খোলা_জানালার_দক্ষিণে #পর্ব_৫৭ #লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

0
404

#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৫৭
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

সময় ধারার সাথে সন্ধি করে তাল মিলিয়ে গড়িয়ে যায়। চারদিক আমের মুকুলে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। শিমুল তার সৌন্দর্য দিয়ে ধরনীরকে করেছে মনোমুগ্ধকর। শিমুলের মুগ্ধতায় হৃদয়ের গহীনে প্রণয়ের হাওয়া বইছে। শিমুন ফুল যেমন তার সৌন্দর্য দিয়ে অন্যকে আকর্ষিত করছে। ঠিক তেমনই মুনতাসিমের সুস্থতা মেহেভীনকে গৃহ ত্যাগ করার আহবান জানাচ্ছে। গ্রীষ্মের উত্তপ্ত রৌদ্রের মতো হৃদয়টা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। গ্রীষ্মের রৌদ্রের তেজ যেমন জমিন ফাটিয়ে দেয়। ঠিক তেমনই কারো হৃদয়টাও জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয় । সহ্য সীমা আগের ন্যায় বেড়ে গিয়েছে মেহেভীনের। সে কথায় কথায় বিষন্ন হয়ে উঠে না। মলিনতা এসে তার মুখশ্রীতে ধরা দেয় না। আঁখিযুগলে অশ্রু এসে জমা হয় না। আঘাত মানুষকে শক্ত করে, শক্ত করে মানুষের কোমল হৃদয়টাকে। মাঝে মাঝে শখের পুরুষকে হারিয়ে ফেলার ভয়ে ভেতরটা হাহাকার করে উঠে। দম বন্ধ হয়ে আসে। চুপচাপ হৃদয়ের দহনে পুড়তে হয়। কি বিশ্রী এক অনুভূতি, না বাঁচতে দেয় না মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে দেয়!

কারো চরণের পদধ্বনি কর্ণকুহরে এসে বাড়ি খেতেই মুনতাসিমের থেকে দুরত্বে এসে অবস্থান করল মেহেভীন। আঁখিযুগলে শুকিয়ে আসা শেষ অশ্রুটুকু আদুরে হাতে মুছে নিল। আঁখিযুগল রক্তিম বর্ন ধারণ করেছে। চেহারায় বিষন্নতা ফুটে উঠেছে। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটছে। তখনই গম্ভীর মুখশ্রী করে রিয়াদ চৌধুরী কক্ষে প্রবেশ করে। মেহেভীনকে উদ্দেশ্য করে কোমল কণ্ঠে বলল,

–তুমি কি চাও মেহেভীন আমি তোমার সাথে কঠিন আচরণ করি? তোমাকে কতবার বলেছি! মুনতাসিমের মস্তিষ্কে চাপ প্রয়োগ করা যাবে না। সে তোমার সঙ্গ এখন চাইছে না৷ তবুও কেন বারবার ওকে উত্তেজিত করতে আসো? দেখো মা তুমি যেমন আমার মেয়ে, মুনতাসিমও আমার ছেলে। তোমার একার ভালো চাইলে তো হবে না। আমার ছেলেটার দিকেও দৃষ্টি দিবে হবে। আমি তোমাকে অনুরোধ করে বলছি। তুমি আর মুনতাসিমের কক্ষে এসো না।

–আর আসব না আব্বা।

–এই নিয়ে কতবার বললে যে আর আসবে না? তুমি প্রতিবারই বলো আসবে না। কিন্তু নিজের শপথ রক্ষা করতে ব্যর্থ তুমি।

