যাং।”
সোহা কেঁদে দিয়ে বলে,” এএএ রোহান তুই কানা কবে হয়ে গেলিরে।”সোহা নিজের হাত উঠিয়ে রোহান এর সামনে ধরে বলে,”দেখ কানা আমার হাত নেই ঐদেখ আমার পাও নেই।” (সোহার কোটার্ডস সিনড্রোম নামে ডিসঅর্ডার আছে।এই ডিসঅর্ডারে মানুষ মনে করে তার হাত,পা,আত্মা হারিয়ে ফেলেছে।)
“আরেহ আমি না তুই কানি দেখ ঐযে তোর দুইটা ঠ্যাং এইযে তোর হাত।”
সোহা চিৎ হয়ে শুয়ে বলে,”আমিও নেই আমার আত্মাও নেই।”
পাশ থেকে আরেকটি ছেলে বলে,”তোরা দুইটায় পাগ ” বাকিটা না বলে মুখে বিষন্নতা এনে চুপ হয়ে গেলো।
সোহা রোহান চেঁচিয়ে ছেলেটিকে বলে উঠে ,”তুই পাগল।”
মুগ্ধতা বিড়বিড় করে বলে,”এক পাগল আরেক পাগলকে বলছে তুই পাগল।”অতঃপর মুগ্ধতা ঘাড় কাত করে পাশে তাকিয়ে বলে,”রুদ্র এদের আলাদা আলাদা রুমে শিফ্ট করো,আজ আমার হাতে সময় নেই এখন বাড়ি যেতে হবে।”
.
সূর্য দিগন্তের নিচে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে
লায়ানা একের পর এক ফাইল চেক করছে সামনে বসা পুরুষটি ফাইল এগিয়ে দিচ্ছে।লায়ানা হঠাৎ বিরক্তি প্রকাশ করে বলে,”রাফি আমার আর ভালো লাগছে না আজ এত্ত প্রেসার তার উপর বাড়ি ফেরার সময় হয়ে এসেছে।আমার তো হাহ হা হা করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।”
রাফি ভ্রু কুচকে বলে,”ম্যাম এইটা আবার কোন ধরনের কান্নার স্টাইল।”
লায়ানা খোলা চুল গুলো হাত খোঁপা করে বলে,”তুমি বুঝবে না মিস্টার রাফফু যাও গাড়ি বের করো আমি এইখানে আরো কিছুক্ষন থাকলে বাড়ি যাওয়ার পর খালামণি জুতা নিয়ে আমার পিছনে রেস লাগবে।
.
কিছুক্ষন আগেই আহনাভ ও আহির অফিস থেকে ফিরেছে।দুজনেই তাদের বাবার কাছে বকুনি খেয়ে দৌড় লাগিয়েছে নিজেদের ঘরে তৈরি হওয়ার জন্য।তাদের বাড়ি ফেরার কথা ছিল সন্ধ্যার আগে কিন্তু তারা সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরেছে।
ঘণ্টা খানেক পার হয়ে গেলো দুই ভাইয়ের নামার নাম গন্ধ নেই।আহির ও আহনাভ এর মা বাবা চারজন সোফায় বসে তাদের দুই ছেলের অপেক্ষা করছে।আহির শার্ট এর স্লিভ ফোল্ড করতে করতে শিরি দিয়ে নিচে নামছে।(আহিরের পরনে কালো রঙের প্যান্ট ও লাল রঙের শার্ট ইন করা ,শার্ট এর উপরের দিকে তিনটে বোতাম আনব্লক করা)আহিরের বাবা আহিরকে এইভাবে ডেশিং সেজে ধীর গতিতে নামতে দেখে ধমকের সুরে বলেন,”কচ্ছপের মত না নেমে একটু খরগোশের মত পা চালাও।”
আহির নিজের মতোই ধীর গতিতে নেমে এসে বলে,”আরেহ বাবা তুমি জানো না স্লো অ্যান্ড স্টেডি উইন্স দা রেস।”
পিছন থেকে আহনাভ নেমে এসে বলে,”সরি বাবা লেট হওয়ার জন্য।”
আহনাভের বাবা কঠিন স্বরেই বলে,”ইটস ওকে চল এখন।”
.
