কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_২৬ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
597

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৬
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

মেহবিন তাজেলের বাড়িতে পৌঁছে দেখলো তাজেলের মা আর ভাইবোন তাদের বারান্দায় বসে কি যেন করছে। ও এক পলক সেদিকে তাকিয়ে তাজেলের ঘরে গেল। নওশি যা বলেছিলো তাই ও শুয়ে আছে চোখ বন্ধ করে। মেহবিন তাজেলের পেটের সামনে ওখানে চকিতে বসলো আর তাজেলকে আলতো ডাক দিল,,

“নেত্রী!”

তাজেল আস্তে করে চোখ খুললো। মেহবিন তাজেলের কপালে হাত দিয়ে চেক করলো জ্বর হয়েছে কি না। না জ্বর নেই। তাই ও বললো,,

“কি হয়েছে আমার নেত্রীর ? সে নাকি সারাদিন না খেয়ে শুয়ে আছে।”

তাজেল মেহবিন কে দেখে উঠে বসলো। ততক্ষণে নওশিসহ তাজেলের সৎমাও ঘরে ঢুকেছে। তাজেল কিছু বলছে না দেখে মেহবিন ওর গালে হাত রেখে বলল,,

“নেত্রী কি হয়েছে? তোমার ডাক্তারকে বলবে না?”

তাজেলের চোখটা মুহূর্তেই ছলছল করে উঠলো। তা দেখে মেহবিন একপ্রকার থমকে গেল। এরকম টা ও তাজেলকে কখনো দেখেনি। মেহবিন ওর গালে হাত রেখে হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে দিয়ে চোখের নিচে ডলে দিতে লাগলো। তাজেলের কান্না আর বাঁধ মানলো না ও কেঁদে উঠলো। আর মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো। তাজেল মেহবিন কে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো। হুট করে এমন কান্না দেখে মেহবিন ভরকে গেল সেই সাথে নওশিও । তাজেলের সৎমাও যে অবাক হয়েছে সেটা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এদিকে তাজেলের কান্না শুনে আশেপাশের সকল মহিলারা চলে এলো। ঘরে ঢুকেই সবাই দেখলো তাজেল মেহবিন কে জরিয়ে ধরে কাঁদছে। মেহবিন তাজেলের মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কিছুক্ষণ পর তাজেল কান্না শেষ করে শান্ত হলো। মেহবিন কিছু বললো না ওকে। ওকে কোলে তুলে তাজেলের সৎমায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তাজেলকে আমি আমার সাথে নিয়ে যাচ্ছি। ও আজ আমার সাথেই থাকবে।”

তখন তাজেলের মা মুখ বাঁকিয়ে বলল,,

“তোমাগো এত রঙঢঙ কিসের বুঝি না বাপু। যেনে ইচ্ছা হেনে যাক। দরকার পরে আমার জীবন থেইকা একেবারে চইলা যাক। আমি একটু বাঁচি!

তাজেলের সৎমায়ের কথা শুনে তাজেল মেহবিনকে আরো শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো মানুষ এরকম হয় কিভাবে এমনিতেই দেখছে মেয়েটা কাঁদছে তারওপর এরকম কথা। মেহবিন নওশিকে বলল,,

“নওশি আমার ব্যাগটা একটু আমার বাড়িতে দিয়ে আসতে পারবে?”

মেহবিনের কথা শুনে নওশি বলল,,

“পারমু না কেন ডাক্তার আপা।আমি এখনি যাইতেছি।”

মেহবিন আর কোন কথা না বলে তাজেলকে কোলে নিয়ে বের হলো। সবাই ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে ও কারো তোয়াক্কা না করে বাড়ি চলে এলো। নওশি ব্যাগ দিয়ে চলে গেল। মেহবিন তাজেলকে বিছানায় বসিয়ে দিল । তাজেল ও বাধ্য মেয়ের মতো বসলো। ও ফ্রেশ হয়ে বের হলো। তখনি মাগরিবের আজান শোনা গেল মেহবিন আজানের জবাব দিয়ে তারপর তাজেলকে বলল,,

