মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon {লেখনীতে} ||পর্ব_৮||

0
537

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_৮||

আজকে অহিদের বিদায় অনুষ্ঠান। খারাপ লাগছে খুবই। কিন্তু প্রকৃতির নিয়ম শুরু থাকলে শেষ হবেই। ইচ্ছে মুখ গোমড়া করে বসে আছে। কলেজে আসার পরে থেকেই এমন চুপচাপ রয়েছে। অহি কিছু জিজ্ঞেস করলে শুধু হু হা দিয়ে উত্তর দিচ্ছে। অহির হঠাৎ মন খারাপ হয়ে গেলো। তাই নিজেও চুপ হয়ে গেলো। তা দেখে ইচ্ছে মুখ খুললো।

“তোর আবার কি হলো?
” তোর মন খারাপ তাই আমারো মন খারাপ।”

ইচ্ছে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
“যদি আমাদের আলাদা ভার্সিটিতে আসে তখন আমরা একবারে আলাদা হয়ে যাবো তাইনা?”

অহি মাথা নাড়াল। মিনিট দুইয়েকের মধ্যে কান্না করে ফেললো। তা দেখে ইচ্ছে তাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“কাঁদিস না। দেখিস আমাদের এক সাথেই হবে। আমরা কোনো দিন আলাদা হবো না। এবার থাম নইলে আমিও কিন্তু কেঁদে করে ফেলবো।

অহি চোখ মুছতে মুছতে বলল,
” না না এই তো থামছি।

“ভেরি গুড।
” তুই আমাকে অনেক বিশ্বাস করিস তাইনা?

ইচ্ছে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“হুম। কিন্তু কেনো বলত?
” তোকে না আমি একটা মিথ্যা বলেছি।
“কি?

” সেদিন ভাইয়া না আমি তোকে চিঠি দিয়েছিলাম তার নাম দিয়ে। ”

ইচ্ছে হতভম্ব হয়ে গেলো। কত কথা শুনিয়ে দিলো সেই লোককে অথচ সে দেইনি। রেগে বলল,
“কিন্তু কেনো! আর ওটা তো তোর হাতের লেখা নয়।

” আমার লেখা নয় আবির ভাইয়ের লেখা। আমি লিখলে তুই বুঝে ফেলতি সেই লিখেছে। কিন্তু তার হাতের লেখা যে কি পরিমাণ খারাপ কি বলবো! আরিয়া আপুকে দিয়ে লিখে নেওয়া রিস্ক। সে প্রচন্ড পেট পঁচা। যদি কাউকে বল দেয়। সেই ভয়ে আর তাকে বলিনি। আর ভাই নিজেই তোদের পাশের বাড়ির মলির হাতে দিয়ে গেছে। আমি ভেবেছিলাম ভাইয়ার লেখা এসব রোমান্টিক কথা শুনে তুই প্রেমে পরে যাবি। কিন্তু না তুই তো উল্টে চেতে গেলি। স্যরি রে সই। ”

ইচ্ছে অহির মুখ ফুলিয়ে দেখে আর রাগ করে থাকতে পারলো না। কৌতুহল নিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,
” তাহলে লেখা উধাও হয়ে গেলো কেনো?

“তুই যদি অন্য কাউকে দেখাস আমার ভাইয়ের সম্মান যাবে না! এই জন্য সেই কলম ব্যবহার করা।”

ইচ্ছে উঠে দাঁড়াল দুই হাত কোমরে রেখে বলল,
“ওরে চিটার ওরে বাটপার এই ছিল তোমার মনে??

