মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী ৬ #writer_Neel_Noor

0
300

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী

#writer_Neel_Noor

রাজকে নিয়ে বাহিরে বের হলাম। বাহিরে বলতে, রাজদের বাড়ির পেছনে, এখানে বিশাল একটা বাগান রয়েছে, নানা ধরনের ফুল ফল গাছ। আমি এখানে আসি নাই কখনো, তবে আমার বারান্দা থেকে দেখেছিলাম…

মারিয়া, মাহিয়া এখানে আগে থেকেই উপস্থিত। ওরা দুইবোন খুব ই ভালো, চাচি শাশুড়ির মতো আমার সাথে কখনো ই কথা বলে না…

রাজ অনেকদিন পর বাহিরে বের হয়েছে, তার খুশি যেন উপচে পড়ছে। এদিকে দৌড়ে যায়, সেদিকে দৌড়ে যায় …ফুল ছিড়ে, কখনো খাবার ফল ছিড়ে, একটু কামড় দিয়ে খায়, আবার ফেলে ও দেয়….তার আনন্দ যেন উত্তলিয়ে পড়ছে…

আমি এখানে মারিয়া আর মাহিয়ার সাথে গল্প করছি, আর রাজের দিকে খেয়াল রাখছি। সবকিছুর পরেও মাথায় একটা কথাই ঘুরতেছিল, “রুদ্রের_বিহারিনী_হরিনী” । কথার মাঝে হঠাৎ করেই আমি মারিয়া কে জিজ্ঞেস করলাম- মারিয়া, রুদ্র কে?

মারিয়া অনমনে ই উত্তর দিল – আমার ভাইয়া!! (বলেই চমকে উঠে মুখ চেপে ধরে)

মাহিয়া ভ্রু কুঁচকে বলল – তুতুমি… কেমনে জানলে এই নাম? এই নাম তো কেউ আমাদের পরিবারে উচ্চারন করে না….

এখন আর কোন মতেই কৌতুহল ধরে রাখতে পারলাম না। মাহিয়ার হাত ধরে বললাম – কে বিহারিনী? কে রুদ্র? রাজ কেনই এমন? প্লিজ খুলে বলো আমায়…. তোমাদের পরিবারে এতো কেন খাপছাড়া সম্পর্ক…

মারিয়া আর মাহিয়া দুজনেই উঠে দাঁড়ালো, বলল- আমাদের মাফ করে দিও ভাবী, আমরা বলতে পারব না…(বলেই দৌড়ে চলে গেল)
এদিকে আমি ওদের দিকে তাকিয়ে আছি…ভাবছি, এতো রহস্য কেন এই বাড়িতে? এর মধ্যে ই রাজ পিছনে এসে দাঁড়াল, বলল- নতুন বউ!! কি ভাবছো?
আমি আনমনে ই উত্তর দিলাম, রুদ্রের বিহারিনীর কথা!!!

মূহুর্তে ই রাজ এগ্রেসিভ হয়ে উঠল, চিৎকার করতে লাগলো, পাশে থাকা ফুলদানিটা সজোরে ধাক্কা দিল, ভেঙে যাওয়ার আওয়াজ এ আমার পুরো হুশ ফিরল, আমি চমকে উঠলাম, মনে মনে বললাম – ইশ্, ভুল সময়ে কি বলে ফেললাম!!

রাজকে ঠান্ডা করব, কিছু বলব, তার আগেই, রাজ আমার উপর ভারি হয়ে ওঠে, আমার গলা চেপে ধরলো – চিৎকার করে বলতে লাগল – কোথায় রুদ্র? কোথায় বিহারিনী? আমার বিহারিনী, ও শুধুই আমার!! সকল শুন্যতা শেষ এ ওরে আমার হইতে হবে, তুই রুদ্রের হয়ে আসা কোনো কর্মী!! কে তুই…. রুদ্রের হতে পারে খুব ক্ষমতা, আমি কম নয়….

রাজ কি বলছে এগুলো? সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে!! এদিকে আমার দম প্রায় আটকে আসছে, রাজের চোখ দুটো রক্তাক্ত লাল হয়ে আছে, আসলেই রাজ কি পাগল!! নাকি অভিনয়!! নাকি সবই নিছক বাহানা….?

রাজের চিৎকার এ বাড়ির সবাই ছুটে এলো। ভাগ্য টা মনে খুব ই ভালো, পরিবারের লোকজন এসে এই যাত্রায় বাঁচিয়ে দিল, রাজের হাত থেকে। আমার গলা দিয়ে কাঁশি বের হচ্ছে, রাজ এখনো পাগলামি করছে, একপ্রকার জোর করে সবাই রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আর ও চিৎকার করতে করতে বলল – আমি ছাড়বো না….কাউ কে না!! কাউকে না!! রাইটার -নীলনূর

আমি রাজের এই রুপ দেখে উলু বনে গেলাম!! এমন রুপ, বাব্বাহ!!

______

রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হলেও, বিকেলের এই ঘটনা নিয়ে এখন ও থমথমে পরিস্থিতি। সবাই যার যার মতো ই… রোজকার মতো আজ ও আমি খাবার হাতে নিয়ে চুপচাপ হেটে চলেছি রাজের রুমের দিকে!!

ভেতরে ঢুকব, তার আগেই আমি কিছু আওয়াজ শুনতে পাই!! একটা মহিলা আর একটা পুরুষালী কন্ঠ ফিসফিস করে বলছে কিছু!! কি বলছে, মনযোগ দিয়ে চাইছি!! বুঝতে পারছি না। অস্পষ্ট স্বরে ভেসে এলো – যতদিন এই ইনজেকশন টা রাজের এবং বাড়ির কয়েকজন লোকের অগোচরে রাজের শরীরে পুশ করতে পারব, ততদিন রাজ এই রকম থাকবে। রাজ কে ঠিক করা যাবে না…..

