ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_২০

0
247

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_২০
লায়ানা লাফানো থামিয়ে হুট করে জাপ্টে জড়িয়ে ধরে আহনাভকে।আহনাভ নিশব্দে হাঁসে,দুই হাতের বাহুডোরে আগলে নেয় লায়ানাকে।

লায়ানা ভেজা ভেজা কণ্ঠে শুধায়,”আহনাভ আমি যে কত খুশি আজ তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।”

আহনাভ এক হাত লায়ানার মাথায় রেখে বলে,” এই তুমি কাঁদছো?”

“নাহ তো।”

আহনাভ লায়ানার থুতনি ধরে মুখ উচু করে দেখে লায়ানা কাঁদছে। আহনাভ অবাক স্বরে বলে উঠে,”এই হায়া পাখি কাঁদছো কেনো?”

লায়ানা কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বলে উঠে,” জানো আহনাভ আমি ভেবেছিলাম আমার এই এক তরফা ভালোবাসা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল কিন্তু এখন মনে হচ্ছে নাহ কোনো ভুল করিনি।আমি তোমার প্রথম ভালোবাসা হতে নাই পারলাম তোমার শেষ ভালোবাসা হতে চাই আহনাভ।”

আহনাভ লায়ানার চোখের পানি বৃদ্ধা আঙ্গুলে মুছে দিয়ে বলে,”এই চোখে যেনো কখনো পানি না আসে হায়া পাখি।”

লায়ানা মলিন হেঁসে বলে,”তোমার এই ভালোবাসা আমার কপালে কয়দিন সইবে জানিনা।যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখে তাহলে মৃত্যুর আগ অব্দি আমি তোমাকে ভালোবাসবো।”

আহনাভ কিছু বলেও যেনো বলতে পারলো না।তাকিয়ে থেকে বলল,”আহিরের আকদ শেষ হোক তারপর নাহয় তোমার আর আমার কথা আমার পরিবারের সকলকে জানাবো।তোমাকে খুব জলদি আমার বা পাঁজরের হাড় বানিয়ে নিয়ে আসবো হায়া পাখি।”

লায়ানার ঠোঁটের কোণে এক প্রসন্ন হাঁসি ফুটে উঠলো।

…..

কেটে গেলো তিনদিন।আজ শুক্রবার,সকাল থেকে প্রকৃতি যেমন সেজেছে তার অন্য এক রূপে তেমনি আজ মুগ্ধতাও সেজেছে,তার জীবনের নতুন এক অধ্যায়ে পদার্পণ করার উপলক্ষে।আজ মুগ্ধতা আহিরের আকদ।
.
মুগ্ধতাকে সাজিয়ে তার ঠিক সামনে লায়ানা দাড়িয়ে নিজের গাল এক হাতে ভর দিয়ে ভাবুক দৃষ্টিতে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে আছে।

মুগ্ধতা প্রশ্নবোধক চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,”এই আমাকে কী ভালো লাগছে না?”

লায়ানা মুগ্ধতার সামনে দুই হাঁটু মুড়ে বসে বলে,”মাশাল্লাহ এতই সুন্দর লাগছে যে আমি ভাবছিলাম আহির জিজু অজ্ঞান হয়ে যাবে না তো এই মুগ্ধতাকে দেখে।”বলেই মিটমিট করে হাসা শুরু করে লায়ানা।

(মুগ্ধতার পরনে লাল রঙের ভারী কাজের মধ্যে থ্রি পিস।মাথায় তার মায়ের বিয়ের চুনরি। মুখে হালকা প্রসাধনীর ছোঁয়া।চুল গুলো সুন্দর করে বেনি করে, বেনির মাঝে মাঝে পার্ল এর ক্লিপ দিয়ে বেনিটি সুন্দর করে সজ্জিত করা।)

.
মুগ্ধতার ঘরে এক এক করে মুগ্ধতার বাড়ির সব কচিকাঁচার দল প্রবেশ করে সাথে সাহিরাহ, আলিযা, আফ্রা।

আফ্রা , আলিযা মুগ্ধতার দিকে এগিয়ে যায়। আলিযা দুষ্টু হেসে বলে,” আমাদের আহির ভাই তো জিতে গেলো মুগ্ধতা আপ্পিকে পেয়ে।”

