মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon ||পর্ব_১৫||

0
318

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_১৫||

ইশতিয়াক পাঠান রোদে বসে পায়ের উপর পা তুলে চা খাচ্ছেন। অন্য দিকে তার এখন কোনো খেয়াল নেই। হঠাৎ এক লোক গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
“স্যার আসব?

ইশতিয়াক পাঠান চায়ের কাপ পাশে রেখে বলল,
” আয়। কিছু বলবি?

“জ্বি স্যার।
” বল।

” স্যার রঙ্গন বাবা সেদিন এক্সিডেন্ট করেছিল। তাকে অনুভব মির্জার বোন হসপিটালে নিয়ে গেছিল। সে তার বন্ধুূদের জানালেও আপনাকে জানায়নি। ”

ইশতিয়াক পাঠানের ভাবভঙ্গি তবুও স্বাভাবিক রইলো,
“আর কিছু জানিস?সে কোথায় এখন!

” ঢাকায় আছে।

“ঠিক আছে যা। সব খবরাখবর ঠিক মতো দিবি।

লোকটা চলে যেতেই ইশতিয়াক পাঠান চায়ের কাপটা আবার হাতে নিলেন। মুখে নিতে দেখলেন ঠান্ডা হয়ে গেছে। রেখে দিয়ে আরেক কাপ চা চাইলেন। অতঃপর কিছু মাথায় আসতেই চিন্তা মগ্ন হলেন।

হঠাৎ বাড়ির মধ্যে থেকে কেউ চেচিয়ে বলে উঠলো,
” বাবা?

“বল শুনতে পাচ্ছি।

” আপনার মাতা আপনাকে সরণ করিয়াছেন। জলদি গিয়ে শুনে আসুন।

ইশতিয়াক পাঠান থমথমে মুখে উঠে দাঁড়ালেন। বিড়বিড় করে আফসোস নিয়ে বললেন,
“সন্তান গুলো একটাও মানুষ হলো না।

!!
ভাই আসব??

অনুভব ফাইল থেকে মাথা তুলে চয়নকে দেখে ইশারা করে ভেতরে আসতে বলল। অতঃপর আবার ফাইল মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগলো। যেদিকে দেখবে না সেদিকেই গড়মিল। কাকে রেখে কাকে বিশ্বাস করবে! মাথায় আসে না। রাজনৈতিক কাজের চাপে পারিবারিক অফিসে সেভাবে আসতে পারে না। তবে না এখন থেকে সময় বের করে আসতে হবে। নইলে তার বাবা দেশে ফিরে সবার আগে তার কাছেই কৈফিয়ত চাইবে। সেটা নিয়ে টেনশন নেই বললেই চলে। কিন্তু বাবা চাচার এতো কষ্টের অফিস। তা দেখে রাখা তার দায়িত্ব। চয়ন অনেক সময় ধরে হাসফাস করে গলা ঝেড়ে বলল,
“ভাই!!

” বল শুনছি।
“রঙ্গনের নাম্বার জোগাড় করতে বলেছিলেন নিয়ে এসেছি।

অনুভব হাত বাড়িয়ে বলল,
” ঠিক আছে দে।

চয়ন তার হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলো। অনুভব তা হাতে নিয়ে বলল,
” অফিসের স্টাফদের একটু খোঁজ খবর নিয়ে আয় তো। সবাই ঠিক ঠাক মতো কাজ করছে নাকি দেখ।
“আচ্ছা।

চয়ন চলে যেতেই অনুভব হাতে থাকা কাগজে চোখ বুলালো। নাম্বার তো চেঞ্জ করেনি, আগেরটাই রয়েছে। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে কন্ঠে গম্ভীরভাব নিয়ে কল দিলো। রঙ্গন প্রথমবারেই রিসিভ করে বলল,

” এতো বড় সৌভাগ্য আমার নামি-দামি মানুষ আমায় কল করেছে? তা কি মনে করে এমপি অনুভব মির্জা আমাকে সরণ করলো? ”

অনুভব থমথমে গলায় জবাব দিলো,
“বলার জন্যই তো কল দিয়েছি।

” তাড়াতাড়ি বল আমার হাতে বেশি সময় নেই।
“কি এমন করিস যে তোর হাতে সময় নেই?
” অনেক কাজ।
“একটা বল শুনি।

” তোর বোনের সাথে লাইন মা’রা।

অনুভব রাগী গলায় বলল,
” তুই আমার বোনের পিছু করা ছেড়ে দে।

“তোর কথায় কেন ছাড়ব?
” আমি বড় অবিভাবক। বড় ভাই ভুলে যাস না।
“আমার পেছনে লোক লাগিয়ে ছিলি তাইনা?