–এবার সত্যি বলছি আব্বা। আপনি মিলিয়ে নিয়েন। আমি আর আসব না। কথা গুলো বলেই মেহেভীন সেদিন কক্ষ ত্যাগ করেছিল। আর পিছু ফিরে তাকাইনি। মুনতাসিম সেদিন নির্বাক ছিল। ভুল করেও যদি প্রেয়সীকে একটা ডাক দিত। তাহলে একটা রক্তাক্ত হৃদয় সুস্থ হয়ে উঠত। সব বিষাদকে গ্রাস করে নিয়ে ভালোবাসায় পরিপূর্ণ করে দিত মানুষটাকে৷ কিন্তু মানুষটা তাকে ডাকেনি। এই বাড়িতে সে ছাড়া তার অনেক মানুষ আছে। কিন্তু মেহেভীন! মেহেভীনের সে ছাড়া আর কে আছে? মানুষটা তাকে বুঝল না। উল্টো তার জন্য মানুষটা দিন দিন শেষ হয়ে যাচ্ছে! নিজের আঁখিযুগলে শখের মানুষটার শেষ হয়ে যাওয়া সে কিভাবে দেখবে? দুরত্বের গল্প আপনাকে ছুঁয়ে দেখা হলো না। প্রার্থনা করি এতটা সুখে থাকেন, যতটা সুখে থাকলে আমাকে আর মনে পড়বে না। হঠাৎ হঠাৎ বুকের বা পাশে ব্যথা করে, দম বন্ধ হয়ে আসে, কাউকে বলতে পারি না আমার ভেতরটা মানুষ হারাতে হারাতে শূন্যতার হাহাকারে ডুবে মরে, নিজের ভাগ্যের প্রতি কিছুটা ক্রোধ এবং আক্ষেপ জমা হয়ে রয়েছে। চিন্তাধারা গুলো মস্তিষ্কে বাসা বাঁধতেই বুক ভারি হওয়া একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে গেল। এই মাঝে কেটে গেল কতগুলো দিন, কতগুলো প্রহর, কতগুলো হাহাকারে রাত, প্রভাতের দুঃখ মেশালো শীতল হওয়া। কালকে মেহেভীন চলে যাবে। মনটা বিষাদে পরিপূর্ণ হয়ে গিয়েছে। মাশরাফি এসে কতবার ডেকে গেল। মেহেভীন এক বাক্য বলে দিল খেতে ইচ্ছে করছে না। সে খাবে না। মেহেভীন আসবে না জেনে মুনতাসিম দু-হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিল। ক্রোধে সমস্ত কায়া জ্বলে উঠল। এত জেদ কিসের মেয়েটার! অশান্ত আঁখিযুগল প্রেয়সীকে দেখার তৃষ্ণায় কাতরে মরছে। আর মানুষটা তাকে পোড়াতে ব্যস্ত! কাছে এসে ভালোবেসে কি বুকে জড়িয়ে নেওয়া যায় না। শুধু পারে রাগ করতে আর ভুল বুঝতে। মুনতাসিম উঠে চলে গেল। সবাই নিস্তব্ধ হয়ে আহার আহরন করতে শুরু করল।

মেহেভীন নিজের প্রয়োজনীয় বস্ত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। তখনই শেহনাজ আসে কক্ষে। শেহনাজের হাতের খাবারের প্লেট। শেহনাজ মেহেভীনের পাশে বসল৷ মুখশ্রীতে মলিনতা ঘিরে ধরেছে। শেহনাজ বিষণ্ণ কণ্ঠে বলল,

–তুমি চলে যেও না ভাবি। তুমি থেকে যাও। তুমি যদি ভাইয়ের ক্রোধের ভাষা না বুঝো তাহলে কে বুঝবে? আমি চাই তুমি থেকে যাও। বড় বোনের মতো সেদিন যেমন প্রতিবাদ করেছিলে, সারাজীবন এই ভালোবাসাটা আমি পেতে চাই। যে ভালোবাসা আমাকে সঠিক পথে চালনা করবে।

–তুমি আমার ননদ আর ননদ কখনো বোন হতে পারে না। তুমি রাগ করলেও বলব। সেদিনের পর থেকে তোমাকে আমি ননদ ছাড়া আর কিছুই ভাবি না৷

–তারমানে তুমি চলে যাবে?

–হ্যাঁ।

–তাহলে আমার শেষ একটা ইচ্ছে পূর্ণ করে দাও। আজকে তুমি খাবার টেবিলে আসোনি। তুমি না খেয়ে চলে যাবে। এটা আমার সহ্য হবে না। আজকে আমি তোমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দেই। প্লিজ, তুমি না করো না।

–আমার ইচ্ছে নেই। তুমি খাবার নিয়ে যাও। আমি খাব না।

–তুমি না খেলে ভাইও খাবে না। আমি ভাইকে কথা দিয়েছি। তোমাকে খাইয়ে তারপর ভাইয়ের কক্ষে খাবার নিয়ে যাব। ভাইকে কতগুলো ঔষধ খেতে হয় জানো তো। সেগুলো যদি একদিন না খায় ভাইয়ের যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। তখন কি করবে ভাবি?