আফ্রা বলে উঠে,”মাশাল্লাহ মুগ্ধতা আপ্পি তোমাকে অনেক সুন্দর লাগছে আজ তো আমাদের ভাই তোমাকে দেখার পর হার্ট অ্যাটাক করে কিনা তা নিয়ে চিন্তায় আছি আমরা।”

সাহিরাহ আফ্রাকে সরিয়ে মুগ্ধতার সামনে এসে বলে,” এই দুষ্টুদের কথা শুনো না তো মুগ্ধতা।আহির মসজিদে বসে আছে এখনও।চলো এখন বসার ঘরে।আহান আর আহনাভ কাজী নিয়ে চলে এসেছে।”

লায়ানা সাহিরাহর কোলে ওয়ার্দির দিকে তাকিয়ে বলে,”আপু ওয়ার্দি কে আমার কাছে দাও।”

সাহিরাহ হেঁসে ওয়ার্দিকে লায়ানার কোলে দিয়ে দেয়, ওয়ার্দিকে বলে,”আম্মু শুনো এই হচ্ছে হায়াতি মাম্মাম যে তোমাকে সেইদিন টেডি গিফ্ট করলো।তোমার মনে আছে?”

ওয়ার্দি গোল গোল চোখ করে ঘাড় উচু করে লায়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার সাহিরাহর দিকে তাকায় অতঃপর বলে উঠে,” আমি চিলি তো। তিতি মাম্মাম ওনেত পালো।”

ঘরে উপস্থিত সকলে হো হো করে হেঁসে উঠলো।ওয়ার্দি সকলের দিকে বোকা বোকা চাহনিতে তাকিয়ে আছে। আলিযা এগিয়ে এসে বলে,” মাম্মাম দেখো ঐটা তিতি না হায়াতি।”

ওয়ার্দি গাল ফুলিয়ে বলে,”আআ না ও তিতি মাম্মাম।”

লায়ানা বলে উঠে,” ওর যেইটা ভালো লাগে ও সেইটা বলেই ডাকুক আমাকে।”

ওয়ার্দি লায়ানাকে ছোট ছোট হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,” তুমি পালো।”

আবার সবাই হেঁসে উঠে। সাহিরাহ তাড়া দিয়ে বলে,”আর মজা না,এইবার চলো সবাই বসার ঘরে।কতক্ষন ধরে আমার ভাইটি মসজিদে অপেক্ষা করছে তাকেও তো খবর পাঠাতে হবে তার হবু বউ কবুল বলেছে সেও তো ঐখান থেকে কবুল বলে তার এই মুগ্ধতাকে তার করে নিবে।”

.
মুগ্ধতাকে বসার ঘরে নিয়ে আসা হয়।মুগ্ধতার দুই পাশে আলিযা, আফ্রা।আলিযা, আফ্রার দুই পাশে সাহিরাহ ও লায়ানা।সাহিরাহ বলে উঠে,”আমরা এসে পড়েছি।”

আহনাভ সোফায় বসে ফোনের দিকে মনযোগ দিয়ে তাকিয়ে ছিল। সাহিরাহর আওয়াজ কানে পৌঁছাতেই চোখ তুলে তাকালো আহনাভ।লায়ানার কোলে ওয়ার্দি, লায়ানা ওয়ার্দির সাথে কথা বলতে বলতে এগিয়ে আসছে।এই গত তিন দিনে কাজের চাপে ভালো করে লায়ানার সাথে দেখা করা তো দূর কথা বলাও অব্দি হয়নি কিন্তু লায়ানার খোঁজ খবর আহান থেকে ঠিকই নিয়ে রেখেছিল।

.
মুগ্ধতাকে বসিয়ে পাশে আলিযা,আফ্রা বসে পড়ে,আর পিছনে সব কচিকাঁচার দলেরা বসেছে।আরেক পাশে সাহিরাহ,লায়ানা দাড়িয়ে।হুট করে লায়ানার পাশে কেউ একজন দাড়িয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,” কী হায়াতি এই ভাইকে চোখে পড়লো না?”

লায়ানা পরিচিত কণ্ঠের আওয়াজ পেয়েই পাশে তাকালো। লায়ানার চোখ মুখ খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।লায়ানা খুশিতে গদ গদ করে বলে উঠলো,”সোয়াদ ভাই তুমি!তুমি কখন এলে কানাডা থেকে!”

