#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৫৫
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
সুখ গুলোকে গ্রাস নিয়েছে বিষাদের কালো মেঘের দল। নিস্তব্ধ রজনী মুহুর্তের মধ্যে হাহাকার করে উঠল। শহরের আনাচ-কানাচে দুঃখরা রাজত্ব করছে। অনুভূতিরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। বাক্যরা ছন্দ হারিয়েছে। কণ্ঠনালি আওয়াজ তুলতে ভুলে গিয়েছে। বুকের মধ্যে ব্যথাটা জানান দিচ্ছে সে চলে এসেছে। তার ব্যথায় ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিবে। কোলাহল বিহীন হসপিটালটা মুহুর্তের মধ্যে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠল। ডক্টর, নার্স যে যেদিকে পারছে ছুটে চলেছে। মুনতাসিমকে জুরুরি বিভাগে নেওয়া হয়েছে। মুনতাসিমের অবস্থা খুব একটা ভালো না। যেকোনো সময় দেহ থেকে প্রাণ পাখিটা উড়াল দিতে পারে। তাইয়ান পাথরের ন্যায় বসে আছে। এখন তাকে ভেঙে পড়লে চলবে না। তাকে শক্ত থাকতে হবে। তার দেহে প্রাণ থাকা অবস্থায় মুনতািসমের জন্য লড়তে হবে। মুনতাসিমের করুন দৃশ্যটা মুখশ্রীর সামনে ভেসে উঠতেই তাইয়ানের বুকটা ভারি হয়ে আসতে শুরু করল। সে চৌধুরী বাড়িতে খবর দিবে কি না সেটা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে ভূগছে। মেহেভীন তাইয়ানকে আটত্রিশ বার ফোন করেছে। মুনতাসিমকে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ফোনটা তুলতে পারেনি তাইয়ান। তাইয়ানের ভাবনার মাঝেই মুঠোফোন ফোনটা শব্দ করে বেজে উঠল। তাইয়ান ফোনের স্ক্রিনের দিকে দৃষ্টিপাত করতেই মেহেভীনের নামটা ভেসে উঠল। তাইয়ানের সমস্ত কায়া ধীর গতিতে কাঁপছে। সে শক্ত হাতে ফোনটা রিসিভ করল। অপর প্রান্ত থেকে মেহেভীনের রাগান্বিত কণ্ঠ স্বর ভেসে এল।
–আপনি আমার মেসেজের রিপ্লাই করছেন না কেন? আপনি যে শেষে বললেন, মুনতাসিম আপনাকে গাড়ি থেকে নামতে বলেছে। তারপর থেকে আপনার খোঁজ খবর পাচ্ছি না। আপনারা এখন কোথায় আছেন? উনাকে নিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে আসুন। আপনি যদি বাড়ি নিয়ে আসতে না পারেন। তাহলে উনার কাছে ফোনটা দিন। আমার যা বলার বলছি। মেহেভীনের কড়া বাক্য গুলো তাইয়ানের মস্তিষ্ক স্পর্শ করতে পারল না। তার কণ্ঠনালি দিয়ে কোনো বাক্যই আসছে না৷ তার বাবা মরেও নিজেকে এতটা অসহায় লাগেনি। যতটা অসহায় মুনতাসিমকে রক্তাক্ত হতে দেখে লাগছে। তাইয়ানের নিরবতা মেহেভীনের হৃদস্পন্দনের গতিতে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ভেতরটা অদ্ভুত ভাবে হুঁ হুঁ করে উঠছে। কায়ার সমস্ত শক্তি শুষে নিচ্ছে একদল চিন্তা। তাইয়ান নিজের মনকে শক্ত করে নিল। সে মলিন কণ্ঠে বলল,
–স্যার এক্সিডেন্ট করেছে ম্যাডাম। আমরা স্যারকে হসপিটালে নিয়ে আসছি। স্যারের অবস্থা খুব একটা ভালো না। ডক্টররা বলছে যেকোনো সময় স্যার মারা যেতে পারে। স্যারের কায়া থেকে প্রচুর রক্ত বেড়িয়েছে। আমরা পর্যাপ্ত পরিমাণে রক্ত সংগ্রহ করতে পারছি না। আমি একা একা ভেঙে পড়ছি। আমার নিজেকে ভিষণ ক্লান্ত লাগছে। আপনারা সবাই আসুন না। আপনি বড় স্যারকে খবরটা দিন। বড় স্যার জানলে কিছুতেই ঘরের কোণে বসে থাকতে পারবে না। ধরনীর বুকে হুলস্থুল লাগিয়ে দিবে। তাইয়ানের বাক্য গুলো কর্ণপাত হতেই মেহেভীন হৃদয়বিদারক চিৎকার দিয়ে উঠল। মেহেভীনের চিৎকারে চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি দেওয়াল কাঁপে উঠল। গার্ডরা দৌড়ে মেহেভীনের কক্ষে এল। চারদিকে কোলাহল সৃষ্টি হলো। ততক্ষণে সকলের নিদ্রা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। সবাই বিরক্তি মাখা মুখশ্রী করে মেহেভীনের কক্ষ এল। ফজরের আজান কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাচ্ছে। মেহেভীন দৌড়ে কক্ষ থেকে বের হয়ে গেল। মেহেভীনের এমন অদ্ভুত আচরণ দেখে সবাই বিরক্ত হলো। তখনই রিয়াদ চৌধুরীর মুঠোফোনটা বেজে উঠল। ফোনটা কর্ণে ধরতেই কিছু বিষাক্ত বাক্য এসে ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ করে দিল। চৌধুরী বাড়িতে প্রতিটি আঙ্গিনা তিক্ততায় রুপ নিল। রিয়াদ চৌধুরীর মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ভেতরটা দুমড়ে-মুচড়ে যাচ্ছে। বুদ্ধিরা অকেজো হয়ে গিয়েছে। সে অনুভূতি শূন্য হয়ে পড়েছে। তারা বিলম্ব না করে দ্রুত হসপিটালের উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ল।
রজনীর শীতল হাওয়া এসে মেহেভীনকে আলিঙ্গন করে যাচ্ছে। নিস্তব্ধ রজনী কায়াকে শীতল করতে পারলেও উত্তপ্ত হৃদয়কে শীতল করতে পারছে না। ভেতরটা প্রিয়জন হারানোর ভয়ে হাহাকার করে উঠছে। সময় যে আজ ভিষণ পাষাণ হয়ে গিয়েছে। এতটুকু পথ তবুও যেন কিছুতেই শেষ হচ্ছে না। বিপদের পথ গুলো এত দীর্ঘ হয় কেন? দুঃখ গুলো এত অপেক্ষা করায় কেন? খারাপ সময়টা কিছুতেই সামনের দিকে দ্রুত এগিয়ে যায় না। ধীরে ধীরে সামনের দিকে আগায় তবুও পোড়াতে পোড়াতে নিয়ে যায়! হসপিটালের মধ্যে প্রবেশ করতেই তাইয়ান সহ আরো কিছু গার্ডদের দেখা গেল। তারা এতটুকু সময়ের জন্য আইসিইউর সামনে থেকে সরেনি। রিয়াদ চৌধুরীকে দেখেই তাইয়ান এগিয়ে আসলো। তাইয়ান উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
–আরো দুই ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন স্যার। আমরা রাতে দু’ব্যাগ জোগাড় করেছি। আর কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। আপনার পরিচিত কেউ থাকলে ফোন দিয়ে আসতে বলুন। রিয়াদ চৌধুরীর মুখভঙ্গি দেখে বোঝা যাচ্ছে না। সে কতটা আঘাত হয়েছে। সমস্ত মুখশ্রীতে গম্ভীরতা বিদ্যমান। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–তুমি চিন্তা করো না। আমি দু’জনকে বলেছি। তারা আসছে। তারা দু’জন সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ। রিয়াদ চৌধুরীর কথায় শান্ত হলো তাইয়ান। মুনতাসিমকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। একটু পর পর মুনতাসিমের অবস্থা এক একেক রকম হচ্ছে। তাকে লাইফ সাপোর্ট দিয়ে রাখা হয়েছে। শব্দ যেন প্রতিটি মানুষের মুখশ্রী থেকে হারিয়ে গিয়েছে। হঠাৎ করে মেহেভীনের হৃদয়টা বলে উঠল, “ধৈর্য কি জানেন? হৃদয়টা ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তক্ষরণ হওয়ার পরও আল্লাহর প্রতি তাওয়াক্কুল করে কষ্টের বিনিময়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা। মেহেভীনের হৃদয়টা কড়া করে বলছে। রবের কাছে গিয়ে হাত তুলো। সবাই তোমাকে নিরাশ করলে-ও তোমার রব তোমাকে নিরাশ করবে না। তোমার রব খুব শীঘ্রই তোমার সকল দুঃখ মোচন করে দিবে। মেহেভীনে আশেপাশে নার্সদের খুঁজতে শুরু করল। কিছু সময় যাবার পরেই সাদা এপ্রন পড়া একটা নার্স ইনজেকশন হাতে আইসিইউর দিকে এগিয়ে আসছে। মেহেভীন তাকে দেখে আহত কণ্ঠে বলল,
–আপনাদের হসপিটালের নামাজের ঘর আছে?
