অলিখিত_অধ্যায় #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৮।

0
774

#অলিখিত_অধ্যায়
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৮।

সকাল সকাল অফিসের জন্য তৈরি হচ্ছে ফারজাদ। আজও একটা মিটিং আছে। বসের একমাত্র বাধ্যগত এমপ্লয়ি বলে তার কাজের চাপ প্রচুর। বসের কথা আজকাল সে ফেলতেই পারছে না। চুলটা ঠিকঠাক করে খাবার টেবিলে গেল দ্রুত। দিলরুবা বেগম আগে থেকেই তৈরি করে রেখেছেন সব।ফারজাদ খেয়ে নিল অল্প কিছু। বলল,

‘আম্মি, দুপুরে আজ রেস্টুরেন্টে খাব; টিফিন দিতে হবে না।’

‘রেস্টুরেন্টেই কি মিটিং হবে আজ?’

‘জি।’

‘আচ্ছা, খেয়ে নিও ঠিক মতো।’

‘ঠিক আছে, আমি উঠছি তবে। মৌমি, কোথায়? নাম তাড়াতাড়ি।’

দিলরুবা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,

‘মৌমিকে নামিয়ে দিতে গেলে লেইট হবে না?’

‘না না, ঐটুকু সময়, সমস্যা হবে না।’

মৌমি ব্যাগ কাঁধে দ্রুত গিয়ে ভাইয়ের গাড়িতে বসল। ফারজাদও তার কাঁধে ঝুলিয়ে নিল তার অফিসের ব্যাগটা। তারপর রওনা দিল দুজন।

_______

গাড়িটা একটা থামল। প্রিয়তা চোখ মেলে তাকাল তখন। শরীরটা বড্ড ক্লান্ত তার। সারারাত অনেক জবরদস্তি করেও নিজেকে আর ছাড়াতে পারেনি। সকাল এখন। বাইরে ফকফকা রোদ। তার হাত, পা, মুখ বাঁধা এখনো। সে দেখল, তার পাশের মেয়েটা এখনো ঘুমাচ্ছে। সে বাইরে চাইল। ভেতর থেকে বাইরের দৃশ্য স্পষ্ট হলেও বাইরে থেকে কেউ ভেতর দেখছে না। নয়তো এতক্ষণে হাত পা বাঁধা দুজন মেয়েকে এভাবে দেখলি কেউ না কেউ ঠিকই বাঁচাতে আসত। তারা এখন কোথায় আছে সেটাও বুঝতে পারছে না। আশেপাশে ভালো মতো দেখল সে, যদি জরুরি কিছু নজরে পড়ে। দূরে একটা চায়ের দোকান ছাড়া আর কিছুই পড়ল না চোখে। চায়ের দোকানে কোনো বোর্ডও নেই যে নাম দেখবে। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে তার। ধিক্কার জানাচ্ছে নিজেকে। কেন এমন একটা কাজ করল সে? আজ মা বাবার কথা শুনলে এমনটা কখনোই হতো না। কান্না পাচ্ছে তার ভীষণ। সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। ড্রাইভারের পাশের লোকটি ভেতরেই ছিল। শব্দ পেয়ে পেছন ফিরে তাকায় সে। প্রিয়তাকে কাঁদতে দেখে হয়তো হাসে। মুখে মাস্ক পরা বলে বোঝার জো নেই। প্রিয়তা লোকটির দিকে চেয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়ার আকুতি জানাল। লোকটি পাত্তা দিল না সেসব। আবার সামনের দিকে ঘুরে বসল। প্রিয়তা চোখ বুজে শান্ত করল নিজেকে। কিছু একটা তো করতেই হবে।

সে তার বাঁধা দু পা তুলে তার বরাবর লোকটার সিটে লাথি মারল জোরে। রেগে গেল লোকটা। পেছন ফিরে চেয়ে বলল,

‘পা ভেঙে দেব একদম।’ (উর্দু)

প্রিয়তা থামল না। আরো জোরে জোরে লাথি মারতে আরম্ভ করল। লোকটি এবার ক্ষেপে গেল প্রচন্ড। পেছন ফিরে এগিয়ে এসে তার গাল চেপে বলল,

