ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_১৭

0
168

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_১৭
.
মুগ্ধতার গাড়ি এসে থামলো পিএস ইন্ডাস্ট্রির সামনে।
গাড়ি থেকে বেরিয়েই বড় বড় পায়ে পিএস ইন্ডাস্ট্রি নামক ভবনটির সদর দরজা দিয়ে ভিতরে চলে গেল, রিসেপশনে গিয়ে রিসেপশনিস্টকে বলে,”আমি জায়ান আবরাহার আহনাভ এর সাথে দেখা করতে চাই।আমি মি. আহনাভ এর সিস্টার-ইন-লো।”

রিসেপশনিস্ট কাউকে ফোন করলো।ফোন রেখে মুগ্ধতাকে বলে,”ম্যাম স্যার কেবিনেই আছে।আপনি যেতে পারেন।”

.
মুগ্ধতা কেবিনের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকেই বলা শুরু করে,” লিসেন মি. আহনাভ আমি জানিনা কাল লায়ানা কেন আপনাদের বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি বের হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এটা জানি লায়ানা আপনার কারণে কষ্ট পেয়ে আগে চলে গিয়েছিল। আমি আর মিস্টার আহির যখন সিঁড়ি দিয়ে নামছিলাম ওকে আমি মুড অফ করে থাকতে দেখেছি। যখন লায়ানা আমাকে মিষ্টি খাইয়ে দিয়েছিল তখন ওর চোখে আমি হাসির পিছনে লুকিয়ে থাকা কষ্ট দেখেছিলাম।আপনার কারণে ও যদি আর একবার কষ্ট পায় আমি বিয়ে ক্যানসেল করে দেবো।আমি সেই বাড়িতে বিয়ে করব না যে বাড়ির মানুষের কারণে আমার বোন কষ্ট পায়। সময় থাকতে ওর ভালোবাসার মূল্য না দিলে,একদিন সে আপনার থেকে হারিয়ে গেলে তাকে চেয়েও কাছে পাবেন না।”

আহনাভ স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে রইলো।আহনাভ সব ফাইল সাইন করে তমালকে কল দিবে বলে চেয়ার থেকে উঠে দাড়িয়েছিল ফোন হাতে নিতেই আচমকা এইভাবে মুগ্ধতার এসে এহেন কথা শুনিয়ে যাওয়ায় যেনো আহনাভ স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে।
.
মুগ্ধতা পার্কিং লটে গিয়ে গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বেরিয়ে যায়।

.
আহির মুগ্ধতা এসেছে এই কথা শুনেই আহনাভের কেবিনে চলে আসে।কেবিনে ঢুকেই আহনাভকে এইভাবে পাথরের মত দাড়িয়ে থাকতে দেখে আহির
বলে উঠে,”কীরে আহনাভ এইভাবে স্টেচূ হয়ে দাড়িয়ে আছিস কেনো?আর মুগ্ধতা কোথায়?”

আহনাভ দাড়িয়ে থেকেই সব বলে দেয় মুগ্ধতা এসে কী কী বলে গিয়েছে।আহির ধপ করে চেয়ারে বসে পড়ে,সাথে সাথে ফোন বের করে মুগ্ধতাকে ফোন লাগায়।মুগ্ধতা গাড়ি রাস্তার এক পাশে দাড় করিয়ে ফোন রিসিভ করে বলে,”বলুন কী সমস্যা?”

“তুমি এইসব কী বলে গিয়েছো আহনাভ কে উল্টো পাল্টা?তুমি বিয়ে করবে না এইসবের মানে কী”

“একদম না জেনে না বুঝে কথা বলবেন না।যদি জানার ইচ্ছা থাকে তাহলে বিকেলে আমার রেস্টুরেন্টে চলে আসুন।”

“আমি কিছু জানি না বুঝিও না কিন্তু তুমি বিয়ে করবে না এইসবের মনে কী মুগ্ধ রানি?তুমি বিয়ে না করলে আমি যে দেবদাস হয়ে যাবো,সত্যি বনবাসে চলে যাবো।”

আহির আর কিছু বলবে তার আগেই মুগ্ধতা ফোন কেটে দেয়।আহির ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
,”দিল ফোন কেটে।”

আহির আহনাভের কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়।আহনাভ চেয়ারে ধপ করে বসে পড়ে,চুল খামচে ধরে আওড়ালো,”আহনাভ কী হলো এইসব!”

আহনাভ ফোন হাতে নিয়ে লায়ানাকে ফোন করলো।রাফি ফোন রিসিভ করে ঐপাশ থেকে বলে,”জি কে বলছেন বলুন?”

“আপনি কে?হায়া কোথায়?”

