ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_১৬

0
152

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_১৬
আহনাভ বুকে হাত দিয়ে পিছনে ফিরে গেলো।(লায়ানার পরনে গাঢ় নীল রঙের হাফ ব্লাউজের সাথে সোনালী রঙের চিকন পাড় এর গাঢ় নীল রঙের শাড়ি।গলায় পার্ল এর নেকলেস।চুল গুলো উন্মুক্ত।) ওয়ার্দি আহনাভকে বুকে হাত দিতে দেখে ভ্রু কুচকে বলে উঠে,” কী হলেছে তোমাল?” আহনাভ ওয়ার্দিকে কোলে নিয়ে ওয়ার্দির নাক টেনে বলে,”অনেক কিছু হয়ে গেছে,হার্ট বিট অনেক গুলো মিস হয়ে গিয়েছে ওয়ার্দি।”

ওয়ার্দি কিছুই বুঝল না বোকা বোকা চাহনিতে তাকিয়ে থাকলো আহনাভের দিকে।

আহনাভ সামনে ফিরে তাকালো।সবাই বাড়ির ভিতর প্রবেশ করলে আহনাভের চোখে পড়ে লায়ানার শাড়ির রঙের সাথে আহানের পাঞ্জাবির রঙ মিলে গিয়েছে। আহনাভের রাগ মুহূর্তের মাঝে তুঙ্গে চড়ে যায়।

মুগ্ধতার পরিবারের সবাই এসে একে একে সোফায় বসে পড়ে।আহনাভ ও আহিরের বাবারাও এসে বসে পড়ে।আহনাভ সরে দাঁড়ায়।

.
মুগ্ধতার বড় মামা বলে উঠে,”তাহলে এইবার আমাদের দুটো পরিবারের মধ্যে একটা সম্পর্ক হয়ে উঠতে চলেছে।”

আহিরের বাবা বলেন,”এইবার তো তুমি আমার বেয়াই হতে যাচ্ছ মুরাদ।”

আহির বোকার মত মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।আর এইদিকে আহনাভ পারছে না চোখ দিয়েই আহান আর লায়ানা কে গিলে ফেলতে।

.
আহিরের বাবা আহিরের দিকে তাকিয়ে বলেন,” এই হচ্ছে সেই মেয়ে পক্ষ আর মেয়ে হচ্ছে মুগ্ধতা।আজ ওরাই তোমাকে দেখতে এসেছে।আর ওর সাথেই তোমার বিয়ে পাকা করবো আজ।”

আহির মাত্র আকাশ থেকে পড়লো এমন সংবাদ শুনে।

.
দোতলা থেকে সিঁড়ি দিয়ে সাহিরাহ, আফ্রা, আলিযা ও আকাশ নেমে এলো।চারজন মিলে আহিরের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।সাহিরাহ আহিরের পাশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলে,”যার কথা দিনে রাতে চব্বিশ ঘন্টা আমাকে ফোন করে বলতি তার সাথেই আজ তোর বিয়ে ঠিক হচ্ছে রে।”

আহির আড় চোখে তাকিয়ে বলে,” মানে এইসব তুই আগেই জানতি বনুই?”

“অবশ্যই।পরশু রাতে মুগ্ধতার বাড়ি থেকে ফোন দিয়ে তোদের বিয়ের বিষয়ে কথা বলে বাবাইর সাথে।আর বাবাই খুশিতে গদ গদ করতে করতে আমাকে ফোন দিয়ে বলে, যেইভাবে পারি তাড়াতাড়ি চলে আসতে।আর আকাশ তো সাথেই সাথেই আসার ব্যাবস্থা করে নেয়।”

.
আহনাভের বাবা হেসে বলেন,”সেইদিন ডিনারে ওরা চারজন তো ছিল না তাই আপনারা চিনবেন না।তাই আপনাদের সাথে ওদের চারজনের পরিচয় করিয়ে দি।ও হচ্ছে আলিযা আমার মেয়ে।”