” আর হবে না সত্যি বলছি। তোকে একটা ছন্দ শুনাই?
ইচ্ছে উত্তর করলো না। অহি বোকা বোকা একটা হাসি দিয়ে ইচ্ছেকে নকল করে বলল,
” মুরগী খায় খই,ইচ্ছে আমার প্রাণ প্রিয় সই।

দুজনেই হাসতে লাগলো। তখনই হলরুম থেকে ডাক পড়ল। দুজনেই উঠে দাঁড়াল। এখন স্যারেরা বক্তব্য দিবেন। বিদায় দিতে দিতে প্রায় বিকাল হয়ে গেলো। ইচ্ছে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ রাস্তার মাঝে অনুভবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গিয়ে বেশ লম্বা করে সালাম দিলো।

অনুভব এক লোকের সাথে কথা বলছিল। কোনো মেয়ের ভয়েস শুনে পেছনে তাকালো। ইচ্ছেকে দেখে ভ্র কুঁচকালো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লোককে বিদায় জানিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

” কি চাই মেয়ে?
“একটা দাবি নিয়ে এসেছি।
” কিসের দাবি?
“আমাদের গ্রামে একটা ভার্সিটি খোলার ব্যবস্থা করে দিন তো।”

“কেনো?
” কেনো মানে? আমাদের সামনে এইচএসসি পরীক্ষা তারপরেই বাহিরে চলে যেতে হবে। আমি আমার আপন মানুষদের সাথে থাকতে চাই। বাহিরে যেতে চাইনা।

অনুভব ইচ্ছের দিকে তাকালো। ইচ্ছের একটা স্বভাব হাত ঝাকিয়ে কথা বলা। এই কয়েক দিনে তা বেশ ভালো করে খেয়াল করেছে। তবে ইচ্ছের এমন কথা শুনে রাগলো না। আসলে আপন মানুষদের ছেড়ে বাহিরে গিয়ে থাকতে সবারই কষ্ট হয়। তার বোনটাও চলে যাবে কিছু দিন পরে। তবে সে কি করে ভার্সিটি দিবে!

“এটা সম্ভব নয়। আর কিছু?

ইচ্ছে মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল,
” হ্যাঁ আরেকটা কথা আপনি বিয়ে করবেন না?

অনুভব ভ্রু কুঁচকে বলল,
“সময় হলে করবো। কেনো?

” আপনার জন্য আমাদের বাড়ি পাশের সুফিয়া রেডি হয়ে আছে। আপনার সাথে তাকে দারুণ মানাবে। ”

“আমার সাথেই শুধু কেনো মানাবে?

ইচ্ছে দাঁত কেলিয়ে বলল,
” কারণ পাগলের জীবন সঙ্গী পাগলই মানায়।

অনুভব গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“হুম যেমন এক পাগল আরেক পাগল কে ভালো চিনে।

ইচ্ছে রেগে কিছু বলবে তার আগেই আবার বলল,
” সন্ধ্যা হয়ে এসেছে বাড়ি যাও।

ইচ্ছে বিরক্ত হলো। কিছুটা রাগ নিয়ে বলল,
“এই জন্য আপনাকে আমার পছন্দ হয়না।

” তো?
” এই এটেটিউটের জন্য আপনার কপালে বউ জুটবে না।”

বলেই ইচ্ছে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। কয়েক ধাপ যেতেই অনুভব পেছন থেকে বলল,
” বউ না জুটলেও তোমার মতো বাচ্চা মেয়েকে আমি বিয়ে করবো না। ”

ইচ্ছে পেছনে ঘুরে কোমরে হাত রেখে বলল,
“আমার বয়েই গেছে আপনার মতো বুড়ো লোককে বিয়ে করতে। আপনাকে তো দু চোখ তো দূরের কথা এক চোখেও সহ্য করতে পারি না হুহ।

অনুভব অপমানিত বোধ করলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

” সাবধানে কথা বলবে মেয়ে তকদিরে থাকলে আমার মতো বুড়ো লোকেরই তুমি বউ হবে।”

ইচ্ছে বড় বড় করে তাকালো। অনুভব চলে গেলো। কপালের সামনের চুলগুলো ফু সরিয়ে বিড়বিড় করতে করতে বাড়ির রাস্তা ধরলো।

ইচ্ছে বাড়ি ফিরে ফ্রেশ হয়ে দাদাজানের কাছে গিয়ে বসলো। শফিক সাহেব বই পড়ছিলেন। ইচ্ছেকে দেখে বই রেখে বললেন,
” ইচ্ছে রানী যে আসুন আসুন।
“কি করছো দাদাজান! আর তোমার বউটা কোথায়?
” বই পড়ছিলাম। আর তোর দাদিজান একটু বাহিরে গেছে।
“ওও। আচ্ছা দাদাজান তুমি অনুভব মির্জাকে চিনো?
” হুম সে আমার প্রিয় ছাত্র ছিল। আর আজকেও এসেছিল তো আমার সাথে দেখা করতে। কেনো বলত?

