মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী (রাজ_বিহারিনী_রুদ্র পর্ব৪) #পর্ব ১১ #writer_Neel_Noor

0
461

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
(রাজ_বিহারিনী_রুদ্র পর্ব৪)
#পর্ব ১১
#writer_Neel_Noor

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে হাওলাদার বাড়ির সবাই একসাথে বসলো। আজ বৃহস্পতিবার, প্রতি সপ্তাহে একবার পরিবারের সবাই গোল মিটিং এ বসে, আজ ও ব্যতিক্রম নয়। বিহারিনী আজ তার বড় চাচার সাথে বসছে। আদুরে গলায় বলল – চাচু!! তোমাকে একটা কথা বলার ছিল, আমি কলেজে ভর্তি হতে চাই….

তারেক হাওলাদার মাথা দুলিয়ে সায় দিল। বিহারিনীর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল-ঠিক আছে, আমি রাজ কে বলে দিবো। তোমার ফলাফল তো আগেই বের হয়েছে, আমি ও ভাবছিলাম তোমাকে বলব, আর নানু বাড়ি থাকতে হবে না, শহরে থেকে পড়াশোনা করলে, পড়াশোনা ও ভালো হয়….

বিহারিনীর খুশি দেখে কে!! খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে সে চলেছে নিজের রুমের দিকে…(রুদ্র মুচকি হেসে বলল, আর কতবার ঘায়েল হবো সজনী পাখি)

______

সকাল বেলা, আজ বিহারিনী আগেই উঠে গেছে। সকাল বেলা গাঁয়ে চাদর জড়িয়ে বাহিরে বের হলো। ঘরের বউরা রান্নাঘরে। মেজ চাচি বিহারিনী কে দেখে বলল- আজ এতো সকালে? সূর্যোদয় কোন দিক দিয়ে উঠেছে শুনি, আম্মু (বিহারিনী কে আদর করে রুদ্রের মা আম্মু বলে ডাকে)

আজ তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গে গেছে। খুব খিদে পেয়েছে, কিছু থাকলে দাও। আমি আবার কুয়াশা বিলাশ করব। প্লিজ (একটু কান্না কান্না ভাব নিয়ে) দাও না…খুদা লেগেছে…

মেজো চাচি হেসে উঠলো। বিহারিনী সত্যি ই আল্লাদী। সে রান্নাঘর থেকে রুটি আর ভাজি নিয়ে আসল। বিহারিনীর রুটি খুব পছন্দের , তাই তাড়াতাড়ি করে সে মেজ চাচি থেকে প্লেট নিয়ে হাঁটা শুরু করলো।

পিছন থেকে মেজ চাচি বললো – এই বিহারিনী, খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছ, টেবিলে বসে খাও.. বাহিরে কোথায় যাও….

বিহারিনী পিছনে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিলো, কথা না বলে প্লেট নিয়ে বাগানের দিকে চলে গেল….

আজ কুয়াশা পড়েছে। বিহারিনীর তার গ্রামের কথা মনে পড়ছে। এমন কত হয়েছে, সে রুটি হাতে নিয়ে দৌড় দিতো গ্রামের বাগানে বাগানে, বান্ধবীদের সাথে কত আম, পেয়ারা চুরি করেছে….(ভাবতেই খিল খিল করে হেসে উঠলো)

একটু ঘন ই কুয়াশা, কনকনে ঠান্ডা বাতাস, এই আবহাওয়া টা খুব ই পছন্দের, বিহারিনী প্লেট টা বাগানের টেবিলে রেখে, রুটি রোল করে নিয়ে, বাগানের ভেতর হাঁটাহাঁটি করছে, আর খাচ্ছে…

দূর থেকে একজনের এই বাচ্চামো নজরটা খুব ভালো লাগছে… সাথে সাথে ই সে একটা বুদ্ধি বের করলো… হাওলাদার বাড়ির পেছনের বাগান টা সত্যিই বড়, খুব সহজেই হারিয়ে যাওয়া যায়, কি না আছে এই বাড়ির এখানে, রহস্য!! কৌতুহল কত কী?