“নেত্রী যাও ওযু করে এসো। আমরা একসাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করবো। ”

মেহবিনের কথা শুনে তাজেল বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে গেল। ওযু করে আসলে মেহবিন বড় একটা ওরনা দিয়ে ওর হিজাব বানিয়ে দিল। মেহবিনের কাছে এক্সট্রা জায়নামাজ ছিল সেটাই ওর পাশে বিছিয়ে দিল। তারপর তাজেলের হাত ধরে জায়নামাজে দাড় করিয়ে দিল। দুজনে একসাথে নামাজ আদায় করলো। নামাজ শেষে তাজেল লম্বা একটা মুনাজাত করলো। মেহবিন ওর জন্য অপেক্ষা করতে করতে তসবিহ শেষ করে নিল। দু’জনের হয়ে গেলে মেহবিন জায়নামাজ দুটো গুছিয়ে রাখলো। এই মুহূর্তে তাজেলকে অনেক স্নিগ্ধ লাগছে। ও ওরনা খুলে মেহবিন কে দিতে চাইলে মেহবিন বলল থাক খুলতে হবে না। তাজেল আর কিছু বললো না চুপ করে বিছানায় বসে রইল। মেহবিন তাজেলের সামনে বসে বলল,,

“আমার নেত্রীকে নীরবতা মানায় না। তাকে সর্বদা চঞ্চলতায় মানায়।”

তাজেল মেহবিনের কথায় ওর দিকে তাকালো। মেহবিন ওর হাত ধরে বলল,,

“কি হয়েছে নেত্রী?”

“আজ সকালে মা আইছিল ডাক্তার!”

তাজেলের কথায় মেহবিন একটু অবাক হয়। তবুও বলে,,

“কি করতে এসেছিল তোমায় দেখতে নাকি তোমায় নিতে?”

“আমি জানি না।”

“মানে? এতো বছর পর সে কেন এখানে এলো?”

“আবার সংসার করার লাইগা।”

“আমাকে ক্লিয়ার করে বলো তো?”

“আমার মায় আমার বাপের কাছে ফিরা আইছে। হেয় নাকি তার ভুল বুঝবার পারছে যে আমার বাপ তারে কতো ভালোবাসতো। আমারে নাকি হেয় অনেক ভালোবাসে তাই নাকি আমাগো ছাড়া এহন হে থাকবার পারবো না। তাই সব ছাইড়া চইলা আইছে আমাগো কাছে।”

“তারপর?”

“আমার বাপ তো আর তারে কোনমতেই উডাইবো না বাড়ি। আমার সৎমায়েও যাচ্ছে তাই কইয়া মুখ করছে। তারা সবাই মিলা কাইজা(ঝগড়া) করে। এক পর্যায়ে মা কয় আমারে আমার সৎমায় আদর করেনা বকা বাজি করে আমার জন্য হইলেও জানি মায়রে থাকতে দেয়। তহন আমার বাপ কয়টা কথা কইছিল আমারে নাকি দরকার পরলে বেইচা দিব নাইলে কাইটা নদীতে ফালাই দিবো। আমারে তার দরকার নাই। আমি কেন মরি না তাইলে তার সংসারে অশান্তি হয় না। আমি নাকি আমার সৎমায়রে জালাই আমি মরলে ভালো হইবো। আমার জন্য নাকি আবার মায়রে রাখবো। এই কথা হইনা আমার মায় চইলা গেছিল আর আসে নাই পুরা দিনে।সবাই ভাবছে আমি কিছু হুনি নাই কিছু দেহি নাই তোমার কাছে প্রাইভেট পরতে আইছি। কিন্তু আমি সব দেখছি সব শুনছি তাই তো তহন কানবার পারি নাই তহন আর বাড়িও যাই নাই পরে গেছিলাম।

