মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon ||পর্ব_১৬||

0
556

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_১৬||

” কতো বড় বেয়াদব দুটো তার সামনে তার ভাইকে মে’রে বস্তায় ভরার বুদ্ধি করছে ভাবা যায়?”

অহির বিড়বিড়ানি শুনে ইচ্ছে ফোন কানে রেখেই বলল,
” কি রে তুই কি আমাদের গালি দিচ্ছিস??

অহি থমথমে গলায় বলল,
” না।

রঙ্গন অহির মনোভাব বুঝে ইচ্ছে কে বলল তাকে ফোনটা দিয়ে দিতে। অহি নিলো তবে কানে ধরে চুপ করে রইলো। রঙ্গন নিজেই কথা বলল,
” শোন আজকের পর আমি আর তোকে ফোন দিবো না।

অহি অবাক হয়ে বলল,
“কেনো?
” আজকের পরে থেকে তুই আমাকে ফোন দিবি বুঝছিস?

অহি রেগে গেলো। কি পেয়েছেটা কি যা বলবে তাই করতে হবে? করবে না সে। রেগে বলল,
“পারবো না। আপনি দিলেই কথা বলবো নইলে বলবো না।”

বলেই ফোন কেটে দিয়ে থম মেরে বসে রইলো। ইচ্ছে কয়েকবার ডাকলেও উত্তর করলো না। পড়তে বসে বসলো। ইচ্ছে হতাশ হয়ে একটু ফোন টিপতে বসলো। হঠাৎ অনুভবের আইডি তার সামনে আসলো। সাথে সাথে রিকুয়েষ্ট পাঠালো। বড্ড বোরিং লাগছে। এই বেডারে জ্বালাইতে পারলে ভালো লাগবে। অনুভব নিজেও অনলাইনেই ছিল। নোটিফিকেশন আসতেই সিন করলো। কেউ রিকুয়েষ্ট দিয়েছে। জান্নাতুল তাজরিন ইচ্ছে। আইডির নাম দেখে বুঝে ফেললো এটা কে। এক্সেপ্ট করে নিলো। অনুভব কর্নফাম করতেই ইচ্ছে সাথে সাথে মেসেজ লিখলো,

কি এমপি মশাই কি করছেন??

অনুভব রিপ্লাই করবে কি করবে না ভাবতে ভাবতেই করে ফেললো। লিখলো,

অফিসে এসেছি। কাজ করছি।

ওহ। একটা কথা বলতে পারি?

তুমি আবার বলার আগে অনুমতি কে থেকে নেওয়া শুরু করলে কবে থেকে?

ধুর। সোজা কথার সোজা উত্তর দিন।

হুম বলো?

আপনি রাজনীতি করে কত টাকা সরিয়েছেন?

অনুভব রাগী ইমোজি দিয়ে লিখলো,
” এই মেয়ে আমাকে তোমার এমন মনেহয়? রাজনীতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারো না?

ইচ্ছে হাসলো। হেসে আবার লিখলো,
“পারি বলবো?

রিপ্লাই আসলো না। তাই ইচ্ছে আবার লিখলো,
“আপনি এখনো পর্যন্ত কয়টা প্রেম করেছেন?”

“একটাও না।
কেনো?
সময় পায়নি।

ইচ্ছে মুখ ভেঙচি দিয়ে লিখলো,
” এমন খুইসটা পেশায় নিয়োজিত থাকলে কোন মেয়েই বা প্রেম করবে আপনার সাথে??

এই মেয়ে তুমি জানো আমি প্রতিদিন কতগুলো করে প্রপোজ পাই?

নাহ জানি না।

অনুভব বেশ অনেক গুলো মেসেজ রিকুয়েষ্টের সস পাঠিয়ে লিখলো,
এবার দেখো।

ইচ্ছে খুঁটে খুঁটে দেখলো। কোনো মেয়েকেই রিপ্লাই করেনি। কিছু একটা ভাবলো। অতঃপর লিখলো,

“ফেসবুকে কি রিয়েল প্রপোজ বোঝা যায়? সব কয়টা ফেইক আইডি মনে হচ্ছে হুহ।”

অনুভব বিরক্ত হয়ে আর রিপ্লাই করলো না। ইচ্ছে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে লিখলো,
“এমপি মশাই গান শুনবেন?

” বলো শুনছি।

“তোমার আব্বাকে বলো তোমার বিয়ের বয়স যে হলো। তোমার আম্মাকে বলো তোমার বিয়ের বয়স যে হলো।
টেংটেটাটেং……………!!!

অনুভব রাগী ইমোজি দিয়ে লিখলো,

“শোনো মেয়ে আমাকে রাগিয়ে তুমি কিন্তু শান্তিতে থাকতে পারবে না। আজীবন এমন ফালতু গান বলা বের হয়ে যাবে।”

কিন্ত তা ইচ্ছে দেখলো না। আগেই ফোন অফ করে রেখে দিয়ে। হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেতে থাকলো। এখন ভালো লাগছে। গুনগুনিয়ে উঠলো,

“আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে।”

!!

আজকে অহিদের ঢাবি পরীক্ষা ছিল। মোটামুটি দুজনেরই ভালো হয়েছে। কালকে বাড়ি ফিরবে। খুশিতে লাফিয়ে লাফিয়ে হাঁটছে ইচ্ছে। অহি বার বার তাকে বলছে,
” ইচ্ছে পরে যাবি কিন্তু।

কিন্তু কে শুনে কার কথা! একটা উষ্ঠা খেয়ে আবার ভদ্র মেয়ের মতো হাঁটতে লাগলো। আজকে অনুভবের আসার কথা ছিল কিন্তু আসতে পারেনি। তাই আবির আর আরিয়া এসেছিল তাদের নিয়ে। দুজনকে বের হয়ে আসতে দেখে আবির এসে জিজ্ঞেস করলো,

“কি রে পরীক্ষা কেমন হলো?