ইচ্ছে বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
“আমাদের বাড়িতে এসেছিল কেনো?

শফিক সাহেব জানে ইচ্ছে রাজনীতি পছন্দ করে না। তাই রসিকতা করে বললেন,
” তোর বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।

ইচ্ছে রেগে গেলো। কিছু বলার আগেই আনোয়ারা বেগম ভেতরে আসলেন। ইচ্ছে দাদাজানের রসিকতা বুঝতে পেরে দাদিজান কে বলল,
“জানো দাদিজান কেউ এতোক্ষণ তোমার নামে অনেক কিছু বলছিল।”

আনোয়ারা বেগম আঁড় চোখে শফিক সাহেবর দিকে তাকিয়ে ইচ্ছের পাশে বসে পড়ল। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কি কইতাছে?

” তুমি নাকি দিনদিন আরো বেশি সুন্দর হয়ে যাচ্ছো।
“ধ্যাৎ ছেমড়ি খাবার দিতাছি তাড়াতাড়ি আয়।

আনোয়ারা বেগম লজ্জা পেয়ে বেরিয়ে যেতেই ইচ্ছে আর শফিক সাহেব অট্টহাসিতে ফেটে বললেন।

!!

তুষার রাস্তায় তার দলবল নিয়ে বসে বসে মেয়েদের বিরক্ত করছিল। হঠাৎ রাস্তায় অহিকে দেখে তার চোখ চকচক করে উঠলো। অনুভব মির্জার বোন। তার জন্যই তুষারের বাবা এবার নমিনেশন পায়নি। মনের মাঝে রাগ পুষে রেখেছে। সবাই কে এপাশে রেখে সে একাই ওপাশে গেলো। অহি রিকশা দাঁড় করিয়ে দোকান থেকে আইসক্রিম কিনতে নেমেছিল।

“কি গো সুন্দরী একা একাই আইসক্রিম খাবে?

অহি বিরক্ত নিয়ে তাকালো। প্রথমে ভেবেছিল রঙ্গনের লোক পরে বুঝলো না অন্য কেউ। কিছু না বলে রিকশায় উঠে বসলো। তুষার সামনে গিয়ে দাঁড়াল হাত এগিয়ে দিয়ে অহির হাত থেকে একটা আইসক্রিম নিয়ে বলল,

” তা সুন্দরী তোমার ভাই এতো সুন্দর একটা মেয়েকে বডিগার্ড ছাড়া বাহিরে ছাড়ে কোন আক্কেলে?

” কে বলছে বডিগার্ড নেই?
তুষার সাইডে তাকালো রঙ্গন দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দেখে হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আসসালামু ওয়ালাইকুম আব্বা ভালো আছেন?

রঙ্গন তার হাত থেকে আইসক্রিমটা নিয়ে খেতে খেতে
বলল,
” আব্বার বউরে ডিস্টার্ব করলে আব্বা কেমনে ভালো থাকে?

অহি বড় বড় করে তাকালো। কি বলে এই লোক তবে মুখ কিছু বলল না। নিরবতা বজায় রাখলো।

তুষার অবাক কন্ঠে বলল,
“মানে?

” এক কথা বার বার আমি বলি না। এখনই মাফ চা নইলে আমারে তো চিনোস। আশা করি হসপিটালে ভর্তি হওয়ার কাহিনি ভুলিস নাই। সময় এক মিনিট।

তুষার ভয় পেয়ে গেলো। রঙ্গনের হাতে মা’র খেয়ে সে এক মাস হসপিটালে ভর্তি ছিল। উপায় না পেয়ে দুই হাত জোরো করে অহিকে বলল,
আব্বার বউ আম্মা মাফ করিয়া দেননা। আর জীবনেও আপনাকে কিছু বলবো না। না না কোনো মেয়েকেই বলব না।

অহি বিরক্ত হলো। বলল,
“ঠিক আছে এখন দুজনে নাটক বন্ধ করে রাস্তা ছাড়ুন।

তুষার সরে দাঁড়াল তবে রঙ্গন উঠে বসলো রিকশায়। অহিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিকশাওয়ালা চলে যেতে বলল।

” আপনি আমার রিকশায় কেনো উঠলেন?
“নাম লিখা ছিল নাকি?