“আমি মিস হায়াতি আহমেদ লায়ানার পার্সোনাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রাফি বলছি।”

“তো হায়া কে ফোন টা দাও ওর সাথে আমার কথা আছে।”

“কিন্তু স্যার ম্যাম করো সাথে এখন কথা বলতে চায় না।ম্যাম এখন তার কাজে ব্যাস্ত।”

“রাফি ও যতই কাজে ব্যাস্ত থাকুক না কেনো বলো আমি ফোন করেছি তাহলে ও নিশ্চই কথা বলবে।”

ঐপাশ থেকে লায়ানার কণ্ঠে ভেসে আসে,” রাফি যেই ফোন করে থাকুক বলে দাও আমি ব্যাস্ত করো সাথে কথা বলার মত আমার হাতে সময় নেই।”

রাফি বলে,” স্যার ম্যাম কথা বলতে পারবে না।”

আহনাভ ফোন কেটে দেয়।আহনাভ চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে বলে,”এমন কেন করছো হায়া।আজ আমি তোমার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করছি আর তুমি আমার সাথে কথা বলতে চাইছো না।”

.
আহির বিকেল হতেই এলোমেলো হয়ে ছুটে চলে আসে মুগ্ধতার রেস্টুরেন্টে।এসেই রেস্টুরেন্টের ছাদে চলে যায়,ছাদের এক পাশে বসার ব্যাবস্থা করা আছে সেখানেই মুগ্ধতা বসে আছে।আহির এগিয়ে গেলো মুগ্ধতার ঠিক বরাবর চেয়ারে বসে পড়লো।

আহির শান্ত কণ্ঠে বলে,”আজ সকালে যেই থ্রেট দিয়ে এসেছো একবারও ভেবে দেখেছো আমার কী অবস্থা হতে পারে তোমার ওইসব কথা শুনে?তুমি আমাকে বিয়ে না করলে এই আহির তো দেবদাস হয়ে যাবে।”

মুগ্ধতা দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বলে,”দেখুন আপনি হয়তো জানেন না যে আমি আপনাকে ফ্যামিলি ডিনারের দিন ফার্স্ট দেখিনি। আপনাকে আমি তার আগের দিন রোডে দেখেছিলাম। আপনি মি. আহনাভ এর সাথে দুষ্টুমি করছিলেন।সে সময় কিছুটা দূরে লায়ানাও ছিল। মি. আহনাভ কে দেখেই পছন্দ করে ফেলে যাকে লাভ এট ফার্স্ট সাইট বলে।এর পর অনেক ভাবে তাদের দেখা হয়েছে কিন্তু প্রতি বার উনি লায়ানাকে অপমান করেছে ওর ভালোবাসা কে তুচ্ছ করেছে।লায়ানা যে ওনার জন্য কী পরিমাণে পাগল তা শুধু আমি জানি। গতকাল যখন আপনাদের বাড়িতে গিয়েছিলাম সে সময় হয়তো অনেক কিছু হয়েছে লায়ানা আর আহনাভ এর মধ্যে।লায়ানা আমাকে কিছু বলেনি কিন্তু আমরা যখন ছাদ থেকে নেমে আসছিলাম ওকে আমি মুড অফ করে থাকতে দেখেছি। ও যখন আমাকে না বলেই চলে গিয়েছে তখন আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম আসলেই কিছু একটা করেছিল মি
আহনাভ যার কারণে আমার বোন এত কষ্ট পেয়েছে।”

“হায়াতি যে আহনাভ কে ভালোবাসে তা আমিও জানি ও আমাকে একবার মজার ছলে বলেছিল জানেন মিস্টার আহির আমি না আপনার ভাইকে উন্মাদের মত ভালোবাসি,সেইদিন থেকে আমি আহনাভ কে বুঝানো শুরু করি মাঝে আহনাভ আমাকে বলেছিল হায়াতিকে সুযোগ দিবে কিন্তু হুট করে আবার কী হয়ে গেলো আমি বুঝে উঠতে পারছি না।”

” আপনি আপনার ভাইকে বুঝান।নাহলে এমন একদিন আসবে আমার বোন কে চাইলেও কাছে পাবে না।”

“হম আমি বুঝানোর চেষ্টা করবো।আর এইবার তুমি বলবে না যে বিয়ে করবে না মুগ্ধ রানি।সমস্যা নেই বিয়ে না করলে তুলে এনে বিয়ে করবো।”

” এই মুগ্ধতা দুর্বল না যে আপনি তুলে নিয়ে যাবেন আর আমি নাচতে নাচতে চলে যাবো আপনাকে বিয়ে করতে!”

“আমি তো এই মুগ্ধ রানিকে ছাড়া কোনো মুগ্ধতাকে বিয়ে করবো না।আমি তো দেবদাস হয়ে যাবো মুগ্ধ রানি,তুমি আমাকে বিয়ে না করলে।”

” হয়েছে এমন ভালোবেসে ফেলেন নাই যে দেবদাস হয়ে যাবেন।এর থেকে ভালো বরং রাস্তার পাগল হতে পারেন।”

“যেটাই হই না কেনো কিছু একটা হয়ে যাবো তোমায় না পেলে।মুগ্ধ রানি আমার ঝগড়া করার মত আর শক্তি নেই প্লিজ কিছু অর্ডার করো আমার খুব ক্ষুধা পেয়েছে ।যেই পাগল বানালে তুমি আমাকে।”

মুগ্ধতা ঠোঁট টিপে হাসে বলে,”আপনার যেইটা ভালো লাগে ঐটাই অর্ডার করুন খেয়ে নিন।যেভাবে ছুটে এসেছেন।”