লায়ানা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে।আহান লায়ানাকে খোঁচা দিয়ে বলে,” কীরে তুই না বলেছিলি আহনাভের বোন নেই।”

লায়ানা বিড়বিড় করে বলে,”আমিও তো জানতাম ওর বোন নেই।কিন্তু তুই আর আহনাভ কে শালা বলিস না ভাই,দেখ ওর বোন টা দেখতে কী মিষ্টি আমি চাই না তোর মত শ’য়’তা’নে’র সাথে ওর কোনো সম্পর্ক হোক।”

আহান আড় চোখে তাকালো লায়ানার দিকে।

আহিরের বাবা সাহিরাহ কে দেখিয়ে বলে,”ও হচ্ছে আমার বড় মেয়ে সাহিরাহ আর ওর পাশে ওর হাসবেন্ড আকাশ।আর আহনাভের কোলে ওই মিষ্টি টা হচ্ছে আমাদের সাহিরাহর মেয়ে ওয়ার্দি।”

আহনাভের কোলে ওয়ার্দির কথাটা বলতেই আহিরের বাবার দৃষ্টি অনুসরণ করে লায়ানা আহনাভের দিকে তাকালো।আহনাভের দিকে তাকাতেই লায়ানা কয়েকবার পলক ঝাপটালো,আহনাভ তার দিকেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।লায়ানা তো আহনাভ কে উপর থেকে নিচ অব্দি দেখে নিচ্ছে, আজ আহনাভ লায়ানার পছন্দের রঙের পাঞ্জাবি পড়েছে তাই এইভাবে উপর থেকে নিচ অব্দি দেখে নেয়া।( আহনাভের পরনে শুভ্র পাঞ্জাবি আর পাজামা। হাতার দিকটা ফোল্ড করা।বুকের দিকের দুইটি বোতাম আনব্লক করা।)লায়ানা চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।

আহিরের বাবা আফ্রার দিকে তাকিয়ে আবার বলেন,” আর ও হচ্ছে আমার ছোট মেয়ে আফ্রা।আসলে ওরা সবাই লন্ডনে ছিল আজ এসেছে।”

সাহিরাহ বলে উঠে,” বাবাই তোমরা তাহলে বড়রা মিলে কথা বলো আর আহির মুগ্ধতা তোমরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে পারো,আহির মুগ্ধিতাকে নিয়ে যা।”

আহির কিছু বলে না হাঁটা ধরে,মুগ্ধতা উঠে আহিরের পিছন যাওয়া শুরু করে।

.
আহির ছাদের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকেই মুগ্ধতার হাত ধরে হেঁচকা টানে ভিতরে নিয়ে ছাদের দরজা বন্ধ করে দেয়।মুগ্ধতা তাল সামলে ঠিক হয়ে দাঁড়াতেই আহির মুগ্ধতা কে দেয়ালের সাথে পিন করে ফেলে।তাদের মধ্যে এখন দুই তিন সেন্টিমিটার এর দুরত্ব আছে।

আহির রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠে,” তুমি আমাকে একবার ফোন করে তো বলতে পারতে আজ তোমরা আমাদের বাড়ি আসবে তাও আমাদের বিয়ের কথা বলতে।আমাকে কেউ কিছু না বলেই এইভাবে চলে আসলে সবাই।একবার বলার প্রয়োজন বোধ করলে না।”

মুগ্ধতা আহিরকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়,গিয়ে ছাদের দরজার নব ঘুড়িয়ে দরজা খুলতে খুলতে বলে,”আপনার এত্তই সমস্যা আমি বরং নিচে গিয়ে এই বিয়ে ভেংগে দিচ্ছি।আপনার এই বিয়েতে মত নেই আপনি এই বিয়ে করবেন না।”

আহির ঠোঁট টিপে হাসে মুগ্ধতার হাতের কনুই ধরে টান দিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে। মুগ্ধতার কোমড়ে হাত রেখে নেশা ভরা কণ্ঠে বলে,”কে বলেছে আহির রাজি না।এই আহির তার মুগ্ধ রানি কে এক বার কী শত বার হাজার বার বিয়ে করতে রাজি।”

