মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী (রাজ_বিহারিনী_রুদ্র (৫) #পর্ব ১২ #writer_Neel_Noor

0
245

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
(রাজ_বিহারিনী_রুদ্র (৫)
#পর্ব ১২
#writer_Neel_Noor

আজ বিহারিনীর আনন্দের শেষ নেই। সে খুবই খুশি। আজ তার কলেজের ভর্তি হওয়ার কথা। সকাল থেকেই গুজগাজ শুরু। সাদা রঙের একটা গোল জামা পড়ে নিল। বিহারিনীর খুব ই পছন্দ সাদা রং। মেচিং মেচিং করে সব পড়ে ফিটফাট। লম্বা চুল গুলো ছেড়ে দিল।হাল্কা লিপস্টিক আর কাজল দিয়ে নিলো। সবশেষে উড়না গলায় পেঁচিয়ে সে রেডি কলেজ এ যাওয়ার জন্য।

নয়টার উপরে বাজে। রুদ্র সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু করতেছিল। আর রাজ বিহারিনী কে নিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা….ঠিক সময়ে বিহারিনী টুপ টুপ করে লাফিয়ে লাফিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। রাজ এবং রুদ্র একই সময়ে বিহারিনীর দিকে তাকালো। দুজনেই শুধু তাকিয়ে ই আছে। বিহারিনীকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। বিহারিনী সচরাচর সাজগোজ করে না, সিম্পল থাকে!! তবে, আজ যেন…..

বিহারিনী রাজের সামনে এসে দাঁড়ায়, বলল- চলেন, ভাইয়া। আমি রেডি হয়ে গেছি।

বিহারিনীর কথায় রাজের হুঁশ ফিরলে ও রুদ্রের কোন হুঁশ ফিরল না। সে এখন ও এক ধ্যানে তার সজনী পাখির দিকে তাকিয়ে আছে। রাজের নজর রুদ্রের দিকে যেতেই, কয়েকদিনের রুদ্রের করা বিহারিনীর সফ্ট ব্যবহার গুলো মনে পড়ে যায়….

মনেই মনে, রাজ নিজেকে সামলাতে পারছে না, মন মস্তিষ্ক কে প্রশ্ন করল- বিহারিনীর প্রতি কি রুদ্র দূর্বল? হতেই পারে, বিহারিনী এমন মিষ্টি একটা মেয়ে, সবাই পছন্দ করবে, অবশ্য, পুরুষ স্বভাবতই নারীর বাচ্চামো, অবুঝতা, পাগলামি তে ঘায়েল হয়!! যেমনটা সে হয়েছে বিহারিনীর প্রতি!! রুদ্র ও তো পুরুষ, সে কেন হবে না….

রাজ বিহারিনীর হাত খপ করে ধরল, একটু রাগী কন্ঠে বলল- আমরা কি বিয়ে বাড়িতে যাচ্ছি!! এতো সেজেছো কেন? লিপস্টিক দেওয়ার কি আছে…(বলেই পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে ইচ্ছাকৃত বিহারিনীর ঠোঁট থেকে লিপস্টিক মুছে দিল….)

বিহারিনীর মন আবার ও চুরমার করে দিল রাজ। বিহারিনীর যদিও সাজগোজ পছন্দ না, তবে সে যখন সাজে, তখন কেউ এটা নষ্ট করলে, সে নিজেকে সামলাতে পারে না… মূহুর্তে ই ছোট্ট বিহারিনীর আকাশে কালো মেঘেরা হানা দেয়, চোখ ভর্তি অশ্রুখানা গড়িয়ে পড়লো….

এদিকে রুদ্র মনে মনে খুশি হয়েছে, রাজের কাজে!! সে হলেও একই কাজ করতো, তার সজনী পাখির যে রুপ , সে চায়না অন্য কেউ দেখুক, ঘায়েল হোক। তারপরও লোক ঘায়েল হবে, এই লিপস্টিক মুছা কান্নারত চোখের মায়াতে, রাইটার- নীলনূর…

