অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৫।

0
318

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৫।

প্রিয়তা দরজার পানে চেয়ে বসে আছে। ওয়াদির কোনো খবর নেই। সে যে একবার বাইরে গিয়ে দেখবে, সেই নিশ্চয়তাটুকুও মন দিচ্ছে না। অবশেষে তার অপেক্ষার প্রহর কিছুটা বাড়তেই ওয়াদির আগমন ঘটে। প্রিয়তার সাথে চোখে চোখ পড়তেই হাসে সে। যদিও আপাতদৃষ্টিতে এই হাসি বেশ সাবলীল, কিন্তু তাও কোথাও একটা যেন দুমনা রয়েই গিয়েছে।

ওয়াদি দরজা বন্ধ করে প্রিয়তার সামনে এসে দাঁড়াল। বলল,

‘আমার এক বন্ধু কল দিয়েছিল, ওর কিছু টাকা প্রয়োজন। সকাল থেকে জ্বালিয়ে মারছে আমায়।'(উর্দু)

প্রিয়তা ম্লান হেসে বলল,

‘ওহহ।’

ওয়াদি বলল,

‘তুমি ঘরে যাও, আমি রান্নার ব্যবস্থা করছি।'(উর্দু)

‘আমিও তোমায় সাহায্য করব।'(উর্দু)

‘না না, তুমি আপাতত গিয়ে বিশ্রাম নাও। সাহায্য লাগলে ডাকব তোমায়।'(উর্দু)

ওয়াদি প্রিয়তাকে এক প্রকার জোর করেই তার ঘরে নিয়ে এল। ছোট্ট ঘরে একটা খাট, ছোট ড্রেসিং টেবিল আর আলমারি ছাড়া আর কিছু নেই। জানালার পাশে একটা চেয়ার রাখা আছে। তাতে পড়ে আছে কিছু কাপড়ের স্তুপ। ওয়াদি জানলার পর্দা সরাতে সরাতে বলল,

‘কিছু মনে করো না, একা থাকি তো তাই একটু অগোছালো।'(উর্দু)

প্রিয়তা হেসে বলল,

‘সমস্যা নেই। আমি সবকিছু মানিয়ে নিতে পারব।'(উর্দু)

ওয়াদির তার সামনে এসে দাঁড়াল। প্রিয়তার মুখখানা তার হাতের আঁজলায় নিয়ে আপ্লুত সুরে বলল,

‘আই লাভ ইউ।’

লজ্জা পেল প্রিয়তা। চোখের পাতা নামিয়ে ফেলল। মৃদু আওয়াজে বলল,

‘আই লাভ ইউ টু।’

ওয়াদি এবার আরেকটু কাছে আগায়। প্রিয়তার সংকোচনের মাত্রা বাড়ে। ওয়াদির মুখটা আরেকটু বাড়িয়ে দিতেই বড়ো চোখে তাকায় প্রিয়তা। তার দৃষ্টি অগ্রাহ্য করে আরো একটু এগিয়ে আসে সে। ওয়াদির উষ্ণ নিশ্বাস প্রিয়তার চোখে মুখে আপতিত হচ্ছে। প্রিয়তা বুকের কম্পন তীব্র হয়। ওয়াদির উদ্দেশ্য ঠাহর করতে পেরে মনের অস্থিরতা আর ভয় বেড়ে যায় তার। ঠোঁট নাড়িয়ে মৃদু আওয়াজে বলে,

‘বিয়ের পর।'(উর্দু)

ওয়াদি ভ্রু কুঁচকায়। খানিকটা হয়তো বিরক্ত হয়। বলে,

‘বিয়ের পর তো তুমি পুরোটাই আমায়। এখন না হয় তোমার ঠোঁটটুকুই আমার হোক।'(উর্দু)

প্রিয়তা ঢোক গিলে। ভীত সুরে বলে,

‘পুরো আমিটা বিয়ের পরেই তোমার হতে চাই, এখন না।'(উর্দু)

এই বলে সে নিজেকে ছাড়াতে চায়। কিন্তু, ওয়াদি যেন তাকে ছাড়তে নারাজ। প্রিয়তা বুঝতে পারছে না কী করবে। ওয়াদির এমন রুক্ষ প্রতিক্রিয়া তার মনের উপর বেশ প্রভাব ফেলছে। তার মুখশ্রী ফ্যাকাশে হয়ে আসে। আচমকা ওয়াদি ছেড়ে দেয়। ছাড়া পেয়ে ছিটকে দূরে সরে যায় প্রিয়তা। মাথা নিচু করে অস্বস্তি ঢাকার চেষ্টা চালায়। ওয়াদি কিছুক্ষণ বিরক্ত চোখে চেয়ে থেকে মুচকি হাসে, বলে,

