মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী #পর্ব ৫ #Writer_Neel_Noor

0
511

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
#পর্ব ৫
#Writer_Neel_Noor

কেটে গেল আরো দুই দিন। আমি সত্যিই খুব ই চিন্তা ও ভয়ে আছি। এখন সত্যি ই মনে হয় এই ঘরে সবাই অভিনয় করছেন। কেউ প্রয়োজনের খাতিরে তো কেউ টাকার বিনিময়ে, আবার হয়তো কেউ সম্পত্তির খাতির…..

এই দুদিনের সবচেয়ে বড় সন্দেহ যায় রাজের উপর। রাজ হঠাৎ হঠাৎ নিজের ঘর থেকে উধাও হয়ে যায়, আবার কোথাও থেকে চলে ও আসে, প্রতিবার ই ঘুমন্ত অবস্থায় ই তার রুমেই পাই, অথচ যখন সে উধাও হয়, আমি সারা বাড়ি তন্ন তন্ন করে খুঁজি, তবুও তার হদিস পাই না…

এ বাড়ির সবাই কেমন ঘুমটচাপা, নিরব, প্রয়োজনের খাতিরে একে অন্যের সাথে কথা বলে। আমার শাশুড়ি মায়ের সাথে আমার চাচি শাশুড়ি কথা ই বলে না। সাথে দাদী শাশুড়ি ও দেখতে পারেন না শাশুড়ি মাকে, অথচ রাজ চাচি শাশুড়ি আর দাদী শাশুড়ির প্রানভোমড়া। চাচি শাশুড়ির আরো এক ছেলে আছে, সে নাকি অনেক বড় ডাক্তার। বাহিরে পড়াশোনা করেছে। এই বাড়ির সাথে তার সম্পর্ক ভালো না, কি নিয়ে গন্ডগোল জানি না, তবে সে ও বাংলাদেশ এ থাকে। কি অদ্ভুত ফ্যামেলি!!
বাড়ির তিন পুরুষ, আমার শশুর, চাচা শশুর আর রাজের বড় ভাই। অথচ, বড় ভাই হাওলাদার ইন্ড্রাস্টির শুধু মাত্র একজন কর্মচারী….

এগুলো ভাবতে ভাবতে ই রাজের রুমে গেলাম। রাজ ফ্লোরে বসে চারদিকে ছবি ছিটিয়ে রেখেছে। আর কথা বলছে গুন গুন করে। কিছু ক্ষন এই ছবিতে তাকায়, তো কিছুক্ষণ অন্য আরেকটায়, পরিশেষে হাসছে, ছবিতে চুমু দেয়, আবার হাতের অপর পৃষ্ঠায় নিজের কান্নারত চোখের পানি মুছে…(বিগত দশ মিনিট ধরে এটাই দেখছি.. দড়জার সামনে দাঁড়িয়ে…)

দরজায় টোকা দিয়ে বললাম – রাজ!! নতুন বউ কে কি সাথে নিবে? দেখতাম তুমি কি দেখছো, ছবি গুলো তে….
রাজ চমকে উঠে, সাথে সাথে সব ছবি একত্র করার চেষ্টা করছে, আর হঠাৎ করেই এগ্রেসিভ হয়ে উঠে, চিৎকার করে বলছে- নাআআআআ, নাআআআআ, আমি দেখাবো না। তোমরা আমার থেকে এগুলো ও কেড়ে নিবে। সব কিছু ই ছিনিয়ে নিয়েছো, প্রথমে সেই মানুষটি কে, পরে আমাকে, তারপর তার অস্তিত্ব কে ও নিয়ে, ঐ ঐ, ভুতুড়ে রুমটাতে বন্দি করে রেখেছো…..

(সব ছবিগুলো একত্র করে তার আলমারির আড়ালে লুকিয়ে রাখল। আর দৌড়ে এসে দরজাটা ঠাস করে মুখের উপর বন্ধ করে দিলো)

রাজের এহম কান্ডে আমি উলু বনে গেলাম। মিনিট দুয়েক স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। হলো টা কি? রাজ এমন করলো কেন? ঐ ছবিগুলো কার? কি ছিল ওগুলো তে…..
রাজ কে ডাকব, দরজা টোকা দেওয়ার আগেই, রাজ নিজেই দরজা খুলে আমার হাত ধরে ভেতরে টেনে নিয়ে গেল। আবার ও দরজা বন্ধ করে দিল। চোখ মুখ শক্ত করে কুঁচকিয়ে বলল- নতুন বউ!! তুমি এখানে কি করো? তোমার জন্য আমার পর্দা ফাঁস হয়ে গেছে, তুমি এর বিনিময়ে কি চাও(খুব ই বিজ্ঞ বাচ্চাদের মতো মুখটা ফুলিয়ে আমাকে প্রশ্ন করল….)

আমি ও নিজের হাসিকে চেপে রেখে বললাম – রাজ সাহেব, আমার দুইটা শর্ত আছে, যদি মানেন, তাহলে আমি আপনার পর্দা ফাঁস করব না, আর যদি না মানেন, বাড়িতে ঢোল পিটিয়ে বলে দিব ( মুখের হাঁসি কে রাখতে পারছি না, দুই হাত চেপে ধরলাম)

রাজ কাঁদো কাঁদো গলায়, বাচ্চাদের মতো মুখটা ফুলিয়ে বলল- আমি রাজি, বলো কি চাও….
(রাজকে এই অবস্থায় দেখে আমি আর হাসি ধরে রাখতে পারলাম না, খিলখিল করে জোরে হেসে ফ্লোরে বসে পড়লাম….রাজ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে….)
এই হাঁসি তো থামছে না, তবে রাজের দিকে তাকাতেই, আমার রাজকে আর একদফা ভালো লেগে যায়। কি সুমিষ্ট নজর তার….