লায়ানার পাশে দাড়িয়ে থাকা সোয়াদ ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,” আমার এত ক্লোজ কলিগ মুগ্ধতার আকদ আর আমি আসবনা!বাকি কথা পড়ে বলি মুগ্ধতার দিকে তাকাও ও কবুল বলবে এখনি।”

.
আহনাভ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে সোয়াদ আর লায়ানার দিকে, আহনাভ মনে মনে আওড়ালো,”এই ছেলে আবার কোন জায়গা থেকে ডাউনলোড হলো?”

আহনাভের ভাবনার মাঝে মুগ্ধতার সামনে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক লোকটি বলে উঠে,”মা বলো আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

মুগ্ধতা সময় নিল অতঃপর বলল,”আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

পিছন থেকে পাশ থেকে সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলো।মধ্যবয়স্ক লোকটি আবার বলে উঠলো,”মা আবার বলো আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

মুগ্ধতা বলল।সবাই আবার বলে উঠলো আলহামদুলিল্লাহ।পুনরায় মধ্যবয়স্ক লোকটি বললে মুগ্ধতাও তৃতীয় বারে বলল,”আলহামদুলিল্লাহ কবুল।”

লায়ানা আলহামদুলিল্লাহ বললে ওয়ার্দি লায়ানার দেখাদেখি চেষ্টা করে,থেমে থেমে বলে,” আল হাম ফু” বাকিটা বলতে পড়লো না। লায়ানা শব্দ না করেই হাঁসলো,ওয়ার্দিকে বলল,”দেখো মাম্মাম আমার সাথে সাথে বলো আল হাম দু।”

ওয়ার্দি গোল গোল চাহনিতে তাকিয়ে থেকে বলে,” আল হাম দু।”

লায়ানাকে বলতে না দিয়ে সোয়াদ বলে,”তারপর বলো লিল্লাহ।”

ওয়ার্দি বলে,” ইল্লাহ।”

“নাহ মামনি বলো লি ল্লাহ ।”

ওয়ার্দি কণ্ঠে চাপ দিয়ে বলে,”লিল্লাহ।”

লায়ানা বলে,” এইবার বলো আল হাম দু লিল্লাহ।”

ওয়ার্দি এক বড় শ্বাস নিয়ে বলে উঠে,” আল হাম দু লিল্লাহ।”

লায়ানা খুশিতে চেঁচিয়ে বলে উঠে,”সবাই শুনো আমাদের ওয়ার্দি আলহামদুলিল্লাহ বলেছে।”কথাটি শুনেই সকলের মুখে ফুটে ওঠে এক প্রসন্ন হাসি।এতক্ষণ আহনাভ তাকিয়ে ওয়ার্দিকে আলহামদুলিল্লাহ শেখাতে সোয়াদ,লায়ানাকে দেখছিল।

মধ্যবয়স্ক লোকটি বলে উঠলো,”মেয়ে তো কবুল বলে দিয়েছে এইবার চলো আমরা সবাই মসজিদে যাই ছেলের কাছে।”

.
মধ্যবয়স্ক লোকটিকে নিয়ে আহনাভ,আহান, আহনাভের বাবা, আহিরের বাবা সাথে মুগ্ধতার মামা ও ভাইরা মসজিদে চলে যায়।

আহির বসে আছে,মসজিদের দরজা দিয়ে সকলকে আসতে দেখে মুখে এক খুশির ঝলক দেখা দিল আহিরের।মধ্যবয়স্ক লোকটি এগিয়ে আসলো, আহিরের পাশে বসে বলল,”মেয়ে কবুল বলে দিয়েছে বাবা এইবার তুমিও তিনবার কবুল বলে ধর্মীয় ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করো।”

মুগ্ধতা কবুল বলে দিয়েছে তা শুনেই আহিরের মনের মাঝে এক প্রশান্তির জোয়ার বয়ে গেলো।আহির গর গর করে বলে উঠলো,”আলহামদুলিল্লাহ কবুল,কবুল,কবুল।”

মধ্যবয়স্ক লোকটি কিঞ্চিৎ হাসলো অতঃপর কিছু সময় নিয়ে বলল,” বিয়ে সম্পন্ন হলো।”

সবাই আলহামদুলিল্লাহ বললে। আহনাভ বলে,” কীরে ভাই তোর তো দেখি খুব তাড়া।তুই বুলেটের থেকেও এত স্পিডে কবুল কিভাবে বললি রে?”

