মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon ||পর্ব_৭||

0
312

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_৭||

কথায় বলে যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়াপড়শির ঘুম নেই।
এই কথাটা যে হাড়ে হাড়ে সত্য তা আজ টের পেলো অনুভব। তাকে দেখতে আসবে অথচ সে জানে না। তার মতামতের কোনো দাম নেই? এই মূহুর্তে কিছু বলারও উপায় নেই। কারণ তার জন্য তার পরিবারের অসম্মান হোক সে তা কোনো ভাবেই চায় না।

“আসব রে অনুভব?
দরজার কাছে এসে ডাক দিয়ে বললেন তনিমা বেগম। অনুভব গোমড়া মুখ করেই উত্তর দিলো এসো।

” এই নীল পাঞ্জাবিটা পড়ে জলদি নিচে চলে আয়। আমার হাতে বহুত কাজ দেরি করিস না।
বলেই বড় বড় ধাপ ফেলে বেরিয়ে গেলেন।

অনুভব শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলো। কিছু বলল না। নিজের রাগটা সে ছোটো থেকেই কন্ট্রোল করতে পারে। সবাই তাকে ঠান্ডার মাথার মানুষ বলেই চিনে। হুটহাট কাউকে কিছু বলার স্বভাব তার নেই। অনুভবের মতে মারের আঘাত ভুলা যায় কিন্তু কথার আঘাত জীবনেও ভোলা যায় না। মানুষ যতই বলুক ভুলে গেছি ভুলে গেছি। আসলে কি তাই??

পায়েল খন্দকার। বাবা মার একমাত্র আদরের মেয়ে। তার বাবা পলাশ খন্দকারও পেশায় একজন এমপি। অনুভবকে তিনি বেশ কয়েক মাস যাবত ফলো করেছেন। সব খোঁজ খবর নিয়ে তিনিই প্রথম প্রস্তাব দিয়েছেন। তনিমা বেগম মেয়ের ছবি দেখেই পছন্দ করে ফেলেছেন। তাই ছেলেকে না জানিয়েই তাদের বাড়িতে আসার ইনভাইট করেছেন।

সাধারণত অনুভব সাদা পাঞ্জাবি পড়তেই বেশি পছন্দ করে। তবে আজকে মায়ের কথায় নীল পাঞ্জাবি পড়ল। খারাপ লাগছে না বেশ সুন্দরই লাগছে। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চুল ঠিক করে হাতে একটা কালো রঙের ঘড়ি পড়ে নিলো। আরেকবার আয়নায় নিজেকে দেখে বেরিয়ে পড়ল। ড্রয়িং রুমে এসে সবার প্রথম চোখ গেলো নীল শাড়ি পরিহিত এক রমণীর দিকে। তাকে দেখেই মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সালাম দিলো। অনুভব ভদ্রতা বজায় রেখে হেসে উত্তর নিয়ে তার সামনের সোফায় গিয়ে বসে পড়ল। তখনই আকলিমা বেগম সেখানে এসে উপস্থিত হলো। স্বভাব সুলভ হেসে বললেন,

“অনু বেটা পরিচয় করিয়ে দেই ও পায়েল খন্দকার। তোর জন্য বড় ভাবি তাকে পছন্দ করেছে। ওর বাবার মিটিং থাকায় আপাতত ওকে এখানে নামিয়ে দিয়ে গেছে। ঘন্টা তিনেক পরে আসবে। আমি আর তোর মা রান্না বান্না করছি মেয়েটাকে সময় দিতে পারছি না। তুই ওকে নিয়ে একটু আশেপাশেটা ঘুরে দেখা।”

একদমে এতো গুলো কথা বললে থামলেন আকলিমা বেগম। অনুভব উঠে দাঁড়াল মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“উঠে আসুন।

পায়েল হাসি মুখে উঠে দাঁড়াল। অনুভবের পিছু পিছু বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ল। বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে যাওয়ার পরে পায়েল নিজে থেকেই কথা বলল,
” আমি পায়েল খন্দকার। এবার অনার্স শেষ করে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি।”

“আমি অনুভব মির্জা। পড়াশোনা শেষ বর্তমানে জনসেবায় নিয়োজিত রয়েছি। ”

” আপনার আমাকে পছন্দ হয়েছে?”

অনুভব কিছুটা বিব্রত হলো। এভাবে প্রশ্ন করায় তবে স্বাভাবিক ভাবেই বলল,
“মানুষ হিসেবে পছন্দ হয়েছে তবে বউ হিসেবে না।”
“কেনো?”

