ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_১৫

0
305

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_১৫

“তুই উঠবি ঘুম থেকে?না উঠলে এমন এক কিক দিবো না মঙ্গল গ্রহে চলে যাবি।কয়টা বাজে এখন আর তুই এইভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?এই বদমাইশ ছেলে উঠ ঘুম থেকে”আহিরের বাবা কোমড়ে দুই হাত দিয়ে চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে কথাগুলো বলল।

আহির পাশ থেকে বালিশ নিয়ে মাথার উপর চেপে ধরে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,”মিস্টার সাদেক আবরাহার আপনার ফাডা স্পিকার টা অফ দেন।আপনি তো বলেছেন আজ অফিস যেতে না,গেলে নাকি ঠ্যাং ভেংগে রেখে দিবেন তো এই সকাল সকাল এসে আপনার ফাডা স্পিকার টা কেন বাজাচ্ছেন বলুন তো?”

“অসভ্য ছেলে কত বড় সাহস তার নিজের বাবার নাম কিভাবে মুখে আনছে!”

“বাবা আমি তোমারই ছেলে,তার বাপ এত বড় সাহসী হতে পারলে ছেলে কেনো নয়।”

আহিরের বাবা আহিরের মাথার উপর চেপে ধরে রাখা বালিশ টান দিয়ে সরিয়ে বলে,”আহিরের বাচ্চা উঠ বলছি নাহলে দেখ তোকে আজ কী করি।”

আহির ধপ করে উঠে বসে দুই হাতে নিজের চুল খামচে ধরে বলে,”আমার বিয়ে হয়নি বাচ্চা কোত্থেকে আসবে? আর এই বাড়িতে ঘুমিয়েও শান্তি নেই মনে হচ্ছে এইবার বনবাসে চলে যেতে হবে।”

“যাইস তুই বনবাসেই যাইস,আর কয়েকদিন পর যাইস।এখন এমন হায়হুতাশ না করে গিয়ে সুন্দর করে রেডি হয়ে নে আজ তোকে মেয়ে পক্ষ দেখতে আসবে।”

আহির বিদ্যুতের গতিতে বিছানা ছেড়ে নেমে তার বাবার সামনে দাড়িয়ে বলে,” হোয়াট দা হেল ইজ দিস বাবা?আমি কী কোনো মেয়ে যে আমাকে কেউ দেখতে আসবে?আমি ছেলে আমাকে কেনো মেয়ে পক্ষ দেখতে আসবে?আর এই মেয়ে পক্ষ কেনো আমাকে দেখতে আসবে আমি কী বলেছি আমি বিয়ে করতে চাই এখন কাউকে!”

“অকর্মা তুই চুপ থাক।আমার ছেলে হয়ে এই অব্দি একটা মেয়ে পটিয়ে আনতে পারলি না আবার এত বড় কথা বলিস।বেশি কথা না বলে রেডি হয়ে নে নাহলে দেখ আমি কী করি।”

“তুমি যা ইচ্ছে তা করো আমি হচ্ছি না রেডি।আমি তো আরো এক রাউন্ড ঘুম দেব এখন।”

“তুই বিছানার দিকে পা বাড়িয়ে তো দেখ তোর পা ভেংগে রেখে দিবো আমি।”

” তোমাকে না বিজনেসম্যান না হয়ে সিরিয়াল কি’লা’র বা মা’ফি’য়া বা গু’ন্ডা হলে বেশি মানাতো বাবা।”

“তুই এইসব বলতে পারলি আমাকে?”

” কথায় কথায় এইভাবে মাইরের কথা বললে তো বলবই।”

“আহির আমার বাপ প্লিজ দয়া কর।আজকে ঝগড়া করিস না আমার সাথে, গিয়ে রেডি হয়ে নে”

“প্লিজ বাবা জোর করবে না আমাকে।আমার মন পাবে দেহ পাবে না।”

” এই এই এক মিনিট!আমার তো মনে হচ্ছে আহানাভ বাবার থেকে তুই বড় অ্যাক্টর।তোর দেহ তুই রাখ গিয়ে রেডি হবি নাকি।”

“বাবা প্লিজ!”

