ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤ #পর্ব :9 #লেখিকা : Aye Sha

0
190

#ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤
#পর্ব :9
#লেখিকা : Aye Sha

🌸
🌸

সীমা কথাগুলো বলে চলে গেল, আর ইসমি ভাবতে লাগল কত বড় ভুল করে ফেলেছে ও, ওকে ক্ষমা চাইতে হবে অর্নিলের কাছে। তাই আবার ছুটল কমন রুমের দিকে হয়তো অর্নিল এখনো ওখানেই আছে ইসমির ভাবনা সত্যি হল, কমনরুমে অর্নিল ছিল কিন্তু তার সঙ্গে ইসমি যেটা দেখলো সেটা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না।

অর্নিল কে দুটো ছেলে ধরে রেখেছে আর একটা ছেলে মারছে, ইতিমধ্যে অর্নিল এর ঠোঁটের কোণ বেয়ে রক্ত পরছে তবুও অর্নিল চুপচাপ রয়েছে কোনো প্রতিক্রিয়া করছে না, যেখানে অর্নিল কে মারা তো দূর ওর দিকে চোখ তুলে তাকানো অসম্ভব ব্যাপার। ইসমি বুঝতে পারছেনা অর্নিল কেন কোন প্রতিবাদ করছে না আর এরাই বা কেন মারছে অর্নিল কে? ইসমি চুপ করে না থাকতে পেরে এগিয়ে গেল সেই দিকে আর বললো।

ইসমি– কি হচ্ছে এখানে এসব? আপনারা কারা আর ওকে এভাবে মারছেন কেন?

১ম ছেলে– আরে এইটা সেই মেয়েটা না যার পেছনে এতদিন অর্নিল ঘুরঘুর করছিল?

২য় ছেলে– হ্যাঁ এটাই তো সেই মেয়েটা যার পিছনে আমাদের অর্নিল একমাস ধরে ঘুরেছে।

৩য় ছেলে– যাক তাহলে ওর নিজের দুর্বলতা খুঁজে পাওয়া গেল তবে এবার তো আর ওকে মারার কোন দরকার নেই এই মেয়েটাই আমাদের চাবি কাঠি।

অর্নিল– ইসমি তুমি চলে যাও এখান থেকে। ফাস্ট! আর তোরা আমাকে যা করার কর ওর দিকে চোখ তুলেও তাকাবিনা না হলে খুব খারাপ হবে।

ইসমি– আমি এখান থেকে কোথাও যাব না, তোমাকে একা ফেলে কোথাও যাবো না আমি।

১ম ছেলে– আরিব্বাস তুইতো পটিয়েই ফেলেছিস মেয়েটাকে।

অর্নিল– জাস্ট শাট আপ! এতক্ষণ কিছু করিনি বলে এখনো যে করব না সেটা ভাবিস না।

২য় ছেলে– আচ্ছা তো কি করবি তুই আমাকে এতক্ষণ তোকে মেরে যা অবস্থা করেছি আমার মনে হয়না তোর গায়ে কোন জোর আছে বলে।

এই বলে অর্নিলকে দুটো ছেলে ধাক্কা মেরে অন্যদিকে ফেলে দিল আর ইসমির দিকে এগোতে থাকল, ইসমি এক পা দু পা করে পিছাতে পিছাতে পিছাতে যেই না দরজা দিয়ে বেরোতে যাবে তখনই একটি ছেলে ইসমির হাত ধরে ফেলে। আর পিছন গিয়ে দুটো ছেলে দরজাটা বন্ধ করে দেয়, ছেলেটি ইসমির সাথে জোরজবরদস্তি করতে গেলেই কেউ একজন পাস থেকে ছেলেটির মুখে ঘুষি মারে আর ছেলেটি ছিটকে পড়ে, ইসমি পাশে তাকিয়ে দেখে অর্নিল।

অর্নিল– বলেছিলাম আমার সাথে যা করার কর বাট ইসমি কে যেতে দে। শুনলি না, এবার এর পরিণাম খুব ভয়ানক হবে। (শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে)

ইসমি– প্লিজ মারামারি করো না, আমাদের প্রিন্সিপ্যাল কে বলা উচিত।

ইসমির কথা জানো অর্নিলের কানেই গেলো না, ও গিয়ে তিনটে ছেলে কে বেধরম মারতে শুরু করলো, ইসমি চেয়েও অর্নিল কে ডেকে আটকাতে পারছে না, তাই বাধ্য হয়ে অর্নিলের হাত ধরে টেনে নিয়ে এলো, অর্নিল এই কারনে ইসমির দিকে রেগে তাকাতেই ইসমি বললো।

ইসমি– মানছি তোমার ভাইয়া এই ভার্সিটির ট্রাস্টি তা বলে তো এই নয় যে তুমি খুন করবে আর সেটা মাফ হয়ে যাবে। আরেকটু হলেই তো ছেলে গুলো মরে যেতো।

অর্নিল– মরে গেলে যেতো। সাহস হয় কি করে তোমাকে টাচ করার? তোমার সাথে জোরজবরদস্তি করার?

ইসমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে অর্নিলের দিকে, কিছুক্ষণ আগেই তো ইসমি অর্নিল কে যা ইচ্ছে তাই বলে গেলো, এর পরেও অর্নিল ওর জন্য কতটা কেয়ার করছে, অন্য ছেলে ওকে টাচ করায় রাগ করছে। এসব ভাবতেই ইসমির খারাপ লাগা টা আরো বেড়ে গেলো, ইসমি আর না পেরে অর্নিল কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। এদিকে অর্নিল তো হতভম্ব হয়ে গেলো ইসমির কান্ড দেখে, মুহুর্তেই অর্নিলের রাগ পরে গেলো ইসমির কান্না শুনে, ইসমির পিঠে আর মাথায় হাত বোলাতে লাগলো অর্নিল।

ইসমি– আই অ্যাম স্যরি অর্নিল, আ..আমি বুঝতে প..পা..পারিনি তখন। (কাঁদতে কাঁদতে)

অর্নিল– কি বুঝতে পারনি?

ইসমি– তুমি স..সীমার সাথে এ..এমনি কথা বলছিলে এটা ব..বুঝতে প..পারিনি। ভেবেছিলাম…

অর্নিল– আমি সীমা কে ভালোবাসি?

ইসমি– (নিশ্চুপ)

অর্নিল ইসমি কে সোজা করে দাঁড় করালো আর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো।

অর্নিল– আমি তোমাকে ভালোবাসি ইসমি। সীমা কে জাস্ট আমার হেল্প করতে বলেছিলাম, আমি কোনদিন কোনো মেয়েকে ভালোবাসিনি ভাবিও নি যে ভালোবাসবো, বাট নিজের অজান্তে কখন তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি আমি জানি না। বুঝতেই পারিনি আমি কখন তুমি আমার মনজুড়ে জায়গা করে নিয়েছো। আই নৌ আমি ওতো ভালোভাবে নিজের ভালোবাসা টা প্রকাশ করতে পারছি না যতো টা অন্যরা করে। আই রিয়েলি রিয়েলি লাভ ইউ ইসমি।

ইসমি চুপ করে আছে দেখে অর্নিল মাথা নিচু করে নিলো, অনিল ভাবছে হয়তো এ সময়কে রিজেক্ট করবে তাই অগ্রিম মাথা নিচু করে পিছন ফিরে চলে যেতে নিল কিন্তু তখনই অন্যের হাতে টান পরল….

🌸

মীরা– বাহ খুব সুন্দর! (ঘরে হাততালি দিতে দিতে প্রবেশ করলাম)

ঘরে ঢুকতে যাবো সেই সময় দেখলাম আমার আর নিতা একে অপরকে কিস করছে আমি এটা দেখেই ঘরে প্রবেশ করলাম আর আমার গলার আওয়াজ পেতেই ওরা একে অপর থেকে দূরে সরে গেল আমি বললাম

মীরা– দূরে সরে গেলি কেন নীতা? লজ্জা লাগল নাকি? আমার তো মনে হয় না তো লজ্জা বলে কিছু আছে যদি থাকত তাহলে নিজের বোনের স্বামীর সাথে এরকম ঘনিষ্ঠ অবস্থায় থাকতিস না।

আমান– মীরা তুমি ভুল বুঝছো।

মীরা– নাহ আমি কিছু ভুল বুঝিনি আমান। আমি ঠিকই বুজছি আপনারা আমাকে যেটা বোঝাতে চেয়েছেন, সেটাই বুঝেছি আমি, কিন্তু একটা কথা মনে করিয়ে দিই আপনাদের, আমাদের বিয়ের এখনো একমাস হয়নি ছয় মাস তো দূরের কথা, তাই ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত নীতা যেন আমার ঘরে না ঢোকে। এটা আপনি আপনার প্রেমিকাকে বলে দিন।

আমান– জাস্ট শাট আপ মীরা। না জেনে উল্টো পাল্টা কথা বলো না।

নীতা– বাদ দাও আমান। ছয় মাস পরে তো আমি এমনিতেও তোমার ঘরেই থাকবো, এখন ও যখন বলছে তখন আমি আর আসব না তোমার রুমে, আমি আসছি।

নীতা কথাগুলো বলেই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে আর আমান আমার দিকে তেড়ে এসে বলল।

আমান– নীতার সাথে আমি কাজের ব্যাপারে কথা বলছিলাম, তখনই নীতার চোখে কিছু একটা পরে আর আমি ওর চোখটা ঠিক করে দেওয়ার চেষ্টা করছিলাম, দেট সেট আর কিছুই নয়। হয়তো পিছন থেকে মনে হয়েছে আমরা দুজন দুজনকে কিস করছি বাট সেটা নয় তুমি তো আগে ঠিক করে জানবে, না জেনে কেন উল্টোপাল্টা বললে তুমি ওকে। সিরিয়াসলি আমি নীতা কে কিস করবো তুমি ভাবলে কি করে?