আহির আর আহনাভের গাড়ি রেস্টুরেন্ট এর সামনে থামালে দুজনের বাবা মা রেস্টুরেন্টের ভিতরে চলে যায় আর আহির,আহনাভ গাড়ি পার্কিং করে রাখতে চলে যায়।
আহির ও আহনাভের বাবা দুজন তাদের কাঙ্ক্ষিত মানুষগুলোর মুখ দেখেই ফ্যামিলি টেবিলটির দিকে হাঁটা ধরে।বড় ফ্যামিলি টেবিল বুক করা হয়েছে। মুগ্ধতার মা,ইজাজ, মুগ্ধতা পাশে লায়ানা,মামারা,বড় আম্মু,ছোট আম্মু,বাড়ির ছোটরা সহ টেবিলে মুগ্ধতার পুরো পরিবার গোল হয়ে বসেছে।আহির ও আহনাভের বাবা মা টেবিলটির সামনে আসতেই মুগ্ধতার পুরো পরিবার বসার আসন ছেড়ে দাড়িয়ে যায়।
আহনাভের বাবা ঠোঁটের কোণে এক ফালি হাসি ঝুলিয়ে বলে উঠে,”ব্রাদার মুরাদ কেমন আছো?”
মুগ্ধতার বড় মামা এগিয়ে গিয়ে আহনাভের বাবার সাথে হাত মিলিয়ে বলে,”এইত্ত আলহামদুলিল্লাহ।”
আহিরের বাবা মিষ্টি হেসে বলে,”তোমার পুরো পরিবার এসেছে এতে কিন্তু আমরা অনেক খুশি হয়েছি মুরাদ।”
মুগ্ধতার বড় মামা জিজ্ঞাসুক চাহনিতে বলে উঠে,”তোমাদের ছেলেরা কোথায় ওরা কী আসেনি ?”
সেই মুহূর্তেই আহির ও আহনাভ দরজা ঠেলে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে।আহিরের মা দুইজনকে দেখতে পেয়ে বলে উঠে,”ঐযে এসে পড়েছে আমাদের ছেলেরা।”আহিরের মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে সবাই আহনাভ ও আহিরের দিকে তাকায়।
আহির ও আহনাভ কে দেখে মুগ্ধতা ও লানায়ার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম।মুগ্ধতা লানায়া দুইজন দুইজনের দিকে তাকায়,মুগ্ধতা আর আহির এর দিকে না তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে।মুগ্ধতা যে আহিরের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারবে না।আহিরের দিকে তাকালে যেনো আহিরের এই কিলার লুক তার পুরো গায়ে আগুন জ্বালিয়ে দিবে তাই দৃষ্টি সরিয়ে ফেলাই স্রেও মনে করেছে মুগ্ধতা।কিন্তু লানায়া আহনাভের দিকে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।
মুগ্ধতা লানায়ার হতে চিমটি দিয়ে বলে,”এই মেয়ে তোর শ’কু’নি দৃষ্টি সরা এমন ভাবে তাকিয়ে আছিস গিলে খেয়ে ফেলবি?”