মুগ্ধতা আহিরের হাত নিজের কোমড় থেকে সরিয়ে আহিরকে ধরেই ক্যারাটে স্টাইলে আছার মেরে দিল। আহির কোমড় ধরে চেঁচিয়ে বলে উঠে,”এই বিয়ের আগেই ক্যারাটে স্টাইলে আমার কোমড় টা দিলে তো ভেংগে!এই আমার মত সত্তর কেজির জলজ্যান্ত মানুষটাকে আছার মারলে কিভাবে আমার হবু বউ?আমার কোমর টা তো মনে হয় গেছে।আল্লাহ বিয়েতে কী নেচে নেচে বউ আনতে যাওয়া হবে না!আফরান আবরাহার আহির কিনা বিয়ের আগেই বউ এর কাছে ক্যারাটে স্টাইলের মাইর খায়।”

“মুগ্ধতা জিম করেছে কী শুধু শুধু!আর বিয়ের আগে ছুঁতে আসলে এইভাবে আরো ক্যারাটে স্টাইলে তুলে আছার মারবো বলে দিলাম।”

“উফ কেমন বউ পেলাম আল্লাহ নিজের হবু জামাইকে এইভাবে তুলে আছার দিয়ে বিয়ের আগেই কোমড় ভেংগে বসিয়ে রাখার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছে।ভাই আমার কোমড়!” বলতে বলতে কোমড়ে হাত দিয়ে দাড়িয়ে গেলো আহির।

মুগ্ধতা সোজা সাপটা বলে দিল,”আবার ভেবে দেখুন আমাকে বিয়ে করবেন কিনা?বিয়ের পর এই আমাকে সামলাতে পারবেন তো?নাকি হাল ছেড়ে দিবেন?”

আহির প্রসন্ন হাসে কোমড় থেকে হাত সরিয়ে কিছুটা এগিয়ে এসে বলে,” আমি তো এই মুগ্ধ রানি কে সারাজীবন সামলাতে চাই।নিজের করে রাখতে চাই, মুগ্ধ রানির হাত ধরে সারাটা জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।”

.
বসার ঘরে সকলের কথার ফাঁকে সাহিরাহ বলে উঠে,”সব ছোটরা আমাদের সাথে চলো তো।এইখানে বড়রা বরং কথা বলুক।”

মুগ্ধতার পরিবারের সব কচিকাঁচার দল উঠে সাহিরাহ পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।সাহিরাহ লায়ানার দিকে তাকিয়ে আবার বলে উঠে,” তুমি হায়া তাই না?”

লায়ানা মিষ্টি হেঁসে বলে,”জি আপু।”

“তুমিও চলে আসো আমাদের সাথে।”

লায়ানা উঠে দাঁড়ালো, আহানের দিকে তাকিয়ে বলে,” আহান তুইও চল।”

আহনাভের মা আহনাভ এর কোল থেকে ওয়ার্দিকে নিয়ে বলে,”আহনাভ তুইও ওদের সাথে যা।”

আহনাভ ভ্রু কুঁচকে তাকালো অতঃপর কিছু একটা ভেবে আর বারণ করলো না।

.
সাহিরাহ,আফ্রা,আলিযা,লায়ানা আর আহান সহ সব কচিকাঁচার দল বাগানের মাঝে গোল হয়ে বসে আড্ডা জমিয়েছে।

আর বাগানের এক কোনায় বসার জন্য সোফা রাখা হয়েছে,সেখানেই বসে আছে আহনাভ।

আহান লায়ানার পাশেই বসে আছে। আলিযা বলে উঠে,”হায়াতি তোমাদের সবাইকে তো আমরা চিনি আহির ভাই তোমাদের সবার কথাই বলেছে তো তোমার পাশের ছেলেটা কে?”

