মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী (রাজ_বিহারিনী_রুদ্র (৫_বাকিঅংশ) #পর্ব ১৩ #writer_Neel_Noor

0
462

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
(রাজ_বিহারিনী_রুদ্র (৫_বাকিঅংশ)
#পর্ব ১৩
#writer_Neel_Noor

বিহারিনীর খুব কষ্ট হচ্ছে…. হাতে টাকা ও নেই, তাই বাধ্য হয়ে সে রিকশায় উঠে বসল!! কিন্তু কে জানত, এখানের এক ঘটনা তিন তিনটা মানুষের জীবন এ ঝড় নিয়ে আসবে।

রাজ বিহারিনী কে যেখানে নামিয়ে দিয়েছে, সেখান থেকে বাড়ি খুব বেশি দূরে না, আবার কাছে ও না।বলে না , বিপদ ঘনিয়ে আসলেই _চারদিক থেকে আসে, ঠিক তাই, সেদিন….বিহারিনী চোখের পানি মুছে আর মুছে, তাই রিকশা ওয়ালা, রিকশা চালাতে চালাতে জিজ্ঞেস করল – কানছে কেন?
এরকম টুক টাক কথা বলছে রিকশাওয়ালা মামা আর বিহারিনীর মধ্যে। মিষ্টি একটা মেয়ে কান্না করছে, অবশ্যই যে দেখবে সে ই বলবে, জিজ্ঞাসা করবে। হাইওয়ে তে রিকশাওয়ালা মামা একটু বেখেয়ালি ভাবে ই রিকশা চালাচ্ছিলো, ঠিক তখন ই…. সামনের দিকে থেকে এক ব্রেক বিহীন মালামাল বহনকারী ট্রাক ধেইয়ে আসছিল…. চালক মামার অজ্ঞতার কারণে ই, সেদিন অনেক বড় এক্সিডেন্ট হয়, রিকশা ছিচকে নদীতে পড়ে, বিহারিনী ও সেই নদীতে পড়ে যায় আহত অবস্থায়!! রিকশা চালক এর স্পট মৃত্যু!! ট্রাক ড্রাইভার সহ আর দুজন সিরিয়াস অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়…..

________(বর্তমান)

আমি ডায়েরিটা উল্টালাম, লেখা শেষ!! এদিক সেদিক উল্টা পাল্টা করে বার বার দেখছিলাম!!যদি আর কিছু লেখা থাকে….কিন্তু? কিছু ই আর পেলাম না…পাব কই করে? লেখা ই তো নেই!!

ডায়েরিটা পড়ে আরো বেশি এলোমেলো হয়ে গেছি। মন বারবার জিজ্ঞেস করছে, তারপর? তারপর কি হলো?
বিহারিনী কোথায়?_জীবিত আছে ? থাকলে সে কোথায়!!
রুদ্র কোথায়? সে কি দেশে _নাকি সে ও রাজের মতো ই বিহারিনীর মাতোয়ারা!!
রাজ ই বা কেন এরকম হলো। রাজ কি সত্যি ই পাগল_নাকি অভিনয়? কীভাবে পাগল হলো?

এই মধ্যে রাতে আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। আমি কিছুই মিলাতে পারছি না। সব যেন এলোমেলো হয়ে গেছে। হঠাৎ করেই রাজের প্রকট চিৎকার ভেসে এলো!! পুরো হাওলাদার বাড়ি গগন চাপা ভারি চিৎকারে কেঁপে উঠলো!! দেওয়ালে দেওয়ালে একটাই প্রতিধ্বনি তুলছে ….বিহারিনী!! বিহারিনী!!

দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমার অন্য কোন দিকে আর হুঁশ নেই। সোজা রাজের রুমে। আমার পিছু পিছু সবাই আসছে। রাজ….. রুমের সবকিছু লন্ড ভন্ড করে ফেলছে। নিজের হাত, মাথায় নিজে আঘাত করছে। রক্তাক্ত রাজ কে দেখে মন ঘাপড়ে উঠল।। মনই মন বলল- কোন মেয়ে!!….তার স্বামীর এমন ভয়ংকর রুপ দেখতে চায়? কোন মেয়ে?….. সহ্য করবে তার স্বামীর মনে অন্যের বসবাস, মুখে অন্যের নাম।

রাজের এই অবস্থা দেখে সবাই রাজ কে জড়িয়ে ধরে থামাতে চায়। রাজ থামছেই না। রাজ চিৎকার করে কান্না করতে করতে বলছে – আমার বিহারিনী নদীর অতলে হারিয়ে যায় নি। তোমরা কেন বিশ্বাস করতেছো না? কেনো?
আরে আমার মন বলে বিহারিনী বেঁচে আছে। আমার বিহারিনী কে সেদিন একলা ছাড়া উচিৎ হয় নাই। বিহারিনী(গগন চাপা আর্তনাদ)

এতক্ষণ এ মেজ চাচা শশুর ডাক্তার কে কল দিয়েছে। ডাক্তার মিনিট পাঁচেক এর মধ্যে ই চলে এসেছে। এই শহরে নাকি সব সম্ভব!! রাজকে একটা ইনজেকশন পুশ করতেই, রাজ মিনিট দুয়েক পর ঢলে পড়লো। রাজের মাথা হাত ব্যান্ডজ করে দিল।।

দিন দিন রাজের অবস্থা আরো অবনতি হচ্ছে। আমার যেন সহ্য হচ্ছে না। ডাক্তার চলে গেলেন। সবাই সবার রুমের দিকে চলে গেল। বাবা আমার সামনে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিল, বলল-আমার ছেলে টা আর কখনো ই কি ভালো হবে না?