লানায়া এক হাত দিয়ে চিমটি কাটা হাত ডলতে ডলতে চোখ ছোট ছোট করে মুগ্ধতার দিকে তাকায়।
আহনাভ,আহির তাদের বাবার পাশে এসে দাঁড়ালে আহনাভের বাবা আহনাভের হাত ধরে বলে উঠে ,” এই হচ্ছে আমার ছেলে জায়ান আবরাহার আহনাভ।”থেমে গিয়ে আরেক পাশে দাড়িয়ে থাকা আহনাভের মায়ের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,”আর ও হচ্ছে আমার স্ত্রী মিসেস অভ্রো আবরাহার জেরিন।”
লায়ানা মুচকি হেসে নিজেই মনে মনে আওড়ালো,” হায় মে তো মার্যাওয়া,আমার ভবিষ্যতের শাশুড়ি তো তার ছেলের মতোই মাশাল্লাহ। ভবিষ্যৎ শাশুড়ির ছেলে যেমন দেখতে মাশাল্লাহ ফাটাফাটি তেমন তার ফাটাফাটি নাম!কী যে লাগছে লায়ানা তুই তো এখনই হার্ট এ্যাটাক করে টপকে জাবি মনে হচ্ছে।”(আহনাভের পরনে সাদা রঙের শার্ট তার উপর গাঢ় নীল রঙের মধ্যে সাদা রঙের স্টোন বসানো জ্যাকেট আর গাঢ় নীল রঙের প্যান্ট।হাতে ঘড়ি ঝাঁকড়া চুল গুলো সেট করা।)
আহনাভের বাবা থেমে গিয়ে আহিরের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,”এইবার তুই পরিচয় করিয়ে দে আহিরকে ওদের সাথে।”
আহিরের বাবা তার স্ত্রীর হাত এক হাতে ধরে আহিরের কাঁধে আরেক হাত দিয়ে বলে,” ও হচ্ছে আমার ছেলে আফরান আবরাহার আহির।আর এই মিসেস হচ্ছে আমার স্ত্রী মিসেস সাদেক আবরাহার অনামিকা।”আহিরের বাবা থেমে গিয়ে আহনাভ ও আহিরের উদ্দেশ্যে বলেন,”আহনাভ আর আহির উনি হচ্ছে আমার আর অভ্রোর পুরনো বিজনেস পার্টনার ।”
আহির ও আহনাভ সাথে তাদের বাবা মা তাদের বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে পড়ে।তারা বসতেই মুগ্ধতার পুরো পরিবারের সবাই বসে পড়ে।আহির সকলের দিকে চোখ বুলাতেই মুগ্ধতার দিকে চোখ আটকে যায়।(মুগ্ধতা লাল রঙের আনারকালি পড়েছে আনারকালির মধ্যে লাল রঙের পাথরের স্টন বসানো।মুখে হালকা মেকআপ বলতে লিপস্টিক আইলাইনার।চুল গুলো কোমর অব্দি উন্মুক্ত করে রাখা।)
আহির চোখের দৃষ্টি সরিয়ে ফেলে।
“আমার পরিবারের সবাইকে তো তোমরা দুইজন চিনোই শুধু দুইজন স্পেশাল পারসন আছে আজ তাদের সাথে পরিচয় করাচ্ছি।”
মুগ্ধতার বড় মামা হালকা কেশে চোখের ইশারায় মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলে,”ও হচ্ছে আমার আদরের ভাগ্নি মুগ্ধতা।”সবাই মুগ্ধতার বড় মামার দৃষ্টি অনুসরণ করে মুগ্ধতার দিকে তাকায়।
মুগ্ধতার বড় মামা আবার বলা শুরু করে,”মুগ্ধতা এত্তদিন কানাডা ছিল দুইমাস আগে এসেছে তাই তোমরা দুইজন আমাদের বাড়ি এসেও ওকে দেখতে পাওনি।মুগ্ধতা মা একজন সাইকোলজিস্ট,কানাডায় ওর নিজের হসপিটাল আছে এইখানেও একটা হসপিটাল আছে ঐখানেই বসে রেগুলার।”
মুগ্ধতার বড় মামা থামতেই মুগ্ধতা সালাম দিল সবাইকে।সবাই সালামের উত্তর দিল।আহির পুনরায় মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে ফেলে।
