#খোলা_জানালার_দক্ষিণে
#পর্ব_৫৯
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu
বিষন্ন আঁখিযুগল মুনতািসমের দিকে স্থির হয়ে আছে। নিস্তব্ধতায় পরিপূর্ণ পরিবেশ। মুনতাসিমের মস্তিষ্ক টগবগ করে উঠল। ভেতরটা ঝনঝন করে শব্দ তুলে বলছে। এটাই সঠিক সময় হৃদয়ের গহীনে লুকানো তিক্ত বাক্য গুলো উপচে বের করে দাও। মস্তিষ্ক বাঁধা সাধলেও মন সেটার তোয়াক্কা করল না৷ বজ্রকণ্ঠে বের হতে শুরু করল কয়েক বছরের জমানো বিষাদ গুলো। মুনতাসিমের প্রতিটি বাক্য কেবিনের প্রতিটি মানুষের হৃদয় কাঁপিয়ে তুলল। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। মুনতাসিমের কণ্ঠে বাবার প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্যে ফুটে উঠল। সে তাচ্ছিল্য করে বলল,
–আপনি শেহনাজের অবস্থার জন্য মেহেভীনকে দোষ কিভাবে দিতে পারেন আব্বা? আপনি অতি সন্তান ভক্ত হতে গিয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছেন! আপনাকে আমি এতটাই ভালোবাসি। যতটা ভালোবাসলে আপনার সাথে উচ্চস্বরে কথা বলার কথা স্মরন হতেই আমার হৃদয় কাঁপে। অনুভূতিরা শূন্য হয়ে পড়ে। বাবার দিক ধরতে গেলে আপনি আপনার জায়গায় ঠিক আছেন। কিন্তু অন্যায়ের দিকে গেলে আপনি ভুল পথে হাঁটছেন আব্বা। আমাকে উত্তপ্ত হতে বাঁধ্য করবেন না। আমি আমার কথার আঘাতে আপনাকে আঘাতপ্রাপ্ত করতে চাই না৷ আপনার মেয়েকে আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ক্ষমা করব না৷ মুনতাসিমের কথায় জ্বলে উঠল রিয়াদ চৌধুরী। নিজের ক্ষমতা আছে বলে সব জায়গায় ক্ষমতার প্রয়োগ দেখাতে নেই। নয়তো নিজের ক্ষমতার দাপটে নিজেকেই ঝলসে যেতে হয়। রিয়াদ চৌধুরীর অপ্রত্যাশিত ক্রোধই যেন তার কাল হয়ে দাঁড়ালো। সে উচ্চ বাক্যে বলল,
–তোমার অর্ধাঙ্গিনীর জন্যই আমার মেয়েটার ক্ষতি হয়েছে। তোমার অর্ধাঙ্গিনী যদি বি’ষ না খেত, তাহলে আমার শেহনাজের জীবনে এমন কালো অধ্যায় নেমে আসত না। তোমার অর্ধাঙ্গিনীর জন্য আমার মেয়ের পুরো জীবনটাই আঁধারে তলিয়ে গেল। বাবার প্রতিটি বাক্য ভেতরটা জ্বালিয়ে দিল। সে বাবার ন্যায় উচ্চস্বরে বলল,
–আপনি নিজের মেয়ের দোষ না দেখে আমার বউয়ের দোষ কেন দেখছেন? আমার বউ তো বি’ষ খাইনি। আমার বউকে বি’ষ খাওয়ানো হয়েছে। সেটা কে খাইয়েছে আপনি ভালো মতোই জানেন আব্বা। আপনি সবকিছু জেনেও নিজের মেয়ের জঘন্যতম অপরাধ গুলো আষাঢ়ের কালো মেঘের ন্যায় আড়াল করে দিয়েছেন। মাশরাফি বলতে চেয়েছিল। আপনি তাকে-ও বাঁধা দিয়েছেন। আপনি এখনো আমাকে চিনেন নাই আব্বা। ধরণীর বুকে আমার পরিবারের খবর আমার থেকে ভালো কেউ জানে না। আমার পাশের বাসার মানুষ কখন কোথায় যায়, কি করে, তাদের অর্থ কতটুকু হালাল কতটুকু হারাম সব বলে দিতে পারব আমি। আর নিজের পরিবারের মানুষের