রুদ্র রাজ আর বিহারিনী কে কিছু বলতে যাবে….তখনই…বিহারিনীর চোখে জল দেখে, রাজ নিজেকে সামলাতে পারছিলো না, তবুও নিজেকে সামলানোর হাজারো চেষ্টা রাজের প্রেমিক মনের!! আবার ও বলে উঠল একটু রুক্ষ কন্ঠে- কান্না করছিস কেন। দেখ এখন একজায়গায় যাব, মোটেও ড্রামা করবি না…(রাজ দেখে, বিহারিনী আরো কান্না করছে, তাই নিজেকে সামলিয়ে, রাগটাকে কন্ট্রোল করে..হাত থেকে রুমাল টা নিচে ফেলে…)

বিহারিনীর দু গালে হাত রেখে, আদুরে গলায় বলল – কলেজের স্যার মেম রা দেখলে খারাপ বলবে, কলেজে লিপস্টিক এলাও না…একটু বুঝ প্রিজ… তোকে অনেক গুলো আইসক্রিম কিনে দিব…চল চল লেইট হয়ে যাচ্ছে..

রুদ্র দাঁত চিপে দাঁড়িয়ে আছে। সে কিছুই বলতে পারছে না রাজ কে। রাজের এই ছোঁয়া তার সহ্য হচ্ছে না…. চুরমার হয়ে যাচ্ছে মন আঙিনায়…

রাজ বিহারিনী কে শান্ত করে ফেলেছে। আইসক্রিম এর বাহানায়। এই বিহারিনী যে এতো ই আইসক্রিম লোভী এটা সবাই জানে। বেচারি….

রাজের পিছু পিছু সে যাচ্ছে… তখন ই রুদ্র পড়ে থাকা রুমাল টা উঠিয়ে নিলো, তারপর নিজের সামনে নিয়ে বলল- সজনী পাখির ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে তুই সত্যিই লাকী। রুমাল টায় একটা পরশ দিয়ে বলল- ইউরেকা (একটু আস্তে)

হঠাৎ করেই কেউ রুমাল টা টান দিয়ে নিয়ে নিল। দেখল রাজ সামনে দাঁড়িয়ে, জোর পূর্বক হাসি দিয়ে বলল – এটা আমার ছিল ভাই!! আমার জিনিস এ অন্যের অধিকার আমি পছন্দ করি না। একটু দূরে থাকলেই ভালো….(তাড়াতাড়ি করে চলে গেল, রুদ্রের উত্তর না শুনে)

রাজ রুদ্র কে ভয় পায়। এর কারণ ও আছে। রুদ্রের একটা কালো অন্ধকার অধ্যায় আছে, মেটা পরিবারের কিছু লোকজন জানে, তার মধ্যে রাজ একজন। রাজের মনে এখন হাজারো ভয়!! তার বিহারিনী কে হারানোর….

______

রাজ বিহারিনী কে গার্লস কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দিয়েছে। এখন বাড়ি ফিরার পথে, বিহারিনী রাজের ভাব গতি লক্ষ করে প্রশ্ন করল- ভাইয়া আপনি সেই সকাল থেকেই মনমরা কেন!! কি হয়েছে আপনার?

অন্যদিকে রাজ কিছুতেই সকালের কান্ডটা মাথা থেকে বের করতে পারছে না। সে সিউর বিহারিনী কে নিয়ে রুদ্রের মনে বিশাল ঝড় উঠেছে। এখন সে নিজেও ভয়ে আছে, এই ঝড় কি তার বিহারিনী কে সঙ্গে করে নিয়ে চলে যাবে।।
রাজ তো কত কিছুরই সাক্ষী। যখন প্রায় ই সে লন্ডনের কাজে যেত বিভিন্ন কাজে, সে দেখেছে রুদ্রের কর্মকাণ্ড। মেয়েরা রুদ্র বলতে পাগল, কিন্তু এতো সুন্দর মেয়েদের মধ্যে ও রুদ্র কখনো চোখ মেলে তাকায়নি তাদের!! তবে বিহারিনী ই কেন…

রাজ মানছে, বিহারিনীর মধ্যে আকর্ষন করার অনেক কিছু ই আছে, তবুও!! রাজ তো বিহারিনী ছাড়া ও আরো মেয়েদের মধ্যে আকৃষ্ট হয়েছে, ঘনিষ্ঠ হয়েছে, প্রেম হয়েছে… তবে বিহারিনীর প্রতি যেদিন মাতাল হয়েছে, তারপর থেকেই সে বিহারিনী তে মশগুল!! কিন্তু রুদ্র এমন নয়, রাজ কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না….