বিহারিনী এখানে ছোট বেলায় আসতো, বাবার সাথে। এই যে বাগান টা সে খুব ই ভয় পায়। তার মা তাকে বলেছিল, ভুত পেত্নী দেখা মেলে এই বাগানে… তাই ভুল করে হলেও সে এখানে আসতো না একা…আজ সে আবার ও এসেছে…ঢুক গিলে হাঁটছে সামনে… হাতে অর্ধেক রুটি ..তার আর খাওয়ার দিকে নেশা নেই!!

হঠাৎ খচখচ শব্দ শোনতে পাচ্ছে। বিহারিনীর কৌতুহল বাড়তে লাগলো। হঠাৎ কে যেন ডাকছে বিহারিনী… বিহারিনী…!!
বিহারিনী চোখ বড় বড় করে তাকালো, কে ডাকছে তাকে। দুই পা সামনের দিকে এগোতে ই… কিছু একটা গাছ থেকে পড়লো… বিহারিনী চিৎকার করে পিছোনের দিকে দৌড়…. হঠাৎ করেই কিছুর সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল… চোখ বুজে ই বলা শুরু করলো – আমি মরতে চাই না!! আমি পেত্নীদের হাতে মরতে চাই না!! আমি তো কান্না পেলে, মন খারাপ হলে বলে ফেলি, আকাশের তাঁরা হয়ে যাব _ কিন্তু, আমি পেত্নীদের হাতে ঘাড় মটকে মরতে চাই না……

তীক্ষ্ণ একটা ধমক এগিয়ে এলো বিহারিনীর দিকে। “চুপ!! একদম চুপ!! এতোবড় মেয়ের_পেত্নীর ভয়!! এই বেহায়া মেয়ে, এতো পেত্নীদের ভয় হলে, সাজ সকাল বেলা, চুল গুলো ছেড়ে, রুটি হাতে নিয়ে এই বাগানে কি করছো?”

কন্ঠটা খুব ই চেনা। চোখ মেলে তাকালো!! দেখল সামনে রুদ্র। হাঁটু গেড়ে বসে তাকে এগুলো বললো। অন্যসময় হলে বিহারিনীর মনে এই কথাগুলো অপমানের, অভিমানের হতো। কিন্তু এখন সে এতোটাই ভয় এবং উত্তেজিত হয়ে আছে, রুদ্র কে দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলো!!

বিহারিনী জেদি, চঞ্চল আবার কখনো চুপচাপ থাকলেও সে খুবই আবেগি একটা মেয়ে। আবেগ আর ভয়ে কান্না করতে লাগলো। রুদ্র এই প্রথম কোন মেয়ের এতো কাছে, হাজার হোক সে তো প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ!! তার মনে অনিচ্ছার রেশ থাকা সত্ত্বেও উষ্ণ অদ্ভুত খেলা খেলছে।

অন্যদিকে, রাজের চোখ দুটো রক্তাক্ত লাল হয়ে গেছে। সে মজা করে গাছের আড়ালে লুকিয়ে বিহারিনী কে ভয় দেখানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি যে এরকম হবে, রুদ্র কে বিহারিনী জড়িয়ে ধরবে, কেন যেন রাজ মেনে নিতে পারছে না….

এখন এভাবে বিহারিনী ও রুদ্রের সামনে গেলে, বিহারিনী ভুল বুঝতে পারে। তাই কৌশল এ সে সরে গেল…(যদিও রাজ জানে, এ ঘটনা কেউ জানে না, তবে রুদ্র এটি জানে, তাই তো এদিকে সে এগিয়ে এসেছিল সজনী পাখির ভয় কাটাতে…)

মিনিট খানেক পর বিহারিনী রুদ্র থেকে সরে , মাথা নিচু করে বসে আছে। বিরবির করে বলল- ধন্যবাদ ইংরেজ!! সরি, আপনাকে জড়িয়ে ধরার জন্য…

রুদ্র হো হো করে হেসে উঠলো। মুখ বেঁকে বলল- আমাকে জড়িয়ে ধরার বাহানা। মেয়েরা আমার জন্য পাগল, তুমি ও তাদের মধ্যে একজন!!
(বিহারিনী ভ্রু কুঁচকে তাকালো_ রুদ্র ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে উঠে চলে গেল)
যেতে যেতে বলল – হাতে রুটির বদলে সাপ ধরে রেখেছো!! একটু খেয়াল করো।

বিহারিনী সাথে সাথে ই চিল্লিয়ে উঠল। হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিলো। দেখলো তার রুটিটা সত্যি ই পড়ে গেছে। হাতে সাপ টাপ এর কিচ্ছু নেই।

রুদ্র দাঁড়িয়ে হাসছে। মুচকি মুচকি। বিহারিনীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ জ্বলে উঠলো। বির বির করে আবার বলতে শুরু করল – হকুমান, শয়তান, টিকটিকির লেজের পালক, বিটলার, ইংরেজদের বংশধর….