–তুমি খাবার রেখে যাও। আমি খেয়ে নিব। উনাকে গিয়ে বলবে, আমি খেয়েছি।

–না তুমি আমার সামনে খাও। শেহনাজের কথায় মেহেভীন কোনো বাক্য উচ্চারন করল না। সে হাত ধুয়ে এসে খেতে শুরু করল। তখনই মাশরাফি কক্ষে প্রবেশ করল। মেহেভীন কাল চলে যাবে। সেটা মাশরাফি জানে না। সে মেহেভীনের পাশে বসে বলল,

–আমার সামনে পরীক্ষা ভাবি। তুমি তো ম্যাথে ভিষণ দক্ষ। এই কয়টা দিন তুমি আমাকে একটু ম্যাথ দেখিয়ে দিবে। তুমি খেয়ে নাও। আমি খাতা আর বই নিয়ে আসছি। মাশরাফি কথা শেষ করেই উঠে চলে গেল। মেহেভীন কিছু বলার সুযোগ পেল না। শেহনাজ হাসোজ্জল মুখশ্রী করে মেহেভীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মেহেভীনের খাওয়া শেষ হতে শেহনাজ এক প্রকার প্লেট কেঁড়ে নিয়ে কক্ষ ত্যাগ করল। শেহনাজ যাওয়ার কিছু সময় পর মেহেভীন অনুভব করল ভেতরটা ভিষণ জ্বালা করছে। সময়ের সাথে যন্ত্রনা প্রকোপ পেতে শুরু করেছে। ভেতরটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে। সে কি অসহনীয় যন্ত্রনা! মেহেভীন মৃদুস্বরে মাশরাফি কে ডাকল। কিন্তু তার নিম্ন কণ্ঠে বলা একটা বাক্যও মাশরাফি পর্যন্ত পৌঁছাল না। মেহেভীন উঠে কক্ষের বাহিরে আসার চেষ্টা করল। ততক্ষণে ভেতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে কায়াকে কাবু করে ফেলছে। মেহেভীনের মুখশ্রী দিয়ে অস্ফুট স্বরে বেড়িয়ে এল, মা। আর কিছু বলার সুযোগ পাইনি মেহেভীন মুহুর্তে মধ্যে জ্ঞান হারালো সে। মাশরাফি বই খাতা নিয়ে এসে মেহেভীন অবচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আর্তনাদ করতে উঠল। মেহেভীনের মুখশ্রী দিয়ে সাদা বর্ণের কিছু একটা বের হচ্ছে, তা দেখে মাশরাফি চমকে উঠল। সে অস্ফুট স্বরে বলল, বি’ষ! ভাবিকে কে বি’ষ দিল? মাশরাফির আর্তনাদে রিয়াদ চৌধুরী মেহেভীনের কক্ষে এল। মেহেভীনকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে উঠল রিয়াদ চৌধুরী। সে উত্তেজিত হয়ে বলল,

–দ্রুত মুনতাসিমকে ডেকে নিয়ে আসো। আমি গাড়ি বের করতে বলছি। রিয়াদ চৌধুরী হুলস্থুল লাগিয়ে দিল। চৌধুরী বাড়ির প্রতিটি দেওয়াল আতঙ্কে কেঁপে উঠল। মুনতাসিম ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল। তখনই মাশরাফি হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,

–ভাই তাড়াতাড়ি নিচে চলুন। ভাবি বি’ষ খেয়েছে। মাশরাফির বাক্য গুলো কর্ণকুহরে আসতেই হৃদয়টা ভয়ংকর ভাবে কেঁপে উঠল মুনতাসিমের। সে ল্যাপটপ ফেলে দিয়ে দৌড়াতে শুরু করল। দৌড়াতে গিয়ে পায়ে ভিষণ ব্যথা অনুভব করল। কায়ার ক্ষত গুলো এখনো পুরোপুরি ভাবে সারেনি। প্রেয়সীর নির্মমতার খবরের কাছে এই ব্যথা অতি নগন্য। মেহেভীনের কক্ষ এসে মেহেভীনের নির্মম অবস্থা দেখে ভেতরটা ব্যথায় কাতরিয়ে উঠল মুনতাসিমের। সে অস্থির হয়ে মেহেভীনের কাছে গেল। মেহেভীনে মস্তক নিজের কোলে তুলে নিয়ে কাতর স্বরে বলল,