আহির বলে উঠে,”ব্রাদার আমিও দেখবো তোমার বিয়ের সময় তুমি কত স্পিডে কবুল বলো।”

আহনাভ পাঞ্জাবির এক হাতা ঠিক করতে করতে বলে,”আমি তো বিদ্যুতের গতির চেও যদি কোনো দ্রুতগামী গতি থাকে সেই গতিতে বলবো।”

সবাই হো হো করে হেঁসে উঠে। আহনাভের বাবা আড় চোখে তাকিয়ে বলে,” বেশরম ছেলে।”

আহিরের বাবা আহনাভের বাবার কাঁধে ধাক্কা দিয়ে বলে,” আমার আহনাভ বাবা বেশরম হলে অভ্রো তুই তো বড় বেশরম।”

আহনাভের বাবা তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে বলে,” কেনো?”

“তোর বিয়ের সময় কিভাবে কবুল বলেছিলিরে মনে করাবো?”

আহনাভের বাবা অন্য দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,”এই এইবার সবাই বাড়ি চলো।”

আহিরের বাবা আড় চোখে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলে,”এসেছে আমার আহনাভ বাবাকে বেশরম বলতে।”

.
সকলে মসজিদ থেকে আহিরকে নিয়ে বাড়িতে চলে এসেছে।এখন মেয়ের বাড়ির লোকেরা ছেলের বাড়ির লোকেদের মিষ্টি মুখ করাচ্ছে।

আহিরকে মুগ্ধতার ডান পাশে বসিয়ে দেয়া হলে আহির মুগ্ধতার ডান হাত নিজের এক হাতে নিয়ে নেয়।মুগ্ধতা মুখ তুলে তাকায় আহিরের পানে,তার পাশে বসে থাকা এই আহিরকে দেখে যেনো তার হৃদস্পন্দন বহু গুণে বেড়ে গিয়েছে।(সেই সাদা শেরওয়ানি তে আহিরের মাঝে যেনো এক শুভ্রতা ছেয়ে আছে।মাথায় তার সাদা পাগড়ি)মুগ্ধতা তার দৃষ্টি সরিয়ে নিল।আহির পাঞ্জাবির পকেট থেকে একটি লাল রঙের ছোট বক্স বের করে,বক্সটি খুলতেই ভিতরের থেকে স্বর্ণের আংটি টি বের করে মুগ্ধতার ডান হাতের অনামিকা আঙ্গুলে পরিয়ে দেয়।
.
তাদের দুজনের সামনে বসে থাকা আলিযা,আফ্রা, সাহিরাহ,আকাশ,লায়ানা,আহান,সোয়াদ বলে উঠে ,”উফ কেয়া জরি বানায়া হেই রাবনে।”
.
মুগ্ধতা মাথা নিচু করে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে নিশব্দে হাঁসে।আহির সকলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

.
আর আহনাভ পাশেই দাড়িয়ে আছে।সে সুযোগ খুঁজছে লায়ানার সাথে একা কথা বলার। আহনাভ হুট করে বলে উঠে,”এই সবাই যা তো ওদের দুজনকে একটু একা ছেড়ে দে।”

আলিযা মুখ খুলে কিছু বলার আগেই দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অনামিকা বলে উঠে,”আরেহ আলিযা, আফ্রা মা আয় তো তোরা।একটা কাজ আছে।”

.
অবাধ্য হলো না দুজন চুপচাপ বেরিয়ে গেলো।লায়ানা বলে উঠলো,”তো চলো আমরাও বাগানে গিয়ে আড্ডা ।দেই বনু আর জিজু নাহয় একা সময় কটাক।”

লায়ানা বলতেই সবাই রাজি হয়ে গেলো এক এক করে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।সবাই চলে গেলে লায়ানাও বেরিয়ে গেলো।

.
আহির মুগ্ধতার হাত শক্ত করে ধরে বলল,” মুগ্ধ রানি এইবার কিন্তু তুমি আমার হালাল ভাবে হয়ে গেলে।আমার অর্ধাঙ্গিনী।এখন কিন্তু হালাল ভাবে তোমার সাথে চুটিয়ে প্রেম করতে পারবো কি বলো।”

“আপনার ইচ্ছা।”

আহির ভ্রু কুচকে বলে, “এই তুমি আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেনো বলো তো।”

মুগ্ধতা তার দৃষ্টি ফ্লোরের দিকে রেখেই মৃদু স্বরে বলল,”কেন তাকানো কি বেশি জরুরী?আমি যে তাকাতে পারবো না আহির সাহেব। আপনার দিকে তাকালে আমার মনের অনুভূতিগুলো আমাকে খুব বেশি তাড়া দেয়।”

মুগ্ধতা আবার বলে উঠে,” একটু দূরে সরে বসুন তো ভাই।”

আহির ভ্রু কুঁচকে বলে,”আরেহ ভাই কেনো?”