” যা জিজ্ঞেস করছি তার উত্তর দে।

” তোর কথায় আমি পিছু ছাড়ব না তা ভালোই করেই জানিস। তবে তোর বোন বললে ভেবে দেখতে পারি।

রঙ্গন একরোখা জবাব শুনে অনুভব বিরক্ত হলো। তবে কিছু সময় ভেবে বলল,

” তুই যদি আগের রঙ্গন হতি আমি নিজে আমার বোনকে ধুমধাম করে তুলে দিতাম। কিন্তু এই বখাটে রঙ্গনের হাতে আমি জীবনেও তুলে দিবো না।”

রঙ্গন হেসে উঠে বলল,
” আমি একবারো তোকে বলেছি তুলে দিতে?

“তুই কি চাইছিস?
” তোর বোনকে!

“দেখ আমাদের মধ্যকার ঝামেলায় আমার বোনকে টানিস না। ও নরম মনের মানুষ তোর ধোকা সে সহ্য করতে পারবে না।

রঙ্গন এবার সিরিয়াস হলো। শীতল কণ্ঠে বলল,
” তোকে কে বলেছে আমি তাকে ধোকা দিবো?

“তুই আমার বোনকে ভালোবাসিস?
” না।
“তাহলে কেনো তাকে বিয়ে করতে চাস? জবাব দে।
” আমার ইচ্ছে।

অনুভব প্রচন্ড রেগে গেলো। তবে একটা শব্দে তার অন্য কিছু মাথায় আসলো। হঠাৎ হেসে উঠলো। হাসতে হাসতেই বলল,

” তুই আমার বোনের পিছু ছাড়লে তোকে একটা সত্যি কথা বলব।”

রঙ্গন স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
“কোন সত্য?

” যে সত্য কেউ জানে না।

” হেয়ালি আমি একদম পছন্দ করিনা অনুভব। যা বলবি সোজাসুজি বল।”

“এতো বছরে কি তুই তোর বোনের খোঁজ পেয়েছিস?

রঙ্গন চমকে উঠলো। তবুও নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করে বলল,
” না। হঠাৎ এই কথা।

“তুই যদি অহির সাথে যোগাযোগ বন্ধ করিস। তবে আমি তার সন্ধান তোকে দিবো।

রঙ্গন নড়েচড়ে বসলো, উত্তেজিত কন্ঠে বলল,
” কোথায় আছে সে?

“আগে বল আমার বোনের সাথে যোগাযোগ করবি না?
” ঠিক আছে যোগাযোগ করবো না।

অনুভব হাসলো। এটা সে করতে চায়নি। তবুও বোনের ভালোর জন্য করতে হলো। এই কথা যে রঙ্গন পাবলিক করবে না এটা সে জানে। র’ক্তের একটা টান আছে না?

“কি হলো ম’রে ট’রে গেলি! বলছিস না কেনো?

” দাঁড়া দাঁড়া এতো উত্তেজিত হচ্ছিস কেন!

“মেজাজ গরম না করে বল।”

অনুভব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“ইচ্ছে।

” তোর বোনের সই?

“হুম সে তোর নিজের বোন।

রঙ্গন হতভম্ব হয়ে গেলো। স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুটা সময় লাগলো। গলা কাঁপছে তার।

” তুই সত্য বলছিস?
“মিথ্যা কবে বলেছি।

রঙ্গন বেশ কয়েক বার নামটা উচ্চারণ করতেই তার মুখে হাসি ফুটলো। কেউ একজন আপন বলতে আছে তার এটাই বিড়বিড় করলো। অনুভব তার মনোভাব বুঝে নিজেও হাসলো। এই কথাটা মাষ্টারমশাই তাকে বলেছিলেন। গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
” যাইহোক আজকে থেকে তুই আর আমার বোনের সাথে যোগাযোগ করবি না। মাথায় থাকবে??

রঙ্গন এতো এবার স্বাভাবিক হয়ে মুচকি হেসে বলল,
“করবো না। তবে সে নিজে থেকে যোগাযোগ করলে আমি তাকে বাঁধা দিতে পারবো না।

অনুভব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” এটা কিন্তু কথা ছিল না।

রঙ্গন হেসে বলল,
“একটু আগেই না নিজেই বললি আগের রঙ্গন আর এই রঙ্গন এক নয়। তাহলে আবার আগের মতো কেনো আশা করছিস? শোন আগের রঙ্গন কথা দিয়ে কথা রাখত আর এখনকার রঙ্গন কথা দিয়ে কথা রাখে না। বুঝেছিস?