কথায় আবার ও ফোরন কেটে রুদ্র বলল- আমি চলে গেলাম, আবার ও তোমায় পেত্নী ধরতে আসবে নে, এবার না হয় বাঁচিয়ে দিলাম, তুমি এখানে ই বসে থাকো, সে আসছে….

বিহারিনীর হুঁশ ফিরল, সে এখন ও হাঁটু গেড়ে বসে আছে। রুদ্র জগিং করতে বের হয়েছে। চলে ও যাচ্ছে, হাসতে হাসতে… বিহারিনী দ্রুত উঠে বাড়ির দিকে দৌড় লাগালো….আর মনে মনে রুদ্র কে আরো বেশি বকতে লাগলো…

_____

দুপুর বেলা। বিহারিনীর খুব ই পছন্দ মসজিদের মিষ্টি খাওয়া। গ্রামে থাকতে তার মামা, ছোট মামাতো ভাই আনতো, তখন সে আর তার মামাতো ভাই কাড়াকাড়ি লাগতো…. কথাটা মনে পড়তেই সে সোফায় বসে হেসে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে…

এর মধ্যে ই বাড়ির পুরুষেরা একসাথে নামাজ পড়ে বাড়িতে ঢুকল। বিহারিনী একে একে সবার হাতে তাকাচ্ছে.. কেউ তার জন্য মিষ্টি আনছে কি না। বড় চাচা, মেজ চাচা এদের হাতে নেই। বিহারিনীর মুখ মেঘের কালো রঙে ঢেকে গেল।

আজ রাজ ও রুদ্র ও মসজিদে গেছে। রাজের হাতে মিষ্টি দেখে বিহারিনী দৌড়। কিন্তু আফসোস, তার আগেই মারিয়া আর মাহিয়া মিষ্টি নিয়ে নিল। বিহারিনী দৌড় রাজের সামনে দাঁড়িয়ে হাত পেতে বলল- আমার মিষ্টি দেন। আপনার বোনদের দিলেন আমার টা কোথায়!!

রাজ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিহারিনীর দিকে। সাদা রঙের থ্রী পিস টা তে বিহারিনী কে এক প্রকার অপ্সরাদের থেকে কম লাগছে না। রাজ যেন বিহারিনীর এমন রুপে ঘায়েল হলো!!

বিহারিনী রাজের দিকে তাকিয়ে দেখল, রাজ তার দিকে তাকিয়ে আছে, বিহারিনী বুঝতে পারে না, যখন ই রাজের সামনে যায়, রাজ তাকে এভাবে কেন দেখে…মন খারাপ করে বিহারিনী বলল- আপনি আমাকে দিবেন না (একটু জোরে)

বিহারিনীর কথায় রাজের হুঁশ ফিরে, বিহারিনীর কান্ডে সে ফিক করে হেসে উঠলো, একদম বাচ্চা ফেইস করে মিষ্টি চাচ্ছে, মূহুর্তে ই রাজের মন‌টা খারাপ হয়ে গেল, তার মন বাগানের বসন্ত আজ প্রথম ছোট একটা আবদার করল, কিন্তু সে চেয়ে ও পূর্ন করতে পারল না….

রাজ বিহারিনী কে কিছু বলবে, তার আগেই রুদ্র বিহারিনীর হাতে দুটো মিষ্টি দিয়ে ভিতরে চলে গেল। রাজ_বিহারিনী দুজনেই অবাক। তবে রাজের ভেতরে হিংসা আর জ্বলে পুড়ে ছারখার আর বিহারিনী মিষ্টি পেয়েই খুশি!!

বিহারিনী মিষ্টি খাচ্ছে আর ধেই ধেই করে মারিয়া, মাহিয়ার সাথে হাসছে, লাফাচ্ছে…..

চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here