তথ্য আমার কাছে থাকবে না। আমাকে আপনি এতটাই নির্বোধ ভাবেন আব্বা? আমি আসলে নির্বোধ না আব্বা। আমি আপনাদের সাথে কঠিন হতে চাই না বলেই আপনাদের সামনে নির্বোধ সেজে থাকি। আপনার মেয়ের করুন পরিস্থিতির জন্য আপনার মেয়ে নিজেই দায়ী। আপনি তাকে জিগ্যেস করে দেখুন। আমি তাকে শতবার নিষেধ করেছি৷ সহস্রবার সর্তক করেছি। তুমি যার সাথে মিশছ সে ভালো না। তোমাকে যেন পরবর্তী থেকে ঐ ছেলের সাথে মিশতে না দেখি। আপনার মেয়ে বাহিক্য ভাবে যেমন আলাভোলা দেখায় ভেতরটা তার ভয়ংকর রকমের বিষাক্ত। সে যদি আমার কথা শুনত তাহলে তাকে আঁধারের সমুদ্রে আঁচড়ে পড়তে হতো না৷ আপনার মেয়ে আমার বউকে বি’ষ খাইয়ে তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে পালিয়ে গেল। তার বয়ফ্রেন্ড তাকে কলঙ্কিত করে তাকে ছেড়ে দিল। এখন সব দোষ আমার বউয়ের! সে চাইলে বড় ভাইয়ের কথা শুনতে পারত না। সে আমাকে কোনোদিনই নিজের ভাই মনে করেনি। তার নিজের ভাই আছে। আমি তার নিজের ভাইয়ের ভালোবাসা কেঁড়ে নিয়েছি। তার ভাইকে জোর করে বিয়ে দিয়েছি। তাই তার ভাই আমাকে খু’ন করার জন্য যা যা করতে বলছে। আপনার মেয়ে তাই তাই করেছে। আপনাকে আমি এতটাই সন্মান করি আব্বা। আপনার জন্য মুনেমের মতো অমানুষকে বাঁচিয়ে রেখেছি। আপনার দুই ছেলে মেয়ে মিলে আমাকে প্রতি নিয়ত হ’ত্যা করার চেষ্টা করে গিয়েছে। আমি আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে সবকিছু সহ্য করে গিয়েছি। আমি যতদিন আপনার কথা মতো চলেছি। আমি ততদিন আপনার প্রিয় ছিলাম আব্বা। যেদিন থেকে আমি আমার সুখ আপনার থেকে চেয়েছি। সেদিন থেকে আমি আপনার কাছে অপ্রিয় হয়ে উঠেছি। আমি কখনো ভাবিনি আব্বা আপনার প্রিয় সন্তান থেকে এতটা অপ্রিয় সন্তান হয়ে উঠব। আপনি মেহেভীনকে দেখতে পারেন না কেন সেটাও আমি আপনাকে বলছি। আপনি ভেবেছেন আপনার সব কথা মেহেভীন আমায় বলেছে। না আব্বা, মেহেভীন আমায় কিছু বলেনি। মেয়েটা এতটাও খাবার নয়। জানি মেয়েটা আমায় অনেক কষ্ট দেয়। কিন্তু নিজে কষ্ট পাবে তবুও আমাকে দেওয়া প্রতিজ্ঞার অমর্যাদা সে করবে না। আমার তার প্রতি বিশ্বাস আছে। একটা কথা জমিনে ফেলতে না দেওয়া মেয়েটা আপনার কথার আঘাতে শতবার মরেছে। তবুও আপনার নামে আমার কাছে একটা অভিযোগও করেনি। কিন্তু সেদিন থেকে মেহেভীন মুনেমের কথা জেনেছে। আপনি তাকে কিভাবে প্রতিনিয়ত আমার হাত থেকে বাঁচিয়েছেন। সেটা জেনেছে। শেহনাজের বিপথে চলে যাবার কথা জেনেছে। সেদিনের পর থেকে মেহেভীন আপনার চোখের বি’ষ হয়ে গিয়েছে। আপনি সব সময় ভয় পেতেন। এই বুঝি মেহেভীন আমার সব বলে দিল। আমি রাগলেও আপনি ভাবতেন মেহেভীন আমার কান ভারি করেছে। আমি বাহিরের শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করে করে মানুষ চিনেছি