–আমি সবকিছুর উর্ধ্বে গিয়ে আপনাকে চেয়েছি। আপনি কিছুতেই হারাতে পারেন না। আমি এত সহজে আপনাকে হারাতে দিব না। আমি থাকতে আপনার কিছু হবে না। আব্বা তাড়াতাড়ি গাড়ি বের করতে বলেন। মেহেভীনের কিছু হয়ে গেলে আমি কিভাবে বাঁচব? কথা গুলো বলতে বলতে নিজের শুভ্র পাঞ্জাবি দিয়ে মেহেভীনের মুখশ্রী মুছে দিল। দ্রুত মেহেভীনকে কোলে তুলে নিয়ে বের হয়ে গেল। মাশরাফিও ভাইয়ের সাথে গেল। যদি কোনো তথ্যের প্রয়োজন হয় তবে সে দিতে পারবে। রিয়াদ চৌধুরী, মুনতাসিম, মাশরাফি চলে যেতেই শেহনাজ ছাঁদে চলে গেল। মুঠোফোনটা বের করে প্রিয়তমকে ফোন নিল। ফোনটা রিসিভ হতেই উৎফুল্ল কণ্ঠে বলল,

–আব্বা আর ভাই দু’জনেই বাসায় নেই। তাইয়ান ঘুমিয়ে আছে। এটাই সুযোগ আমি কি পালাব? অপর পাশে থেকে প্রশান্তির নিঃশ্বাস বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো। এতদিনের পরিকল্পনা সফল হতে যাচ্ছে। বোকা মেয়েটা জানেও না নিজের অজান্তে নিজের কত বড় ক্ষতি করে ফেলল।

–এটা আবার বলতে হবে জান। তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো পাখি। তোমার জন্য হৃদয়টা কতদিন ধরে পুড়ছে। আমরা আজকেই বিয়ে করে ফেলব। আমাদের বিয়ে হয়ে গেলেই তুমি পুরোপুরি ভাবে একান্তই আমার। আমাদের অনেক ভালোবাসা বাকি। দু’জনের উষ্ণ আলিঙ্গনে আবদ্ধ হওয়া বাকি। একসাথে চন্দ্র বিলাস করা বাকি। আমার অশান্ত হৃদয়টাকে শান্ত কর বাকি। সময় অপচয় না করে দ্রুত চলে এসো সুইটহার্ট। প্রিয়তমের কথায় সমস্ত মুখশ্রীতে রক্তিম আভা ছাড়িয়ে পড়লো। শেজনাজ বিলম্ব করল না। দ্রুত বাড়ির পেছনের গেট দিয়ে বের হয়ে গেল। মুনতাসিমের ফলের বাগানের মধ্যে দিয়ে একটা গুপ্ত দরজা আছে। সেটা মুনতাসিম আর তাইয়ান ছাড়া কেউ জানে না। শেহনাজ কৌশলে জেনে নিয়েছে। আজ সে সুযোগে সৎ ব্যবহার টা করে নিল। সবাই মেহেভীনকে নিয়ে চিন্তিত আছে।

–উনি শেষ কি খাবার খেয়েছিল? ডক্টরের প্রশ্নে মাশরাফি তড়িৎ গতিতে জবাব দেয়,

–ভাত।

–আমাদের সন্দেহই ঠিক। উনার খাবারের সাথে বি’ষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা দ্রুত বি’ষ বের করার ব্যবস্থা করছি। ডক্টর আর দাঁড়াল না। দ্রুত জরুরি বিভাগের দিকে ছুটে গেল। চিন্তায় সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসছে। ধরনীর এই মানুষটার কাছে তার সকল শক্তি তুচ্ছ! মানুষটার কিছু হলেই ধরনীর সব অসহায়ত্ব তার বুকে এসে বাসা বাঁধে। ছেলের চিন্তিত মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টি যেতেই রিয়াদ চৌধুরী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

–মেয়েটাকে যখন এতটাই ভালোবাসো, তাহলে এভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দিচ্ছ কেন? মেয়েটা তোমার জন্য বি’ষ খেয়ে বসেছে। এখন যদি মেয়েটার কিছু হয়ে যায়। তখন নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে তো? মুনতাসিম নিস্তব্ধ রইলো। মাশরাফি কিছু বলার জন্য প্রস্তুত হতেই রিয়াদ চৌধুরী থামিয়ে দিল। মাশরাফি বাবার মুখশ্রীর দিকে দৃষ্টিপাত করে, কোনো বাক্য উচ্চারন করার সাহস পেল না।