দুজনেই এক সাথে বলল,
” আলহামদুলিল্লাহ।

আরিয়া বলল,
“চল তোদের আজকে আমি ট্রিট দিবো। কি খাবি বল?

আবারো দুজনেই এক সাথে বলল,
” ফুঁচকা আর আইসক্রিম।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে দুজনেই হোস্টেলে ফিরে গেলো। বাড়িতে ফোন করে কথা বলল। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ল। ঘুম ভাঙতে ভাঙতে সন্ধ্যা লেগে গেলো। ইচ্ছে বলল,

“চল ছাদে থেকে ঘুরে আসি।

পাগল হয়েছিস? সেদিন শুনলি না হোস্টেলের খালা কি বলল। ছাঁদে থেকে একটা মেয়ে লাফ দিয়েছিল। আর তখন থেকেই রাতে কারো ছাঁদের পায়ের আওয়াজ শুনা যায়। তারপরে থেকে কেউ আর রাতে ছাঁদে যায়না।

ইচ্ছে সেদিকে পাত্তা না দিয়ে বলল,
” আরে এমন একটু আকটু সমস্যা জায়গায়তেই থাকে চল।

“না যাবো না। আর তুইও যাবি না।”

ইচ্ছে মুখ গোমড়া করে বসে পড়ল। তার এখন আর ভালো লাগছে না। ছুটে বাসায় চলে যেতে ইচ্ছে করছে। অহি তা দেখে বলল,
” ইচ্ছে কালকে তো চলে যাবো। ভাইয়ের জন্য একটা চিঠি লিখবি?

ইচ্ছে উঠে দাঁড়াল টেবিলে বসতে বসতে বলল,
” তোর ভাইকে এবার এমন চিঠি লিখবো না! দেখেই অক্কা পেয়ে যাবে।

অহি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে প্রশ্ন মিলাতে বসলো। এভাবেই বেশ অনেকটা সময় চলে গেলো। রাতে খাওয়া দাওয়া করে দুজনেই শুয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল এমন সময় রঙ্গন কল করলো। অহি ধরতেই বলল,

” বেলকনিতে আয়।”

অহি হাতে থাকা ঘড়িতে সময় দেখে নিলো এগারোটা বাজে। হতভম্ব হয়ে বলল,
“কেনো?

তুই আসবি নাকি আমি ভেতরে যাবো?

এই না না আসছি।

অহি দৌড় বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। ওতোটা বড় না। ছোট্ট একটা বেলকনি। কোনো গাছগাছালি কিচ্ছু নেই। তারা লাগে সে সময়ও পায়নি। শুধু কাপড় চোপড় মেলতেই আসে দুজনে। তাছাড়া সেভাবে আসা হয়নি। মূলত চাপা হওয়াতে দুজনের কারোই পছন্দ হয়নি। আরেকটা কারণ আছে এখানে দাঁড়ালে রাস্তার মানুষ দেখা যায়। এমনকি তারা তাকালেও দেখতে পাবে। এই জন্যই সচারাচর আসেনা তারা। অহি উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখতে লাগলো। হঠাৎ রাস্তার ল্যামপোস্টের কাছে কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো। চেহারা বোঝা না গেলেও পোশাক দেখেই বুঝে ফেললো এটা কে। এক হাতে ফোন অন্য হাতে সিগারেট।

রঙ্গন এবার কথা বলল,
” অবশেষে খুঁজে পেলি তাহলে আমাকে?

আপনি এতো রাতে কেনো এসেছেন?

তোকে বলতে হবে?

আমি ভেতরে চলে গেলাম।

না দাঁড়া বলছি।

বলুন।

তোকে দেখতে এসেছিলাম।

অহি প্রসঙ্গ পাল্টে বলল,
“কালকে চলে যাবো।”

ওহ।

একটা গান শুনাবেন? আসলে বাড়ি গেলে তো এভাবে আর কথা হবে না। শোনাবেন?

রঙ্গন দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
” কথা হবে না মানে? তুই ফোন না ধরলে তোর ভাইকে ফোন দিবো মনে রাখিস।

অহি চমকে উঠলো। কিছু বলার আগেই রঙ্গন গান ধরলো,

“আমার ভিনদেশি তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলেকোঠার পাশে,

“ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে
তোমার নাম ধরে কেউ ডাকে
মুখ লুকিয়ে কার বুকে
তোমার গল্প বলো কাকে?

“আমার রাত জাগা তারা
তোমার অন্য পাড়ায় বাড়ি
আমার ভয় পাওয়া চেহারা
আমি আদতে আনাড়ি।

আপনি এতো সুন্দর গান কই থেকে শিখেছেন?

শিখিনি কখনো।

ওহ। জানেন ভাইয়াও ভালো গান গায়।

আমি শুনতে চেয়েছি? একদম তার কথা আমাকে বলবি না।

এতো রাগ কেনো আমার ভাইয়ের উপর আপনার তাই আগে বলুন তো??

রঙ্গন কথা ঘুরিয়ে বলল,

” তোর ভাই আজকে আমাকে কল দিয়েছিল। কি বলছে জানিস? তোকে নিয়ে পালাতে।

কিহ? অসম্ভব।

রঙ্গন মুচকি হেসে বলল,

আজ ফাগুনী পূর্ণিমা রাতে চল পলাইয়ে যাই….

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here