ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤ #পর্ব_11 #Aye_Sha 🌸

0
311

#ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤
#পর্ব_11
#Aye_Sha
🌸
আমি এসব চিন্তা পাশে রেখে, আমানের সাথে সঙ্গ দিলাম, আমার সঙ্গ পেয়ে জানো উনি আরো মাতাল হয়ে উঠলেন। আমার ঠোঁট ছেড়ে আমার গলায় মুখ ডোবালেন, আমিও সম্পূর্ণ ওনার মাঝে ডুবে আছি, ঠিক সে সময় দরজায় আবারও টোকা পরলো। আমি ওনার থেকে সরে আসার চেষ্টা করতেই উনি আমার গলা থেকে মাথা উঠিয়ে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করলেন, আমি ভয় পেয়ে বললাম।

মীরা– আব, ন..নীতা ডাকছে আপনাকে অনেক্ষন ধরে।

আমান একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন আমার দিকে তাকিয়ে, আমি বুঝলাম উনি অনেক বিরক্ত হয়েছেন এভাবে দুরে সরিয়ে দেওয়ায়, কিন্তু আমার তো কিছু করার ও ছিলো না। আমি ওনার কোল থেকে উঠে দাঁড়ালাম, উনি দাঁড়িয়ে আমার দিকে একবার তাকিয়ে দরজা খুলতে চলে গেলেন। দরজা খুলতেই নীতা আমান কে জড়িয়ে ধরে ভিতরে ঢুকে গেলো। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই আমান ঝাড়ি মেরে উঠলেন।

আমান– হোয়াট দ্য…!! যখন তখন আমাকে এভাবে জড়িয়ে কেনো ধরো নীতা? আমি এরকম গায়ে পরা মেয়ে একদম পছন্দ করি না সেটা তুমি ভালো করে জেনে নাও।

নীতা– আজ হঠাৎ কি হলো তোমার? দু-দিন আগে তো নিজে আমায় ঘরে নিয়ে এলে, আমাকে জড়িয়েও ধরেছো তখন? তখন কিছু হয়নি?

আমান– হ্যাঁ ধরেছি। তোমাকে কোলে করে নিয়ে এসেছিলাম কারণ তুমি হাঁটতে পারছিলে না আর তোমাকে ওভাবে বিপদের মধ্যে ফেলে আসতে আমার বিবেকে বাঁধছিল বাদ বাকি জড়িয়ে ধরার কথা। সেটা তুমি ধরতে, এতদিন শরীর খারাপ ছিলো তাই কিছু বলিনি বাট নাও ইউ আর অলরাইট সো এভাবে হুট হাট করে আমার পারমিশন ছাড়া আমাকে টাচ করবে না। আর ইউ গেট দেট..??

মীরা– তোকে না বারন করে ছিলাম আমার ঘরে না আসতে তাও নির্লজ্জের মতো চলে এলি?

নীতা– ওহ! তো তুই আবার আমার আমান কে বশ করেছিস? কি দিয়ে বশ করিস বল তো? ঐ তো কালো ভূতের মতো গায়ের রঙ, সৌন্দর্য আছে বলে তো মনে হয় না, সে আবার ফ্যাশন ডিজাইনার হাহ! ডিজাইনার বলেই বেঁচে গেছিস মডেল হওয়ার যোগ্যতা তো নেই। বরং কোনো মডেলের পাশে ডিজাইনার হিসেবে দাঁড়ালে প্যাক দেবে। আর আমান তুমিই বা কি? যেই মেয়েটা তোমাকে তোমার কোম্পানির সকলের সামনে অপমান করেছে শুধুমাত্র বউ হিসেবে পরিচয় দাওয়ায় তাকে তুমি ভালোবাসো? যেই আমান খানের বউ হতে হাজারো মেয়ে লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই আমান খানের বউয়ের পরিচয় ও অস্বীকার করে তোমার সন্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে। এমন একটা মেয়ে তোমার যোগ্যই নয়।

আমি আর কিছু শুনতে পারলাম না দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলাম ঘর থেকে আর গেস্ট রুমে এসে দরজা লক করে বেডে উপুর হয়ে শুয়ে বালিশ জড়িয়ে কান্না করতে লাগলাম।

মীরা যেতে না যেতেই আমান ঠাস করে একটা সজোরে থাপ্পড় মেরে দিলো নীতার গালে যার ফলে নীতা উপুর হয়ে ছিটকে গিয়ে পরলো মেঝেতে, আমান মেঝেতে এক হাঁটু গেড়ে বসে নীতার চুলের মুঠি ধরে টেনে নিয়ে বললো।

আমান– আজ বলেছিস, বলেছিস। দ্বিতীয় বার যদি এসব কথা শুনি তোর মুখে তাহলে মেয়ে বলে ছাড় পাবি না। তুই জানিস ও না এই আমান খান আগে কি ছিল। আমি যদি আবার আগের মতো হয়ে যাই তাহলে কেঁদে কুল করতে পারবি না, নিজের লিমিটে থাকবি এবার থেকে। আমার মীরার যা সৌন্দর্যতা আছে তা তোর মধ্যে ছিটে ফোঁটা ও নেই।

কথাগুলো বলেই আমান নীতার চুলের মুঠি টা অনেক জোরে ধাক্কা মেরে ছেড়ে দিলো যার ফলে নীতার মাথাটা মেঝেতে গিয়ে বারি খেলো আর নীতা চিৎকার দিয়ে উঠল।

নীতা– আহহ!!