আহিরের মা মুচকি হেসে বলে,”মাশাল্লাহ মুগ্ধতা মা তুমি দেখতে খুব মিষ্টি।”
আহনাভ আহিরের মা ও মুগ্ধতার বড় মামার দিকে তাকিয়েই তাদের কথা শুনছে,মুগ্ধতার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে তার বড় মামার দিকে দৃষ্টি রাখলো।
মুগ্ধতার বড় মামা লায়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,”আর ও হচ্ছে,বলতে গেলে আমাদের আরেক মেয়ে হায়াতি।”সবাই লায়ানার দিকে তাকালে লায়ানা মুচকি হেসে সালাম দেয়।সবাই সালামের উত্তর নেয়।আহনাভ মুগ্ধতার বড় মামার চোখের দৃষ্টি অনুসরণ করে লায়ানার দিকে তাকিয়ে পুনরায় দৃষ্টি মুগ্ধতার বড় মামার দিকে ফিরিয়ে নেয়।
মুগ্ধতার বড় মামা আবার বলা শুরু করে,”হায়াও মুগ্ধতার সাথেই কানাডা ছিল।আমরা সবাই ওকে ছোট করে হায়া বলেই ডাকি।হায়া হচ্ছে প্রফেশনাল আর্কিটেক্ট,কানাডায় ওর নিজের কোম্পানি আছে এইখানেও ওর কোম্পানির একটা শাখা আছে।”
আহির ঠোঁটের কোণে হাসি বজায় রেখে বলে,” ওহ! মিস হায়া যে একজন আর্কিটেক্ট এন্ড আমার বাবার পুরনো বিজনেস পার্টনারের পরিবারের আমি আগে জানলে ওনার সাথে আগেই দেখা করতে চাইতাম ।আমাদের কম্পানির একটি শাখা আমরা কানাডা করতে চাচ্ছিলাম তার ডিজাইন এর জন্য আর্কিটেক্ট খুব প্রয়োজন ছিল।”
মুগ্ধতার বড় মামা বলে,”এখন তো সবে পরিচয় হলো বিজনেস এর কথা পরে বলো।খাবার এসে পড়েছে আগে সবাই খেয়ে নাও।”
সকলের কথার মাঝে সার্ভেন্ট এসে খাবার টেবিলে সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছে।সবাই খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।
খাওয়ার মাঝে মুগ্ধতার বড় আম্মু আহিরের বাবার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,”আমাদের আহনাভ আর আহির কী করছে ভাই?”
আহিরের বাবা খাওয়া থামিয়ে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলেন,”আহনাভ, আহির আমাদের সাথেই আমাদের পিএস কোম্পানি সামলাচ্ছে।দুজনে বিজনেস সামলানোর পাশাপাশি আহির পেশায় একজন হার্ট স্পেশালিস্ট ডক্টর আর আহনাভ একজন অ্যাক্টর।”
লায়ানা মনে মনে তো পুরোই নেচে গেয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে পারছে না উঠেই কয়েকটা ডিস্কো ড্যান্স দিতে।মনে মনে বলে,”আহ আমার হোনে ওয়ালা খাম্বা হোয়াইট ডায়মন্ড জামাই দেখি অ্যাক্টর।আজকে গিয়েই দেখতে হচ্ছে তার অ্যাক্টিং স্কিল এর ভিডিও।জীবনে কী করলি কাজে এত চাপ না নিয়ে এই হোয়াইট ডায়মন্ড এর কোনো ভিডিও দেখলেও তোর চোখে আরো আগে পরে যেত। ”
.
খাবার খাওয়া শেষে আহনাভের মা আহনাভকে চিমটি কাটে আহনাভ চরম বিস্ময় নিয়ে তার মায়ের দিকে তাকাতেই সে ফিসফিস করে বলে,”দেখ হায়াতি মেয়েটা দেখতে কী মিষ্টি।”
আহনাভ মায়ের দিকে ভ্রু কুচকে বলে,”আমি দেখে কী করবো?”