তুমি বিশ্বাস করো ডাক্তার। আমার বাপের ঐ কথাগুলা শুইনা আমার মনে হইছিল আমি চোহে আন্দার দেখতেছি। তহন আমি কানবার পারি নাই ডাক্তার। খালি মনে হইতেছিল আমার বাপ আমারে মরার কথা কইছে এতোদিন কেউ না থাকলেও হেই মানুষ টা দিনশেষে খবর নিতো হেই মানুষটাও আমি থাহায় ভালো নাই। কিন্তু আমার বাপ কতো ভালো এর আগে এতকিছু কইছে আমারে নিয়া কিন্তু আমি বাড়ি যাওয়ার পর আমারে জিগাইছিলো আমি স্কুলে যামু নাকি আমার টাকা লাগবো নাকি। কিন্তু হেই ভালোকথা গুলাও আমার মন খারাপ দূর করতে পারে নাই আমার কানে তো একটু আগের কওয়া কথা গুলা বাজতেছিল।

বলতে বলতেই তাজেল আবার কেঁদে উঠলো। মেহবিন এক হাত দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো কিন্তু কিছু বললো না। কাদুক একটু হালকা হোক। পুরোটা দিন এই কান্নাগুলো আঁটকে রেখেছিল। মেহবিন বুঝতে পারলো না ওর মাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই এসব বলেছে নাকি মন দিয়ে থেকে। তবে পরে যেহেতু ভালোভাবেই কথা বলেছে সেহেতু ওর মনে হচ্ছে ওর মাকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্যই বলেছে। কিন্তু এটা তো তাজেলের মাথায় ঢুকবে না এখন তবে ঢুকাতে হবে এখন না হয় পরে। তবে এইটুকু বয়সে এতটা ম্যাচুরিটি এসেছে এটা বোধহয় বাস্তবতা থেকেই হয়েছে এগুলোই ভাবলো কিছুক্ষণ। একটু শান্ত হতেই মেহবিন বলল,,

“তোমার বাবা তোমার মায়ের ওপর রাগ করেই ওগুলো বলেছিল যাতে সে চলে যায়। মন থেকে সেসব বলেনি যদি বলতো তাহলে পরে আর তোমার স্কুলে যাওয়ার কথা টাকা নেওয়ার কথা বলতো না।”

“আমি কিছু শুনবার চাই না ডাক্তার। তুমি আমারে কিছু কইয়ো না এহন।”

“আইচ্ছা কিছু না কইলাম এহন তুমি বসো তো একটু কিছু খাইয়া নও।আমি খাবার গরম কইরা নিয়ে আসি। দেহো তো তোমার ভাষা ঠিক আছে নাকি নেত্রী।

মেহবিনের গ্ৰাম্য ভাষা শুনে তাজেল একটু হাসলো আর বলল,,

“তোমার ভুল হইছে ডাক্তার তুমি বসো তো একটু হইবো না। হইবো, বইসা থাহো ইটু, আর নিয়ে আসি হইবো না নিয়া আসি। ”

“যাক অবশেষে নেত্রীর মুখে হাসি ফুটে উঠল।”

তাজেল হেঁসে বলল,,

“নও এহন রান্দুন ঘরে আমার মেলা খিদা লাগছে সারাদিন কিছু খাই নাই।”

মেহবিন হেঁসে ওকে একটা চকলেট দিল। আর বলল,,

“আপাতত এটা খাও। আমি পাঁচ মিনিটে আসছি।”

মেহবিন রান্না ঘরে চলে গেল। তাজেল ও চকলেট খেতে খেতে পেছন পেছন গেল। মেহবিন খাবার গরম করলো। তারপর একটা প্লেটে বেরে রুমে নিয়ে এলো। তাজেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,,

“নাও এখন খাওয়া শুরু কর?”

“তুমি খাইবা না?”