আমান– আরে বেইবি? এইটুকু তেই তোমার লেগে গেলো? কষ্ট হচ্ছে না? দেখি কোথায় লেগেছে।

আমান নীতার মাথাটা তুলে দেখলো কপালের এক অংশে কালো দাগ পরে গেছে, ঐ জায়গাটায় আলতো করে হাত বুলিয়ে নিজের বুড়ো আঙুল দিয়ে হুট করেই চেপে ধরলো।

নীতা– আহ আমান লাগছে আমার। ছাড়ো আমাকে প্লিজ।

আমান– তোকে জানতে হবে তুই কার কলিজায় আঘাত করেছিস, বোঝাতে হবে এরম কাজ করলে কি শাস্তি হয়। আর কোনদিন যদি মীরা কে কালো বলে অপমান করিস তো তোর গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেবো আমি। কথাটা মাথায় রাখবি।

আবার ও নীতার মাথাটা ধাক্কা মেরে ওখানে নীতা কে ফেলে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে নিলো আমান, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো।

আমান– আমার জান বলেছে তোকে জানো এ ঘরে না দেখা যায়, তুই শুনিশনি। মীরা কিছু বলেনি দেখে যে আমি বলবো না তা কিন্তু নয়। লাস্ট ওয়ার্নিং আমার আর মীরার মাঝে আসার চেষ্টা করিস না, যে যে আসবে তাকে এই আমান খানের আসল রুপ দেখতে হবে যা কেউ দেখেনি আর মীরাও দেখবে না কোনদিন।

আমান বেরিয়ে গেলো রুম থেকে, নীতা আস্তে আস্তে মেঝেতে দু-হাত ভর করে উঠে বসলো তারপর নিজের কপালের ক্ষত জায়গায় হাত রাখতেই ” আহ ” করে উঠলো।

নীতা– এ কেমন রুপ আমানের? এতটা ভয়ানক, এতটা হিংস্র চাহুনী? যা কোনদিন দেখিনি আমি। আমানের আসল রুপ কি? কিসের কথা বলছিল আমান? আবার আগের আমান খান হয়ে যাবে মানে? আমান কি আমার প্লানের ব্যাপারে সব জেনে গিয়েছে? তাই জন্যই বললো যে ওদের মাঝখানে আসবে তাকে আমানের আসল রুপ দেখতে হবে? ওহ নো! আজ সামান্য অপমান করায় আমার এই অবস্থা করেছে আসল সত্যি টা জানলে না জানি কি করবে।

আমান মীরা কে খুঁজতে খুঁজতে গেস্ট রূমের দিকে চলে গেলো, দরজা খুলতে যেতেই দেখলো ভিতর থেকে লক করা, বুঝতে পারলো মীরা ভিতরেই আছে, তাই মীরা কে ডাকতে লাগলো।

আমান– মীরাআ, মীরাআআ!!

মীরা– আমাকে একা থাকতে দিন প্লিজ! আমি কিছু শুনতে চাই না, শুধু একটু একা থাকতে দিন।

আমান– বাট মীরা আমার কথাটা ত..

মীরা– হাত জোর করে অনুরোধ করছি আমি আপনার কাছে, প্লিজ একা ছেড়ে দিন আমায়।

আমার কথা শুনে আমানের আর কোনো সাড়া পেলাম না,বুঝলাম উনি চলে গেছেন।

মীরা– কেনো আমায় আপনার জীবনের সাথে জড়ালেন আমান? আমি তো চাইনি আপনাকে আমার জীবনে। আমার মতো একটা সাধারন কালো অসুন্দর মেয়েকে কেনো নিজের জীবনসঙ্গীনি বানালেন? ছোট থেকে অপমানিত হয়ে এসেছি এই রঙের জন্য, আজ আবারও এই অপমান পেতে হলো, অপমান ছাড়া কি কিছুই জুটবে না আমার কপালে? (কান্না করে)

হঠাৎই আমার নীতার শেষের কথা গুলো মনে পরে গেলো ” যেই মেয়েটা তোমাকে তোমার কোম্পানির সকলের সামনে অপমান করেছে শুধুমাত্র বউ হিসেবে পরিচয় দাওয়ায় তাকে তুমি ভালোবাসো? ” নিজের চোখের পানি মুছে নিলাম।

#ফ্লাশব্যাক 🌸🌸

আমান– গাইস আজ আমি আপনাদের কিছু বলতে চাই।

স্টাফ’স– কি স্যার? (একসঙ্গে)

আমান– বলবো কিন্তু সবাই আসলে।

স্টাফ– কেউ কি বাকি আছে আসা?