আমি রাজের এরকম অবস্থা দেখে খুব বেশি ই ভিতু হয়ে গেছি। মনে শুধু রাজ রাজ নাম ঝপছি!! কিন্তু মস্তিষ্কের কোষাগারে বিহারিনী!! রুদ্র!!
বাবার হাত ধরে বললাম – বাবা! আমার কিছু জানার আছে!! আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই…তার আগে তোমাকে সত্যি কথা বলতে হবে।

ছেলের বউয়ের এমন কথা শুনে তারেক হাওলাদার কিছুটা অকপটে মাথা সায় দিয়ে স্বীকার করল।
আমি বললাম – বাবা!! বিহারিনী কোথায়? রুদ্র কোথায়? রাজের এই অবস্থা হলো কি করে?

বাবা কিছুটা গম্ভীর হয়ে গেলেন। মাথা নিচু করে সব বলতে শুরু করলেন। বললেন – সেদিন এক্সিডেন্ট এ আমরা বিহারিনী কে খুঁজে পাই নাই। রাজ আর রুদ্রের মধ্যে একপ্রকার দ্বন্দ্ব হয়েছিল। সেদিন আমরা জানতে পারি, রাজ আর রুদ্র উভয়েই বিহারিনী কে ভালোবাসে। রাজ যদি সেদিন বিহারিনী কে ঠিকঠাক মতো বাসায় পৌঁছে দিত, তাহলে এতোবড় এক্সিডেন্ট হতো না। রুদ্র সেদিন এদিক সেদিক পাগলের মত হয়ে গিয়েছিল, নিজের ক্ষোভ সামলাতে না পেরে রাজ কে অনেক মেরেছিল, রাজকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিলাম। এদিকে টানা ১মাস বিহারিনী কে খুঁজেছি, কোন লাশ কিছু ই পাওয়া যায় নাই।
এক্সিডেন্ট এর সপ্তাহ পরেই রুদ্র বাড়ি থেকে কাউকে না বলে চলে যায়!! আমরা কেউ ই জানি না কোথায় গেছে, তবে ওর মা অবশ্য ই জানে। অন্যদিকে রাজ একসপ্তাহ পর ই বাসায় আসে, কিন্তু নিজেকে নিজের রুমেই আবদ্ধ করে ফেলে। এর মধ্যে ই আস্তে আস্তে ও কিরকম হয়ে যায়। আজ ছয় মাস, ওর এই পাগলামি টা আরো অবনতি হয়েছে। ভেবেছিলাম, বিয়ে করিয়ে দিলে, বিহারিনী কে ভুলে যাবে, ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে, কিন্তু এখন দেখছি তোমার জীবন….

মুচকি ব্যাথময় হৃদয় ভরা হাসি দিয়ে বললাম- না বাবা, আমার জীবন কিছুই হয় নাই। আপনি আমাকে আরো বেশি সাহায্য করেছেন। নরক থেকে বেচেছি। এখন আমি স্বাধীন।

বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আমি আবার ও বললাম – বাবা আমি রাজ কে অন্য ডাক্তার দেখাতে চাই।

বাবা – কেন? রাজ কে তো তোমার শাশুড়ি মা তার পরিচিত মানে রেহেনার বাবা ট্রিটমেন্ট করছে। পরিচিত একজন মানুষ, তাহলে অন্য ডাক্তার কেন?

বাবা কথাটা বলতেই, আমার মন মস্তিষ্ক এ আরো ঝট পাকিয়ে গেল। আমি নিজেকে সামলিয়ে বললাম – বাবা!! স্বামী আমার। রিসপন্সেবিলিটি আমার। আমি চাই আমার স্বামী ভালো হোক। আমি রাজকে বাহিরে চিকিৎসা করাতে চাই। রাজ কে উন্নত চিকিৎসা করাতে চাই। সুইজারল্যান্ড নিয়ে যেতে চাই।

বাবা আমার দিকে থমথমে তাকিয়ে আছে। আমি বাবার হাতে হাত রেখে বললাম – বিশ্বাস রাখুন আমার উপর। আস্থা রাখুন।

বাবা মাথা নাড়িয়ে সায় দিল। তারপর বললো – দুদিন এর মধ্যে আমি সকল ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
(বাবা চলে গেল)

আমি আমার এক পরিচিত বান্ধবী কে কল দিলাম। ওর বড় ভাই ডাক্তার। আমাকে খুব ভালবাসে, ছোট বোনের চোখে দেখে। তার নাম্বার টা নিলাম।

মধ্যে রাত, তাই রাজের পাশে ই গিয়ে বসলাম। চিন্তা আর জটলার মাঝে ফেঁসে যাচ্ছি দিন দিন। রাজের হাতে হাত রাখলাম। ঘুমের ঘোরে ও রাজ বিহারিনী নাম জপছে। রাজ কে দেখে আমার খুব কষ্ট হয়। কেন? মনই মন রাজকে আমার ভালো লাগে, হয়তো এটাই পবিত্র বিবাহ বন্ধনের নিয়ম।

দুফোঁটা চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো, রাজকে বিরবির করে বললাম – তোমার বিহারিনী দেখতে কেমন রাজ!! খুব ই ইচ্ছে করছে দেখতে, সেই সৌভাগ্য_বতী_কে দেখতে!!

এগুলো ভাবতে ভাবতে ই ঘুমিয়ে গেলাম।

(আজ পর্বটা একটু ছোট হয়েছে।। এখন থেকে দুইটি কেমিস্ট্রি শুরু হবে, আশা রাখছি আর কৈফিয়ত দিতে হবে না 😐😒)

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here