শহরের সুনশান নিস্তব্ধ নিষিদ্ধ কক্ষে শেহনাজকে নিয়ে এসেছে স্বাধীন। কক্ষে প্রবেশ করতেই ছয়জন যুবককে দেখতে পেল শেহনাজ। তাদের প্রতিটি মুখশ্রী শেহনাজের পূর্ব পরিচিত। সে কক্ষে প্রবেশ করে আস্তরণে গিয়ে বসল। স্বাধীন আচমকা কবাট লাগিয়ে দিল। কবাট লাগানোর শব্দ চমকে উঠল শেহনাজ! সে বিস্ময় নয়নে স্বাধীনের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। স্বাধীনের মুখশ্রীতে পৈশাচিক হাসি বিদ্যমান। মুহুর্তের মধ্যে শেহনাজে ছোট্ট হৃদয়টাকে ভয় গ্রাস করে ফেলল।

–তুমি কবাট বন্ধ করলে কেন স্বাধীন? আমাদের বিয়ে হবে না, কাজী কোথায়? শেহনাজের প্রশ্নে কক্ষ জুড়ে হাসির প্রতিধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠল। শেহনাজ অসহায় দৃষ্টিতে সবার দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। স্বাধীন তাচ্ছিল্য করে বলল,

–তুই তো পাঁচ হাজার টাকার মেয়ে। তুই ভাবলি কি করে তোকে আমি বিয়ে করব। তোর মতো মেয়েকে টেস্ট করা যায়। কিন্তু সারাজীবন সংসার করা যায় না। তোকে বিয়ে করলে আমার বউ তোকে মেনে নিবে? স্বাধীনের কথায় অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে শেহনাজের। মস্তকের উপরে থাকা বিশাল আকাশটা তার কায়ার ওপরে এসে পড়লো। মুহুর্তের মধ্যে ভেতরটা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল। সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসছে। সে দৌড়ে পালাতে চাইলে স্বাধীন খপ করে শেহনাজকে ধরে ফেলে। শেহনাজ হাত মোচড়াতে মোচড়াতে রাগান্বিত হয়ে বলল,

–আমাকে ছেড়ে দে বেইমান। তুই আমার সাথে এত বড় বিশ্বাসঘাতকতা করবি। সেটা যদি আমি আগে জানতাম কখনোই তোর কাছে আসতাম না। আমাকে এভাবে ঠকালি কেন? আমি কি অপরাধ ছিল? আমার একটাই অপরাধ আমি তোকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করেছি। স্বাধীন আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। তুমি বলো না সবকিছু মিথ্যা তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে স্বাধীন। আমাকে এভাবে না মানসিক মৃত্যুদন্ড দিও না। আমি সবাইকে ছেড়ে তোমার কাছে এলাম। এ তুমি কেমন হয়ে গেলে? তুমি তো এমন পাষাণ ছিলে না! এতটা পাষাণ কিভাবে হলে স্বাধীন? তুমি না আমাকে ভালোবাসো। তুমি তো আমাকে কষ্ট দিতে পারো না। আল্লাহর দোহাই লাগে তোমার আমাকে কলঙ্কিত করো না। আমি নিজ ইচ্ছেয় আমাকে তোমার নামে লিখে দিয়েছি। কবুল বললেই আমি তোমার দলিল করা সম্পদ হয়ে যাব। শেহনাজের কথায় পাষাণ প্রেমিকের হৃদয় পুড়ল না। সে শেহনাজের বুক থেকে একটা টানে ওড়না সরিয়ে ফেলল। শেহনাজ সাথে সাথে হৃদয়বিদারক চিৎকার দিয়ে বলেই উঠল, ”তাইয়ান।”

গভীর নিদ্রায় তলিয়ে ছিল তাইয়ান। আচমকা নিদ্রা ভেঙে গেল তার। ললাট বেয়ে তরতর করে ঘাম গড়িয়ে পড়ছে। ভেতরটা অদ্ভুত ভাবে অস্থির হয়ে উঠছে। এত ভয় লাগছে কেন তার! হৃদয়টা এতটা বিষণ্ণ হয়ে উঠছে। সে পানি খেয়ে আবার নিদ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে গেল। নিদ্রায় বিভোর থাকা তাইয়ান জানতেও পারল না। তার হৃদয়ের কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখা পাষাণ রমণীর জীবনের সবচেয়ে বড় অনর্থটা হয়ে গেল। রমণী বুঝল কে তার প্রিয়জন এবং কে তার প্রয়োজন। কিন্তু বুঝতে যে বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে। সময় আজ তার প্রতি নিষ্ঠুর হয়ে গিয়েছে। পাপ ডেকে বলছে। কিছু মনে পড়ছে। প্রকৃতি ছাড় দেয় কিন্তু ছেড়ে দেয় না।

চলবে…..

(কালকে সব রহস্য উন্মোচন করে দিব। আশা করি আজ একটু একটু বুঝতে পেরেছেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here