মীরা– না ভাবার তো কিছু নেই, এই কয়েকদিনে আপনি ওকে কোলে করে ঘরে নিয়ে আসতে পারেন, ওর কোমর জড়িয়ে ঘুড়ঘুড় করতে পারেন তাও আবার আমার চোখের সামনে, তাহলে কিস করাটা তো কোন ব্যাপার না আর ও তো আপনার উড বি।

আমান– আমি ওকে নিজের ইচ্ছায় কোলে করে ঘরে নিয়ে আসিনি ও বাইরে ছিল আর কিছু ছেলে ওকে ডিস্টার্ব করছিল ওর সম্মান নেওয়ার চেষ্টা করছিল তাই জন্য ওকে আমি বাঁচিয়ে নিয়ে এসেছিলাম সেই সময়ে নিজে হেঁটে আসার মত পরিস্থিতি তে ছিলো না নীতার। আর রইল বাকি কোমর জড়িয়ে ধরা সেটাতো তুমিও করো পার্কের মধ্যে বসে তূর্য তোমার চোখের চোখের জল মুছিয়ে দেয় কোমর জড়িয়ে ধরে কাঁধ জড়িয়ে ধরে সেই বেলা কিছু হয়না তাইনা মীরা? যত দোষ আমার, তুমি তো আমাকে ভালোবাসো না যে আমাকে ভালবাসে অন্তত তাকে তো আমাকে ভালবাসতে দাও। আমি তোমার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না বলে অন্য কারো যে ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না তা তো নয় তাই না? তুমিতো ডিভোর্সের পর নিজের ভালোবাসার মানুষের সাথে সুখে থাকবে আর আমি আমি কি করবো? আমাকে তো তুমি বুঝিয়ে দিয়েছো যে তোমাকে ভালোবেসে আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি তাই প্রত্যেকটা মুহূর্তে কষ্ট পাচ্ছি, এমনকি তুমি চলে যাওয়ার পরও আমাকে কষ্ট দিতে চাইছ? আমিও একটু ভালোবাসা চাই, বাঁচতে চাই ভালো মতো। তুমি তো আমাকে কোনদিনও বুঝলে না যেদিন হারাবে হয়তো সেদিন বুঝবে, অবশ্য বুঝবে কি করে ভালবাসলে তো বুঝবে। (কথাগুলো বলেই আমার চলে যাচ্ছিলেন সে, ঠিক সে সময় আমি বলে উঠলাম)

মীরা– আমি যেমন আপনাকে বুঝি না তেমন আপনি আমাকে বুঝেন না বুঝলে এতগুলো কথা শুধু শুধু বলতে পারতেন না জানতে চেষ্টা করতেন যে কেন এরকম করছি আমি? তূর্য সাথে আমার ওরম কোন…

আমান– ওরম কোন মানে? কি বলতে চাইছো তুমি? কি বলছিলে বলো? আমি শুনতে চাই।

মীরা– ন..না কিছু না।

আমি আর এক মুহুর্ত ওনার সামনে দাঁড়িয়ে না থেকে ওয়াশ রুমে চলে এলাম এখন উনার সামনে আর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে, উনি আমার মুখ থেকে সত্যি কথাটা বার করে নিতেন, হায় আল্লাহ! কি বলে দিতে যাচ্ছিলাম আজকে আমি রাগের মাথায়। আমাকে মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে।

🌸

ইসমি– আই লাভ ইউ টু অর্নিল। ( অর্নিল কে যেতে বাধা দিয়ে।)

অর্নিল– রিয়েলি? রিয়েলি ইসমি? ইউ ডু লাভ মি?

ইসমি– ইয়েস আই ডু। আমি ভেবেছিলাম তুমি সীমাকে ভালোবাসো তখন সীমা তোমার চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছিল, তোমরা হেসে হেসে কথা বলছিলে তারপর তো তুমি ওর হাত ধরলে ওইগুলো দেখে আমি ভেবেছিলাম যে তুমি আর সীমা একে অপরকে ভালোবাসো, হয়তো আমি তোমাকে ইগনোর করেছি বলে তুমি সীমা কে প্রপোজ করেছ। আই অ্যাম স্যরি অর্নিল। (অর্নিল কে জড়িয়ে ধরে কিন্তু অর্নিল ধরেনি) আমি কোনদিন রিলেশনে ট্রাস্ট করিনি অর্নিল। আমার মনে হতো এসব ভালোবাসা বলে কিছু হয় না, তাই তোমাকে ইগনোর করেছি বাকিদের মতো, বাট তুমি বাকিদের মতো নও, ইউ আর স্পেশাল ফর মি আর এটা আমি রিয়েলাইজ করেছি। প্লিজ কোনদিন আমার ট্রাস্ট ব্রেক করো না।

অর্নিল– নেভার। কোনদিন ট্রাস্ট ব্রেক করবো না তোমার বেব। (ইসমি কে জড়িয়ে ধরে বাঁকা হাসলো।)
.
.
.
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here