খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৫৬ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
162

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৫৬
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সময়! তবে কি ভালোবাসার বিপরীতে গিয়ে সময়ের স্রোত বাধাগ্রস্ত হলো? প্রনয়ণের হাওয়া সময়কে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে নিয়েছে। প্রিয়জনকে তার মায়াবিনীর ফিরিয়ে দিতেই হবে, তবেই তার মুক্তি। বাহির পুড়লে মানুষ দেখতে পায় ভেতর পুড়লে দেখতে পায় না কেন? প্রতিটি মুহুর্তে দম আঁটকে আসছে মেহেভীনের। এই বুঝি দেহ থেকে প্রাণ পাখিটা উড়াল দিবে। সমস্ত কায়া নিস্তেজ হয়ে আসতে শুরু করেছে। কায়ার সমস্ত হাড় গুলো গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাবার মতো ব্যথা অনুভব করছে সে। ডক্টররা হাল ছেড়েই দিয়েছে। আইসিইউর প্রতিটি মানুষের মুখশ্রীতে অমাবস্যার আঁধার ঘনিয়ে এসেছে। ডক্টর শেষ বারের মতো মুনতাসিমের বুকে তাপ দিতেই মুনতাসিমের জোরে শ্বাস দেওয়ার শব্দে খুশির আলোড়ন ছড়িয়ে পড়লো। তারা আবার ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পরে ডক্টরের মুখশ্রী দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এল, “আলহামদুলিল্লাহ।”

প্রভাত যেমন জমিনের বুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সূর্য তার কিরণ দিয়ে ধরনীকে করেছে আলোকিত। ঠিক তেমনই প্রভাতের নতুন আলোর সাথে নতুন করে জীবন ফিরে পেয়েছে মুনতাসিম। চারদিন পর জ্ঞান আসলো তার। আঁখিযুগল মেলে তাকাতেই চারপাশ ঝাপসা লাগছে। কিছু সময়ের ব্যবধানে স্পষ্ট হতে শুরু করল চারপাশ। সমস্ত কায়া ব্যথায় জর্জরিত হয়ে আছে। বাহির থেকে কোলাহলে কর্ণকুহরে এসে পৌঁছাচ্ছে। মুনতাসিমের সমস্ত মুখশ্রীতে মলিনতা এসে ধরা দিয়েছে। সে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো স্মরন করতে লাগল। হঠাৎ করেই সমস্ত চিন্তাধারা থমকে গেল। মনের গহীনে থেকে কিছু বাক্য মস্তিষ্কে এসে বাজছে। আমার কেউ ছিল না। আমার কেউ নেই। আমি একান্তই আমার নিজের আমি কারো না। কিন্তু পাষাণ মন প্রেয়সীকে দেখার জন্য অশান্ত সমুদ্রের ন্যায় উথাল-পাতাল করছে। নিজেকে দমানো গেলেও অবাধ্য মনকে দমানো যাচ্ছে না। মস্তিষ্ক অদ্ভুত ভাবে বিষন্নতায় ছেয়ে গেল। মুনতাসিম কাউকে ডাকল না। সে নিষ্পলক চাহনিতে স্থির হয়ে থাকা সিলিং ফ্যানের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে।

–স্যার আপনার জ্ঞান ফিরেছে? সাদা এপ্রন পড়া নার্সের বাক্য গুলো কর্ণপাত হতেই মুনতাসিম আঁখিযুগল বন্ধ করে ফেলল। মুনতাসিমের নিস্তব্ধতার কারণ খুঁজে পেল না নার্সটি। অন্যান্য রোগীদের তুলনায় মুনতাসিমকে বেশ অদ্ভুত লাগল! যেখানে মানুষ সুস্থ হয়ে প্রিয়জনদের দেখায় তৃষ্ণায় কাতর থাকে, সেখানে মুনতাসিম কিভাবে এতটা নির্বাক হয়ে আছে? নার্স দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। চাকত পাখি যেমন বৃষ্টি পেলে প্রানবন্ত হয়ে উঠে, ঠিক তেমনই মুনতাসিমের জ্ঞান ফেরার খবর কর্ণকুহরে আসতেই সকলের মুখশ্রীতে প্রাণবন্ত হাসির রেখার দেখা মিলল। রিয়াদ চৌধুরী দ্রুত ছেলের কেবিনে গেল। বাবাকে দেখেই মুখশ্রী ঘুরিয়ে নিল মুনতাসিম। রিয়াদ চৌধুরী কোমল কণ্ঠে বলল,