–জি ম্যাডাম আছে। আপনি নামাজ পড়বেন। চলুন আমি আপনাকে দেখিয়ে দিচ্ছি। মেহেভীনকে ম্যাডাম সম্মোধন করায় মেহেভীনের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। মলিন মুখশ্রী নিয়ে নার্সকে একবার পর্যবেক্ষণ করে নিল। মেহেভীন অজু করে এসে নামাজ আদায় করে নিল। মোনাজাতে এসে মেহেভীনের দমিয়ে রাখা অশ্রুকণা গুলো বাঁধ ভেঙে বেড়িয়ে আসলো। ভেতরটা ভিষণ জ্বলছে। অসহনীয় যন্ত্রনায় চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে সে। মুনতাসিমের সর্বোচ্চ ভালো সে বিধাতার কাছে চাইল। মানুষটাকে ছাড়া যে সে একদম নিঃস্ব! ধরনীর বুকে আপন বলতে এই মানুষটাই আছে তার। এই মানুষটা থাকবে না ভাবতেই বুকটা খালি খালি লাগছে। মেহেভীনের আঁখিযুগল ফুলে গিয়েছে। মেহেভীনের রক্তিম আঁখিযুগলের দিকে দৃষ্টি যেতেই তাইয়ানের ভেতরটা রক্তাক্ত হয়ে গেল। দু’জন মানুষ দু’জনকে কতটা ভালোবাসে, কিন্তু পরিস্থিতি কিছুতেই দু’জনকে সুখী থাকতে দিচ্ছে না। তাইয়ানের পরিস্থিতির ওপর ভিষণ রাগ হচ্ছে। তার যদি ক্ষমতা থাকতো তাহলে সে পরিস্থিতিকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিত।
কক্ষের সমস্ত আসবাবপত্র চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলছে জাফর ইকবাল। হেরে যাওয়ার ক্রোধ সমস্ত কায়াকে উত্তপ্ত করে তুলছে। সে পরপর কয়েকবার ভয়ংকর রকমের গর্জন করে উঠল। তার গর্জনে প্রতিটি গার্ডের হৃদয় কেঁপে উঠল। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের আনা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। হাত কে’টে রক্ত স্রোতের ন্যায় গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,
–কু’ত্তা’র বাচ্চাকে ডেকে নিয়ে আয়। আজকে আমার হাতেই খু’ন হবে। সে এতবড় দায়িত্ব পালন করতে পারবে না। তাহলে তাকে দায়িত্ব নিতে কে বলেছিল? তোদের স্পষ্ট ভাবে বলেছিলাম। মুনতাসিম যেন হসপিটাল পর্যন্ত পৌঁছাতে না পারে। এক্সিডেন্ট হবার সাথে সাথে যেন দেহ থেকে প্রাণ পাখিটা দেহ থেকে উড়াল দেয়। তবুও মুনতাসিম কিভাবে বেঁচে গেল? জা’নো’য়া’রে’র বাচ্চা গুলো আমার মুখের সামনে থেকে দূর হয়ে যা। ঐ তিন কু’ত্তা’র বাচ্চাকে আমার সামনে এখন এই মুহূর্তে হাজির কর। জাফর ইকবালের গর্জনে গার্ড গুলো থরথর করে কাঁপতে শুরু করল। সায়ান আঁখিযুগল দিয়ে ইশারা করতেই সবাই কক্ষ ত্যাগ করল। তারা যেতেই তিন ট্রাক ড্রাইভারদের কক্ষে নিয়ে আসা হলো। জাফর ইকবাল শান্ত কণ্ঠে বলল,