‘খুব সাহস দেখছি তোর? আর কিছুক্ষণ অপেক্ষা কর, এত সাহস কোথায় যায় দেখে নিব আমি।'(উর্দু)

প্রিয়তা রেগে গেল খুব। তার বাঁধা দুই হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে শক্ত করে নিল। তারপর নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে ঘুষি বসাল লোকটার নাক বরাবর। আচমকা আঘাতে তাল সামলাতে না পেরে সিটের উপর ঢলে পড়ে সে। প্রিয়তার পাশের মেয়েটিও জেগে যায় ততক্ষণে। অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে সেও পা তুলে লাথি মারে লোকটাকে। লোকটা দ্রুত উঠে বসে। সে দুই হাতে ধরেও যেন মেয়ে দুটোকে সামলাতে পারছে না। এত শক্তি মেয়েগুলোর মাঝে এলো কোথ থেকে। প্রিয়তা নিজেকে ছাড়ানোর জন্য মাথা দিয়ে ফের লোকটার নাক বরাবর আঘাত করে বসল। এবার বেশ অনেকটাই ব্যথা পায় সে। নাক দিয়ে র ক্ত পড়া শুরু হয়। লোকটার মাথা ঝিমঝিম করে উঠে তাতে। মাথা ধরে সিটে বসে পড়ে। সেই সুযোগে প্রিয়তা সিটের উপর দিয়ে তার দুহাতের ভেতর লোকটার মাথা চেপে ধরে। শক্ত ভাবে ধরে প্রিয়তা। ইশরায় পাশের মেয়েটাকে বলে তার মুখে বাঁধা কাপড়ের গিট’টা পেছন থেকে কামড়ে খুলে দেওয়ার জন্য। মেয়েটাও তাই করে। একটু কষ্ট হলেও পরিশেষে তার কাজে সফল হয় সে। মুখ খোলা পেতেই বড়ো করে শ্বাস নেয় প্রিয়তা। তারপর লোকটার গলার কাছটা আরো জোরে চেপে ধরে। এতে শ্বাস আটকে আসে তার। প্রিয়তা এভাবেই ধরে রাখে অনেকক্ষণ। যখন মনে হয় লোকটা নিস্তেজ হয়ে পড়েছে তখন সে ছেড়ে দেয়। তারপর নিজেই কামড়ে হাতের বাঁধনটুকু খুলে ফেলে। পায়েরটাও খুলে। পাশের মেয়েটাকেও অতঃপর মুক্ত করে দেয়। এবার আরেক ঝামেলা। গাড়ির দরজা খুলতে গিয়ে দেখে দরজা লক করা। আবার তীরে এসে তরী ডুবার ভয়ে চোখ মুখ শুকিয়ে উঠে তাদের। গাড়ির ড্রাইভার আসার আগেই দ্রুত কিছু একটা করতে হবে। পাশের মেয়েটি বলল,

‘জানলার কাচ ভেঙে ফেললে হয় না?'(উর্দু)

‘কাচ ভাঙা সম্ভব না। অনেক মোটা কাচ, ভাঙবে না সহজে।’ (উর্দু)

‘তাহলে এবার উপায়?'(উর্দু)

প্রিয়তা খেয়াল করল। হেসে বলল,

‘গাড়ির কাচ ভাঙার প্রয়োজন নেই; ঐ যে চাবি।’

মেয়েটি দেখল চাবি গাড়িতেই লাগানো, তারা অযথাই এত ভাবছিল। প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে দ্রুত সবগুলো দরজার লক খুলল। তারপর দরজা খুলে বের হতেই দূর থেকে ড্রাইভারকে দেখল হেলেদুলে আসছে। এতক্ষণ পর্যন্ত হাত পা বাঁধা থাকায় হাঁটতে কষ্ট হচ্ছিল তাদের, তাও কোনোরকমে দৌড় লাগাল। দুজন ছুটল তাদের সবটুকু শক্তি দিয়ে।