“আরেকটু দূরে সরে বসতে বলছি।দূরে সরে বসুন না হলে আপনার এখনই ইমারজেন্সি একটা অপারেশন করা লাগতে পারে আমি চাইনা আপনার বিয়ের দিন আপনার কারো অপারেশন করা লাগুক।’

“আমি একজন দায়িত্ববান ডক্টর তাই অপারেশন করতে হলে করবো সমস্যা নেই আমার কোনো।আমি এইভাবেই বসে থাকবো।”

“মরার বিয়ের দিন নিজের বউয়ের অপারেশন করবি নাকি ব্যাটা।”

আহির ঠোঁট টিপে হেঁসে বলে,”বউ এই দিনে হার্ট এ্যাটাক করলে জামাই তো তাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাবেই।”

মুগ্ধতা কিছু বলল না,তার আজ ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছে নেই।ঘরে অনামিকা,আফ্রা,আলিযা প্রবেশ করে।তাদের তিনজনের হাতেই অনেক গুলো বক্স।তিনজন এগিয়ে এসে মুগ্ধতার পাশে বসলো।অনামিকা একটি বক্স খুলে দুইটি মোটা স্বর্ণের বালা বের করে বলল,”দেখি তো আমার মুগ্ধতা মায়ের হাত দুটো।”বলেই মুগ্ধতার হাত দুটো নিয়ে স্বর্ণের বালা গুলো পড়িয়ে দিয়ে আবার বলে উঠে,”এই দুই হাতে বালা গুলো খুব মানিয়েছে দেখ তোরা।”

মুগ্ধতা মুচকি হাসে।আলিযা আর আফ্রা তাদের হাতের বক্স গুলো মুগ্ধতার পাশে রেখে দেয়।অনামিকা বলে,”মুগ্ধতা মা এই বক্স গুলোতে কিছু গহনা আছে ।তোমার জন্য এইগুলো আমাদের তরফ থেকে ছোট একটা উপহার।”

মুগ্ধতা বক্স গুলোর দিকে তাকালো নিন্মে নয় থেকে দশটা গয়নার বক্স তো আছেই এইখানে।মুগ্ধতা অনামিকার দুই হাত নিজের হাতে নিয়ে বলল,”মা এইগুলো আমার কাছে অনেক বড় উপহার আপনি বলছেন ছোট?আপনি বরং আমাদের জন্য দোয়া করবেন সবসময় তাহলেই হবে।”

অনামিকা প্রসন্ন হাসলো,মুগ্ধতার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,”আসলেই মুগ্ধতা মা তুমি খুব লক্ষী।আর শুনো মা এই গয়না গুলো আহিরের দাদীর।উনি তার অর্ধেক গয়না আহনাভের বউয়ের জন্য তুলে রেখেছিল আর অর্ধেক আহিরের বউয়ের জন্য।আর আজ তুলে দিলাম আহিরের বউয়ের ভাগের গয়না গুলো।”

মুগ্ধতা মলিন হাসলো।

.
বাগানে সবাই বসে আড্ডা দিচ্ছে।আড্ডায় নেই শুধু আহনাভ।পুরো বাগানে ওয়ার্দি দৌড়াচ্ছে।হঠাৎ ওয়ার্দি লায়ানার পাশে এসে দাড়ালো।লায়ানা ওয়ার্দির দিকে তাকিয়ে বলে,” কী হয়েছে ওয়ার্দি কিছু বলবে?”

ওয়ার্দি লায়ানার মাথা টেনে কানে কানে বলে,”তিতি মাম্মাম,তোমাতে ডাকে।”

লায়ানা প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে বলে,”কে ওয়ার্দি?কথায় ডাকে?”

ওয়ার্দি আবার লায়ানার মাথা টেনে কানে কানে বলে,”উজে উজে।”

লায়ানা বুঝতে পারে না বলে উঠে,” উজে উজে আবার কোথায়?”

ওয়ার্দি হাত উঠিয়ে বাড়ির বাহিরের দিকটা দেখিয়ে বলে,” উজে উজে।”

সাহিরাহ লায়ানার দিকে তাকিয়ে বলে ,” কী হয়েছে হায়াতি?ওয়ার্দি কী বলছে?”