আব্বা। প্রথমে আমার মানতে কষ্ট হলে-ও আমি পরে মানিয়ে নিয়েছি। সংসারের শান্তি চেয়েছিলাম মেয়েটার কাছে, এইদিকে মেয়েটা আমাকে শান্তি দিয়েছে। না বলেছে আপনার বেঈমানির কথা, না বলেছে মুনেমের কথা, আর না বলেছে শেনাজের উচ্ছন্নে যাবার কথা। সে শেহনাজের ভালো চাইল আর শেহনাজ তার মৃত্যু চাইল। এতে আপনি কি বুঝলেন আব্বা? পর মানুষের ভালো চাইতে নেই। পর যদি পরের মতো আচরণ না করে তাহলে তার স্বার্থকতা আসে না। পর যদি আপনের মতো আচরণ করে তাহলে এভাবেই কথার আঘাতে মরতে হয়। আপনার ছেলে আর মেয়ে আমাকে মারতে চেয়েছে। তারা জাফর ইকবালের মতো ক্রিমিনালের সাথে হাত মিলেছে। আমার এক্সিডেন্টও তারা মিলে করিয়েছে। আমার বউকে বি’ষ আপনার মেয়ে খাইয়েছে। আর আপনি আপনার ছেলেমেয়ের দোষ রেখে আমার বউয়ের দোষ খুঁজছেন। কথায় থাকে না দূরে গেলে দুরত্ব বাড়ে আর কাছে থাকলে প্রণয় বাড়ে। এই কথাটার স্বার্থকতা আমি নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করতে পারছি। আমার মা যতদিন বেঁচে ছিল। আমার প্রতি আপনার ভালোবাসাও ঠিক ততদিনই ছিল। আমার মা নেই। আমার কেউ নেই। আমার একটাই পরিচয় আমি এতিম, অনাথ। আমার সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ নেই। তিনিই আমার একমাত্র গার্ডিয়ান। মুনতাসিমের প্রতিটি বাক্য হৃদয়ের গভীরে স্পর্শ করে গেল। অদ্ভুত ভাবে পরিবেশ শীতল হয়ে উঠল। কেবিনে উপস্থিত প্রত্যেকের আঁখিযুগলে অশ্রু এসে জমা হয়েছে। তাইয়ান অপরাধীর ন্যায় মস্তক নুইয়ে আছে। ভেতরটা ভয়ে কাবু হয়ে আসছে। মুনতাসিম কখন জানি তাকে নিয়ে বলতে শুরু করে। রিয়াদ চৌধুরীর অনুভূতি নাড়া দিয়ে উঠল। সে জানত না মুনতাসিমকে শেহনাজ আর মুনেম মারতে চায়। যদি জানত তাহলে কখনো দু’জনকে সাহায্য করত না। সে প্রতিটি সন্তানকে জীবিত দেখতে চেয়েছিল। নিজের ভালোটা দিয়ে সবাইকে মিলেমিশে এক করতে চেয়েছিল। নিয়তি যে তার সাথে এভাবে ছলনা করবে। সেটা সে ঘুনাক্ষরেও টের পায়নি। সে অসহায় মাখা দৃষ্টিতে মুনতাসিমের দিকে দৃষ্টিপাত করে আছে। অসহায়ত্ব যেন রিয়াদ চৌধুরীর সমস্ত মুখশ্রীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। সন্তানদের ভালো চাইতে গিয়ে সন্তানদের খারাপটা যে কখন করে ফেলল, সেটা টেরই পাননি তিনি। রিয়াদ চৌধুরী বিধস্ত শেহনাজের গালে পরপর কয়েকটা প্রহার করল। ঘুমের ঔষধ দেওয়ার কারনে তার সমস্ত কায়া নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে। রিয়াদ চৌধুরী অশ্রুমাখা কণ্ঠে বলল,