–কেমন আছিস বাবা? বাবার প্রতিটি বাক্য বিষাক্ত শোনালো মুনতাসিমের কাছে। সে নিস্তেজ কণ্ঠে বলল,

–কেন এসেছেন? আপনাকে না বলেছি। আমি মরে গেলে-ও আমার লা’শে’র কাছে আপনি আসবেন না। উচ্চ স্বরে কথা গুলো বলতে গিয়ে মস্তিষ্কে কঠিন ভাবে চাপ লাগল। চারপাশে আঁধার ঘনিয়ে আসতে শুরু করল। মুনতাসিম ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছে। মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টি যেতেই ডক্টর রিয়াদ চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে বলল,

–আপনি এখনই কেবিন থেকে বের হয়ে যান স্যার। উনার মস্তকে ভিষণ বাজে ভাবে আঘাত লেগেছে। এখন যদি উনার মস্তকে চাপ প্রয়োগ করা হয়। তাহলে মস্তিষ্কে হঠাৎ করে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে বা রক্তক্ষরণ দেখা দিতে পারে। এতে রোগীর প্রতিটি মস্তিষ্কের কোষগুলি কাজ করা বন্ধ করতে বা মারা যেতে পারে। যখন মস্তিষ্কের স্নায়ু কোষগুলি মারা যায়, তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা শরীরের অঙ্গগুলির কার্যকারিতা ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা হারিয়ে যায়। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। আপনাকে আমি কি বোঝাতে পেরেছি চৌধুরী সাহেব? রিয়াদ চৌধুরী কোনো বাক্য উচ্চারণ না করে দ্রুত স্থান ত্যাগ করল। ছেলের বিধস্ত মুখশ্রী ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দগ্ধ করে দিচ্ছে। মুনতাসিমের কাছে শুধু তাইয়ানকে আসার অনুমতি দিল মুনতাসিম। তাইয়ান ব্যতিত অন্য কেউ প্রবেশ করলে ফলাফল ভয়ংকর রকমের হবে। মুনতাসিমের কথা মতো ডক্টর সবাইকে তার কেবিনে যেতে নিষেধ করেছে। তাইয়ান শুকনো মুখশ্রী করে মুনতাসিমে পাশে বসল। মুনতাসিমকে দেখে তার উত্তপ্ত হৃদয় মুহুর্তের মধ্যে শীতল হয়ে গেল। তাইয়ানের দিকে দৃষ্টি যেতেই মুনতাসিম মলিন হাসলো। তাইয়ান অভিমানের সুরে বলল,

–আপনি ভিষন স্বার্থপর স্যার। আমি আপনাকে বলেছিলাম। আপনার সাথে আমার জীবন জড়িয়ে আছে। তাই বাঁচতে হলে আপনার সাথে বাঁচব। আর ধরনীর মায়া ত্যাগ করতে হলে দু’জন একসাথে করব। তবে কেন আমার সাথে বেইমানি করলেন স্যার?

–তাইয়ান তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী বা প্রেমিকা নও! এভাবে কথা বলছ কেন? আমি তোমার সাথে প্রেম করে ধোঁকা দিয়েছি নাকি! পুরুষ মানুষের মতো কথা বলো। আমাকে দেখে তোমার লেসবিয়ান মনে হয়? মুনতাসিমের কথায় লজ্জা পেল তাইয়ান। ধরনীর বুকে সবচেয়ে কঠিন কাজ হচ্ছে এই মানুষটাকে বোঝা। কণ্ঠনালিতে এসে বাক্য গুলো বেঁধে যাচ্ছে। তবুও তার রসিকতার শেষ নেই। এই মানুষ টাই তার অনুপ্রেরণা। মৃত্যুর সন্নিকটে গিয়ে ফিরে এসেও নিজেকে কিভাবে শক্ত রাখতে হয়। সেটা এই মানুষটাকে দেখে শেখা উচিৎ। তাইয়ানের মনটা ভালো হয়ে গেল। হঠাৎ করেই মস্তিষ্ক ফুরফুরে হয়ে উঠল। অনুভূতিরা আনন্দে মিছিল করছে। তাইয়ান নিম্ন কণ্ঠে বলল,

