মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon ||পর্ব_৬||

0
601

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_৬||

অনুভব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বাসায় ঢুকছিল হঠাৎ পেছন থেকে তাকে কেউ জড়িয়ে ধরলো। কিছুটা চমকে পেছনে তাকালো।

“আবির!!
” কেমন আছো ভাইয়া?
“আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। তুই কি একাই এসেছিস নাকি কাকিমনিরাও এসেছে।”
“তুমি তো আমাদের ভুলেই গেছো। তাই আবার মনে করিয়ে দিতে সবাই মিলেই এসেছি।”

অনুভব হেসে আবির মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বলল,
“ভালো করেছিস। চল সবার সাথে দেখা করে আসি।
” আচ্ছা চলো।

অনুভবের বাবা আফসান মির্জারা দুই ভাই। তিনিই বড়। তার দুই সন্তান অনুভব আর অহি। বর্তমানে তিনি এখন বিদেশে আছেন। তার ছোট ভাই আলিফ মির্জা পরিবার সহ শহরে থাকেন। তারও দুই সন্তান তবে আবির আর আরিয়া যমজ। দুজনেই এখন ভার্সিটিতে পড়ছে।

অনুভব সবাইকে সালাম দিয়ে বলল,
“কেমন আছো সবাই??

আকলিমা বেগম টেবিলে খাবার রাখছিলেন। অনুভবের কন্ঠ শুনে এগিয়ে আসলেন।
” আমার অনু বেটা কেমন আছিস?
“আমার কথা ছাড়া তোমাদের কথা বলো। আর এই নামটা কি বাদ দেওয়া যায় না? না মানে এখন তো আর ছোট নেই।

সবাই মিটিমিটি হাসছে। আকলিমা বেগম সবার নাম ছোট করে ডাকতে পছন্দ করেন। অনুভবের কথা শুনে বললেন,
” কেনো অনু বেটা নামটা তো সুন্দর। তবে তুই যদি মানা করিস তাহলে আর বলবো না।

অনুভব ভালো করে তাকিয়ে দেখলো। তার কাকিমনির চোখ ছলছল করছে। এখন যদি মানা করে তাহলে শিওর কান্না করে দিবে। প্রচন্ড ইমোশনাল আর নরম মনের সাদাসিধা মানুষ তিনি। কোনো মতো হাসার চেষ্টা করে বলল,

“না না কাকিমনি নামটা অনেক সুন্দর। আমার তো মন চায় সারাদিন এই নামটা শুনতেই থাকি।

উপস্থিত সকালেই হেসে ফেললো। অনুভব শুধু চেয়ে রইলো। আবির হাসতে হাসতে সোফায় গড়াগড়ি খাচ্ছিল তা দেখে আকলিমা বেগম বললেন,
” কি রে আবি বেটা এভাবে হাসছিস কেন? নাস্তা করবি আয়।

ব্যাস আবিরের হাসি বন্ধ। আরিয়াও মাকে নকল করে বলল,
“আবি বেটা অনু বেটা তাড়াতাড়ি খেতে এসো।

বলেই দৌড়। আবির রেগে ধরতে গিয়ে পারলো না। হতাশ হয়ে বলল,
” তোমরা বসে পড়ে আমি অহি ডেকে আনছি। ভাইয়া তুমি ফ্রেশ হবে না?

“হুম হবো। চল।

অহি চুপচাপ বসে আছে। একটু আগে দৌড় দেওয়াতে আবারো পায়ে ব্যাথা পেয়েছে। আরিয়া তাকে ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে গেছে। তবে এখন বাহিরে কি করে যাবে তাই ভাবছে। যদিও সোয়েটার পড়ার জন্য সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু হাঁটা দেখে সবাই শিওর বুঝে ফেলবে পড়ে গিয়েছিল। আর কাকিমনি জানলে তো পুরো বাড়ি মাথায় তুলে ফেলবে।

” কি রে কানি বুড়ি আসব??

