মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon {লেখনীতে} ||পর্ব_১৪

0
568

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon {লেখনীতে}
||পর্ব_১৪

কোচিং থেকে তিনদিনের ছুটি দিয়েছে। সে খবর আকলিমা বেগম জানার সাথে সাথে অহিকে কল করে বলেছে তাদের বাসায় যেতে। ইচ্ছে প্রথমে রাজি হলো না। কারণ ছুটি তো দিয়েছে তবে সাথে দিয়েছে এক গাদা পড়া। কিন্তু আকলিমা বেগমের মধুর ডাক শুনে আর না করতে পারেনি। দুজনেই প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়ে বিকালের দিকই বেরিয়ে পড়ল। ইচ্ছে হঠাৎ বলল,

“অহি রে চল একটু হাঁটি এই ফুটপাত ধরে।”

অহি অবাক হয়ে বলল,
“কিন্তু হেঁটে যেতে যেতে তো সন্ধ্যা লেগে যাবে।

” আরে ধুর পাগল। অল্প একটু হেঁটে রিকশা নিয়ে নিবো।
“ও আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।

দুজনেই হাঁটতে লাগলো। রাস্তার এক পাশে হাওয়াই মিঠাই দেখে ইচ্ছে দুটো কিনে আনলো। একটা নিজে রাখলো অপরটা অহিকে দিলো। ইচ্ছে খেতে খেতে অহিকে প্রশ্ন করলো,
” সই একটা সত্যি কথা বলবি?

“তোকে আমি মিথ্যা কবে বলেছি?
” যা জিজ্ঞেস করি তাই বল উল্টে প্রশ্ন করিস কেন?
“আচ্ছা আচ্ছা। বল সত্যিই বলবো।

ইচ্ছে একটু রয়েসয়ে বলল,
” তুই কি রঙ্গন ভাইয়া কে পছন্দ করিস।

অহি কিছু সময় চুপ হয়ে রইলো। অতঃপর বলল,

“আমি জানি না রে ইচ্ছে আমার মন কি চায়! বুঝতে পারছি না। তার স্বভাব গুলো এক সময় ভীষণ বিরক্ত লাগত। এখন আর তা লাগে না। কথা বলতে ইচ্ছে করে। আর তার গলার গান শুনলে তো আমার মনটাই ভালো হয়ে যায়। ”

ইচ্ছে কিছু সময় অহির দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,

“কিন্তু অহি তাকে যদি পছন্দই করিস। তবে সেই পর্যন্তই রাখ। ভালোবাসা পর্যন্ত যাস না। তার সাথে তোর কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তোর বাড়ির লোকের কথা বাদ দিলাম। আমি নিজেই চায়না তুই কষ্ট পাস। তুই অনেক নরম মনের মানুষ রে। বিষয়টা আর বাড়াস না। তোর আর তার একদমই যায়না।

অহি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” আর যদি বলি ভালোবেসে ফেলেছি?

ইচ্ছে মুচকি হেসে বলল,
“তাহলে আমি তার সাথে কথা বলবো। যদি সে নিজেকে পরিবর্তন করতে পারে তবেই তোকে আগাতে দিবো নইলে না।”

” তুই আমাকে বড্ড ভালোবাসিস তাইনা?
” তোর সন্দেহ আছে?
“একদম নেই। তবে একটু আকটু তো আমার ভাইকেও ভালোবাসতে পারিস?

ইচ্ছে মুখ ভেঙচি দিয়ে বলল,
” আমার বয়েই গেছে।

” এই যে আজকে বলছিস বয়ে গেছেই। এমন একদিন আসবে সেদিন তুই নিজেই তাকে অসম্ভব ভালোবাসবি।

“হুহ স্বপ্নে।
” নো বাস্তবেই মিলিয়ে নিস।

“তুই সব জেনে বসে আছিস তাইনা?
” না তবে এটা জেনে বসে আছি।

দুজনেই বকবক করতে করতে অনেকটা পথ হাঁটল। অতঃপর পা লেগে আসতেই একটা রিকশা ডেকে উঠে পড়ল। বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় বিকাল গড়িয়ে গেলো। এ নিয়ে অবশ্য আকলিমা বেগম বেশ কিছু সময় বকাঝকা করলেন। তারপর দুজনকে ফ্রেশ হয়ে আসতে বলে। নাস্তা বানাতে চলে গেলেন। দুজনেই রুমে এসে টান হয়ে শুয়ে পড়ল। কিছু সময় পরে ইচ্ছে জিজ্ঞেস করলো,

“আরিয়া আপু আর আবির ভাইয়া কোথায় রে?

” আরিয়া আপু নাকি ঘুমাচ্ছে। আর আবির ভাইয়া আমার ভাইয়া কে আনতে গেছে।

ইচ্ছে লাফিয়ে উঠে বসে বলল,
“কিহ তোর ভাই কেনো আসবে?

