#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪।
বিরক্ত হলো প্রিয়তা। লোকটা তাকে এত কেন সন্দেহ করছে? সে চোর না ডাকাত, আশ্চর্য! প্রিয়তা মুখ কালো করে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। দিলরুবা বেগম বুঝতে পারেন ব্যাপারটা। বলেন,
‘চিন্তা করো না, ফারজাদ। আমার ওর আত্মীয়ের সাথে কথা হয়েছে।’
ফারজাদ আর কথা বাড়াল না। মেয়েটাকে ঠিকানা মতো পৌঁছে দিতে পারলেই বাঁচে সে।
গন্তব্যে পৌঁছাতে আধ ঘন্টা সময় লাগল। গাড়ি থামতেই নেমে দাঁড়াল প্রিয়তা। আশেপাশে চোখ বুলাল। পরিচিত মুখখানার দেখা মিলল না। সে ওয়াদির নাম্বারে মেসেজ দিল এই বলে যে, ‘ম্যা আয়া, আপ কাহা হো?’
উত্তর এল সাথে সাথেই,
‘জাস্ট ওয়েট ফর অ্যা মিনিট, আ’ম কামিং।’
খুশি হলো প্রিয়তা। দিলরুবা বেগমের দিকে চেয়ে বলল,
‘আপনারা এবার চলে যান, আন্টি। ওয়াদি আসছে।’
দিলরুবা বেগম গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়ালেন। আশপাশটা তীক্ষ্ণ চোখে পরখ করলেন তিনি। একটা গলির মাঝে গাড়িটা রাখা। মানুষের আনাগোনা খুব একটা নেই। ছোট ছোট দালান, পুরোনো বেশ। তিনি সবকিছু পরখ করে বললেন,
‘আমরাও দাঁড়াই, ওয়াদি আসলেই না হয় যাব।’
‘এতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবেন?’
‘সমস্যা নেই, মা। তোমাকে কোনোমতেই একা রেখে যাওয়ার ভরসা পাচ্ছি না।’
প্রিয়তা অবাক হচ্ছে বারংবার। সে আপ্লুত কন্ঠে বলল,
‘আজকাল আপনজনের জন্যও কেউ এত করে না, যতটা আপনারা আমার মতো অচেনা এক মেয়ের জন্য করছেন। আপনাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আমি আজীবন আপনাদের মনে রাখব।’
দিলরুবা বেগম হাসলেন উত্তরে। বেশি সময় নিল না, কয়েক মিনিটের ভিতরেই একজন ছেলে এসে হাজির হলো সেখানে। মুখে মাস্ক, পরনে কালো রঙের একটা কাবলি সেট। চোখে আবার কালো চশমা। কোনো ফাঁকফুকুর দিয়েও তার মুখ দেখা যাচ্ছে না। সে এসেই জড়িয়ে ধরল প্রিয়তাকে। আচমকা জড়িয়ে ধরাতে প্রিয়তা খানিকটা ভড়কে যায়। তার উপর তার সামনে দিলরুবা বেগম আর ফারজাদ, তাদের সামনে বড্ড অস্বস্তিও বোধ করল সে। নিজেকে কোনোরকমে ছাড়িয়ে বলল,
‘ওয়াদি, কাল পুরা দিন কাহা পার থি আপ? আপকো পাতা হে, মে কিতনা পারিশান হু গায়ি থি?’