“না আমি পরে খাবো এখন খিদে নেই।”

“ওহ আচ্ছা।

তাজেল একবার খাবারের দিকে তাকালো আবার মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার মায় আবারো আমারে ধোঁকা দিছে ডাক্তার। আর সাতে এইবার মনে অয় আমার বাপ ও আমারে তাড়াতাড়ি ধোঁকা দিব।

এই ধোকার মানে মেহবিন বুঝলো ছেড়ে গেছে বোঝাতে চেয়েছে তাজেলের কাছে এটাই ধোঁকা। মেহবিন কিছু বললো না তখন তাজেল আবার বলল,,

“তুমি কহনো আমারে ধোঁকা দিও না ডাক্তার। তুমি জানো আল্লাহর কাছে এতোবড় মুনাজাতে কি চাইছি? চাইছি তুমি জানি আমারে কোনদিনও ধোঁকা না দাও।”

তাজেলের এমন কথা শুনে মেহবিন থমকে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। এ কয়েকদিনেই মেহবিন ওর কতোটা কাছের হয়ে গেছে এটা ও উপলব্ধি করতে পারছে। নরমালি একটা মানুষের এরকম কথা শুনে ইমোশনাল হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু মেহবিনের চেহারার তার রেশ মাত্র নেই কারন সে কঠোর ব্যক্তিত্বসম্পূর্ন একজন মানুষ। যাকে কেউ কাঁদতে দেখেনি। তাজেল না খেয়ে ভাত নাড়াচাড়া করছে দেখে মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“নেত্রী আমি তোমায় খায়িয়ে দিই?”

তাজেল মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“তুমি আমার জবাব দিলা না। আমারে কোনদিন ধোঁকা দিবা না তো?”

মেহবিন জবাব দিতে পারলো না ও নিজেও জানে না এই প্রশ্নের উত্তর কি হতে পারে। ও প্লেট টা নিয়ে খাবার মেখে তাজেলের সামনে ধরে বলল,

“খেয়ে নাও এখন আর কোন কথা না।”

“ডাক্তার তুমি!”

“নেত্রী আমি কি বললাম তোমায়। এখন খেয়ে নাও।”

তাজেল আর কিছুই বললো না। চুপচাপ খেয়ে নিল। তারপর তাজেলকে জিজ্ঞেস করল কার্টুন দেখবে কি না। ও বলল দেখবে মেহবিন কার্টুন ছেড়ে দিল। আর ওর সাথে বসে কার্টুন দেখতে লাগলো। তখন ও শুনতে পেল বাইরে থেকে কেউ মেহবিন কে ডাকছে। ও তাজেলকে ঘরে রেখে বারান্দায় এলো। তখন দেখলো তাজেল এর দাদি আর বাবা এসেছে। ও নিচে আসলো। তখন তাজেলের বাবা বলল,,

“তাজেল কি ঘুমাই গেছে?”

মেহবিন মুচকি হাসলো ও বুঝতে পারলো মেয়ের খোঁজেই এসেছে‌। ও বলল,,

“না কার্টুন দেখছে।”

“ও নাকি সারাদিন খায় নাই ও কি কিছু খাইছে?”

“যে বাচ্চাটাকে বেঁচে দিতে চেয়েছেন নাহলে কেটে নদীতে ফেলে দেবেন বলেছেন। তার জন্য হঠাৎ এতো দরদ।”

মেহবিনের কথায় তাজেলের বাবা আর দাদি দুজনেই চমকায়। তাজেলের বাবার চোখ ছলছল করে ওঠে লাইটের আলোয় মেহবিন তা স্পষ্ট দেখতে পায়। ও বলল,,

“চিন্তা করবেন না তাজেল খেয়েছে?”

“ও কি সব শুইনা ফালাইছে?”