আহিরের বাবা ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলে, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে একটা পাঞ্জাবি পড়ে সুন্দর করে নিচে চলে আয়।যদি দেরি হয় তোর হাড় গোর ভেংগে মিউজিয়ামে সাজিয়ে রেখে দিবো।”

“উফফ আমাকেই আল্লাহ দিলে একটা বাপ দিসে!মা তুমি যে কেনো সাদেক আবরাহার কে বিয়ে করলে?সাদেক আবরাহার কে বিয়ে না করলে তোমার ছেলে পেত এক অবিরাম শান্তি তুমিও পেতে এক আদর্শবান স্বামী।”

.
আধ ঘণ্টা পর আহির নেমে আসে। আহির কে দেখেই তার বাবা ধমকে বলে উঠে,”এইটা কী পড়েছিস।আজ কোনো শোক দিবস নাকি যে কালো পাঞ্জাবি পড়েছিস।”( আহিরের পরনে সাদা পাজামা কালো পাঞ্জাবি। ফর্সা গায়ের রঙের সাথে কালো পাঞ্জাবি যেনো ফুটে আছে।)আহির পাঞ্জাবির হাতা ফোল্ড করতে করতে বলে,” কালো পাঞ্জাবিতে সৌন্দর্যের মর্ম তুমি কী বুঝবে বাবা।”

আহিরের মা এগিয়ে এসে বলে,”তুমি তো বুড়ো হয়ে গেছো আহিরের বাবা তুমি কি বুঝবে কোনটায় কাকে বেশি ভালো লাগে।”

আহিরের বাবা তেতে উঠে বলে,”এই তোমরা মা ছেলে মিলে আমাকে একদম বার বার বুড়ো বলবে না।”

পিছন থেকে অহনাভ বলে উঠে,” আরেহ তোমরা আমার ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে হ্যান্ডসাম কে কেনো বুড়ো বলছো বলতো।দিস ইজ নট ফেয়ার ছোট মা।”

আহিরের মা অনামিকা বলে উঠে,” ওনার তো এই বুড়ো বয়সে ছুড়ো সাজতে ইচ্ছে করে।”

আহিরের বাবা ভ্রু কুচকে বলে,”কী ভাষা তোমার অনামিকা!আমি তো আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি।”

সদর দরজার সামনে থেকে এক মেয়েলি কণ্ঠে ভেসে আসে,”সবসময় মায়ের মুখ থেকে ভালোবাসি কথাটা শুনে এসে এখন এই মুখের কথা গুলোতেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছ বাবাই।”

আহিরের বাবা সদর দরজার দিকে তাকালেন,তার চোখ ছল ছল করে উঠলো।সদর দরজায় তার বড় মেয়ে সাহিরাহ আর ছোট মেয়ে আফ্রা দাড়িয়ে,সাহিরাহ এর কোলে চার বছরের একটি মিষ্টি বাচ্চা মেয়ে।আর পাশে সাহিরাহর স্বামী আকাশ দাড়িয়ে।আফ্রার আরেক পাশে আহনাভের ছোট বোন আলিযা দাড়িয়ে।
.
সবাই ভিতরে চলে এলো।

অনামিকা দৌড়ে গিয়ে দুই হাতে সাহিরাহ এর মুখ আগলে নিয়ে বলে উঠে,” মা তুই।”সাহিরাহ কে ছেড়ে পাশের আফ্রা,আলিযাকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আমার মেয়ে গুলো।”

আহির আর আহনাভ দৌড়ে গেলো।আহির গিয়ে সাহিরাহ এর কোল থেকে বাচ্চা মেয়েটিকে নিজের কোলে নিয়ে বলে,”আরেহ আমার ছোট ওয়ার্দি টা ।এইযে মামা কে মিস করেনি নাকি।”