–আপনি অনুমতি দিলে ম্যাডামকে নিয়ে আসি স্যার? আপনি বোধহয় ম্যাডামের অপেক্ষায় আছেন। তাইয়ানের বাক্য গুলো কর্ণপাত হতেই মুনতাসিমের মুখশ্রীতে শত জনমের আকুলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটলো। আঁখিযুগলে প্রেয়সীকে দেখার তৃষ্ণা কণ্ঠে একরাশ ক্রোধ নিয়ে তাইয়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করল। মুনতাসিমের শীতল দৃষ্টি তাইয়ানের মস্তক নুইয়ে ফেলল। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আমার জীবনের বারবার মৃত্যু আসুক তাইয়ান। তবু আর কখনো ভালোবাসা না আসুক। কোনো স্বার্থপর নারীর মুখ আমি দেখতে চাই না। আমাকে দেখার অনুমতি যদি হারাতে না চাও। তবে এ বাক্য আমার সামনে দ্বিতীয় বার উচ্চারন করবে না। এবার তুমি চলে যাও। আমার একা থাকতে ইচ্ছে করছে। তাইয়ান বিলম্ব করল না। দ্রুত কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। তাইয়ান একটা রাগান্বিত মানুষকে দেখে গেল। কিন্তু একটা পিপাসিত হৃদয় প্রেয়সীকে দেখার তৃষ্ণায় শতবার মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করছে। সেটা তাইয়ান দেখল না। দেখলে কখনো এভাবে চলে যেত না। মানুষটাকে রক্তাক্ত হওয়া থেকে বাঁচাতে তার প্রেয়সীকে মানুষটার সামনে হাজির করত।

অভিমান অভিযোগের খেলা খেলতে খেলতে কে’টে গিয়েছে দেড় মাস। মস্তিষ্কে অভিমান হৃদয়ে এক গুচ্ছ ভালোবাসা। এই নিয়েই চলছে দু’জনের প্রণয়ের খেলা। যে মানুষটার মুখ দেখতেও নারাজ সেই মানুষটাকে লোকচক্ষুর আড়ালে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার অনুভূতিটা ভয়ংকর রকমের সুন্দর। আবার যে মানুষটা মুখ দেখবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। রজনীর মধ্য প্রহরের নিদ্রায় বিভোর থাকা সেই মানুষটাকে দেখার অনুভূতিটা পরম শান্তির। মান-অভিমানের আড়ালে লুকোচুরির ভালোবাসা গুলো একটু বেশিই সুন্দর। মুনতাসিম পাঁচ দিন হলো বাড়ি ফিরেছে। ডক্টর তাকে দু’মাস থাকতে বলেছিল। কিন্তু মুনতাসিম বলেছে সে থাকবে না। তাকে ধরে রাখার সধ্যি কার আছে? মেহেভীনের মুখ দেখতে চায় না বিধায় মেহেভীনকে অন্য কক্ষে থাকতে হচ্ছে। রজনী মধ্য প্রহর চলছে। সবাই গভীর নিদ্রায় তলিয়ে আছে। ঘুম নেই শুধু মেহেভীনের আঁখিযুগলে। কারন রজনীর মধ্য প্রহরেই তার প্রিয় মানুষটিকে দেখার সুযোগ মিলে। তাকে কারো কড়া বাক্য শুনতে হয় না। শখের মানুষের পাশে কিছু সময় শান্তিতে বসে থাকতে পারে। কি অদ্ভুত তাই না মেহেভীন রোজ রজনীর মধ্য প্রহরের মুনতাসিমে দেখতে যায়। গিয়ে মুনতাসিমের কবাট খোলা পায়। মায়াময়ী কি জানে না তার আগ্রহে কেউ নিদ্রাহীন রজনী পার করে। সে আসবে বলেই কবাট খোলা থাকে। সে কি চাইলে পারে না নিজের অধিকার টুকু ছিনিয়ে নিতে! তার অধিকার আজ-ও তারই আছে। সে চাইলেই নিজের অধিকারটুকু ফলাতে পারে। তার অধিকার একটা মানুষের মন গলিয়ে দিতে পারে। অভিমানের শক্ত আবরণ ভালোবাসার শক্তি দিয়ে ভেঙে ফেলতে পারে। কিন্তু পাষাণী মন বুঝে না। সে শুধু জানে ভুল বুঝতে আর হৃদয়ে রক্তক্ষরণ বাড়াতে।