“কাকিমনি আসতে বলেছে তাকেও।
ইচ্ছে কিছু বলবে তার আগেই অহির ফোনে কল আসলো। অহি দেখার আগেই ইচ্ছে ফোন নিয়ে বলল। দাঁড়া আমি কথা বলবো দেখি তোর ভয়েস চিনে কি না! বলেই রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশে থেকে বাজখাঁই গলায় কেউ বলে উঠলো,
” এতো সময় লাগে তোর ধরতে?

ইচ্ছে কিছুটা থতমত খেয়ে ধীরে ধীরে বলল,
“আপনি তো আমাকেই ভুলেই গেছেন!

” মনে রাখবো কেনো! কে তুই?

“আমি অহি!

রঙ্গন ধমক দিয়ে বলল,
” ঢং না করে তোর বান্ধবী কে ফোন দে।

ইচ্ছে অপমানিত বোধ করলো। সাথে সাথে ফোন দিয়ে দিলো অহিকে। অহি ফোন নিয়ে বলল,
“আপনি ওকে এভাবে বললেন কেনো ও কষ্ট পেয়েছে। স্যরি বলেন তাড়াতাড়ি।

” রঙ্গন কাউকে স্যরি বলে না।

অহি কিছু একটা ভেবে একটু দূরে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ও আপনার দলের লোক।

” কিহ! সেও বখাটে?
“আরে না।
” আপনার দলের লোক বলতে সেও ভাইয়াকে পছন্দ করে না।

রঙ্গন তৎক্ষনাৎ বলল,
” ঠিক আছে ওকে ফোন দে।

ইচ্ছে নিতে চাইলো না। অহি ধরিয়ে দিলো। রঙ্গন তাকে
বলল,
“তুই নাকি অনুভব মির্জাকে পছন্দ করিস না?

ইচ্ছে ভ্র কুঁচকে অহির দিকে তাকিয়ে বলল,
” হুম কেনো?

রঙ্গন হেসে বলল,
“আমিও পছন্দ করিনা।

” আসলেই? কিন্তু কেনো?
“সে আছে একটা কারণে।
” ওহ।

” তাহলে শত্রুর শত্রু বন্ধু!
“আরে না শত্রুর শত্রু ভাইবোন।

রঙ্গন জোরে হাসলো। তার মনে চলছে অন্য কিছু। তবে মুখে বলল অন্য কিছু।
” ঠিক আছে অহিকে ফোন দে।

অহি ফোন ধরে হ্যালো বলতেই রঙ্গন বলল,
” কি রে ভুলে টুলে গেছিস নাকি?

“নাহ
অহির ছোট্ট জবাব।

” ভুলে গেলেও সমস্যা নেই মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য তো আমি আছিই।”

“আপনি আসলে কি চান?
” আপাতত গান শুনাতে?
“কি?

“গান শুনবি?

অহি ইচ্ছের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো। দুজন পাশাপাশিই ছিল। ইচ্ছে সম্মতি জানাতেই ফোন সাউন্ড ফুল দিয়ে দিলো।

“তুমি না ডাকলে আসব না
কাছে না এসে ভালোবাসব না
দুরত্ব কি ভালোবাসা বাড়ায়?
না কি চলে যাওয়ার বাহানা বানায়?
দূরের আকাশ নীল থেকে লাল
গল্পটা পুরনো,

ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি
ডুবে ডুবে ভালোবাসি
তুমি না বাসলেও আমি বাসি!!”

গান শেষ হওয়ার আগেই কেউ দরজায় দাঁড়িয়ে ডাক দিলো।

“অহি!!

সাথে সাথে অহি ফোন কেটে রেখে দিলো। একে অপরের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। আরিয়া ভেতরে আসতে আসতে বলল,
” কি রে দুটো ফোন নিয়ে কি করছিস? বাহিরে ভাইয়ারা চলে আসলো। অথচ তোদের ফ্রেশ হওয়া হলো না।

ইচ্ছে হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আসলে আপু আমরা ফোনে একটু গান শুনছিলাম।
” ওহ বাহিরে চল। মা ডাকছে তোদের।
“আচ্ছা।

আরিয়া বেরিয়ে যেতে যেতে আবার ঘুরে আসলো। ইচ্ছে আর অহিকে নিয়ে বিছানায় বসে বলল। একটা মজা করবি?ইচ্ছে আগ্রহী নিয়ে বলল,
” কার সাথে??

আবির ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলল,
“অনুভব ভাইয়ার সাথে।

ইচ্ছে বড় বড় করে তাকিয়ে বলল,
” না না কুমিরের ডেরায় থেকে তার সাথে টক্কর দেওয়া যাবে না।

আরিয়া সে কথার দ্বিমত জানিয়ে বলল,
“আরে ধুর টের পাবে না।

অহিও বলল,
” ইচ্ছে রাজি হয়ে যা।

ইচ্ছে কিছু সময় ভেবে বলল,
“কিন্তু করবোটা কি?