–তোদের আমি এমনি এমনি টাকা দিয়েছিলাম। কাজ করতে পারিস না। তাহলে আমার কাজ করতে এসেছিলি কেন? তোদের জন্য এত দিনের সব পরিকল্পনা মুহূর্তের মধ্যে তচনচ হয়ে গেল। তোদের কে’টে পি’স পি’স করে কুকুরকে দিয়ে খাওয়াব আমি। কথা বলছিস না কেন জা’নো’য়া’রের বাচ্চা গুলো। কথা বল না হলে তোদের জ্যান্ত পুঁ’তে ফেলব। জাফর ইকবালের প্রতিটি বাক্য তিন জনকে ভয়ে কাবু করে ফেলল। একজন কম্পন মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,
–আমরা উনাকে মেরেই ফেলতাম। আমরা উনার কাছে পৌঁছানোর আগেই উনার গার্ড এসে তাকে ঘিরে ফেলে। সেখানে থেকে যদি আমরা না পালাতাম। তাহলে ওরা আমাদের ধরে ফেলত। ড্রাইভারের কথায় জাফর ইকবালের কোনো ভাবান্তর হলো না। সে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–মুনতাসিম বেঁচে গেল কিভাবে?
–আসলে উনি গাড়ি থেকে লাফ দিতে চেয়েছিলেন। আমরা দ্রুত সামনে চলে আসায় আর পারেনি। উনি লাফ দিতে যাবে। তখনই উনি সিটকে এসে আমাদের ট্রাকের সাথে বাড়ি খায় এবং মাটিতে পড়ে যায়। উনি আবার উঠে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমরা তাকে আবার ধাক্কা দিয়ে রক্তাক্ত করে ফেলি। তিনি যেভাবে পড়ছিলেন। আমরা ভেবেছি উনি মারা গিয়েছে। উনার যে অবস্থা আমরা দেখেছি বাঁচার কোনো সম্ভবনাই ছিল না।
–আগে যদি জানতাম তোরা এতটা কাঁচা খেলোয়াড়। তাহলে কখনোই তোদের এড বড় দায়িত্ব দিতাম না৷ আমাকে পুতুল খেলার গল্প শোনাচ্ছিস? যেভাবে ধাক্কা দিয়েছিস। সেই ধাক্কায় একটা মুরগীও মরবে না। আমি তোদের শেখাচ্ছি কিভাবে মা’র’তে হয়। বাক্য গুলো শেষ করেই সায়ানের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল জাফর ইকবাল। সায়ান বন্দুক এগিয়ে দিতেই পরপর ছয়টা গুলি তিনজনের বুক ছিদ্র করে দিল। তিনজন গলা কাটা মুরগীর ন্যায় ছটফট করছে। রক্তের স্রোত বয়ে যাচ্ছে জাফর ইকবালের কক্ষ জুড়ে।
সূর্যের রশ্মি ধরনীর বুকে আঁচড়ে পড়ছে। সোনালি আলোয় মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। রজনীর নিস্তব্ধ হসপিটাল কোলাহলে পরিপূর্ণ হয়েছে। মুনতাসিমের অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি। ডক্টর বলেছে আটচল্লিশ ঘন্টা না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারছে না। সবাইকে মলিনতা গ্রাস করে ফেলছে। একটি ভালো বার্তার আশায় সবাই চাতক পাখির ন্যায় বসে আছে। রিয়াদ চৌধুরীর মেহেভীনের দিকে দৃষ্টি যেতেই মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল। সে রাগান্বিত হয়ে বলল,
–এবার তোমার শান্তি হয়েছে মেহেভীন? একদিন রাগ করে বলেছিলাম। আমার ছেলেকে খেয়ে তোমার শান্তি হবে। তুমি সত্যি সত্যি আমার রাগটাকে প্রতিশোধ হিসেবে ধরে নিলে? তুমি আমার ছেলের জীবনে না আসলে আমার ছেলের এই অবস্থা হত না। ধৈর্য যখন বাঁধ ভেঙে যায় মস্তিষ্ক তখন ভদ্রতা ভুলে যায়। হঠাৎ করেই মেহেভীনের মুখভঙ্গি ক্রোধে রুপ নিল। তার সহ্য সীমা পরে হয়ে গিয়েছে। একটু সুখের আশায় কত কিছুই সহ্য করে নিল। দিনশেষে তার বুকেই ছুরি চালানো হলো! সে রাগান্বিত হয়ে বলল,