অহি ভাবনা থেকে বেরিয়ে দরজার দিকে তাকালো। আবির কে দেখে এক গাল হাসলো।

“না বললেও তুই আসবি জানি হুহ।”
আবির ভেতরে এসে অহির মাথায় একটা চাঁটি মেরে বলল,
” বড় ভাইকে তুই বলিস লজ্জা করে না। সম্মান দিয়ে কথা বল।

অহি মুখ ভেঙিয়ে বলল,
” মাননীয় ভাই আমার মন খারাপ।

আবির সিরিয়াস হয়ে বসে বলল,
“কেনো রে বনু তোকে কেউ কিছু বলেছে? আমাকে
একবার বল শুধু।

” তোমরা কেনো এসেছো?
“পরশু অনুভব ভাইয়াকে দেখতে আসবে তার জন্য।
” এই জন্যই আমার মন খারাপ।
“মানে?

আবির ভ্র কুঁচকে তাকিয়ে কিছু মনে করার চেষ্টা করে বলল,
” বুঝেছি। তোর ওই সই কি যেন নাম ইচ্ছি না পিচ্চি। ওর সাথে ভাইয়াকে বিয়ে দিতে চাস তুই তাইনা?

অহি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। আবির বলল,
“কিন্তু মেয়েটা তো ভাইয়ার থেকে অনেকটাই ছোট রে।

” তাতে কি কাকিমনি কাকামনির থেকে ১৩ বছরের ছোট।”
“হুম তা ঠিক কিন্তু অনুভব ভাই কি রাজি হবে? আমার মনে হয়না তার থেকে বরং এক কাজ কর। আমার সাথে বিয়ে দিয়ে দে।

” তোমার না প্রেমিকা আছে?
“তাতে কি আমাদের ধর্মের চার বিয়ে করা জায়েজ আছে।

অহি রেগে তাকিয়ে বলল,
” না রাগিয়ে বিয়ে ভাঙার ভালো বুদ্ধি থাকলে দে।
“অনুভব ভাই কি জানে এটা?
” মনে হয় না।
“পাত্রীও আসবে?
” হুম।
“দাঁড়া ভাবতে দে।
” তাড়াতাড়ি ভাবো।

আবির কিছু সময় ভেবে। শয়তানি একটা হাসি দিয়ে বলল বনু বুদ্ধি পেয়েছি। অত:পর দুজন মিলে কিছু একটা প্ল্যান করে আবির উঠে দাঁড়াল। অহি তাকে বলল আরিয়াকে দিয়ে তার রুমে খাবার পাঠিয়ে দিতে।

!!
ইচ্ছের চিঠি পড়ে রাগে শরীর জ্বলতে শুরু করলো। মনে মনে শতশত গালাগালি করলো। মনে মনে ঠিক করলো এটা অহিকে দেখাবে। সে জানুক তার ভাইয়ের কার্য্যকলাপ।
পরের দিন ব্যাগে করে চিঠিটা নিয়ে কোচিং এ আসলো। অহির সাথে দেখা হতেই এক সাইডে নিয়ে গিয়ে দাঁড় করিয়ে বলল,
“জানোস তোর ভাই আমাকে চিঠি দিয়েছে?

অহি বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
” মজা করছিস?

“না মজা কেনো করবো? সাথে করে নিয়ে এসেছি তুই পড়ে দেখ।”

ব্যাগ থেকে চিঠি বের করে অহির হাতে ধরিয়ে দিলো। কাগজটা ভালো ভাবে নেড়েচেড়ে খুললো। কিছু সময় তাকিয়ে থেকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলল,
“ইচ্ছে এটা তো সাদা কাগজ।

ইচ্ছে বড় বড় করে তাকিয়ে হাতে নিলো। সত্যি এখানে কিছু লেখা নেই। একদম সাদা কাগজ।

” লেখা কোথায় গেলো?
“আমি কি করে জানবো?
” তুই কি আমার কথা বিশ্বাস করছিস না?