মেহবিন শান্ত স্বরে বলল,,

“হুম যার জন্য ও সারাটাদিন চুপ চাপ শুয়ে ছিল। আর আমাকে দেখেই কেঁদে দেয়। তবে ওর মায়ের এখানে আসায় ওর মধ্যে কোন প্রভাব পরেনি প্রভাব পরেছে আপনার কথায়।”

কথাটা শুনেই লোকটা কেঁদে উঠলো আর বলল,,

“আমি মন থেইকা ওরে কিছু কই নাই। যাতে ওর মায়রে না উঠান লাগে এই জন্য আমি কইছি। আমি ওর মায়রে মেলা ভালোবাসতাম সে আমার ভালোবাসার মুল্য দেয় নাই। এহন ফেরত আইছে যহন আমি আরেকজনরে লইয়া সংসার করতেছি তাজেলের সৎমায় সতিনের মেয়েরেই সহ্য করতে পারে না হেনে সতিনরে করবো কেমনে। আমি তাজেলরে মেলা ভালোবাসি তাই তো ওর সৎমায়ের এতো কথা হুইনাও আমি ওরে আমার সামনে রাহি ‌। দিনশেষে যহন কাম কইরা আমি বাড়ি আসি তখন ওর চেহারা দেখলেই আমি মনে শান্তি পাই। হেই জন্যই বাড়ি আইসা আমি রাইতে ওর খবর নেই। আমি জানি আমি মাইয়ার জন্য ভালো কিছু করবার পারি না। তবে আমি চাই করবার কিন্তু ওর সৎমায়ের জন্য পারি না। তাজেলের ভালো করার নিগা আমি বিয়া করছিলাম কিন্তু বুঝিনাই বিয়া কইরা ওর ভালো না খারাপ কইরা ফালাইছি। ও আমারে কতোদিন ধইরা আব্বা ডাকে না খালি কয় আমার বাপ। আমি তাজেলরে মেলা ভালোবাসি কিন্তু ভালোবাসা দেখাইতে পারি না।”

তখন মেহবিনের পেছন থেকে শোনা গেল ,,

“আব্বা!”

বলেই তাজেল দৌড় দিল আর সোজা ওর বাবার কোলে উঠে পরলো। তাজেলের বাবা ওকে ধরে কেঁদে উঠলো। আর বলল,,

“আমারে মাফ কইরা দিস তাজেল।”

তাজেল কিছু বললো না শক্ত করে ওর বাবাকে ধরে রইলো। এখানের সবকিছুই শুনেছে সে মেহবিনের পেছনেই বেরিয়েছিল সে ওর বাবাকে দেখে আগায় নি। কিন্তু যখন দেখলো ওর বাবা কাঁদছে তখন আর থাকতে পারলো না। তাজেলের বাবা কান্না থামিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। তখন তাজেল বলল,

“আমি আব্বার সাতে বাড়ি গেলাম ডাক্তার আবার কাইল সকালে আসমুনি।”

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘আচ্ছা!”

তাজেল ওর বাবার সাথে চলে গেল। মেহবিন হাসলো তাজেলদের দেখে কিন্তু ঘরে ঢুকতেই মেহবিনের হাঁসি গায়েব হয়ে গেল। ওর হুট করেই অস্থির লাগছে ভিশন। ও মেঝেতেই শুয়ে পরলো হাত পা ছড়িয়ে। দৃষ্টি ওপরের দিকে। কিছুক্ষণ পর মেহবিন অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো,,

‘আপনি কি তাজেলের বাবার মতো নিজের কাছে রেখে আগলে রাখতে পারতেন না আমায় বাবা?”

প্রশ্নটা আজকে তার বাবার কাছে করতে ইচ্ছে করছে ভিশন। কিন্তু চাইলেও কি সবসময় সব হয়। মেহবিন একটু কান্না করতে চাইছে কিন্তু পারছে না কারন ও কাঁদতে জানেনা মায়ের কাছে যে কথা দিয়েছিল সে কখনো কাঁদবে না। বারবার কষ্ট পেয়েও না কাঁদতে কাঁদতে এখন কাঁদতে ভুলে গেছে সে। এক শক্ত খোলস দ্বারা নিজেকে আবৃত করেছে। কিছুক্ষণ পর আবার ও বলে উঠলো,,

“আমি ভিশন একলা মানুষ
নিজের ভেতরেই আমার আটকে থাকা।
কেউ কি কখনো বুঝতে পারে
আমার ভেতরে কতোটা কষ্ট ঢাকা।”