আহান ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আলিযার দিকে তাকিয়ে লায়ানার এক হাত ধরে বলে,”আমি এই হায়াতির এক মাত্র ভাই।”
.
আহনাভ দুর থেকে ওদের কোনো কথা শুনতে না পারলেও চোখের সামনে আহানের হাতের মুঠোয় লায়ানার হাত দেখে রাগে জ্বলে যাচ্ছে।

লায়ানার ফোন বেজে উঠে ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,”রাফি কেন ফোন করলো?”তারপর সকলের দিকে তাকিয়ে বলে,”আমার একটা কল এসেছে কথা বলে আসছি আমি।”

লায়ানা বলেই উঠে চলে যায়।বাগানের এক পাশে গিয়ে ফোন রিসিভ করে বলে,”কী হয়েছে রাফি?”

“ম্যাম আমরা যেই লিস্ট পেয়েছিলাম,তো লিস্ট অনুযায়ী প্রথম জায়গার সব কাজ ফিনিশ করেছি এখন সেকেন্ড যেই জায়গা তা হচ্ছে রাঙামাটি।রাঙামাটি থেকেই পুরো দেশের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হয়।ঐখানে অনেক বড় ষড়যন্ত্র চলছে।”

“ওহ ঠিক আছে,আমাকে দুই বা তিনদিন সময় দাও মুগ্ধতার বিয়ে পাকা হোক তারপর ঐখানে যাওয়ার ব্যবস্থা করছি।”বলেই ফোন রেখে দেয়
.
লায়ানা,একবার বাগানের মাঝে বসে থাকা সকলের দিকে তাকিয়ে ঐখানে না গিয়ে বাড়ির ভিতর হাঁটা ধরে।লায়ানা ভেবেছিল এতক্ষনে মুগ্ধতার সাথে আহিরের হয়তো কথা বলা শেষ, তাই বাড়ির ভিতরে আসা লায়ানার।কিন্তু মুগ্ধতা বসার ঘরের কোথাও নেই এর মানে ওদের কথা শেষ হয়নি।
.
লায়ানাকে দেখে আহনাভের মা এগিয়ে গিয়ে বলে,” কী হয়েছে হায়াতি।এইখানে একা দাড়িয়ে কেনো? তুমি না ওদের সাথে গেলে গল্প করতে।”

“জি অন্টি কিন্তু আমার না মুগ্ধতার সঙ্গে কিছু কথা আছে।”

“তাহলে চলে যাও না মুগ্ধতার কাছে।আমার মনে হয় ওরা ছাদে আছে।”

“ওহ কিন্তু তোমাদের ছাদে কিভাবে যাবো আমি?”

“সিঁড়ি দিয়ে উঠে বা দিকে গিয়ে আবার সিঁড়ি দেখতে পাবে।ঐটাই ছাদে উঠার রাস্তা।”

“ঠিক আছে।”লায়ানা হাঁটা ধরলো সিঁড়ি বেয়ে উঠে দোতলায় চলে যায় বা দিকে যেতেই এক শক্ত পক্ত হাত লায়ানার হাত ধরে ফেলে।লায়ানা গরম চোখে পাশে তাকাতেই দেখতে পায় আহনাভকে।লায়ানা হেঁসে বলে উঠে,”আরেহ মিস্টার আহনাভ, আজ লায়ানার কাছে নিজেই ধরা দিল যে?”

আহনাভ লায়ানার হাত ধরে হেঁচকা টানে দুজনের মাঝের সকল দূরত্ব ঘুচিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসে।লায়ানা চোখ বড় বড় করে ফেলে। আহনাভের থেকে হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করে মৃদু স্বরে বলে উঠে,” কী করছো আহনাভ আমার হাত ছাড়ো।আজ লায়ানার রোম্যান্টিক হাওয়া কী আহানাভের লাগলো নাকি?