ওয়ার্দি আধ আধ কণ্ঠে বলে,”মামা আমি টমাকে খুব মিছ কলেছি।”

“আলেলে আমার ওয়ার্দি সোনা টা।” আহনাভ ওয়ার্দি কে আহিরের কোল থেকে নিয়ে বলে,”আমার ওয়ার্দি মাম্মাম কে আমার কাছেও দে।” আহনাভ ওয়ার্দি কে নিয়ে দে দৌড়।পিছন থেকে আলিযা,আফ্রা,সাহিরাহ বলে উঠে ,” আরেহ ভাই আমাদের দিকে একটু তাকা ভাই!আমরা তোর বোন ভাই আমাদের সাথেও একটু কথা বলে যা।”

আহনাভের বাবা মা পরিচিত কণ্ঠের আওয়াজ পেয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।সাহিরাহ,আলিযা,আফ্রা কে দেখেই আহনাভের বাবা মা ওদের কাছে গিয়ে ওদের জড়িয়ে ধরে।

.
আফ্রা,আলিযা,সাহিরাহ আর তার স্বামী আকাশ কে নিজেদের রুমে বিশ্রাম করতে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।আহনাভ ও আহিরের মা রকমারি খাবার বানাতে ব্যাস্ত। আহির আর আহনাভ বসার ঘরে সোফায় বসে ওয়ার্দির সাথে খেলছে।

.
আবরাহার ভিলার লোহার বিশাল দরজা দুই দারোয়ান মিলে খুলে দিতেই শো শো করে দশটি গাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো।প্রথম গাড়িটি থেমে যেতেই পিছনের গাড়ি গুলো থেমে গেলো।
.
প্রথম গাড়ি থেকে মুগ্ধতা,লায়ানা,আহান আর ইজাজ বেরিয়ে আসে।তারপর পিছনের গাড়ি গুলো থেকে মুগ্ধতার পরিবারের একেক সদস্য বেরিয়ে আসে।
.
আবরাহার ভিলা প্রাসাদ থেকে কম নয়।এই আবরাহার ভিলা কে প্রাসাদে পরিণত করতে সাদেক আবরাহার আর অভ্রো আবরাহার কঠোর পরিশ্রম করেছে তাদের এই পরিশ্রম এ সাথে ছিল তাদের দুই ছেলে আহির, আহনাভ ।

.
মুগ্ধতা সহ পুরো পরিবার সদর দরজার সামনে এসে দাড়ালো।আহনাভের মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে আসছিলেন,মুগ্ধতা সহ তার পুরো পরিবারকে দেখে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলে উঠে,” আরেহ মুগ্ধতা মা তোমরা চলে এসেছো।”

আহনাভ আর আহির দ্রুত তাদের দৃষ্টি সদর দরজার দিকে দিয়ে দাড়িয়ে যায়।দুজন থমকে দাড়িয়ে আছে,দুজনই চোখের পলক ফেলতে ভুলে গিয়েছে।
আহনাভ জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।আহির শুকনো ঢোক গিলে নেয়।
.
ওয়ার্দি সোফায় বসে বোকা বোকা চাহনিতে তার দুই মামার দিকে তাকিয়ে আছে।
.
আহির দুই হাতে চোখ ডলে পুনরায় সদর দরজার দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে নেয়,সদর দরজায় দাড়িয়ে থাকা মুগ্ধতাকে দেখে তার বিশ্বাসই হচ্ছে না মুগ্ধতা এই রূপে তার বাড়ির সদর দরজায় দাড়িয়ে।(মুগ্ধতার পরনে লাল রঙের হাফ হাতা ব্লাউজের সাথে লাল রঙের সিল্কি শাড়ি।দুই হাতে দুইটি স্বর্ণের বালা আর গলায় স্বর্ণের হার।তার উন্মুক্ত চুল।এই সাজে যেনো মারাত্মক সুন্দর রূপ ধারণ করেছে মুগ্ধতা।)

#copyrightalert
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here