” শালা তোকে আমি দেখে নিবো।

“উফস নেতা সাহেব আমি শালার থেকে দুলাভাইয়ে বেশি কমফোর্ট ফিল করি।”

“আমার দুলাভাই হওয়ার আশা তুই ছেড়ে দে। তবে তোর দুলাভাই হতে আমার কিন্তু বেশি সময় লাগবে না।

রঙ্গন রাগলো না বরং হাসলো।
” আমার বোনকে কি তোদের মতো পেয়েছিস? ভুলে যাবিনা সে রঙ্গন পাঠানের বোন। এতো সহজে তার মন জয় করতে তুই পারবি না। তোকে তেলে ভেজে ছেড়ে দিবে।

“আর যদি তো বোন নিজেই আবার হতে চায়?

রঙ্গন আবারো হাসলো। একটা সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল,
” ছেলে হিসেবে তুই খারাপ নয় চরিত্র ঠিক আছে। তবে তোর রাজনীতির জন্য সে মানবে না। ”

অনুভব রাগে গজগজ করতে করতে ফোন কেটে দিলো। লাভের লাভ কিছুই হলো না। দুই ভাই বোনের রাজনীতি নিয়ে এতো কি সমস্যা তার মাথায় ঢুকে না। দুজনকে এক সাথে সাথে দুটো করে চারটে থা’প্পড় দিতে পারলে বড্ড শান্তি লাগত।

!!

রঙ্গন বেশ কিছুটা সময় নিয়ে রয়েসয়ে অহিকে কল দিলো। তিনবার রিং হওয়ার পর ধরলো।

“হ্যালো?
” এতো সময় লাগে?
“পড়ছিলাম খেয়াল করি নাই।

রঙ্গন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” ওসব পর পুরুষের লেখা বই না পড়ে, আমার মন পড়ার চেষ্টা কর ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। ”

অহি থতমত খেয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,
“মানে??

রঙ্গন এবার অহিকে জ্বালাতন করতে বলল,
” বড্ড টেনশনে আছি রে।

“কেনো কি হয়েছে।
” না থাক।
“না বলুন আমি শুনতে চাই।

” আমি প্রতিদিন একটা স্বপ্ন দেখি।
“কি স্বপ্ন? ভোরের নাকি?
“হুম। কিছু অসহায় জনতা আমার কাছে সাহায্য চাচ্ছে।

“কি সাহায্য? ভোরের স্বপ্ন তো সত্যি হয়।

” সেই অসহায় জনতা কারা জানিস?
“না আপনি বললে তো জানব।

” আমার বাচ্চা কাচ্চা।

অহি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল,
“কি যা তা বলছেন?

রঙ্গন আফসোসের স্বরে বলল,
” হুম রে সত্যি। আমার বাচ্চারা তার মাকে দেখতে চাচ্ছে।

অহি কিছুটা বিব্রত হলো। লজ্জাও পেলো। কি বলবে না বুঝে বলল,
” রাখছি অনেক পড়া বাকি।

“না। ইচ্ছে কে দে।
” কেনো?
“আগে দে।

ইচ্ছে কানে হাত দিয়ে পড়ছিল। অহি প্রথমে কয়েকটা ডাক দিলো শুনলো না। অবশেষে উঠে গিয়ে তাকে একটা গু’তা মেরে বলল,
” তোর সাথে কথা বলবে।
“কি কথা?
” জানি না।

“ওহ। সাউন্ড বাড়া আমি শুনছি।
” আচ্ছা।


“ইচ্ছে!!

” হুম ভাইয়া কেমন আছেন?
রঙ্গন ফোনের দিকে চেয়ে রইলো। আজকে বড্ড মায়া কাজ করছে মেয়েটার উপর। তবুও বুঝতে দিলো না।

“এইতো আছি। তুই?
” আলহামদুলিল্লাহ আমরাও ভালো আছি। কিছু বলবেন?

“হুম অনুভব মির্জা তোকে বিরক্ত করে?

ইচ্ছে বড় বড় করে অহির দিকে তাকিয়ে বলল,
” না তো। বরং আমিই তাকে বিরক্ত করি।
” আচ্ছা। ও যদি তোকে কিছু বলে আমায় বলবি।
” কিন্তু কেনো?

দাঁড়া কথা শেষ করতে দে,বলে আবারো বলল,

“শোন তোকে ওই লোক যদি ভয় টয় দেখায় বা কিছু বলে তাহলে সোজা আমাকে বলবি। আমরা দুজনে মিলে ওটাকে মে’রে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলে দিয়ে আসব।”

” দারুণ আইডিয়া তো। ওকে ডান!!

অহি হতভম্ব হয়ে চশমার উপর দিয়ে তাকালো। অতঃপর বিড়বিড় করে বলল,

” কতো বড় বেয়াদব দুটো তার সামনে তার ভাইকে মে’রে বস্তায় ভরার বুদ্ধি করছে ভাবা যায়?”

#চলবে….
|| কালকে রাতে খারাপ লাগছিল তাই লিখতে পারিনাই। তাই আজকে সকালেই লিখে দিলাম। ||

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here