নিজেকে ঠিক করে উঠে দাঁড়িয়ে বললাম- প্রথমে আমি ঐ ছবিগুলো দেখতে চাই!! এটাই প্রথম শর্ত…

রাজ বাধ্য হয়ে ই ছবি গুলো দেখানোর উদ্দেশ্যে আলমারি টা খুলল, একটু জিদ করে আলমারির দরজা টান দিতেই ভেতরে থাকা সব অগোছালো জামাকাপড় , কাগজ, আরো কিছু রাজের উপর পড়লো। আমি দৌড়ে রাজের দিকে গেলাম, যেতেই ফ্লোর এর উপর সিল্ক এর কাপড়ে পিছলে আমি রাজের উপর পড়লাম।

রাজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ আমি, রাজ ও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে!! রাজের তো শরীর, স্বাস্থ্য ভালো না, কিন্তু এতো শক্ত বাহুডোর কীভাবে?

হঠাৎ কারো রুক্ষ কন্ঠে, আমি রাজের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলাম। দরজার সামনে চাচি শাশুড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তিনি রুক্ষ কন্ঠে বলল- ছি: ছিঃ ছিঃ, এই মেয়ে তোমার কি আক্কল নাই, শরীরের দেহ চাহিদা এতোই, যে মানুষিক ভাবে অসুস্থ ছেলেটিকে ও ছাড়বে না….বাবা যে কি করে তোমার মতো একটা রক্ষীতা নিয়ে আসল…. ছিঃ ছিঃ বলতে বলতে রুমের দরজা থেকে ই চলে গেল….

তার এই কথা গুলো মনে খুব লাগলো। নিজেকে সামলাতে পারছি না, রাজের সামনেই কান্না করে দিলাম, মনে মনে ভাবছি, তারা আমাকে রক্ষিতা বলছে কেন? আর মানছি, বিয়ে করার আগে কিছু শর্ত ছিল, শর্তটা এটাই, রাজ সুস্থ হয়ে গেলে,ও যদি আমাকে না চায়, তার বউ হিসাবে মর্যাদা দিতে না চায়, আমি বিনা শর্তে রাজের জীবন থেকে সরে দাঁড়াব…..

মানছি, আমাকে কিনেছে কিছু টাকার বিনিময়ে, কিন্তু আমি ও তো কথা দিয়েছি, রাজ কে মে কোন কিছুর বিনিময়ে হলেও আমি সুস্থ করে ছাড়ব!!

এর মধ্যে ই কারো স্পর্শে আমার ধ্যান ভাঙল!! রাজ আমার চোখের পানি গুলো মুছে দিতে দিতে বলল – কান্না করো না, কেমন!! চাচি অনেক ভালো, কেন যে এগুলো বলল। আচ্ছা কেঁদো না, আমি ছবি দেখাচ্ছি তো!! দেখো দেখো!!(আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম, রাইটার-নীলনূর)

রাজ রাগ করে জোরে জোরে সব কিছু আলমারি তে রাখতেছে। আমি মুখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলাম, হঠাৎ একটা জিনিস এর দিকে নজর গেল, হাত এগিয়ে কাছে আনলাম, একটা ডায়েরি!! উপরে লেখা “রুদ্রের_বিহারিনী_হরিণী” । বিহারিনী নামটা দেখতেই রাজের অগোচরে ডায়েরিটা লুকিয়ে ফেললাম। রাজ রাগের কারনে আরো বেশি এলোমেলো করে সব রেখে দিল। চুপচাপ আমার পাশে ই বসে রইল!!

এখন আমার মন প্রাণ জুড়ে একটাই, এই ডায়েরিটা পড়ব!! কে বিহারিনী? পরিবার এ ছোট দের ও জিজ্ঞাসা করলাম, কেউ মুখ খুলল না। শাশুড়ি কে জিজ্ঞেস করলাম, ওনি বলল, বিহারিনী কেউ না, রাজের ভ্রম!! কেমন কেমন লাগছে!!

রাজকে বললাম – আচ্ছা ঠিক আছে, আপনি এভাবে ই থাকবেন, নাকি উঠবেন!! ফ্লোর কনকনে ঠান্ডা হয়ে আছে। (রাজ মুখ ফিরিয়ে নিল…)
আচ্ছা সরি সরি, এই যে কান ধরেছি। আর আপনার সাথে এরকম করব না…

রাজ খুব খুশি হয়ে গেল। বলল-সত্যি!! ইয়েএএএএ… নতুন বউ!! তুমি ছাড়া আমার আর কোন নতুন বউ নেই। তাহলে ছবি দেখবা, এখন?

আমি মুচকি হাসলাম। তার আর কোন নতুন বউ নাই। বললাম – কয়টা নতুন বউ চাই আপনার?
(রাজ খিলখিল করে হেসে উঠলো… বুঝলাম সে উত্তর দিবে না…বেটা মানুষ বলে কথা )
আবার বললাম – বিকেল বেলা তো, আমি রুম থেকে আসতেছি…. আমরা বাগানে যাব, মারিয়া আর মাহিয়া ও আসতেছে, ফ্রেশ হয়ে নেন….

রাজ খুব খুশি হয়ে গেল… রাজের চক্ষু অগোচরে আমি ডায়েরি টা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলাম ….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here