‘আমার একাকিত্বের শহরে কখনো অশ্রুর বৃষ্টি আসুক। সাথে খুব বেগে ঝড় উঠুক যাতে সব কষ্টগুলো ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায় আমার একাকিত্বের শহর।”

_________________

আজ বৃহস্পতিবার আজকেই হাসপাতাল থেকে ফিরে মেহবিন তার মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হবে। আদর বলেছে একদিন আগেই যেতে হবে নাহলে নাকি সে তার সাথে কথা বলবে না আরো কতোগুলো ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করেছে সাথে ওর মামামামি মামাতো ভাইবোনেরাও যুক্ত হয়েছে। শেষমেষ ওর আর কি করার ও রাজি হয়েছে। মেহবিন বাড়ি এসে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিল। তাজেলকে বলেছে সে আজ যাবে তাই তাজেল অপেক্ষা করছে। সেদিনের পর থেকে তার বাবার সাথে তার সম্পর্ক অনেকটাই ভালো হয়েছে। এখন ওর সৎমা কিছু বলতে পারে না তাজেলকে ওর বাবা কড়া করে কতোগুলো কথা বলেছে আর এটাও বলেছে তাজেলকে যেন খারাপ কথা না বলে। তাজেলের থেকে বিদায় নিয়ে ও রিক্সায় উঠলো ট্রেনে করেই যাবে সে। অতঃপর স্টেশন গিয়ে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। ট্রেন আসলে ট্রেনে উঠে পরলো। গন্তব্য তার ঢাকা অতঃপর তার মামার বাড়ি।

_________________

“এ কি মিস নাফিয়া আপনি এখানে? একাই এসেছেন নাকি?”

কারো কথায় নাফিয়া পেছনে তাকায়। পেছনে তাকিয়ে আরবাজ কে দেখতে পায়। আরবাজ কে দেখে ও বলল,,

“আরে মিস্টার শেখ! আপনি শপিং মলে তাও আবার গার্লস সেকশনে?”

“আমি আগে প্রশ্ন করেছি মিস?”

“হুম আর আমি একা নই নিসা আর আলভি ভাইয়াও আছে। ওরা ওদের মতো শপিং করছে আর আমি আমার মতো। এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দিন?”

“মিশুর জন্য ড্রেস আর জুতো কিনতে এসেছি। কিন্তু কোনটা নেব বুঝতে পারছি না। ও বলেছে সুন্দর দেখে একটা ড্রেস নিতে।”

মিশুর কথা নাফিয়া বলল,,

“মিশু আপু এখন কেমন আছে?”

“আছে আগের থেকে একটু বেটার। আমায় একটু হেল্প করবে?”

নাফিয়া আরবাজের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলল,,

“আপনার মতিগতি আমি বুঝি না কখনো আপনি বলেন কখনো তুমি ?

“আসলে কি বলো তো তোমায় প্রথমে ভাবি তুমি একজন সফল উদ্যোক্তা তাই আপনি বলি। পরে মনে পরে আরে তুমি তো আমার বন্ধুর ছোট বোন তাই । এখন বলো তো আমায় হেল্প করবে কি না?

“মিশু আপুর জন্য যেহেতু সেহেতু হেল্প করাই যায়।”

‘কেন অন্যকারো জন্য হলে কি করতে না?”

‘আপনার গার্লফ্রেন্ড এর জন্য হলে করতাম না।”

“আস্তাগফিরুল্লাহ নাউযুবিল্লাহ মেয়ে বলে কি? আমি কেন হারাম রিলেশনশিপ এ জড়াতে যাবো । যেখানে কিনা আমার আল্লাহ আমার জন্য একজন জীবনসঙ্গী কে নির্বাচিত করে রেখেছেন সেখানে আমি কেন অন্যজনের প্রতি আবেগ দেখিয়ে আমার জীবনসঙ্গীর হক নষ্ট করবো।আমি তো আমার সব আবেগ ভালোবাসা সব আমার হালাল নারীর জন্য রেখেছি। বুঝেছেন ম্যাডাম?”