লায়ানা বাড়ির বাইরের দিকে দৃষ্টি দিয়ে বলে উঠে,” নাহ আপু কিছু না।আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি একটু আসছি।”

লায়ানা উঠে হাঁটা ধরে।বাড়ির বাইরে এসে এদিক ওদিক দেখতে লাগে লায়ানা।হঠাৎ লায়ানার হাতে টান পরে, লায়ানাকে টেনে নিয়ে আহনাভ হাঁটা ধরেছে।আহনাভ এত বড় বড় পা ফেলে হাঁটছে যে লায়ানা তার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে পারছে না।

লায়ানা কণ্ঠে বিরক্তির শুর টেনে বলে,” উফ আহনাভ ধীরে হাটো এইভাবে গরুর মত টেনে কই নিয়ে যাচ্ছ আমাকে?”

আহনাভ থেমে যায়,লায়ানা কে সামনে দাড় করিয়ে বলে,” সমস্যা কী আসার পর থেকে সামনে আসছো না ,কথা বলছো না।তাকিয়েও দেখছো না একবার।”

লায়ানা ভ্রু কুঁচকে আহনাভের কাছে আরো এগিয়ে এসে বলে,” আমি ঠিকই আছি বুঝছো।আমি বেঁচে আছি কিনা মরে গিয়েছি এই গত তিনদিনে একবারও খবর নিয়েছো?”

আহনাভ বুঝতে পারে এমন করার কারণ কী। আহনাভ দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,”আরেহ হায়া পাখি আমি এই গত তিনদিন অফিস শুটিং দুইটার কাজে প্রচুর ব্যাস্ত ছিলাম।রাত দুইটায় বাড়ি ফেরা হতো।তো বলো আমি ওই সময় তোমাকে ফোন কী করে দেই।তুমিও তো অফিস থেকে সারাদিন পর ওই সময় শান্তির এক ঘুম দাও।আমি কী করে হায়া পাখির শান্তির ঘুম নষ্ট করি।”

“একদম বাজে কথা বলবে না।”

আহনাভ দুই হাতে লায়ানার দুই বাহু ধরে বলে, ” কোনো বাজে কথা বলছি না।আর এই গত তিনদিন আমি আহান থেকে তোমার খবর নিয়েছি।”

লায়ানা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”তো আমাকে কেনো ফোন করলে না একবারও।যাও আহানের কাছে যাও আমার কাছে কেনো এসেছো?”

আহনাভ নিশব্দে হাঁসে, বলে,”আহান আমাকে ম্যাসেজ করে দিয়েছিল তোমার খবরাখবর আর আমার পিএ তমাল আমাকে ম্যাসেজ গুলো পড়ে পড়ে শুনিয়ে দিত।”আহনাভ থেমে গিয়ে বলে উঠে,” আগে বলতো ওই ছেলেটা কে ছিল যার সাথে দাড়িয়ে তুমি ওয়ার্দিকে আলহামদুলিল্লাহ বলা শিখিয়ে দিচ্ছিলে।”

লায়ানা ভেবে তারপর বলে,” ওহ।উনি হচ্ছে সোয়াদ ভাই।আমরা যখন কানাডা ছিলাম মুগ্ধতার হসপিটালের জুনিয়র সাইকোলজিস্ট উনি।আমরা এইখানে চলে আসার পর কানাডার হসপিটালের সব দায়িত্ব সোয়াদ ভাই সামলাচ্ছে।”

“তো তোমার সাথে ওনার এত ভাব কীসের?”

“সোয়াদ ভাইয়ের কোনো বোন নেই তাই আমাকে সে তার বোনের মত আদর করে বুঝলেন।কী আমার অভিমান হয়েছে আমাকে ভালো ভালো কথা বলবে বরং উল্টো পাল্টা বলছে শুধু।”বলেই আহনাভের থেকে দূরে এসে দাড়িয়ে বলে ,” দূরে থাকুন আপনি।একদম কাছে আসবেন না।”

আহনাভ শুর থেমে বলে,”বাবাহ হায়া পাখির এত অভিমান তুমি থেকে আপনি তে চলে গিয়েছে।আচ্ছা কিভাবে এই অভিমানী মন গলাই বলো তো হায়া পাখি।”

#copyrightalert
#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here