আহনাভের মা চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে পুনরায় ফিসফিস করে বলে,”আরেহ আমার হাদা ছেলে এইটুকু বুঝিস না কেনো?তাকাতে বলছি তাকিয়ে দেখ একবার।”
আহনাভ বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে,”মা তুমি বাবার মত আমাকে কী হাদ টাদা বলছো বলোতো”
আহনাভের মা তার ছেলের বিরক্তি মাখা মুখের মত নিজেও একই মুখ বানিয়ে বলে ,” তুই আমার কথা না শুনলে তোর বাবার মতো করে তোর কান মুলে দিবো দেখিস।আর আমি দেখেছি মেয়েটা তোর দিকে তাকিয়েছিল এতক্ষন।”
“মা তাকিয়ে থাকতেই পারে তার চোখ আছে আল্লাহ দেখার জন্যই দিয়েছে।কিন্তু আমি পারবো না তাকাতে।”
“আরেহ মেয়েটার নজর তোর দিকে একটু ভিন্ন ভাবেই ছিল।”
“কেন মা মেয়েটা কী টেরা যে ভিন্ন রকম হবে।”
আহনাভের মা বিরক্তিতে চোখ মুখ খিচে ফেলে ছেলের প্রত্যেকটা জবাবে।আহনাভ ও তার মায়ের ফিসফিসিয়ে কথা বলার মাঝে দুইজন চুপ হয়ে মুগ্ধতার দিকে তাকায়।মুগ্ধতা দাড়িয়ে বলে,”তোমরা যদি পারমিশন দিতে আমি একটু রেস্টুরেন্ট টা ঘুরে দেখতাম।”
মুগ্ধতার বড় মামা সহ বড়রা সবাই বলে উঠে,”যাও।”মুগ্ধতা লায়ানাকে চোখের ইশারায় উঠে তার সাথে যেতে বললে লায়ানা কাচুমাচু হয়ে বিরবির করে বলে,”তুই যা না আমি থাকি প্লিজ বনু।”
মুগ্ধতা বুঝতে পেরেছে তার পাগল বোন এখন তার হোয়াইট ডায়মন্ডকে দেখে মন ভরবে সে উঠবে না।তাই একা হাঁটা ধরল।আহিরের ফোন আচমকা বেজে উঠলে আহির সকলের দিকে তাকিয়ে,”এক্সকিউজ মি।”বলেই উঠে চলে যায়।
.
মুগ্ধতা হেঁটে হেঁটে দেখছে হঠাৎ পিছনে ঘুরতে গিয়ে শক্ত পক্ত কিছুর সাথে বাড়ি খেতে গিয়েও নিজেকে সামলে নেয়।মুগ্ধতা ঠিক হয়ে দাড়াতেই সামনের মানুষটির বলে,”আরেহ মিস সাবধানে।”
মুগ্ধতা ভ্রু কুচকে বলে,”এক্সকিউজ মি দুনিয়াতে কি জায়গার অভাব পড়েছে?এখানে আশেপাশে এত জায়গা থাকা সত্বেও আমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?”
আহির পকেটে ফোন রেখে বলে,”আমি বড় ভুল করে ফেলেছি দুনিয়াতে এত্ত জায়গা থাকতেও আপনার পিছনে দাড়িয়ে।”
“আপনি বুঝতে পেরেছেন থ্যাংক ইউ।”
আহির দুই হাত বুকে গুঁজে বলে,” ওয়েলকাম মিস মুগ্ধ কিন্তু আপনিও একটু দেখে শুনে হাঁটবেন বুঝলেন।”
” মরার!কিভাবে হাঁটবো?পিছনে এইভাবে খাম্বার মত দাড়িয়ে থাকলে বাড়ি তো খাবোই।ভালো হয়েছে আমি নিজেকে সামলে নিতে জানি।”
“সামলে না নিতে জানলেও মুগ্ধতা আমি মন মুগ্ধ হয়ে আপনাকে ক্যাচ করে ফেলতাম।”
“হাহ আমি মুগ্ধতা কারো কোলে পড়া পছন্দ করি না।আমি কোনো বল না যে আমাকে কেউ সিক্স মারবে আর কেউ ক্যাচ করে নিবে।”
“আমি তো আপনার ক্যারেক্টারের প্রতিও মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।আপনি চাইলে আমার মনের মধ্যে সিক্স মেরে চলে আসতে পারেন আমিও নাহয় আপনাকে ক্যাচ করে ফেলব।”
“থ্যাংক ইউ আমি জানি আমার ক্যারেক্টার যে কাউকে মুগ্ধ করার মত। আজ এটা রইল আপনার ক্যাচ করার কথা সেটা যেনো না হয় দোয়া করি এরপর যেন আপনার সাথে আমার দেখাও না হয়।”
“আমিও দোয়া করি আপনার এই দোয়া যেনো কবুল না হয়।”
“হাহ আমিও দোয়া করি যেন আপনার কবুল না হওয়ার দোয়া যেন কবুল না হয়।” বলেই হেঁটে চলে যায় মুগ্ধতা।
আহির মুখ টিপে হেসে মুগ্ধতার যাওয়ার পানে তাকিয়ে বলে, “মানুষকে জ্বালাতেই কী শান্তি লাগে রে আহির।কাউকে না জ্বালালে আমার আত্মাও বোরিং ফিল করে।কিন্তু মুগ্ধ আপনাকে জ্বালিয়ে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি।
.