আমি দরজা খুলে বললাম – কে এখানে? (রাজের পুরো রুম অন্ধকার। )

একটা ছায়া বারান্দা দিয়ে চলে গেল, হাতে খাবার, আবার পড়নে শাড়ি!! তাই পিছু পিছু দৌড় দিতে পারলাম না!! তবুও বারান্দার দিকে এগিয়ে গেলাম। কাউকে ই আর দেখতে পারলাম না।

রুমের লাইট অন করতেই, ভেতরে অন্য কাউকে দেখলাম না। তবে রাজ অচেতন অবস্থায় পরে আছে। রাজ কে ডাকছি, কিন্তু রাজের হুঁশ নেই, বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।

আজো ও কি রুমে কেউ ছিল? নাকি আমার ভ্রম। তবে অস্পস্ট বলা কথাগুলো তো আর মিথ্যা নয়….ঐ গুলো আমি নিজে শুনেছি!!

এর মধ্যে ই, আমি আশে পাশে তাকালাম, এদিক সেদিক তাকাতেই রাজের খাটের পাশে একটা ইনজেকশন এর সিরিজ আর ঔষধ এর কাঁচের কৌটা পাওয়া গেল।

এটা দেখে আমি বিশ্বাস করতে পিছুপা হলাম না, এই রুমে নির্ঘাত কেউ ছিল।দুটো জিনিস হাত দিয়ে উঠলাম। এর মধ্যে ই রেহানা ভাবীর পেছন থেকে ডাক দিল, বলল- মায়া!! রাজ তো ঘুমিয়ে আছে, তুমি এখানে কি করতেছো। আমি আছি, রাজ কে দেখে রাখবো, তুমি চিন্তা করো না। তুমি রেস্ট নেও।

আমি আর তাকে কিছু ই খুলে বললাম না। দুটো জিনিস ই চোখের আড়াল করে ফেললাম। আসলেই কি এ বাড়িতে সবাই মুখোশ পড়ে ঘুরছে? কেনো?

চুপচাপ চলে এলাম রুম থেকে। হঠাৎ মনে পড়লো, খাবার এর কথা, রেহানা ভাবী কে বলে আসি, যেন রাজ উঠলেই তাকে খাইয়ে দেয়, পিছু পা ফিরে রাজের রুমের দরজায় এগিয়ে আসতেই দেখি, রেহানা ভাবী কিছু খুজতেছে, আমি যেখান থেকে ইনজেকশন আর কৌটা পেয়েছি, সেখানে ই!!

সন্দেহ টা বেড়ে গেল!! আমি আর রেহেনা ভাবী কে না ডেকেই, রুমের দরজা থেকে চুপচাপ সরে গেলাম। আর ভাবতে লাগলাম – তাহলে কি রেহেনা ভাবী ই!! নাকি অন্য কিছু!! এ কোন গোলক ধাঁধায় পড়লাম আমি?
( মায়া আশেপাশে আড়চোখে না তাকালেও, খুব নিরবে নিভৃতে দুটি চোখের নজর তার উপর ঠিক ই পড়েছে!! যার চোখে মুখে হিংসা, বিদ্বেষ আর ভয়ঙ্কর পরিকল্পনার বাসা!!)

______

আজ হাসপাতালের করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে এক যুবক। যার চোখে মুখে শুধু মাত্র ই একটা আশা, প্রান_সজনী ঠিক হয়ে উঠবে তো। হঠাৎ কাঁধে হাত রেখে হাসপাতালের এমডির ছেলে বলল- বন্ধু!! চিন্তা করিস কেন? আমি আছি তো!! আসলেই সজনী পাখি বোনটা বড্ডই ভাগ্যবতী!! আমার বন্ধুর উজাড় করা ভালোবাসা সে….

ছয় ফুটের ছেলে টা এই বিপদেও মুচকি হেসে বলল – কিন্তু পাখি আমার অন্য খাঁচায় বন্দী!! তবে এইবার নিয়তির খেলা উল্টে গেছে, যেই বিনা কারনে পাখি আমার অন্য খাঁচায় বন্দি ছিল, নিয়তি তার উল্টো চাল চেলেছে, হাজার চাইলেও পাখি সেই খাঁচায় ফিরতে পারবে না!! আমার পাখি তো আমার ই থাকবে….
তোকে যা বলেছিলাম, তা করেছিস তো!!

ছেলেটি হুম বলে মাথা নাড়িয়ে, দুটি পাসপোর্ট এগিয়ে দিল। বললো – কাল সঠিক সময়ে চলে যাইস !! সব ঠিকঠাক, ওখানে চিকিৎসা করালে, ৬ মাসের মধ্যে ই ঠিক হয়ে উঠবে….

“আচ্ছা ঠিক আছে, আমি দেখে নিব। তার আগে আরো একটি কাজ করে দে, এই চিঠিটি পৌঁছে দিবি, হাওলাদার বাড়িতে, চিঠিটি যেন মায়া মেয়েটির হাতেই পড়ে , ঠিক আছে?”

ছেলেটি ও মাথা নাড়িয়ে সায় দিয়ে, চিঠিপত্র টা নিয়ে চলে গেল। আর সজনী পাখির দিকে তার প্রান_রায় এগিয়ে গেলো…..

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here