–ম’রে যা তুই। তোর মতো মেয়ের বেঁচে থাকার অধিকার নেই। তুই এতদিন আমায় কেন মিথ্যা বলেছিস? আমাকে কেন বলেছিস মুনেম মুনতাসিমের কাছে ক্ষমা চাইবে। অতীতের কালো অধ্যায়কে ভালোবাসার শক্ত আবরণে ঢেকে দিবে। আমাকে কেন বলেছিস মেহেভীন মুনেম আর তোর নামে মুনতাসিমের কাছে বি’ষ ঢালে? আমি তোদের ভালোবেসেছিলাম। আমি তোদের বিশ্বাস করেছিলাম। তোরা আমাকে এভাবে নিঃস্ব করে দিলি শেহনাজ। প্রতিটি টিভি চ্যানেলে তোর খবর দেখাচ্ছে। সবাই আড়দৃষ্টিতে দেখছে। আজ যদি একজন মন্ত্রীর ছেলে না হতাম। তাহলে আমার বেঁচে থাকা দুর্বিষহ হয়ে যেত। আমি নিজে মুনেমকে শাস্তি দিব। এতদিন মুনেমকে বাঁচিয়েছি। আমি ভুল করেছি। এসব দিন দেখার আগে আমার মৃত্যু হলো না কেন? অর্ধবুজা আঁখিযুগলে বাবার দিকে দৃষ্টিপাত করল শেহনাজ। মুখশ্রীতে তার তাচ্ছিল্য ফুটে উঠেছে। ভেতর থেকে ভেঙেচুরে শেষ হয়ে যাচ্ছে সে। শেহনাজ নেতিয়ে যাওয়া কণ্ঠে বলল,
–আমার এখন আফসোস হচ্ছে ভিষণ আফসোস। আমি কেন তোমার ছেলেকে মারতে পারলাম না। আমি তোমার ছেলেকে মারিনি বলে, তোমার ছেলেও আমাকে মারছে না। আবার আমাকে বলছে। আমার শাস্তি নাকি বেঁচে থাকা। আমি কি করতাম আমি আমার ভাইকে হাহাকার করতে দেখেছি৷ প্রেয়সীকে না পাওয়ার যন্ত্রনায় ছটফট করতে দেখেছি৷ জ্বরের ঘোরে প্রেয়সীর কাছে যাওয়ার জন্য আর্তনাদ করতে শুনেছি। মুনতাসিম ভাই পেয়েছে একটা সুন্দর পরিবার কিন্তু আমার ভাই কি পেয়েছে আব্বু? আমার ভাইয়ের পরিবার থেকেও কেউ ছিল না। মুনতাসিম ভাই আমার সৎ ভাই হয়েও সুস্থ একটা পরিবার পেল। আর মুনেম আমার নিজের ভাই হয়েও সুস্থ পরিবার পেল না। মুনতাসিম ভাই তাকে গৃহত্যাগ করালো। তার ভালোবাসার মানুষের থেকে আলাদা করল৷ তাকে চার দেওয়ালের আবদ্ধ কক্ষে বন্দী করে রেখে দিনের পর দিন মানসিক এবং শারিরীক ভাবে অচ্যাচার করল। এমনকি মুনেম ভাইয়ের বউ বাচ্চাকেও মুনতাসিম ভাই খু’ন করেছে। শেহনাজের শেষোক্ত বাক্যটি কর্ণকুহরে আসতেই মুনতাসিম গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
–পরী আমার বোন ছিল। তুমি আমার কাছে যতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিলে, পরীও ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি তোমাকে প্রমাণ দেখাতে পারব শেহনাজ। আমি পরীকে খু’ন করেনি। তুমি তোমার বিকেক বুদ্ধি কাজে লাগাও। তোমার ভাই অপরাধ করেছে। সে অষ্টাদশীর মনে প্রণয় জাগিয়েছে। সেই প্রণয়ের সুযোগ লুফে নিয়ছে। বিবাহের আগেই অষ্টাদশীকে করেছে কলঙ্কিত। অষ্টাদশী যখন অন্তঃসত্ত্বা হলো তোমার ভাই তাকে অস্বীকার করল। তাদের পাপের ফল কেন একটা অবুঝ শিশু পাবে! আমি শুধুমাত্র তাদের অনাগত সন্তানের কথা ভেবেই দু’জনের বিবাহ দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমার ভাই ছিল উন্মান আর চরিত্রহীন। নারীদের হৃদয়ের গভীরে গিয়ে তাদের আহত করাই ছিল তার প্রধান কাজ। সে কাউকে ভালোবাসত না। যদি ভালোবাসত তাহলে অন্য নারীর কাছে যাবার কথা দ্বিতীয় বার ভাবত না৷ সে নিজেই বিয়ের দুই মাস পরে পরীকে