মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী #পর্ব ২ #Writer_Neel_Noor

0
380

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
#পর্ব ২
#Writer_Neel_Noor

পাশে তাকিয়ে দেখলাম, ছেলেটা নেই। এর মধ্যে ই হঠাৎ করেই আমার হাত ধরে টান দিতেই আমি গাড়ি থেকে বের হয়ে কারো বাহুবন্ধনে আবদ্ধ হলাম…..
তাকিয়ে দেখলাম ওনার ই বাহুবন্ধনে আবদ্ধ আমি। কিছু মুখ ফুটে বলার আগেই আমাকে টেনে নিয়ে ছুটলো বাড়ির ভেতরের দিকে। পিছনে থেকে আমার শশুর ও শাশুড়ি দুজন ই ডাকছে, থামার জন্য, কিন্তু ওনি মানছেই না….

দরজার সামনে আরো দুইজন মহিলা দাঁড়িয়ে ছিল, সাথে পনেরো কিংবা ষোড়শ বয়সী ২ জন মেয়েও, সবাইকে ঠেলে ওনি হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে গেল, ওনার সাথে আমি ও দৌড়াচ্ছি, শাড়ি পড়ে এভাবে দৌড়াতে খুব ই অস্বস্তি হচ্ছে, ওনি তো আমার হাত ছাড়ছেই না, সবশেষে ওনি ড্রইং রুমের সোফায় বসল আমাকে নিয়ে….

দুজনেই হাঁপিয়ে গেছি, তবে আমি অস্বস্তিতে ও ভুগছি। চারপাশে সবাই উপস্থিত, সব নতুন মুখ, চেনা বড্ড দায়। এর মধ্যে ই ওনি বলল- বউ!! ও বউ!! বিহারিনী কোথায়, তুমি তো বলেছিলে সে আসবে, আমাদের কথা হবে, তুমি তো এখনও ও বল্লে না?

এর মধ্যে ই একটা মহিলা বলে উঠল- বাবা গো, বউ পেতে কত কি? এই নাকি পাগল, তা বউ পাওয়ার জন্য ই পাগলামি করেছিল নাকি, নাকি ভালোবাসার মূল্য নেই? কথায় আছে না…
….. পাগলের কারবারি দেখো, বউ পেয়ে পাগলের পাগলামি ও ভালো!!

মহিলাটির কথা শুনে আমি সত্যি ই একটু থমকে উঠলাম, কারন সে খোঁজা মেরে কথা বলছে, আর হিংসাকে ও প্রাধান্য দিচ্ছে!! তবে সে কিছু একটা বলতে চাইছে এই উচ্চ শব্দের কথাগুলোর আড়ালে…

এর মধ্যে ই একটা মেয়ে… বয়সে পনেরো কিংবা ষোড়শ হবে, এগিয়ে এলো, আমার পাশে এসে বসল, বলল- চাচি, তুমি কি সুন্দর!! তুমি …

আর কিছু বলার আগেই ঠাস করে একটা চড় মেয়েটির গায়ে লাগল, মহিলাটি চেঁচিয়ে উঠলো, বলল- তোর সাহস কত মারিয়া, আমার মেয়ে হয়ে এই ছোটলোক, বিক্রিতা, অশিক্ষিত গেঁয়ো মেয়ের পাশে বসিস!! (মেয়েটি ছল ছল চোখে তাকিয়ে আছে, হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে, দৌড়ে চোখের আড়াল হয়ে গেল…) মহিলা টি আবার ও চিৎকার করে বলল – নেক্সট বার যদি দেখেছি, গাঁয়ের চামরা একটাও সাথে থাকবে না, দেখে নিস!!আর …

কিছু বলার আগেই আমার শশুর চিৎকার করে বলে উঠল – মোহিনী, তুমি কি বল্লে? তোমার সাহস তো কম নয়? তুমি কাকে ছোটলোক, বিক্রিতা, অশিক্ষিত গেঁয়ো বলছো? ভুলে যেও না ও আমার ছেলের বউ(একটু হুঙ্কার সুরে) আজ আমার ভাইয়ের বউ বলে তোমাকে কিছু বললাম না, পরের বার আমি ভুলে যাব তুমি কে!! রেহানা বউমা, তুমি রাজ কে আর বউ মা উপরে নিয়ে যাও .. অনেক দূর থেকে ক্লান্ত হয়ে এসেছে ওরা!!

বুঝতে পারলাম, মোহিনী হলো আমার চাচী শাশুড়ি, এই মেয়েটি হচ্ছে তার মেয়ে মারিয়া। রেহানা যদি বউ হয়, তাহলে সে আমার ভাবী, তার সাথে সাথে রাজ আর আমি হাঁটছি…
________

প্রথম রুম টায় ঢুকতেই রুমের বারোটা বাজার অবস্থা দেখে নিলাম। আমি বললাম – এটা কার রুম? (রাজের দিকে ইশারা করে বললাম -আপনার?)

হঠাৎ করেই রাজের ভাব নমুনা পাল্টে গেল, কিছু না বলে হন হন করে ঘরে গেল। ঠাস করে দড়জাটায় লাথি মেরে বসলো, পুরো বাড়ি মনে হয় কেঁপে উঠলো। রেহানা সাথে সাথে দরজা টা বন্ধ করে ফেলল। ওনার আকর্ষিক ঘটনায় আমি বিষ্ময় হয়ে রইলাম, বললাম বন্ধ করলেন কেন দরজাটা, ওনি ভেতরে একা। কিছু হয়ে গেলে….