.
সূর্য দিগন্তে নেমে গিয়ে,চারিপাশে রাতের অন্ধকার পরিবেশ ছেয়ে গিয়েছে।বাড়িতে মুগ্ধতার আকদে কে কী পড়বে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।মুগ্ধতা রেস্টুরেন্টে আহির কে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে চলে এসেছিল।
.
বাড়িতে এসেই লায়ানা অবাক হয় এত রাতে সবাই আলোচনার আসন বসিয়েছে।সারাদিন কাজ করে এসে এখন আলোচনায় যোগ দেয়ার মত শক্তি নেই,তাই কেউই লায়ানাকে জোর করলো না।লায়ানা ঘরে যাওয়ার আগে হেসে বলে গিয়েছে,”আরেহ তোমরা প্ল্যান রেডি করো।আমি কী পড়বো সবসময় বনুই সিলেক্ট করে,এইবারও বনুই করে নিবে।”

.
লায়ানা ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে বিছানায় গিয়ে গোল হয়ে বসে।মুগ্ধতা লায়ানাকে খাইয়ে দিচ্ছে আর আহানের দিকে মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে আহানের কথা শুনছে।আহান বলছে,”আমি রাঙামাটির মিশনের সব জায়গা পয়েন্ট করে ফেলেছি।আমাদের রাঙামাটির মিশন কমপ্লিট করতে একটু বেগ পেতে হবে তিন থেকে চারদিন লাগবে।”

লায়ানা খেতে খেতে বলে,”হম হম।”

আহান ভ্রু কুঁচকে বলে,”কী হম হম আগে খা পেত্নী। তারপর কথা বল।”

লায়ানা আহানের মাথায় বাড়ি দিয়ে বলে,” কী পেত্নী?আমি কোন দিক দিয়ে পেত্নী।”

মুগ্ধতা মাঝে থেকে বলে উঠে,”তোরা ঝগড়া করলে কিক মেরে দুইটাকে বিছানা থেকে ফেলে দিবো।” দুইজন চুপ হয়ে যায়।মুগ্ধতা বাকি খাবার লায়ানাকে খাইয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বলে,”সব প্ল্যান তো রেডি।এইবার আকদের পরে মিশন স্টার্ট।এইবার আর কোনো কথা না বলে ঘুমিয়ে পড় লায়ানা আর আহান তুইও ঘুমাতে যা।”

মুগ্ধতা চলে যায়।আহান লায়ানার দিকে আড় চোখে তাকালে লায়ানা ব্ল্যাঙ্কেট টেনে হাত পা ছড়িয়ে বিছনায় শুয়ে পড়ে।আহানের পিঠে গিয়ে ঠাস করে লায়ানার পা লাগতেই আহান ছিটকে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে বলে,” পেত্নী তুই আমাকে লাথি মারলি কেন?”

লায়ানা মুখে ব্ল্যাঙ্কেট টেনে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,” ভাই আমার যাও ঘুমাতে যাও আমি ঘুমাবো এখন।”

“তোকে পড়ে দেখে নিব শয়তান মাইয়া।” বলেই আহান লায়ানার ঘর থেকে বেরিয়ে ঘরের দরজা হালকা ভিড়িয়ে দিয়ে চলে যায়।

লায়ানা ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করে ফেলতেই ফোন বেজে উঠলো লায়ানা চোখ মুখ কুচকে হাতড়ে ফোন হাতে নিয়ে না দেখেই রিসিভ করে নিল।কানের সামনে ফোন নিয়ে কিছু বলবে তার আগেই ওই পাশ থেকে একজন বলে উঠে,” কী এমন কাজে ব্যাস্ত ছিলে যে আমার ফোন রিসিভ করতে পারলে না।”

লায়ানা চুপ হয়ে গেলো।মনে মনে বলল,” কেনো ফোন করেছে।আমি তো আজ বারবার এড়িয়ে গেলাম তাহলে সমস্যা কী?”

আহনাভ বলে উঠলো,” হায়া কথা বলবে না?”

লায়ানার মনে হচ্ছে কেউ বুকের ভিতর হাতুড়ি পেটা করছে।এই আহনাভ এমন কেনো?এইভাবে ‘হায়া’ বলে ডেকে কেনো লায়ানাকে গলিয়ে দিতে চায়।

আহনাভ অস্থির হয়ে বলে উঠলো,”প্লিজ হায়া কথা বলো।আমার মনে অনেক প্রশ্ন এই শত শত প্রশ্নের সঠিক উত্তর না জেনে তার মধ্যে ভেসে গিয়েছি আমি।আর গতকাল এর জন্যই কত লাগাম ছাড়া কথা বলে ফেলেছি।”

লায়ানা কণ্ঠে কাঠিন্য এনে বলে,”আমি সারাদিন কাজে ব্যাস্ত ছিলাম এখন আমার ঘুমের সময়।আমাকে ডিস্টার্ব করো না প্লিজ।” বলেই ফোন কেটে দেয় লায়ানা।

#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here