” আপাতত উত্তরটা জানা নেই। ”
“বেশ। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন না আমার আপনাকে পছন্দ হয়েছে কিনা?
” পছন্দ হয়েছে জন্যই এসেছেন নইলে আসতেন না।

পায়েল হাসলো। তার কাছে মনে হচ্ছে ঝটপট উত্তর দেওয়ার গেম খেলছে। ব্যাপারটা বেশ লাগছে। হাঁটতে হাঁটতে আবারো বলল,

” রাজনীতি আপনার কাছে কি?
” এক অন্য রকম অনুভূতি।

পায়েল আশেপাশে চোখ বুলিয়ে বলল,
“আপনাদের এলাকাটা কিন্তু বেশ সুন্দর।”
“হুম জানি।”

“তা নেতা সাহেব আপনার কোনো প্রেমিকা নেই?”
অনুভব কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে কেউ বলল,

“এমন সুদর্শন নেতার প্রেমিকা থাকবে না তাই কখনো হয়?”

এমন কথা শুনে দুজনেই পেছন ঘুরে তাকালো। অনুভব আজকে অবাক না হয়ে পারল না। আজকে এই মেয়েটা কি করতে এসেছে বুঝতে পারলো না। তবে কিছু না চুপ করে রইলো। কি বলে বলতে চায় জানার জন্য। তবে পায়েল চুপ থাকলো। নিজে থেকেই কথা বলল,
” বাহ তুমি দেখতে ভারি মিষ্টি। তা নাম কি তোমার?

ইচ্ছে কিছুটা লজ্জা পাওয়া ভাব করে বলল,
“ইচ্ছে।”

“নামটাও তো বেশ সুন্দর। আমি পায়েল। তা তুমি একটু আগে কি যেনো বলছিলে। উনার প্রেমিকা আছে।”

ইচ্ছে আঁড় চোখে অনুভবের দিকে তাকালো। তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখ সরিয়ে নিলো। রয়েসয়ে বলল,
” অবশ্যই আছে।

পায়েল একটু এগিয়ে গেলো ইচ্ছের দিকে। আগ্রহ নিয়ে বলল,
“তুমি কি তাকে চিনো? আমাকে দেখাতে পারবে? ”
” এই যে আপু আপনার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে। ”
“মানে??

ইচ্ছে দাঁত কেলিয়ে বলল,
” মুরগী খায় ধান, আমি অনুভব মির্জার জান।

পায়েল বড় বড় করে তাকালো। অনুভবের দিকে একবার তাকালো। ইচ্ছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার পরখ করে নিয়ে অবাক হয়ে বলল,
“কিন্তু তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে তোমার সাথে উনার প্রেম?

ইচ্ছে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
“আপু ভালোবাসার কি বয়স হয়? ভালোবাসা তো আর বুড়ো, ছুড়ো বুঝে না।”

পায়েল হাসার চেষ্টা করে বলল,
“তা হলে তোমাকে রেখে অন্য জায়গায় মেয়ে দেখছে কেনো?

” আর বলবেন আপু সেই দুঃখের কথা। আমাদের বয়সের অনেক পার্থক্য। উনার বয়স বেশি আমার কম। উনার পরিবার আমাদের সমাজ বোধহয় মানবে না। সবাই বলবে বুড়ো নেতার যুবতী বউ। যদিও উনাকে দেখে বোঝা যায়না উনার বয়স বেশি। তবুও মানুষের মুখ তো আর বন্ধ করা যায় না। যদিও আমি মানুষের কথা গায়ে মাখি না লোশন মাখি।
উনি লজ্জায় এখনো বাড়িতে কিছু জানাতে পারেনি। তাই আপনাকে বলার জন্য আজকে আমায় ডেকেছিল। ”

অনুভব হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি সব আবোল তাবোল বলছে এই মেয়ে? মনে চাচ্ছে ঠাটিয়ে একটা থা’প্পড় বসাতে। মেয়েদের গায়ে হাত দেওয়ার স্বভাব তার নেই। কিন্তু তার নামে মিথ্যা অপবাদ কেনো দিচ্ছে। রাগে হাত মুঠো করে এদিকে ওদিক তাকালো। হঠাৎ চোখ গেলো দূরে বট গাছের পেছন দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি মা’রা অহি আবির আর আরিয়ার দিকে। বিষয়টা এখন তার কাছে ক্লিয়ার হলো। এই শয়তান গুলো আরেক শয়তান ভাড়া করে নিয়ে এসেছে তার বিয়ে ভাঙতে। তার ভাবনার মাঝেই পায়েল সন্দেহের চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“নেতা সাহেব এই পিচ্চিটা যা বলছে তা কি সত্যি?”