অহি চশমটা আরেকটু টেনে ভালো করে পড়ল। সব কিছু তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। মাথা নাড়িয়ে একবার হ্যাঁ বুঝালো আরেকবার না বুঝালো। ইচ্ছে রেগে গেলো।

“তোর বিশ্বাস করা লাগবে না তুই যা তোর ভাইয়ের কাছে। একদম আমার আশেপাশে আসবি না।

” না না আমি বিশ্বাস করেছি তোকে।

ইচ্ছে হঠাৎ চুপ হয়ে গেলো। কিছু একটা ভেবে সেই কাগজটা ভর্তি করে কিছু একটা লিখলো। লেখা শেষ হতেই উঠে দাঁড়াল। অহির হাত ধরে বলল,
“চল আমার সাথে।
” কোথায়?
“গেলেই দেখতে পাবি।

দুজনেই রাস্তায় গিয়ে রিকশায় উঠে পড়ল। কিন্তু এমন জায়গায় এসে রিকশা থামালো। তা দেখে অহি হতভম্ব হয়ে গেলো।

” কি রে নামবি না?
“তুই এখানে কেনো এসেছিস?
” আগে নাম পরে বলছি।

রিকশাওয়ালা ভাড়া মিটিয়ে দুজনেই একটা গাছের পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। অহিকে এখানে দাঁড়াতে বলে ইচ্ছে অভিযোগ বক্সের দিকে এগিয়ে গেলো। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ আছে নাকি। যখন দেখলো কেউ নেই। হাতটা বাড়িয়ে রাখবে এমন সময় কেউ গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,

“আজকে কি অভিযোগ নিয়ে এসেছো?
ইচ্ছে পেছন ঘুরে তাকালো। অনুভব দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে ইচ্ছে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেও প্রকাশ করলো না। স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করলো। হাতে থাকা কাগজটা তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,
” আপনিই দেখে নিন। আর আমার মতো সাহসী হতে শিখুন।

বলেই ব্যাগ থেকে একটা কলম বের করে দিয়ে আবারো বলল,
“আর আসল কলম দিয়ে লিখতে শিখুন হুহ।

অনুভব কলম আর চিঠি দুটোই নিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

” কি বলতে চচ্ছো পরিষ্কার করে বলো। আমি দিন দিন তোমার সাহস দেখে অবাক না হয়ে পারছি না। এতো সাহস ভালো না মেয়ে।

” আরে রাখুন আপনার জারিজুরি। কাল রাতে আপনার চিঠি পড়েই বুঝে গেছি আপনি কেমন মানুষ হুহ।

কথা শেষ করে অনুভবকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দৌড় দিলো ইচ্ছে। এক দৌড়ে অহির কাছে এসে দাঁড়াল। মেয়েটা এতো সময় গাছের পাশে আরেকটা গাছ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। ইচ্ছে আসতেই দুজনেই দৌড় দিলো।

অনুভব বোঝার চেষ্টা করলো মেয়েটা কি বলে গেলো। তার মাথায় কিছু আসছে না। সে কখন চিঠি দিলো।

“তবে কি তার নাম করে অন্য কেউ চিঠি দিয়েছে?

!!

হাঁপাতে হাঁপাতে দুজনেই এসে একটা চারের ওপর বসলো। ইচ্ছে ভাব নিয়ে বলল,
” দেখেছিস আমার কত সাহস?

অহি হেসে বলল,
“হ্যাঁ এই জন্যই তো তোকে আমি আমার সাহসী ভাইয়ের সাহসী বউ বানাতে চাই।

ইচ্ছে হাত দিয়ে অহির মাথায় চাঁটি মেরে বলল,
” চুপ থাক ফাজিল বেডি।

“কিন্তু ভাইয়া বুঝে গেলো তুই চিঠি দিয়েছিস।
” তোর ভয় লাগছে না?
“না।

বেশ কিছু সময় তর্কাতর্কি করার পরে অহির মাথায় আবিরের দেওয়া প্ল্যানের কথা মাথায় আসলো। একটু রয়েসয়ে বলল,
” সই চল আমরা খেলি।

ইচ্ছে কপাল কুঁচকে বলল,
“বাবা অহি রানী কি ব্যাপার তুই আজকে খেলতে চাচ্ছিস। অন্য সময় না বলিস বড় হয়ে গেছি এখন কি আর খেলার বয়স আছে।