আমান– যাকে নিয়ে কথা বলবো সেই তো আসেনি (আস্তে করে)

স্টাফ– কিছু বললেন স্যার?

আমান– নাহ কিছু না। সবাই আসুক তারপর বলবো।

পি.এ.– স্যার আপনি কি মীরার জন্য ওয়েট করছেন?

আমান কিছু বলতে যাবে তার আগেই মীরা প্রবেশ করলো।

আমি কোম্পানি তে ঢুকতেই দেখলাম আমান সহ সবাই জড়ো হয়েছে এক জায়গায়, আমি আমার কেবিনের দিকে যেতে নিলেই, আমান ডাকলেন আমায়। সদ্য গতকাল আমার বিয়ে হয়েছে, এর জন্য বাসায় অনেক অশান্তি হয়েছে, সকাল থেকেই মন মেজাজ ভালো নেই তার উপর এখন ওনার সাথে কথা বলতে হবে, এই ভেবে আমার মাথাটা গরম হয়ে গেলো।

মীরা– বলুন কি বলবেন? (বিরক্তি নিয়ে)

আমান কিছু না বলে আমার বাম হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে সবার উদ্দেশ্যে বললেন।

আমান– তোমরা সবাই নিশ্চই জানো ওর পরিচয় মীরা চৌধুরি।

স্টাফ– হ্যাঁ স্যার। কিন্তু হঠাৎ এ কথা?

আমান– আজ থেকে ওর পরিচয়টা অন্য। ও এখন থেকে মীরা চৌধুরি নয়, মীরা খান। মিসেস অফ মিস্টার আমান খান। আমার লিগাল ওয়াইফ ম…

মীরা– মাত্র ৬ মাসের জন্য! তাই তো মিস্টার আমান খান?

আমান– মীরা এসব কি বলছো তুমি? (অসহায় ভাবে)

মীরা– (হাত টা ছাড়িয়ে নিয়ে) ঠিকই বলছি। আজ থেকে আগামী ৬ মাসের জন্য আমি আপনার লিগাল ওয়াইফ। কিন্তু একটা কথা আপনি মনে রাখবেন মিস্টার আমান খান, আমি আপনাকে আমার স্বামী হিসেবে মানি না। আজকের পর থেকে আপনি কোনদিন আমায় স্পর্শ করার চেষ্টা করবেন না। আমার কোনো ইচ্ছে নেই আপনার স্ত্রী হওয়ার, এর থেকে তো মরে যাওয়া ভালো ছিলো। আমাকে বিয়ে করে আমার জীবন টা তছনছ করে দিয়েছেন আপনি। আই জাস্ট হেইট ইউ।

কথাগুলো বলে আর এক মুহুর্ত না দাঁড়িয়ে নিজের কেবিনে এসে বসে পড়লাম, ওখানে থাকলে হয়তো আমানের অসহায় মুখ টা দেখতে পেতাম। কেবিনে বসে মাথাটা একটু ঠান্ডা হতেই খারাপ লাগা কাজ করতে শুরু করলো।

আমান পাথরের মতো নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে, মীরা চলে যেতেই আমানের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো, আমান সেটা কোনমতে মুছে নিয়ে সবাই কে স্যরি বলে নিজের কেবিনে চলে গেলো, আমান দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেনি মীরা এমন ভাবে অপমান করবে সবার সামনে।

#ফ্লাশব্যাক_এন্ড 🌸🌸

মীরা– কীভাবে পারলাম আমি অতো গুলো মানুষের সামনে ওভাবে ওনাকে অপমান করতে? কতো সন্মান করে সবাই ওনাকে আর আমি এক নিমিষে তা ধুলোয় মিশিয়ে দিলাম? একটা বার ভাবলাম ও না যে ওনার মনের মধ্যে দিয়ে কি যাবে? এতো কিছুর পরেও উনি একটা টু শব্দ টূকুও করেননি। কিচ্ছু বলেননি আমায়। আর আমাকে দেখো? সামান্য অপমান করাতে এতটা রিয়াক্ট করছি, তাও কে করেছে সেই অপমান? যে কি না আমায় আজীবন অপমান করে আসছে, আমার সুখ যার সহ্য হয় না। তার জন্য আমি ওনার সাথে খারাপ ব্যবহার করছি। হায় আল্লাহ! আমার মাথাটা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে।

আমি এসব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালাম, গেস্ট রূমের দরজা খুলতেই দেখলাম আমান দরজার পাশে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে ঘুমাচ্ছেন। আমি অবাক হয়ে ওনার পাশে বসে ওনাকে ডাকতে গিয়ে আটকে গেলাম। কি মায়াভরা মুখ ওনার।

[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here