লায়ানা আহনাভকে দেয়ালের সাথে পিন করে দাড়িয়ে আছে।আহনাভ ওয়াশরুমে এসেছিল শার্ট এর হাতায় খাবার লাগায় তা ক্লিন করতে।লায়ানাও নিজের জামার উপর খাবার ফেলে ওয়াশরুমে নাম করে আহনাভের পিছে পিছে চলে এসেছে।এখন তারা এইভাবে দুজন দাড়িয়ে আছে।আহনাভ লায়ানার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বলে,”এই মেয়ে কী করছো!চিনি না জানি না এইভাবে সরো সামনে থেকে।”
লায়ানার ঠোঁটের কোণের হাসি উড়ে যায়,ভ্রু কুচকে বলে,”এই হোয়াইট ডায়মন্ড জাস্ট শাট আপ, যখন বড় মামা আমার পরিচয় সবাইকে দিল তখন তুমি কী মঙ্গল গ্রহে ছিলে?”
আহনাভ না বোঝার ভঙ্গিতে বলে,”আরেহ সরো তো সামনে থেকে কে তুমি?”
লায়ানা মুখে এক গাদা বিস্ময় নিয়ে বলে,”ওহ মাই গুড নেস তুমি কী বয়রা তখন শুন নাই আমি কে?”
আহনাভ বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়।লায়ানা মুচকি হেসে বলে,”আমি বলে দি আমি কে।আমি হায়াতি আহমেদ লায়ানা।সবাই আমাকে হায়া বলে ডাকে আর আমার বনু আমাকে লায়ানা তোমার যেইটা ভালো লাগে তুমি আমাকে সেটা বলেই ডাকতে পার।”
আহনাভ এখন বুঝতে পারলো তাকে এইভাবে দেয়ালের সাথে পিন করে রাখা মেয়েটি কে।আহনাভ এখন ভালো করে লায়ানাকে দেখে নিল (লায়ানার পরনে এশ রঙের আনারকলি তার মধ্যে নীল রঙের কিছু প্রিন্ট এর কাজ।মুখে হালকা মেকআপ আর হাঁটু অব্দি উন্মুক্ত চুল।)মেয়েটা মুচকি মুচকি হাসছে তা দেখে আহনাভের এক মুহূর্তের জন্য হাসি পেয়েও যেনো তা উড়ে গেলো ।আহনাভ মুখে গম্ভীর্যতা ফুটিয়ে বলে,”বুঝেছি কে তুমি।কিন্তু এইভাবে বেশরমের মত একটা ছেলেকে দেয়ালের সাথে পিন করে কেনো রেখেছো।”
#চলবে।
ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে আশা করি ক্ষমার দৃষ্টিতে নিবেন সকলে।প্রিয় পাঠক পাঠিকারা,আজ গল্পটা তোমাদের জন্য অনেকটা বড় করে লিখেছি আমি তোমাদের কমেন্ট গুলো পড়তে চাই আর তোমরা তোমাদের সুন্দর সুন্দর একটা কমেন্ট কিনা করো না!