আরবাজের কথা শুনে নাফিয়া হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে তারপর বলে,,

“হুম বুঝলাম আর আপনাকে কখনো কিছু বলবো না আমি।”

‘কেন? কেন?”

“আমি এক লাইন বললে আপনি দশ লাইন শুনিয়ে দেবেন। তাছাড়া এখানে আমি একটা এক্সামপেল দিয়েছি আর আপনি তো পুরো… যাই হোক চলুন মিশু আপুর জন্য শপিং করে দিই।”

আরবাজ আর কিছু বললো না। নাফিয়ার সাথে যেতে লাগলো। কিছুক্ষণ পর আলভি আর নিসার সাথেও দেখা হলো। আরবাজ আলভি কে বলল,,

“কাল অনুষ্ঠান আর আজ এসেছো শপিং করতে‌। কি কাজে ব্যস্ত ছিলে শুনি দুলহারাজা?”

তখন আরভি হেসে বলল,,

‘কি আর বলবো বলো! কাল কাল করতে করতে সেই অনুষ্ঠানের আগের দিনই আসতে হলো। আমাদের শপিং তো শেষ শুধু নাফিয়ার টা হচ্ছে না। একটা গাউন পছন্দ করেছে কিন্তু কি রঙের নেবে বুঝতে পারছে না।”

তখন আরবাজ নাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,,

“যাদের মন এতো পবিত্র তাদের শুভ্র রঙেই মানাবে ভালো।”

তখন নিসা বলল,,

‘একদম পারফেক্ট রঙ বলেছো আরবাজ ভাইয়া। আর নাফি আপুকে তো সবথেকে সুন্দর শুভ্র রঙেই লাগে।”

আরবাজ কিছু বললো না শুধু হাসলো সবাই মিলে শপিং করলো। আরবাজকে সাহায্য করার জন্য আরবাজ নাফিয়া কে একটা শুভ্র রঙের হিজাব গিফট করলো। প্রথমে না করলেও পরে নিতেই হলো নাফিয়া কে। ওরা চারজন মিলে কফিও খেল। কথায় কথায় জানতে পারলো আরবাজ এখনি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। আরবাজ মুখরের পরিবারকেও দাওয়াত করেছিল কিন্তু মন্ত্রীসাহেবের বাড়ি যেতে হবে বলে মানা করেছে মুখররা। আরবাজ ওদের কে একদিন যেতে বলে চলে গেল। ওরাও নিজেদের মতো বাড়ি চলে গেল।

________________

আজ শুক্রবার আজ সন্ধ্যা সাতটায় জিনিয়ার এঙ্গেজমেন্ট হবে। জিনিয়ার হবু জামাইয়ের নাম শান আহমেদ। সন্ধ্যায় সবাই চলে এলো। শেখ শাহনাওয়াজ শেখ শাহেনশাহ সবাই মিলে ওদের ওয়েলকাম করলো। নতুন কিছু মুখ দেখে জিনিয়ার বাবা বললেন,,

“এই নতুন মানুষদের তো চিনলাম না মিস্টার আহমেদ!

শানের বাবা হেঁসে বললেন,,

“উনি হচ্ছে আমার ভাই আলম আহমেদ আর উনি তার স্ত্রী সাবিনা আর ও হলো তাদের একমাত্র মেয়ে শিলা আহমেদ।”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ প্রথমেই দেরি হওয়ায় জন্য দুঃখিত। কয়েকদিন যাবৎ অনেক ব্যস্ততায় কাটছে তাই সময়মতো দিতে পারছি না। আর দ্বিতীয়ত যারা ভাবছেন গল্প না এগিয়ে অন্যান্য জিনিস বেশি লিখছি তাদের বলি এই গল্পে যা কিছু লেখা হচ্ছে সবকিছুই একটা আরেকটার সাথে সম্পৃক্ত। একটু ধৈর্য্য ধারণ করতে হবে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here