আহনাভ আরো শক্ত করে চেপে ধরে লায়ানার হাত, দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”আমি ছুঁয়েছি বলে এমন মোচড়া মুচড়ি কেন করছো?ওই সো কল্ড আহান,ছেলেটা হাত ছুঁয়ে দেয়ার সময় তো কিছু বলোনি।”

লায়ানা ভ্রু কুচকে বলে,”আহনাভ ও আমার ভাই একদম এইসব মুখেও আনবে না ওকে নিয়ে।ভাই বোনের হাত ধরতেই পারে স্বাভাবিক না।তুমি কেন ওকে নিয়ে এমন করছো আহনাভ?প্লিজ আমাকে বলো।”

“আজ ম্যাচিং করে জামা পড়েছো কেনো দুজন? হায়া আমার যে ভালো লাগছে না কেন বুঝতে পারছো না তুমি কেনো বললে ঐদিন আহানকে তুমি ওকে উন্মাদের মত ভালোবাসো? ”

“কী যা তা বলছো আহনাভ আমি ওকে কেনো বলতে যাবো আমি ওকে ভালবাসি?ও আমার ভাই আহনাভ।”

আহনাভ লায়ানার হাত আরো জোড়ে চেপে ধরে বলে,”ও যদি তোমার ভাই হয়েই থাকে ওইদিন ফ্যামিলি ডিনারে ও কোথায় ছিল?তোমার মা বাবা মানে আঙ্কেল আন্টি কোথায় ছিল?”

লায়ানা আহনাভকে স্ব জোরে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে তর্জনী তুলে বলে উঠে,”ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট আহনাভ।কী জানো তুমি আমার ব্যাপারে?এই হায়াতি আহমেদ লায়ানা যা জানতে দিয়েছে তার থেকে বেশী কিছু জানতে এসো না।আহান কে নিয়ে কেনো পড়ে আছো তুমি?তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না আহনাভ,তোমার প্রতি আমার যা ভালোবাসা আছে তাও তুমি শেষ করে দিচ্ছ।এত অবুঝ কেনো তুমি?বুঝতে কেনো চাইছো না আহান আমার ভাই,আমি আমার ভাই কে উন্মাদের মত ভালোবাসি তার বোন হিসেবে কিন্তু তুমি যেইভাবে বলছো ঐভাবে নাহ।আহানের ব্যাপারে আবার খারাপ কথা তোমার মুখে আনলে এই হায়াতি আহমেদ লায়ানার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।তোমাকে ভালোবাসি বলে বার বার তুমি আমাকে অপমান করতে পারবে না,না পারবে আমার ভাইকে অপমান করতে।”বলেই সিঁড়ি বেয়ে নিচে চলে গেলো লায়ানা।

আহনাভ চোখ বন্ধ করে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে চুল টেনে বিড়বিড় শুধায়,”আহনাভ তুই পাগল হয়ে যাচ্ছিস নাকি,কেন এমন বাড়াবাড়ি করছিস?কী করে ফেললি এইটা।কিন্তু হায়া তো ওই আহানকে ভালোবাসার কথা বলেছে আমি নিজে শুনেছি তাহলে বার বার কেন অস্বীকার করছে হায়া?এর মানে কী আমি ভুল,এর পিছনে অন্য কিছু আছে।”

.
লায়ানা মন মরা হয়ে দাড়িয়ে ছিল,সিঁড়ি বেয়ে আহির আর মুগ্ধতাকে নেমে আসতে দেখে ঠোঁটের কোণে এক ফালি হাঁসি ঝুলিয়ে ফেলে।ওরা দুজন নামতেই আহিরের বাবা বলে উঠেন,”আমাদের দুই পরিবার যেহেতু রাজি।আমি জানি আমার ছেলে আহিরও রাজি।”

ইয়াশা বলেন,”আহির তুমি কী রাজি এই বিয়েতে?”