আবির দাঁত কেলিয়ে বলল,
” ফ্ল্যাটিং করবে।

“ওকে ফোন দিন।

আবির একটা নতুন সিম ফোন তুলে ইচ্ছে কে দিলো। আর দরজার সামনে গিয়ে উকি দিয়ে দেখলো অনুভব কি করছে। অনুভব পায়ের পা তুলে সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে। অন্য দিকে তার কোনো খেয়াল নেই। ইচ্ছে কল দিতে দিতে বলল,
” যদি ভয়েস চিনে যায়?

আরিয়া বলল,
“আরে যাবে না।একটু টেনে টেনে কথা বলবি।

প্রথম বার কল হলো অনুভব ধরলো না। দ্বিতীয় বার রিং হতেই রিসিভ করে সালাম দিলো।

” আসসালামু আলাইকুম কে বলছেন?
“ওয়ালাইকুম আসলাম। একটু বিপদে পরে কল দিয়েছি।

“জ্বি বলুন কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
” একটা রাস্তা চিনিয়ে দিতে পারবেন?
“কোথাকার রাস্তা?

” আপনার মনে যাওয়ার রাস্তা।
“দুঃখিত সেই জায়গায় অন্য কারো অবস্থান।

সবাই বড় বড় করে তাকালো। ইচ্ছে বলল,
” সমস্যা নেই। তাকে মনে রাখবেন আর আমাকে কিডনিতে।

অনুভবের মেজাজ বিগড়ে গেলো। ফোনটা সামনে ধরে বোঝার চেষ্টা করলো। গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“আপনি জানেন আমি কে?

” গরু খায় ঘাস, আপনি আমার ক্রাশ।

ইচ্ছের কথা শুনে হাসতে হাসতে সবাই নিচে বসে পড়ল। ইচ্ছে হাত দিয়ে ইশারা করে চুপ থাকতে বলল। অনুভবের ভয়েসটা একটু চেনা চেনা লাগলো। তাই ফোন না কেটে বলল,
“আপনি কে?
” আপনার ভবিষ্যৎ বউ।
“আমি কে?
” আমার ভবিষ্যৎ জামাই।

অনুভব এবার সিওর হয়ে গেলো এটা ইচ্ছে। তবে দেখতে চাইলো আর কি কি বলতে পারে। তাই কপট রাগ দেখিয়ে বলল,
“এই মেয়ে এক থা’প্পড় দিয়ে আদব কায়দা শিখিয়ে দিবো।

ইচ্ছে কিছুটা ভড়কে গেলো। তবে বাকি সবাই চালিয়ে যেতে বলল। তাই বলল,
” আপনি না নেতা! আপনার দায়িত্ব জনগণের সেবা করা৷ কিন্তু আপনি কি করছেন? একটা নিষ্পাপ মেয়ে কে হুমকি ধামকি দিচ্ছেন ছ্যাহ।
বলেই মুখ চেপে ধরে হাসলো ইচ্ছে।

অনুভব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তাহলে আমার এখন কি করা উচিত?

” আপনার মনের রাস্তাটা একটু বলে দিন।

অনুভব মুচকি হেসে বলল,
“শোনো মেয়ে আমার মনের রাস্তা বেশি দূরে নয়। এক মিনিটের সবে। সোজা রুম থেকে বেরিয়ে এসো। আমি অপেক্ষায় আছি। ”

ইচ্ছে হতভম্ব হয়ে ফোন কেটে দিয়ে বিছানায় গিয়ে উঠে বসলো। সবাই ভয়ে একে অপরের দিকে তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিললো। ইচ্ছে দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে বলল,
” আমি কিছুতেই বাহিরে যাচ্ছি না। এই লোক দুনিয়ার বদ। আমাকে কাঁচাই খেয়ে ফেলবে।

অহি নাক থেকে চশমা টেনে সোজা করে পরতে পরতে
বলল,
” কাঁচা কি খাওয়া যায় নাকি? আমি নাহয় ভাইয়া একটু ভেজে দিবো।”

ইচ্ছে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,
” দিন আমারো আসবে।

ইচ্ছে ফোন কাটতেই অনুভব হাসলো। বিড়বিড় করে
বলল,
“শোনো মেয়ে তোমার চিঠি গুলো বড্ড মিস করে তোমার এমপি মশাই। আর দাও না কেনো!!

আবিরদের আসতে দেরি হচ্ছে জন্য আকলিমা বেগম নিজেই এবার আসলেন। সব কয়টাকে টেনে নিয়ে গেলো। অনুভব তাদের বসতে বলল। বেশ স্বাভাবিক ভাবেই। কিন্তু সে স্বাভাবিক ভাবে বললেও সবাই স্বাভাবিক থাকতে পারলো না। সবাই এসে অবাক হলো। সেদিকে অনুভব পাত্তা না দিয়ে সবার সামনেই অহিকে বলল,

“রঙ্গন কে তোরা হসপিটালে নিয়ে গেছিলি?”

#চলবে….
|| রি-চেক করা হয়নি। এটা সাদামাটা একটা গল্প। তেমন প্যাঁচ থাকবে না। তবে আপনাদের পছন্দ না হলে বলবেন। তবে আমি তাড়াহুড়ো করতে চাইছি না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here