এর মধ্যে ই রেহেনা বলে উঠল – এখন এখানে ৫৬০ ডিগ্রির ভূমিকম্প হবে, আর….(কিছু বলার আগেই ঘর থেকে জিনিস পত্র ভাঙচুর এর আওয়াজ এলো, আর গণবিরোধী চিৎকার…)

আমার ভেতরের রন্ধে রন্ধে ভয়ের মাদকতা ছড়িয়ে পড়লো। নিমিষেই সবাই এক হয়ে দড়জার সামনে উপস্থিত হইলো। এখন বাড়ির আরো দুই পুরুষ সদস্যের নতুন মুখ দেখলাম, সবাই ই বাহিরে থেকে রাজ কে চিৎকার করে থামার জন্য বলছে….

আমি এমনিতেই এই বাড়িতে নতুন, তার উপর যদি নতুন বউ হই কথাই নেই, আবার স্বামী পাগল, দুনিয়াতে কোন নারী আমার মতো এই অবস্থায় পড়েছে কি না আমার জানা নেই……

আমি ছোটবেলা থেকেই পরিস্থিতি সামলাতে পারি, যে কোন পরিস্থিতি, বাবা মারা যাওয়ার পর যেন এই বিষয়ে আরো পাকাপোক্ত হয়ে উঠলাম। স্বামী তো আমার ই , তাই না! তার উপর বিক্রিতা বউ, শর্তের মধ্যে একটা শর্ত আছে, যেকোন পরিস্থিতি তে সামলাতে হবে তাকে….তাই সবাইকে পরোয়া না করে আমি দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম!!

আমি ভেতরে প্রবেশ করেছি, রাজের চক্ষু অগোচরে, ও একটা ছবি দেখে আবোল তাবোল বলছে, আর কিছুক্ষণ বাদেই গণবিরোধী চিৎকার করছে….
আমি ভয় এ কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম, রাজ!!
আমার এ কথাটি যেন রাজের মধ্যে এক জলন্ত আগুনের সূত্রপাত ঘটল, রাজ রক্তমাখা চোখে তাকালো আমার দিকে, হাতের পাশে থাকা ফুলদানিটা সজোরে আমার দিকে ফিক্কে দিল, পরিস্থিতি বুঝার আগেই সেটা আমার কপাল বরাবর লাগল, আর সাথে সাথেই রক্তের স্রোত বইতে লাগলো…..

রক্ত পড়ছে আমার, কিন্তু রাজ যেন রক্ত দেখে আরো বেশি এগ্রেসিভ হয়ে উঠল, একদম বেশামাল পরিস্থিতি বিরাজ করছে, এদিকে শাশুড়ি সহ রেহানা ভাবী আমাকে ধরল, এদিকে আমার চোখ যেন রাজের থেকে সরতে ই নারাজ!! এটাকে ই হয়তো বলে পবিত্র বন্ধন!!

রাজের ঘাড়ে বাবা একটা ইনজেকশন পুশ দেওয়ার মিনিট দুয়েক পর ই রাজ তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন, আর এদিকে আমাকে অন্য রুমে নিয়ে গেল।

______

রুমে কেউ নেই। শুধু রেহানা ভাবী ই। রেহেনা ভাবী হচ্ছে, রাজের বড় ভাইয়ের বউ আবার সম্পর্কে মামাতো বোন ও। বড় ভাইয়া অন্য রুমে থাকবে আজ, আমাকে রেহানা ভাবীর সাথে থাকতে বলা হয়েছে….

পরিস্থিতি থমথমে, অনেক রাত ই হয়েছে। আজ আমার বাসর রাত, কত পরিকল্পনা, কত কল্পনা করেছিলাম, কিন্তু ভাগ্য আমার সুপ্রশন্ন কোথায়!!
বারান্দায় দোলনায় বসে ভাবছি, আর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি…আজ যেন আকাশ ও রাগ করেছে…কালো অন্ধকার হয়ে আছে…

হঠাৎ পাশে কারো উপস্থিতি থমকে উঠলাম, দেখি রেহানা ভাবী, আমার দিকে তাকিয়ে আছে, বলল-কান্না করছো? মন খারাপ? তা বোন, যেনে বুঝে নরকে কেন আসতে গেলে? এই হাওলাদার বাড়ি একটি নরকখানা, প্রত্যেকেই মুখোশ পড়ে আছে… তুমি কেন এসেছো!!

অঝোর ধারায় অশ্রুমাখা নয়নে তাকিয়ে, মুচকি হেসে বললাম – আমি কোথায় সজ্ঞানে আসলাম গো!! নিয়তির খন্ডন যেন খন্ডাতেই পারলাম না….এই নিয়তি বড্ডই অন্যায় করছে আমার সাথে বড্ড ই!!

নিকোষ কালো দাগ থেকে বেরিয়ে আসা এক ঝঙ্কার থেকে রেহানা ভাবী বলল – আমার থেকে ও কি অনেক করুন? শুনি তো তোমার কাহিনী বোন….

আকাশের দিকে তাকালাম, বললাম – ও যে মেঘময় কালো আকাশে আজ জোনাক আড়াল হয়ে আছে, তার পাশেই রোজ ঝলঝল করত একটা তাঁরা, আমি রোজ সেটার সাথে ই কথা বলতাম, কারন আমার বাবা সেই আকাশের তাঁরা!!

(মায়ার অতীত)….

আমার বাবা, আমি আর মা। ছোট্ট একটা পরিবার! ছোট্ট একটা সংসার। বাবা মায়ের প্রেমের বিয়ে। আমার নানা অনেক প্রভাবশালী আর ধনী, কিন্তু বাবা?….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here