‘সমস্যা নেই, দুই বছর যখন অপেক্ষা করতে পেরেছি আর কিছুক্ষণও অপেক্ষা করতে পারব আমি। বিশ্রাম নাও, মা বাবা এলেই নিকাহ্’টা সেরে ফেলব।’

ওয়াদি বেরিয়ে আসে। প্রিয়তা মাথা তুলে তাকায়। দুই বছরের সম্পর্কে ওয়াদি আরো আগ থেকেই একটু বেশিই ঘনিষ্ঠ হতে চেয়েছিল তবে, প্রিয়তা সেসবে গুরুত্ব না দেওয়াতে সে আর পারেনি। এই দূর ভালোবাসার সম্পর্কের মাঝে সমস্ত ঘনিষ্ঠতা কেবল ঐ ফোনের স্ক্রিনেই সীমাবদ্ধ, তাও প্রিয়তার মন এসবে সায় দিত না কখনোই। তাই তো সবকিছু ছেড়ে বিয়ে করতে এসেছে সে। সমস্ত ঘনিষ্ঠতায় পবিত্রতা রয়েছে একমাত্র এই সম্পর্কেই, আর তাই সে চায় এই দু বছরের সমস্ত দূরত্ব কেটে যাক এই সম্পর্ক বাস্তবায়নের মাধ্যমেই।

চোখ খুলতেই নিজেকে এক অন্ধকার ঘরে আবিষ্কার করল প্রিয়তা। এতটাই অন্ধকার চারদিক যে সে নিজের অস্তিত্বটুকুও টের পাচ্ছে না। আশপাশ থেকে কেমন অদ্ভুত শব্দ আসছে যেন। কেমন চিৎকার, শীৎকারের শব্দ। ভয়ে গায়ে কাটা দিচ্ছে তার। সে হাঁটু ভাঁজ করে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। এর মাঝেই অকস্মাৎ দরজাটা খুলে গেল। একটা ছায়া দরজা বরাবর। অস্পষ্ট সে। মোটা, রুক্ষ কন্ঠে বলল,

‘এবার তোর পালা।’

এই বলে ছায়াটা এগিয়ে আসার আগেই পেছন থেকে কেউ একটা তার মাথায় আঘাত করে বসে। তা দেখে কেঁপে উঠে প্রিয়তা। ঐ মানুষটা কিছুক্ষণের মাঝেই তার চোখের সামনে স্পষ্ট হয়। মানুষটাকে প্রথম দেখাতেই চিনে ফেলে সে। বিরবির করে বলে উঠে,

‘ফারজাদ, আপনি?’

ঝনঝন করে উঠে কিছু একটা। প্রিয়তা ধরফরিয়ে উঠে বসে। বুকটা হাপড়ের মতো উঠা নামা করছে তার। আচমকা ঘুম ভেঙে যাওয়াতে এমন হচ্ছে হয়তো। বুকে হাত চেপে উঠে দাঁড়ায় সে। বসে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিল সেই খেয়াল নেই। তার উপর এই ক্ষুদ্র সময়ের মাঝেই অদ্ভুত এক স্বপ্ন দেখে বসেছে সে। তবে তার সেই স্বপ্নে ঐ ফারজাদ বলে লোকটা কী করে এল? কেন এল? একদিনের পরিচয়ে লোকটা তার স্বপ্নে কেন চলে আসবে, আশ্চর্য!
প্রিয়তা বীতঃস্পৃহ চিত্তে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে দুইটা পঞ্চাশ বাজে। ওয়াদির কথা ততক্ষণাৎ স্মরণে আসে তার। ছেলেটা একা একা কী করছে কে জানে?