রাস্তার দু’পাশে সাড়ি সাড়ি গাছ। এইদিকে বাড়ি ঘর নেই কোনো। কোথায় যাবে, কোনদিকে গেলে একটু আশ্রয় পাবে বুঝে উঠতে পারছে না। এর মধ্যেই ড্রাইভার গাড়িতে ফিরে হতভম্ব। গাড়ি ফাঁকা দেখে মাথা ঘুরে উঠল তার। সে দ্রুত ঐ লোকটিকে ডাকল। তার সাড়া না পেয়ে আরো বেশি ঘাবড়ে গেল যেন। গাড়িতে দড়িগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে থাকতে দেখে যা বোঝার বুঝে গেল সে। ভয়ে ঢোক গিলল। আশেপাশে চাইল। মেয়েগুলোকে দেখতে পাচ্ছে না কোথাও। এইটুকু সময়ের মাঝে দূরে কোথাও যাবে না নিশ্চয়ই। সে গাড়ি ঘুরাল দ্রুত। যে করেই হোক তাদের খুঁজে বের করতেই হবে। নয়তো আজ’ই শেষ দিন হবে তাদের।

প্রিয়তা আর অজ্ঞাত মেয়েটা একটা গাছের আঁড়ালে বসে রইল ঘাপটি মেরে। শ্বাস প্রশ্বাস দ্রুত উঠা নামা করছে তাদের। অজ্ঞাত মেয়েটি জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বলল,

‘আমার খুব ভয় করছে।'(উর্দু)

প্রিয়তা চাইল তার দিকে। ভয় তো তারও করছে। ভীষণ ভয়। তাও সাহস নিয়ে বলল,

‘ভয় পেও না। ইনশাল্লাহ, সব ঠিক হয়ে যাবে।’

গাড়িটি একই রাস্তা দিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার। লোকটি গাড়ি থেকে নেমে নেমে আশেপাশে খুঁজে বেড়াচ্ছে। মেয়ে দুটোকে পাচ্ছে না। দুশ্চিন্তা বাড়ছে তার। বাকি গাড়িগুলো গন্তব্যের পথে। আর সে এখনও এখান থেকেই বের হতে পারেনি। খালি হাতে গেলে আজ আর বেঁচে ফিরতে পারবে না নিশ্চিত।

_______

ফারজাদ বীতঃস্পৃহ হয়ে রেস্টুরেন্টে বসে আছে। বস বলেছেন, আজ মিটিং নাকি তাঁর মেয়ের সাথে। সে বুঝতে পারছে না, বসের মেয়ের সাথে সে তাদের ব্যবসা নিয়ে কী মিটিং করবে। মেয়েটা তো এখনো এই ব্যবসাই যুক্ত হয়নি। কিন্তু এই কথা কি আর বসের মুখের উপর বলা যায়? আপাতত তাই ক্ষুব্ধ হয়ে বসে আছে সে। মাঝে মাঝে নিজেকে যেন এমপ্লয়ি না, বসের চাকর মনে হয়।

আধঘন্টা পর একটা মেয়ে হেলতে দুলতে ফারজাদের সামনে এসে দাঁড়াল। বদনে তার জিন্স প্যান্ট আর একটা শার্ট। মুখে চমৎকার প্রসাধনী। তাকে দেখে উঠে দাঁড়াল ফারজাদ। জোরপূর্বক হেসে বলল,

‘আসসালামু আলাইকুম, ম্যাম।’

মেয়েটি কপাল গুটাল। বলল,

‘নো, ম্যাম। কল মি জারা।’

ফারজাদ বিব্রত বোধ করল। তাও হেসে বলল,

‘জি, প্লিজ সিট ডাউন।’

মেয়েটি বসল। ফারজাদও বসল অপর পাশে। মিটিং-এ আজ কী নিয়ে আলোচনা করতে হবে সেটাও ফারজাদ জানে না। তাই একটু বেশিই ইতস্তত বোধ করছে সে। তবে জারাকে প্রাণবন্ত দেখাল। এক গাল হেসে সে বলল,

‘কী খাবেন বলুন?'(উর্দু)

চলবে…..

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here