ওয়াদি দুহাতে তার মুখ আগলে বলল,
‘মে এক জারুরি কামকে লিয়ে গাও গায়া থা। স্যরি, মেরি ওয়াজাসে আপকো বহুত তাকলিফ হুয়ি।’
‘ইটস ওকে।’
ওয়াদি হাসল। বলল,
‘চালিয়ে, আপ মে আ গায়া হু আপকি সারি পারিশান দূর কারনে।’
প্রিয়তা দিলরুবা বেগমের দিকে চেয়ে প্রসন্ন সুরে বলল,
‘আন্টি, ও হলো ওয়াদি। আর ওয়াদি, ইয়ে এক বহুত আচ্ছি আন্টি হে, কাল মে ইনকি ঘারমে হি থি।’
ওয়াদি এবার চোখের কালো চশমাটা নামাল। এতক্ষণ খেয়াল করেনি সে। দিলরুবা বেগমকে দেখে ভ্রু কুঁচকাল সে। দিলরুবা বেগমের তীক্ষ্ণ সরু দৃষ্টি তার চোখ বরাবর। ফারজাদ গাড়িতেই বসা। নেমে এসে কারোর সাথে কথা বলার খুব একটা আগ্রহ পাচ্ছে না। দিলরুবা বেগম স্মিত হাসলেন। বললেন,
‘ইনকি দেহান রাখনা, বেটা। ইয়ে আপসে বুহোত মহাব্বাত কারতি হে।’
ওয়াদি বোধ হয় হাসল। মাস্কের আঁড়ালে দৃশ্যমান হলো না তা। মাথা হেলিয়ে বলল,
‘জি, বিলকুল। আই থিংক, উয়ি শুড গু নাও। প্রিয়তা, চালিয়ে।’
সে প্রিয়তার এক হাত আগলে ধরল। দৃশ্যখানা গাড়ি থেকে বসেই অবলোকন করল ফারজাদ। বিরক্তিতে কপালে ভাঁজ পড়ল তার। প্রিয়তা দিলরুবা বেগমের দিকে চেয়ে বলল,
‘এবার আমরা যাই, আন্টি। আর আবারও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।’
দিলরুবা বেগম হেসে তার গালে হাত রেখে বললেন,
‘যাও। নিজের খেয়াল রেখো। আর আমার ফোন নাম্বারটা নিয়ে নাও, যেকোনো প্রয়োজনে কল দিও আমায়।’
প্রিয়তা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে বলল,
‘জি আন্টি, বলুন।’
দিলরুবা বেগম নিজের নাম্বার দিয়ে ব্যাগ খুলে একটা কার্ডও বের করে দিলেন। বললেন,
‘এটা আমার ছেলের কার্ড, রেখে দাও। আর ওর ব্যবহারে মন খারাপ করো না। পরিস্থিতি ওকে এমন বানিয়েছে।’
‘না না, আন্টি, আমি কিছু মনে করিনি।’
ওয়াদি তাড়া দিয়ে বলল,
‘চালিয়ে, প্রিয়তা।’
ওয়াদি তার হাতে টান দিল। একটু বেশিই যেন তাড়া দেখাচ্ছে সে। প্রিয়তা তাড়াহুড়ো দেখিয়ে বলল,
‘আমি যাই, আন্টি। দোয়া করবেন।’
‘হ্যাঁ মা, যাও।’
ওয়াদি প্রিয়তাকে নিয়ে হাঁটা ধরল। দিলরুবা বেগম চেয়ে রইলেন অপ্রতিভ। অদ্ভুত ভাবে তাঁর মায়া হচ্ছে বড্ড। এটা কীসের মায়া, কীসের টান সেটা বোধগম্য নয়। প্রিয়তা দৃষ্টির আঁড়াল হবার আগ পর্যন্ত পুরোটা সময় দেখে গেলেন তিনি। ফারজাদও চেয়ে রইল তার যাওয়ার পানে। সে আঁড়াল হতেই ফারজাদ গাড়ির দরজাটা খুলে দিয়ে বলল,
‘আম্মি, উঠে আসুন এবার।’
দিলরুবা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে গাড়িতে উঠে বসলেন। ফারজাদ গাড়ি ঘুরাল। জিজ্ঞেস করল,
‘ছেলেটা কি উনার প্রেমিক?’
দিলরুবা বেগম অপ্রস্তুত হয়ে তাকালেন। ফারজাদও তার মা’কে পরখ করল। বলল,
‘একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি, তার উপর আপনি আবার ঐ মেয়েকে সাহায্য করলেন; এটা করা কি খুব প্রয়োজন ছিল?’
সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে নিলেন দিলরুবা বেগম। উত্তর দিলেন না আর। পুরোনো ঘা-এ কাল থেকেই বারংবার আঘাত লাগছে। রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে বোধ হয় এবার। ফারজাদ নীরব রইল। সে বোঝে, সে জানে, তাই আর মা’কে ঘাটাল না।
_______
ওয়াদি প্রিয়তাকে নিয়ে বাইকে করে কোথায় একটা গিয়েছে। প্রিয়তার কাছে এই পরিবেশ অপরিচিত। সত্যি বলতে কিছুটা ভীতও সে। যদিও ওয়াদির প্রতি অগাধ বিশ্বাস তার, তাও অদ্ভুত এক ভয় কাজ করছে।
বাইক থেকে নেমেই ওয়াদি তার মাস্ক নামাল। ফোনের স্ক্রিন অবধি সীমাবদ্ধ থাকা মুখাবয়ব’টা বাস্তবে দেখে চিত্ত জুড়ে প্রশান্তির স্রোত বইল প্রিয়তার। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠল। ওয়াদি তার হাত ধরে বলল,
‘ইয়ে মেরা ঘার হে, আপসে হাম ইহাপেহি রাহেঙ্গে।’
প্রিয়তা চোখ বুলাল আশেপাশে। পুরোনো ধাঁচের একটি বাড়ি। আহামরি কোনো চাকচিক্য নেই। আশেপাশে বেশ গাছগাছালি, তার মাঝেই সাদা রঙের একটি দালান এটি। সবকিছু পরখ করে স্মিত হাসল সে। বলল,
‘হামারি নিকাহ্ কাব হোগি।’
ওয়াদি হেসে বলল,
‘আজ রাত, আম্মি আব্বু আনেকি বাদ।’
প্রিয়তার ঠোঁট কোণের হাসি প্রস্ফুটিত হলো। বলল,
‘ঠিক হে।’
তারপর ভেতরে পদার্পণ করল তারা। ভেতরে এসেই খানিকটা অবাক হতে দেখা গেল প্রিয়তাকে। বাড়িতে কেউ নেই। আহামরি কোনো ফার্নিচারও চোখে পড়ছে না। খুব প্রয়োজনীয় কিছু আসবাবপাত্র ছাড়া আর কিছুই নেই। ওয়াদি প্রিয়তাকে নিয়ে একটা সোফায় বসাল। বলল,
‘তুম বেঠো, মে পানি লাতা হু।’
প্রিয়তা বসল। ওয়াদি চলে গেল তার কাজে। প্রিয়তা বাড়ির ভেতরটা দেখছে অতি মনোযোগে। চোখে পড়ার মতো তেমন কিছুই নেই। তবে বসার ঘরে দেয়ালে একটা ছবি আছে, সাদা কালো পুরোনো ছবি। ছবিটা স্পষ্ট নয়। প্রিয়তা কিছুক্ষণ ছবিটার দিকে চেয়ে রইল। এর মাঝেই পানির গ্লাস হাতে হাজির হলো ওয়াদি। প্রিয়তার দৃষ্টি পর্যবেক্ষণ করে বলল,
‘ইয়ে মেরা আম্মি হে।’
প্রিয়তা জবাবে ক্ষীণ হাসল। ওয়াদি পানির গ্লাসটা হাতে দিল তার। অল্প পানি খেল প্রিয়তা। ওয়াদি বলল,
‘তুম আপ ঘার মে যা কার আরাম কারো, মে দুপাহের কি খানেকা ইন্তেসাম কাররাহা হু।’
প্রিয়তা উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘চালিয়ে, মেভি আপকো হেল্প কারতি হু।’
ওয়াদি কিছু বলার আগেই ফোন বেজে উঠল তার। ফোন দেখেই মুখের চিত্র তার পাল্টে গেল যেন। দ্রুততার সহিত বেরিয়ে গেল সে। প্রিয়তা কিছুই বুঝে উঠতে পারল না। হা করে চেয়ে রইল কেবল।
চলবে….
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/