” দেখলি এখানেও তোর সমস্যা।
“না না বল। কি খেলবি?
” ট্রুথ অর ডেয়ার।
“দুজনে মিলে শুধু?
” হুম।
“কিন্তু তোর সম্পর্কে তো আমি সব জানি। তাহলে ট্রুথ নিয়ে কি হবে?
” তাহলে ডেয়ার নিবি।
“ঠিক আছে তোর ব্যাগ থেকে বোতল বের কর।

অহি বোতল ঘুরাইতে প্রথমেই তার দিকে পড়ল। ইচ্ছে হেসে বলল,
“ডেয়ার দিবো?
“হুম।
” একটা গান গেয়ে শুনা।

অহির গানের গলা ভীষণ খারাপ। তবুও উপায় না পেয়ে গাইলো। শেষ হওয়ার আগেই গাছে বসে থাকা কাক গুলো কা কা করে উঠলো। ইচ্ছে হাসতে হাসতে শুয়ে পড়ার অবস্থা। অহি অসহায় মুখ করে তাকালো। গাল ফুলালো। ইচ্ছে হাসি বন্ধ করে বলল,
“স্যরি স্যরি আর আসব না৷ আবার ঘোরা।

এবার বোতল ঘুরাইতেই ইচ্ছের দিকে গেলো। অহি যুদ্ধে জিতে যাওয়ার মতো হাসলো। বলল,
” ডেয়ার?
“হুম।
” তুই আমাকে ওয়াদা কর যা ডেয়ার দিবো তাই করবি?

ইচ্ছে বেশি ঘাটলো না স্বাভাবিক ভাবেই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলো। অহি বলল,
“শোন তোর একটা অভিনয় করতে হবে।
” কিসের অভিনয়?
“আমার ভাইয়ের অর্থাৎ অনুভব মির্জার প্রেমিকার।

ইচ্ছে হকচকিয়ে গেলো। ভড়কানো গলায় বলল,
” কি বলছিস এসব?

“আগে পুরোটা শোন। কালকে ভাইয়াকে দেখতে আসবে। সাথে পাত্রীও আসবে। তুই তাকে গিয়ে বলবি তোর ভাইয়ার সাথে সম্পর্ক আছে।

” আমি বললেই সে কেনো বিশ্বাস করবে?
“করবে করবে।

ইচ্ছে জানালো সে এই কাজ করতে পারবে না। তখন অহি ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বলল,
” তুই তো বলিস রাজনীতিবিদরা ভালো হয়না। তাদের বিয়ে করা মানে নিজের পায়ে কুড়াল মা’রা। তাহলে তুই কি একটা মেয়েকে সেই কু’ড়াল থেকে বাঁচাবি না? শুনেছি মেয়েটা সহজ সরল। আমি তো আর আমার নিজের ভাইয়ের বদনাম করতে পারিনা। তাই তোকে বলছি।”

ইচ্ছে কথাগুলো মনোযোগ সহকারে শুনলো। অহির দিকে ভালো করে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো। তবে কিছু একটা ভেবে বলল,
“ঠিক আছে। কিন্তু আমি তাকে কোথায় পাবো?

” মা সকালে কাকিমনি কে বলছিল। সেই মেয়ের সাথে নাকি ভাইয়াকে আমাদের এলাকা ঘুরতে পাঠাবে। যখন বের হবে তখন বলবি। আমি তোকে টাইম মতো খবর দিয়ে দিবো। আর সাথে আমি আর আমার কাজিনরাও থাকবে। ”

” তোর ভাই আমাকে কিছু বলবে না। যদি রেগে যায়? ”

“আরে না ভাইয়া ঠান্ডা মাথার মানুষ সহজে রাগে না। আর মেয়েদের সাথে খারাপ ব্যবহার তো একদমই করে না। সব থেকে বড় কথা তুই না সাহসী মেয়ে?

এই প্রথম ইচ্ছে নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলো। তার মন সায় দিচ্ছে না। অহি তাকে সব কিছু বুঝিয়ে বলল। নিজের মাথায় নিজেই হাত দিয়ে বলল,

” ইচ্ছে রে তুই তো গেলি।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here