আহির মুচকি হেসে বলে,”জি।”

মুগ্ধতার বড় মামা মুরাদ বলেন,”আলহামদুলিল্লাহ।ছেলে,মেয়ে সহ দুই পরিবার রাজি আর কী।”

“হ্যা।আর আমরা দুই পরিবার মিলে তোমাদের দুজনের আকদ আর সাত দিন পর ঠিক করেছি।তার এক মাস পর মুগ্ধতা কে আমরা তুলে আনবো আমাদের বাসায়।”

.
দুই পরিবারের সদস্যরা একজন আরেকজনকে মিষ্টি খাওয়াচ্ছে। লায়ানা এগিয়ে গিয়ে মুগ্ধতার মুখে একটি মিষ্টি পুরে দিয়ে ঠোঁটের কোণে হাঁসি ফুটিয়ে বলে,”কনগ্রেচুলেশন মাই বেহনা।” তারপর পাশে আহিরের দিকে তাকিয়ে বলে,”শেষ মেষ তাহলে ডিলার থেকে আমার জিজু হয়ে যাচ্ছেন মিস্টার আহির।”

আহির প্রসন্ন হাসে,বলে,”তুমিও আমার এক মাত্র হবু শালিকা এখন।”

অনামিকা বলে উঠলো,” আজ ডিনার করে তবে যাবে তোমরা।”

ইয়াশা হাঁসলো,বলল,” ঠিক আছে।”

.
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে রান্না ঘরে এখনও রান্নার তোড়জোড় চলছে।বসার ঘরে সবাই আড্ডা জমিয়েছে,আড্ডায় নেই শুধু লায়ানা।লায়ানা মুগ্ধতাকে মিষ্টি খাওয়ানোর কিছুক্ষন বাদেই চলে যায় কাউকে না বলে,শুধু বেরিয়ে মুগ্ধতাকে ম্যাসেজ করে দিয়েছে গুরুত্বপূর্ণ কাজের কথা মনে পড়ে গিয়েছে তাই হুট করে চলে এসেছে।
.
খোলা মাঠের সামনেই লায়ানা জোরে ব্রেক কষে গাড়ি থামিয়ে দেয়।গাড়ি থেকে বেরিয়ে এলোমেলো পায়ে মাঠের ঠিক মাঝে এসে দুই হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে,চোখ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে।

লায়ানা হঠাৎ চিৎকার করে কান্না শুরু করে আজ যেনো লুকিয়ে রাখা আঘাত গুলো তাজা করে দিয়েছে আহনাভ,কান্না করতে করতে বলে উঠে,” কেনো হয় আমার সাথে এমন।আমি কী কাউকে ভালোবাসার জন্য যোগ্য না?কেনো দেয় আমাকে সবাই কষ্ট?আমি কী কষ্ট পাওয়ার যোগ্য?না পেলাম নিজের মন মত বাবা মায়ের থেকে ভালোবাসা,না পেলাম ভালোবাসার মানুষকে ভালোবেসে তার থেকে ভালোবাসা।কেন আহনাভ বার বার কেনো কষ্ট দিচ্ছ এই লায়ানাকে?আহান তো আমার আপন ভাই না,তাও যে এই আহান আমাকে তিন বছর আগে নিজের প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাঁচিয়েছে এই গত তিন বছর নিজের বোনের মত করে ভালোবেসেছে।তো এই আহানের নামে খারাপ কথা শুনি কী করে আমি?আমার তো কেউ আপন না তাও সবাই আমার রক্তের সাথে মিশে গিয়েছে। আমারও তো একটা নরম মন আছে,আমি তো তোমাকে ভালোবাসি আহনাভ।তুমি বারবার আমাকে কেনো অপমান করো?কেনো আহনাভ?তোমাকে ভালোবাসি বলে এত অপমান?”

লায়ানা থেমে যায় হিচকি তুলে বলে,”আমি তাহলে ভুল করলাম তোমাকে ভালোবেসে?কিন্তু আমি যে পারবো না তোমাকে ভুলে থাকতে।তোমার প্রতি আমার এই এক তরফা ভালোবাসাই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে দাড়ালো।”

#copyrightalert
#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here