অহিরা উঁকি ঝুঁকি মারছে। একজনকে সরিয়ে আরেকজন গিয়ে দাড়াচ্ছে। এমন করতে করতে গিয়ে ঢক করে আবিরের মাথা গিয়ে গাছের সাথে লাগলো। আরিয়া হা হা করে জোরে হেসে উঠলো। সাথে সাথে অহি তার মুখ চেপে ধরলো।

ইচ্ছেকে অবাক করে দিয়ে অনুভব চমৎকার হাসলো। মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হুম ও যা বলছে সব সত্য।

ইচ্ছে যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে তো ভেবেছিল তাকে এসে তুলে আছাড় মারবে বোধহয় আজকে এই লোক কিন্তু না সেও তার সাথে তাল মেলাচ্ছে। মতলবটা কি।

পায়েল হেসে বলল,
“শুনুন এতো ভাবার কি আছে। ভালো যেহেতু বাসেন ওকেই বিয়ে করে নিন। আর আমি এখানে এসেছি শুধু বাবার জন্য। রাজনীতি করা লোক আমার খুব একটা পছন্দ নয়। আর সব থেকে বড় কথা আমার বয়ফ্রেন্ড আছে। শুধু বাবার কথা রাখতেই এখানে আসা। তবে বিয়েটা আমি এমনিতেও করতাম না।”

ইচ্ছে হাসার চেষ্টা করলো। তার মানে সে না আসলেও এই বেডার বিয়ে হতো না। শুধু শুধু অহি ফাজিলটা পাকনামি করলো। আজকে গিয়ে ওকে গুণে গুণ তেইশটা চাটি মারবে।

“ইচ্ছে তোমরা কথা বলো আমার একটা ফোন এসেছে আমি একটু কথা বলে আসছি।”

পায়েল চলে যেতেই ইচ্ছে পালাতে চাইলো কিন্তু পারলো না অনুভব এসে তার সামনে দাঁড়াল। হকচকিয়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল,
“কিছু বলবেন?”

“তুমি কালকের চিঠিতে চার লাইনের কি লিখেছিলে এখন মুখে বলো?

“আমি কি লিখবো? কই কিছু লিখিনি তো।”
“তুমি নাকি খুব সাহসী মেয়ে ভয় পাচ্ছো কেনো?

ইচ্ছে মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল,
” ভয় কই পাচ্ছি! আসলে কাঁনা সামনে কাঁনা। বোবার সামনে বোবা বলতে নেই। তাই আর কি বলতে চাচ্ছিলাম না।

বেশ তোমার বলতে হবে না আমি বলছি,

“এই যে শান্তশিষ্ট প্যাঁচ বিশিষ্ট গোমড়া মুখো ভন্ড নেতামশাই।
প্রথমেই বলতে চাই এসব কি লিখেছেন! এতো বাজে হাতের লেখা আপনার কি বলবো। আপনার থেকে তো পাশের বাড়ির ক্লাস টু পাস মন্টু মিয়ার হাতের লেখা বেশি সুন্দর। সে যাইহোক এতো সময় নেই আমার। আসল কথায় আসি।
আপনার কি কোনো লজ্জা সরম নেই হাঁটুর বয়সী মেয়েকে লাভ লেটার দেন। দেখে তো মনে হয়না ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেন নাহ। আপনাকে তো গোবর খাইয়ে উগান্ডায় পাঠিয়ে দেওয়া উচিত। আবার ভ্যানিস হওয়া কলম ব্যবহার করেছেন। এই সাহস আপনার? শুনুন ভালো হয়ে যান। আমি ভালো মেয়ে জন্য গালাগালি করতে গিয়েও করলাম না।

ইতি,
সুযোগ্য দেশের সুযোগ্য নাগরিকা।

ইচ্ছে হাসার চেষ্টা করলো। কি বলবে বুঝতে পারলো না। দাঁত দিয়ে নখ কা’মড়াতে লাগলো। তা দেখে অনুভব ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

” সে কথা রাখো। তা সুযোগ্য দেশের সুযোগ্য নাগরিকা তুমি আমার কোন কালের প্রেমিকা?”

ইচ্ছে কিছু বলার আগেই পায়েল চলে আসলো। তাই আর কিছু বলতে পারলো না। ইচ্ছে যেন হাফ ছেড়ে বাঁচলো। পায়েল ইচ্ছের হাত ধরে বলল,

“তুমি ভীষণ মিষ্টি দেখতে। নেতা সাহেবের সাথে বেশ মানাবে। খুব তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিও। নইলে এবার কিন্তু সত্যি সত্যি বুড়ো হয়ে যাবে।

“অনুভব বিরক্ত হলো। বুড়ো শব্দ এতোবার বলার কি আছে। সে কি তার বয়স জানে না। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” এবার বোধহয় আমাদের যাওয়া উচিত।”

পায়েল সম্মতি জানিয়ে বলল,
“তা আপনাদের বিয়েতে আমাদের বলবেন তো?

অনুভব মুচকি হেসে ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে বলল,
“অবশ্যই।

দুজনেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। অনুভব ইচ্ছের পাশ ঘেঁষে যেতে যেতে বলল,
” বড় ভুল করে ফেললে মেয়ে।

#চলবে….
|| প্রচন্ড মাথা ব্যাথা নিয়ে গল্প লিখেছি। আপনাদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য আশা করছি। কেমন হয়েছে জানাবেন!🥹||

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here