–আমি যদি বলি আপনার ছেলের অবস্থার জন্য আপনি দায়ী। তখন আপনি কি করবেন আব্বা? কাল রাতে আপনি আমাদের কক্ষে না আসলে মুনতাসিমকে আমি কিছুতেই কক্ষের বাহিরে যেতে দিতাম না। আমি তার ক্রোধ অনেকটা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু আপনি কি করলেন উত্তপ্ত আগুনে ঘি ঢেলে দিলেন। কালকে আপনার পা ধরা বাকি ছিল আব্বা। কতবার করে বলেছিলাম। উনাকে যেতে দিয়েন না। উনি ভয়ংকর রকমের রেগে আছে। আমি হয়তো আপনার থেকে আপনার ছেলেকে কম চিনি। কিন্তু তার মনে কি চলছে। এই কয়দিনে সেটুকু বোঝার ক্ষমতা আমার হয়েছে। আপনি আমায় ভালোবাসেন না কেন আব্বা? আমার ভালোবাসলে কি আমার ভালোবাসায় ঘাটতি পড়ে যাবে। আপনাদের সাথে মানিয়ে নেওয়ার জন্য কত তিক্ত কথাই না সহ্য করলাম। তবু্ও আপনাদের মন পেলাম না। আপনার মেয়ে রাত করে বাড়ি ফিরে বলাতে আমি খারাপ হয়ে গেলাম। আপনার ছেলের এক্সিডেন্ট হলো এতেও আমার দোষ! আপনি বাবা হয়ে কেন ছেলেকে আঁটকে রাখলেন না। আপনার এক ছেলে আরেক ছেলেকে প্রতিনিয়ত খু’ন করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এতেও আমার দোষ! আপনি নিজের সন্তানদের কোনো দোষই দেখছেন না। তাদের সব রাগ আমার উপর ঝারছেন। কেন আমি পরের মেয়ে বলে তাই? মুনতাসিম আপনার প্রাণ প্রিয় ছেলেকে মে’রে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। তাই আপনার হৃদয়ে আঘাত লেগেছে। আর আপনি বাবা হয়ে ছেলের সংসার ভাঙতে বলেছেন। আপনার ছেলের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বাড়বে না। আপনি আমার আব্বা না বলেই আপনি আমার সব কাজে দোষ দেখতে পান। আব্বা জানেন আমার বাবাও আমার ভুলগুলো আপনার মতো করে আড়াল করে দিত। আপনি মুনতাসিমকে রক্তাক্ত করে না দিয়ে নিজের মেয়েকে শাসন করলে আপনাকে এই দিন দেখতে হত না। আপনার ভালোবাসায় আমি খাদ দেখতে পাচ্ছি আব্বা। আমার মনে হয় আপনার চোখের বি’ষ আমি নয়, মুনতাসিম। আমার মাধ্যমে মুনতাসিমকে আঘাত না করে একবারে মেরে ফেলুন। মেহেভীনের কথায় রিয়াদ চৌধুরীর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। সে বিস্ময় নয়নে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে! মেহেভীন এতকিছু কিভাবে জানল? হঠাৎ করে দুশ্চিন্তা মস্তিষ্ককে গ্রাস করে ফেলল। সাহেলা চৌধুরী তাচ্ছিল্য করে বলল,