ওড়নাটা ঠিকঠাক করে দ্রুত ঘর থেকে বের হলো প্রিয়তা। রান্নাঘর চিনে না সে, টুংটাং শব্দ অনুসরণ করেই ওয়াদির হদিস পেল। দরজার সম্মুখে দাঁড়িয়ে দেখল, ওয়াদি উল্টো দিকে ফিরে কাজ করছে। তার বাম হাতের দুই আঙ্গুলের ফাঁকে জ্বলজ্বল করছে কিছু একটা। বিলম্ব না করেই প্রিয়তা বুঝতে পারল যে, ওয়াদি সিগারেট খাচ্ছে। ব্যাপারটাতে আগে অবগত ছিল না সে। তাই অবাক হলো, কষ্টও পেল বোধ হয় খানিক। জিজ্ঞেস করল,

‘তুমি সিগারেট খাও, ওয়াদি?'(উর্দু)

হঠাৎ প্রিয়তার গলার স্বর ভীত করে ওয়াদিকে। পেছন ফিরে চেয়ে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে যেন। সিগারেটটা সঙ্গে সঙ্গেই ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিষে দেয়। বলে উঠে,

‘না না, অভ্যাস নেই তেমন। মাঝে মধ্যে একটু আধটু খাই আরকি।'(উর্দু)

প্রিয়তা ক্ষীণ সুরে বলল,

‘আমার সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয় না।'(উর্দু)

ওয়াদি জোরপূর্বক হেসে বলল,

‘আচ্ছা, আর খাব না।'(উর্দু)

খুশি হলো প্রিয়তা। তার এক কথাতেই ওয়াদির রাজি হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা বড্ড আনন্দ দিয়েছে তাকে। ভেতরে আসে সে। জিজ্ঞেস করে,

‘কী রান্না করেছো?'(উর্দু)

‘মাছ, ডাল, ডিম আর ভাত। এগুলোতে চলবে?'(উর্দু)

প্রিয়তা বড়ো বড়ো চোখে চেয়ে বলে,

‘এত কিছু রেঁধে ফেলেছ?'(উর্দু)

‘এত কিছু কোথায় আর করতে পারলাম? অল্প’ই করেছি, দেরি হয়ে যাচ্ছে বলে আর বেশি কিছু করতে পারিনি।'(উর্দু)

প্রিয়তা হেসে বলল,

‘আমার এইটুকুতেই চলবে।’

‘ঠিক আছে। তুমি ফ্রেশ হয়ে টেবিলে বসো, আমি খাবার নিয়ে আসছি।'(উর্দু)

প্রিয়তা এগিয়ে এসে বলল,

‘শুনো, এইটুকু কাজ অন্তত আমাকে করতে দাও। সেই আসার পর থেকে কাজ করে যাচ্ছো, এবার গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও তুমি; খাবার আমি বেড়ে দিচ্ছি।’

ওয়াদি মাথা নাড়িয়ে বলল,

‘একদমই না। কাল থেকে এমনিতেই এসব দায়িত্ব একেবারের জন্য তোমার হতে চলছে, তাই আজকে একটু আরাম করে নাও। যাও গিয়ে বসো তুমি, আমি আসছি।'(উর্দু)

প্রিয়তা হাসল তার কথা শুনে। বলল,

‘আচ্ছা একটু সাহায্য তো করি?'(উর্দু)

‘না, কোনো সাহায্য লাগবে না। তুমি বসো গিয়ে।'(উর্দু)

ওয়াদির জোরাজুরিতে প্রিয়তা আর রান্নাঘরে টিকতে পারল না। সে ডাইনিং এর চেয়ার টেনে বসল। রান্নাঘরে সব খাবার বাড়ছে ওয়াদি। ঠোঁটের কোণে তার চমৎকার হাসি। এই প্রথম এত আয়োজন করে কারোর জন্য রেঁধেছে সে। খাবারের ঘ্রাণ’ই বলে দিচ্ছে, রান্নার হাত পাঁকা তার। সে সব খাবার প্লেটে সাজিয়ে রাখল। প্রিয়তা জন্য একটা আস্ত তেলাপিয়া রেঁধেছে সে, বেশ যত্ন করে, ভালোবাসা সমেত। এখন সেটাতেই আরেকটু ভালোবাসা মেশাচ্ছে। ঠোঁটের কোণের হাসিটা এখনও বিরাজমান। যেন হাসিটুকুই বলে দিচ্ছে, মাছের স্বাদটা বিলিন হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

চলবে…..

(ওর্দু বুঝতে অসুবিধা বলে ওর্দুতে বলা কথাগুলোও বাংলাতে লিখব, তাহলে আর অসুবিধা হবে না আশা করছি।)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here