শ্বাসরোধ করে খু’ন করে। তারপর পলাতক হয়ে যায়। আমি তাকে খুঁজি পেয়েও যাই৷ কিন্তু তুমি আর আব্বা মিলে তাকে পলাতক হতে সাহায্য করো। আমি জেনেও চুপ থাকি৷ পরীর লা’শ খোঁজার অনেক চেষ্টা করেছি৷ কিন্তু পাইনি৷ শেষবার যখন পেয়েছিলাম। তখন পরীকে দেখে আমার ভেতরটা হাহাকার করে উঠেছিল। জীবনে প্রথমবার নিজেকে অপরাধী মনে হয়েছিল। কিন্তু আমি যে নিরুপমা ছিলাম। পরীর সাথে মুনেমের বিয়ে না দিলে সমাজ পরীকে বাঁচতে দিত না। আমি চেয়েও পারিনি পরীকে বাঁচাতে। পরীকে না বাঁচানোর অপরাধে আমি আজ-ও অপরাধী। এতদিন তোমরা সবাই মিলে আমাকে আঘাত করার চেষ্টা করেছ। আমি জেনেও নিরব থেকেছি। কিন্তু তোমরা আমাকে রেখে আমার হৃদয়ে আঘাত করলে। আমার ভালোর থাকার ভেতরে রক্তক্ষরণ ঘটালে। আমার ভালোবাসার মানুষকে খু’ন করার চেষ্টা করেছ। আমি তোমাদের কখনো ক্ষমা করব না৷ ভুল করেও যদি কারো হাত মেহেভীনের দিকে এগিয়ে আসে আমি সেই হাত ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ করে দিব। অদ্ভুত ভাবে শেহনাজের সমস্ত কায়া ঘৃণায় রি রি করে উঠল। সে ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে শুরু করল। ঔষধের প্রভাব কাজ শুরু করে দিয়েছে। মুনতাসিম এবার তাইয়ানের দিকে দৃষ্টিপাত করল৷ তাইয়ান কাঁপছে। সমস্ত কায়া অবশ হয়ে আসছে। মুনতাসিম শীতল হেসে বলল, “পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বেইমানের নাম হলো তাইয়ান।” মুনতাসিমের শেষোক্ত বাক্যটি তাইয়ানকে ভয়ংকর ভাবে কাঁপিয়ে তুলল। উপস্থিত সবাই কেমন জানি স্তব্ধ হয়ে গেল। এত জড়ালো ঘটনা কারো মস্তিষ্কে প্রবেশ না করলে-ও তাইয়ান এবং রিয়াদ চৌধুরীর মস্তিষ্কে গভীর ভাবে প্রবেশ করেছে। সুখানুভূতিতে মেতে ওঠা জীবনটা মুহুর্তের মধ্যে বিষাদে রুপ নিল। চারদিকে খালি বিষাদ আর বিষাদ। বিষাদময় জীবনে হৃদয়টাও বিষাদে পরিপূর্ণ হয়ে উঠল।
চলবে…..
(জীবনে চরম ভাবে অসুস্থ আমি এ বছর হলাম। গল্পের শেষে এসে যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি। তখন ভেতরটায় কেমন লাগে? সুন্দর মতো গল্পটা সাজাতে পারছি না। আর না পারছি শেষ করতে। এতদিন মাথা ব্যথা ছিল। এখন এসেছে জ্বর, সর্দি,কাশি! আমি সারাবছর অসুস্থ হই না৷ আর যখন অসুস্থ হই একদম বিছানায় ফেলে দিয়ে যায়৷ আজকেও ভাবিনি গল্প লিখব। যে গল্প লিখা আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় ছিল৷ দুদিন আগে সেই গল্প লিখাকে আমার শত্রু মনে হয়েছে। ভাবা যায় এগুলো! হঠাৎ করে অসুস্থ মস্তিস্ক বলল লিখতে মন চাইছে। দেরি না করে ছোট করে লিখে ফেললাম। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। গল্পটা যেন সুন্দর ভাবে শেষ করতে পারি। অতঃপর উপলব্ধি করলাম গল্প লিখতে গিয়েই মাথায় চাপ নিচ্ছি বেশি।)