–কি চৌধুরী সাহেব খুব কষ্ট হচ্ছে? এই মেয়েটার মতো করে যদি আমিও বলতে পারতাম। তাহলে আমার সন্তান গুলো সমান সামান বাবার ভালোবাসা পেত। আপনাদের পরের ছেলের এই একটা অভ্যাস সব দোষ হচ্ছে পরের বাড়ির মেয়ের। কাল রাতে আপনাকে যেতে নিষেধ করেছিলাম। তবুও আপনি গিয়েছিলেন। ছেলেটাকে রাগালেন। ছেলেটা গৃহ ত্যাগ করল। তার ক্ষতি হলো। এখন সব দোষ বাড়ির বউয়ের! আপনার নয় কেন চৌধুরী সাহেব? রিয়াদ চৌধুরীর মস্তক নুইয়ে গেল। বুকের মধ্যে চিনচিন করে ব্যথা করছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে ব্যথাটা তীব্র হতে শুরু করেছে। তখনই মুনতাসিমের আইসিইউর ওয়ার্নিং বেলটা বেজে উঠল। তার শব্দে হসপিটাল মুখরিত হয়ে গেল। সে উচ্চ শব্দে জানান দিচ্ছে রোগীর দেহ থেকে প্রাণ পাখিটা বের আসার সময় চলে এসেছে। ওয়ার্নিং বেল বাজতেই ডক্টর, নার্স প্রাণপণে আইসিইউর দিকে ছুটে চলেছে। কারো হাতে ইলেকট্রনিক শক, কারো হাতে আরো একটা অক্সিজেন সিলিন্ডার, কারো হাতে ইনজেকশন নিয়ে ঝড়ের গতিতে আইসিইউর দিকে দৌড়ে যাচ্ছে। ওয়ার্নিং বেল অনবরত বেজেই চলেছে। ডক্টর নার্সকে দ্রুত ইলেকট্রনিক শকটা এগিয়ে দিতে বলল। সে ইলেকট্রনিকস শক হাতে নিয়েই মুনতািসমের বুকে চেপে উঠল। কয়েকবার দেওয়ার পরই মুনতাসিম রেসপন্স করা ছেড়ে দিল। মুহুর্তের মধ্যে আইসিইউ জুড়ে নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরল।
চলবে…..
(আমি এখন একটু অবসরই আছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমার মাথা যন্ত্রনা আমার পিছু ছাড়ছে না। আমি কালকে দিতে চেয়েছিলাম। মাথার ব্যথার জন্য ৩০০+ শব্দের পর লিখতে পারিনি। আজ-ও একই অবস্থা! তবুও চাপ নিয়ে লিখেছি। সবাই আমার জন্য একটু দোয়া করবেন। এত ডক্টর দেখাই এত ঔষধ খাই। কিছু দিন ভালো থাকি তারপর আগের মতো অবস্থা। রোগীর লাস্ট স্টেজে যে যন্ত্র দিয়ে রোগীর বুকে তাপ দেয় ওটার নাম কি এটা আসলে আমি জানিনা। আমার পরিচিত দের থেকে জানলাম ওটার নাম ইলেকট্রনিক শক। আবার কেউ কেউ বলল এটা নিয়ে নাকি দৌড়ানো যায় না। দৌড়ানো লিখলে সবাই ভুল ধরবে। এটা অবাস্তব হয়ে যায় বাস্তব লিখতে। কিন্তু হসপিটালের জিনিস হসপিটালের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে না। আমি তো দেখেছি আমার মামার ক্লিনিকে দৌড়ে নিয়ে যেতে, আবার সিনেমাতেও দেখেছি। সিনেমার গুলো নাকি মূলহীন। যাই হোক বাস্তব আর কাল্পনিক মিলিয়েই লিখতে হয়। তবেই না গল্প সুন্দর হবে। মানুষ বাস্তবে সুখ পায়না বলেই গল্পে সুখ খুঁজতে আসে। সেখানে একটু অকল্পনীয় কিছু দেখালে ক্ষতি কিসে! যদি ভুল থেকে থাকে তাহলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল। যারা স্যাড স্যাড বলে চিল্লাচ্ছেন। তাদের বলব ধৈর্যের ফল মিঠা হয়। মুনতাসিমের সিক্রেট শত্রুকে সামনে নিয়ে আসার জন্য এসবের প্রয়োজন আছে। গল্প শেষ না হতেই এই যে ব’ক’ছে’ন। গল্পের শেষ পর্বে গিয়ে আরো ব’ক’বে’ন ঠিক আছে। সবাই রেসপন্স করবেন। শব্দসংখ্যা:২১২১)