রাজ বিহারিনী নিয়ে কতকিছু রুদ্র কে বলেছে, কিন্তু রুদ্র শুধু মুচকি হাসত।। বলতো , এমন মেয়েরা নাকি নেকামি করে, বাস্তবে নয়। সে মেয়েদের ছলনাময়ী মনে করে, তাই তো ডাক্তারি তে মনযোগ আর নিজ অন্ধকার অধ্যায় টা তে… কিন্তু এখন কেন সে বিহারিনী তে মশগুল হচ্ছে…

সকালে রুদ্রের তার বিহারিনীর ঠোঁট এর লিপস্টিক এ রুদ্রের পরশ সহ্য হচ্ছে না, কিছুতেই না!!

______

রাজ আচমকা গাড়ি থামিয়ে দিল। বিহারিনী রাজ কে এভাবে গাড়ি ড্রপ করতে দেখে বলল- কি হলো কি ভাইয়াআআআ!! আরেকটু হলেই আমি মরে পেত্নীদের মতো হয় যেতাম….

রাজ ধপ করে বিহারিনীর হাতগুলো নিজের মুঠোয় বন্ধি করে বলল – আচ্ছা বিহারিনী!! আমাকে তোর কেমন লাগে। অষ্টাদশীতে কি আমাকে বিয়ে করতে পারবি….

বিহারিনী যদি ও ছোট, তবে এতো ছোট ও না। সে একটু ভয় পেয়ে গেল। মনে মনে সে রাজ কে খুব পছন্দ করে। রাজ কে নিয়ে ভাবে, কিন্তু তার এই বিষাদ মনে ইদানিং রাজ ছাড়া ও আরো একটি মানুষ কে নিয়ে বেশি ভাবে। রুদ্র!! সে অদ্ভুত এক অনুভূতি রুদ্রের জন্য ফিল করে, কিন্তু রুদ্রকে উপরিভাগ মস্তিষ্ক মোটেও পছন্দ করে না….

বিহারিনীর হাত ছাড়িয়ে বলল- ভাইয়া বাড়ি যাব। আপনি আমাকে বাড়িতে দিয়ে আসেন। আমার আপনাকে ভয় লাগছে, আপনার চোখ মুখ এরকম হয়ে আছে কেন?

রাজ – তুই কি রুদ্র কে পছন্দ করিস?

বিহারিনী এমন কথায় থমকে উঠলো। রাজের চোখ থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে ই রাজের মন ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। আমতা আমতা করে বলল – রুদ্র ভাইয়া অনেক ভালো মানুষ। ভাই হিসেবে পছন্দ করি। যেমন আপনাকে করি ঠিক তেমনি তাকে ও….

রাজ নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করতে পারল না, ড্রাইভিং সিটে একটা ঘুষি মেরে বসল, গাড়ি থেকে নেমে গেল, হাত দিয়ে ইশারায় একটা রিকশা ডাকল, রিকশা চালক কে টাকা দিয়ে দিল, এতোক্ষণ এ গাড়ি থেকে বিহারিনী নেমে দাঁড়িয়ে আছে, সে বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কি?

রাজ বিহারিনী কে বলল – রিকশা করে বাড়ি চলে যা। (বলেই, গাড়িতে উঠে গাড়ি নিয়ে চোখের সামনে দিয়ে চলে গেল…)

বিহারিনী রাজের এই কান্ডে প্রচুর কষ্ট পেয়েছে। তার দম নিতে ও কষ্ট হচ্ছে। বিহারিনীর একটা সমস্যা আছে, খুব বেশি/হঠাৎ কিছু সহ্য করতে পারে না, কান্না করে দেয়। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না করছে……

চলবে….

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী

গল্প টা তে, জটিল কিছু ই নেই!!
এখনে কাপল ২জন, (রুদ্র _বিহারিনী, আর মায়া_রাজ)
গল্প টা শর্ট এ লিখলে তো আমি বুঝব!! আপনারা তো বুঝবেন না… একটু অপেক্ষা করুন, গল্পটাতে এর থেকে ও ইন্টারেস্টিং পার্ট আসবে!! আশা রাখছি ভালো লাগবে…
(আমি কিন্তু উপরে বোঝার জন্য ই রুদ্র _বিহারিনী_রাজ…বলে দিয়েছি…. আমি এখানে অতীত টা তুলছি… অতীত টা ক্লিয়ার হলেই গল্পটা সুন্দর লাগবে….)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here