মেহেভীনে মুনতাসিমের অবাধ্য কেশগুলোতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ঘুমন্ত মুনতাসিমকে ভিষণ স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। মনটা ভিষণ অসভ্য হয়ে উঠেছে। এই মাঝ রাতে প্রিয়তমকে ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। নিজের ইচ্ছেটাকে দমালো না মেহেভীন। খুব সাবধানতা অবলম্বন করে মুনতাসিমের ললাটে অধর ছোঁয়াল মেহেভীন। মেহেভীনের উষ্ণ ছোঁয়াতে মুনতাসিমের ভেতরে উথাল-পাতাল শুরু করে দিল। অন্যদিন মেহেভীন আসে চুপচাপ বসে থাকে কিছুক্ষণ চলে যায়। কিন্তু আজ যে এমন অকল্পনীয় কিছু করে ফেলবে। তা মুনতাসিমের চিন্তাধারার বাহিয়ে ছিল। আচমকা মুনতাসিম আঁখিযুগল মেলে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করল। হঠাৎ মুনতসিম সজাগ হওয়ায় মেহেভীনের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ বেড়ে গেল। হৃদয়টা অশান্ত হয়ে কেমন ধড়ফড় করছে। চোর যেমন ধরা পড়লে বুদ্ধি কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসে ঠিক তেমনই মেহেভীনের সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসতে শুরু করেছে। লজ্জায় সমস্ত মুখশ্রীতে রক্তিম আভা ছড়িয়ে পড়েছে। মুনতাসিমকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে দ্রুত কক্ষ থেকে বেড়িয়ে গেল। মুনতাসিম রাগান্বিত হয়ে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে।

চারিদকে প্রভাতের আলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। মুনতাসিমের অসুস্থতার খবর পেয়ে রাজনৈতিক দলের বহু নেতা এসে মুনতাসিমের সাথে সাক্ষাৎ করে গিয়েছে। প্রভাতের আলো ফুটতেই কয়েকজন নেতা এসে হাজির হয়েছে। মুনতাসিম তাদের সাথে ভালোমন্দ কথা বলে রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিল। তখনই তাহিয়া আর সুফিয়া চৌধুরী গৃহে প্রবেশ করে। তাদের দেখে মুনতাসিমের গম্ভীর মুখশ্রী আরো গম্ভীর হয়ে যায়। মুনতাসিম তাদের সাথে সংক্ষেপে আলোচনা শেষ করে তাদের বিদায় জানালো। তাহিয়া দৌড়ে মুনতাসিমের কাছে আসতে চাইলে মুনতাসিম বিরক্ত হয়ে নিজের কক্ষ চলে গেল। তাহিয়ার সমস্ত মুখশ্রীতে অসহায়ত্ব ফুটে উঠল। তাহিয়া অশ্রুসিক্ত নয়নে মায়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। সুফিয়া চৌধুরী মেয়েকে আশ্বাস দিয়ে বলল,