অহি রেগে তাকালো। বলল,
” কি চাই আপনার?
“বউ চাই এনে দিবি?

অহির কড়া জবাব,
” আমি কি ঘটক যে বউ এনে দিবো? আর আপনি আমার আইসক্রিম না বলে খাচ্ছেন কেনো।

রঙ্গন একবার আইসক্রিমের দিকে তাকালো একবার অহির দিকে তাকালো। অতঃপর অহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল,

“এই নে তোর আইসক্রিম।

অহি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। অর্ধেক খাওয়া আইসক্রিমের দিকে তাকিয়ে রইলো। প্রচন্ড রাগ হলো। অহির অতিরিক্ত রাগ হলে সে চুপ হয়ে যায়। কারো সাথে কথা বলে না। নাকের পাতাটা ফুলছে বার বার। রঙ্গন তা চেয়ে চেয়ে দেখছে। উত্তর না পেয়ে বলল,

“আমাকে তোর খুব খারাপ মানুষ মনে হয়?

অহি উত্তর দিতে না চেয়েও দিলো টিটকারি মেরে বলল,
” নাহ আপনাকে আমার বিশ্বের সবচেয়ে ভালো মানুষ
মনে হয়।”

রঙ্গন ঠোঁট টিপে হাসলো। বলল,
” উত্তর ভুল। আমি পিওর খারাপ মানুষ।

অহি ভড়কে তাকালো। এমন কথা সে তার বাপের জীবনেও শুনে নাই। নিজেকে কেউ খারাপ বলে! রঙ্গন আবার বলল,
“কালকে থেকে তোকে আর আমি বিরক্ত করবো না।”

“কেনো?
কথাটা বলেই অহি নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরলো। এটা সে বলতে চায়নি। রঙ্গন হাসলো। বলল,

” কেনো তুই কি চাচ্ছিস তোকে আমি বিরক্ত করি?
“না না আমি কেনো তা চাইবো?

অহির কথা শেষ হতেই রঙ্গন চলন্ত রিকশা থেকে নেমে পড়ল। আর উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না। এভাবে নামতে দেখে অহি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলো। রিকশার হুডি তুলে পেছনে তাকালো। রঙ্গন সিটি বাজাতে বাজাতে একটা টং দোকানে ঢুকছে। অহি সামনে তাকালো সোজা হয়ে বসলো। অতঃপর হাতে থাকা অবশিষ্ট আইসক্রিমটা ফেলে দিলো।

রঙ্গনকে দেখে তার বন্ধুরা এগিয়ে আসলো। আসিফ তার কাছ ঘেঁষে বসতে বসতে বলল,
” তুই কি সত্যি ওই মেয়েকে আজকের পর আর বিরক্ত করবি না? তাহলে এতোদিন এগুলো কেনো করলি?

“তুই আগে গা ঘেঁষাঘেঁষি বন্ধ করে দূরে গিয়ে বস।
আসিফ সাথে সাথে চোখ মুখ কুঁচকে দূরে গিয়ে বসলো। চায়ের কাপে এক চুমুক দিয়ে বলল,

“পাখিকে পোষ বানাতে হলে আগে তাকে মুক্ত করতে হয়।”

!!

রাত পনে একটার দিকে কারো হইচই শুনে ঘুম ভেঙে গেলো অনুভবের। বাহিরে বেরিয়ে আসলো। তখনই চয়ন ছুটতে ছুটতে আসলো এসেই বলল,

” ভাই সর্বনাশ হয়ে গেছে মাষ্টারমশাইয়ের বাড়িতে আগুন লেগেছে।”

তৎক্ষনাৎ অনুভবের মাথায় যা আসলো,
“সবাই ঠিক আছে তো! ইচ্ছে ঠিক আছে তো!”

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here