–মুনতাসিম আর মেহেভীনের দুরত্ব আমি ডিভোর্স পর্যন্ত নিয়ে যাব। তুই হবি মুনতাসিমের অর্ধাঙ্গিনী। তুই মায়ের ওপরে ভরসা রাখ ভাগ্যিস দু’জনের দুরত্বের কথা জেনেছিলাম। তাহিয়া কোনো বাক্য উচ্চারন করল না। নিরবে অশ্রু বিসর্জন দিতে লাগল।

মুনতাসিম নিজের ক্ষত স্থানে মেডিসিন দিচ্ছিল। এক হাতে ব্যথা থাকায় সেই হাত প্রয়োগ করে মেডিসিন দিতে পারছে না। কবাটের আড়াল থেকে মেহেভীন বলল,

–আমি লাগিয়ে দেই?

–না।

–হিজাব মেরে এসেছি মুখ দেখা যাচ্ছে না তো। মেহেভীনের দিকে দৃষ্টি যেতেই মুনতাসিম হতভম্ব হয়ে গেল। সেটা বাহিরে প্রকাশ না করে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–খু’ন করে ফেলব কিন্তু। আমার কক্ষের সামনে থেকে চলে যান।

–খু’ন হতে এসেছি গো মন্ত্রী সাহেব। আমাকে একটু খু’ন করবেন। জীবনে কোনোদিন খু’ন হইনি। একবার খু’ন হয়ে দেখতাম খু’ন হতে কেমন লাগে? বিরক্ততে মুনতাসিমের সমস্ত মুখশ্রী কুঁচকে এল। সে কবাট বন্ধ করতে যাবে তখনই মেহেভীন মুনতাসিমের হাত থেকে মেডিসিনটা নিয়ে মুনতাসিমকে দিয়ে দিতে লাগল। মুনতাসিম সরে যেতে চাইলে মেহেভীনের কিছু বাক্য কর্ণে আসতেই স্থির হয়ে গেল সে। মেহেভীন খুব শান্ত কণ্ঠে বলল,

–ভয় নেই খু’ন করতে আসিনি। আপনি আমার মুখ দেখতে চান না। আমিও আমার মুখ আপনাকে দেখাতে চাই না। আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি। আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ হলেই আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাব। এতটা দূরে চলে যাব। যতটা দূরে গেলে আমার কথা আপনার আর মনে পড়বে না। কি বিষাক্ত শোনালো কথা গুলো! ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। একরাশ ক্ষোভ তৈরি হলো মেহেভীনের প্রতি। সে মেহেভীনের হাত থেকে মেডিসিনটা নিয়ে ছুরে ফ্লোরে ফেলে দিল। রাগান্বিত হয়ে বলল,

–যার তার হাতে মেডিসিন নেই না। এখনই আমার কক্ষ থেকে বের না হয়ে গেলে, আমি নিজেই কক্ষ থেকে বের হয়ে যাব। আপনাকে আমার বিষাক্ত লাগে এটা আপনি বুঝেন না। আমি আপনাকে ইগনোর করে চলছি। সেটা আপনি দেখতে পাচ্ছে না। আপনি কিসের আশায় এখানে পড়ে আছেন? আপনি ভাববেন না। আপনার সাথে কথা বলছি মানেই আপনার সব ভুলগুলো ক্ষমা করে দিয়েছি। যেখানে আমি আপনাকে চাইছি না। সেখানে এ বাড়িতে থাকা আপনার মূল্যহীন। চলে কেন যাচ্ছেন না? আপনি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যান। আমাকে মুক্তি দিয়ে যান। এবার আপনার শান্তি হয়েছে। এ কথা গুলোই শুনতে চেয়েছিলেন। আপনি সর্বদা নির্দোষ থাকতে চেয়েছিলেন। আমাকে দোষী সাবস্ত করতে চেয়েছিলেন। আমি আপনার মনে ইচ্ছে পূর্ণ করে দিলাম। সব গল্পে আপনিই শ্রেষ্ঠ চরিত্র হিসেবে থাকুন। গল্পের মূল্যহীন আর নিকৃষ্ট চরিত্রটা না হয় আমি হলাম। কথা গুলো বলেই মুনতাসিম বেলকনিতে চলে গেল। মেহেভীন কেমন দম বন্ধ লাগছে। বুকের মধ্যে ব্যথা করছে। মস্তক থেকে হিজাব খুলে ফেলল সে। মুনতাসিমের আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। নিজের বলা বাক্য গুলো এখন নিজেকেই ভিষণ পোড়াচ্ছে। কাউকে কড়া বাক্য শুনিয়েও শান্তি নেই। কাউকে বলার পরে কড়া বাক্য গুলো পরক্ষনে নিজেকেই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়। মুনতাসিমের ভাবনার মাঝেই এক জোড়া কোমল হাত মুনতাসিমকে পেছনে থেকে আলিঙ্গন করল। সে সক্ষম হয়েছে। মেয়েটাকে কাঁদাতে চেয়েছিল মেয়েটাকে কাঁদছে। কি অদ্ভুত যে মানুষটা তাকে আঘাত দিল! সে মানুষটাকেই আলিঙ্গন করে কষ্ট মোচন করার প্রয়াস চালাচ্ছে। মেহেভীন কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল,

–আপনি মানিয়ে নিবেন বলেই আমি রাগ করি। আপনি শুধরে দিবেন বলেই ভুল করি। আপনি সহ্য করবেন বলেই আঘাত করে ফেলি। আপনি গুছিয়ে দিবেন বলেই আমি বারবার এলোমেলো হয়ে যাই। আপনি ছেড়ে যাবেন না বলেই আপনাকে এত বিরক্ত করি। আমাকে আঘাত করবেন না বলেই আপনার অপছন্দের কাজ করি। তবুও দিনশেষে এটাই ভাবি আপনি শুধুই আমার। সেই আপনি টাই যদি আমার না থাকেন। তাহলে এখানে থাকাটা আমার মূল্যহীন। আপনি তো আমায় অনেক সহ্য করলেন। আর কয়টা দিন করুন। আমি খুব বেশিদিন আপনার বিরক্তির কারন হব না। আপনি সুস্থ হলেই আমি চলে যাব। আমার ছায়াও আপনার আশেপাশে পড়তে দিব না। মেহেভীনের প্রতিটি বাক্য মুনতাসিমের মস্তিস্ক উত্তপ্ত করে দিল। সে তাচ্ছিল্য করে বলল, “ধুর বোকা মেয়ে খু’ন করার পর খু’নি’রা কি লা’শে’র জন্য কাঁদে নাকি!” মুনতািসমের কথায় কিছু সময়ের মেহেভীনের হৃদস্পন্দনের গতিবেগ থেমে গেল। পরিবেশ জুড়ে নিস্তব্ধতা ঘিরে ধরলো। প্রকৃতি দেখল একজনের বাহির পুড়ছে আরেকজনের ভেতর পুড়ছে। প্রকৃতির যদি বলার ক্ষমতা থাকতো। তাহলে সে মেহেভীনকে চেঁচিয়ে বলত। ও নিষ্ঠুর রমনী পাষান মনের অধিকারীনি ভালোবাসার কাঙ্গাল ছেলে টার থেকে ভালোবাসা কেঁড়ে নিয়ে তাকে নিঃস্ব করে দিও না।

চলবে…..

(যারা রোমান্টিক পর্বের আশা আছেন। তারা পর্ব গুলো স্কিপ করতে পারেন। গল্পের স্বার্থে এগুলো লিখতে হচ্ছে। দুম করে দশ ধাপ এগিয়ে গেলে গল্পটা খাপছাড়া হতে পারে। তাই আস্তে আস্তে এগোতে হচ্ছে। এতে আপনাদের বিরক্তি আসতে পারে। এই গল্পটায় আমি অনেকটা সময় আর শ্রম দিয়েছি। শেষে এসে খারাপ করতে চাই না। যত দিন যাচ্ছে মুনতাসিম আর মেহেভীন ফুরিয়ে আসছে। বুক খালি খালি আমার লাগছে। কি অদ্ভুত এক অনুভূতি! সবাই রেসপন্স করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here