নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ২১

0
235

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২১

আরু উদাসীন হয়ে অপূর্ব-র কথা ভাবতে ভাবতে পান্তা মুখে তুলছে। মাঝে মাঝে কামড় বসাচ্ছে কাঁচা মরিচ ও পেঁয়াজে। অয়ন খাওয়া শেষ করে খেলতে গেছে। পারুল খাওয়ার ইতি টেনে এঁটো পানি বাইরে ফেলে দিয়ে বলে, “এলি যখন, খেয়ে আসতি কয়টা। এখন পান্তা খেতে নিশ্চয়ই ভালো লাগছে না।”

অপূর্ব-র বিমর্ষ মুখটা আরুকে শান্তিতে খেতে দিচ্ছে না। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাটির মেঝেতে ফাটলের পানে। ঢকঢক করে পানি পান করে উঠে দাঁড়ায় আরু। দিঘির দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলে, “আমি তোমাকে একবারও বলেছি, পান্তা ভালো লাগছে না? ঐটা তোমার বাপের বাড়ি। এই বাড়িতে খেতে না পারলে ঐ বাড়িতে গিয়ে খাবে। কিন্তু আমাকে এই বাড়িতেই খেতে হবে।”

মুখের উপর কঠোর বুলি শুনে ভ্রু কুঁচকালেন পারুল। ততক্ষণে দিঘিতে তার এঁটো ভাত মাছের ভরসা ফেলে হাত ধুয়ে দিঘি থেকে উঠেছে আরু। পারুল তেড়ে এসে বিরাগী গলায় বলেন, “দেখলি যে ভাত কম আছে দেখে কম কম করে খেলাম। তুই খেতে পারবি না, কমিয়ে রাখবি না। তুই ভাত ফেলবি এজন্য তোর বাপ শহরে কাজ করে টাকা পাঠায়?”

“ফেললাম কোথায়? খেতে দিলাম। আমাদের দিঘিতে সবচেয়ে বড় মাছটি আরও বড় হোক।” বলতে বলতে কোদাল নিয়ে আরু পূর্ব দিকে অগ্রসর হলো। সময়টা মধ্যাহ্নর কাছাকাছি। তাই মেয়েকে সেদিকে যেতে দেখে আঁতকে উঠলেন পারুল। গলা ছেড়ে বাঁচলেন, “আরু ঐদিকে কোথায় যাচ্ছিস? তাদের এবার নিয়ে আসলে কেউ তোকে খুঁজতে যাবে না।”

“ঘরের যত্ন নিয়েছ কখনো? মাটি ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। প্রলেপ দিয়েছ, নামেই ঘরের কর্ত্রী।” ব্যঙ্গ করে কথাটা বলে আরু ওদের সবজি ক্ষেতে গেল। মাত্র দুবার ক্ষেতে কোদাল চালিয়ে টুকরিতে তুলে ফিরে এলো। রোয়াকে এনে ভিজিয়ে প্রলেপ দিতে ব্যস্ত হয়ে গেল আরু। এত বড় ঘর প্রলেপ দিতে আড়াই ঘণ্টা‌ লাগল আরুর। সম্পূর্ণ দেহে কাঁদার ছাপ। দড়িতে ঝুলানো শাড়ি নিয়ে দিঘির দিকে অগ্রসর করতে করতে ভাবল অপূর্ব-র কিনে আনা নীল শাড়িটার কথা।

হাঁটু সমান চুলগুলো ভেজা অবস্থা সামলাতে নাজেহাল অবস্থা হয় আরুর। তবুও নিত্যদিন চুলগুলো ভেজাবে। চুলে তোয়ালে প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে উঠানে এসে তার চক্ষু হলো চড়কগাছ। দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা আরুর কষ্টকে পানিতে রূপান্তর করতে অপূর্ব হাজির। সদ্য প্রলেপ করা কাঁদা পায়ে আটকে নাজেহাল অবস্থা তার। আরু দূর থেকে দিল এক চিৎকার, “হুস, হুস, হুস। আমার কাঁদা।”

অপূর্ব গাছের শিকড়ের সাথে জোতা লাগিয়ে কাঁদা সরাতে সরাতে বলে, “তাহলে এটা তোর কাজ আরু? ইচ্ছে করছে ধরে দেই একটা।”

পারুল রান্না করছিলেন। উঠানে আগের আচারগুলো শুকাতে দিয়েছে। পাখি তাড়াতে এসে অপূর্ব-কে দেখে বিস্মিত হলেন পারুল, “তুই কখন এলি আরু?”

“আরও আগে এসেছি। কিন্তু ঘরে ঢুকতে পারছি না।”

পারুল অট্টহাসি দিয়ে বললেন, “এসেছি আরও আগে। দেখ, অবস্থাটা।”

“পেছনের দিকটা শুকিয়ে গেছে। ওদিক দিয়ে ঢোকা যাবে। (আরুকে উদ্দেশ্য করে) ওর জুতো জোড়া ধুয়ে পানি নিয়ে আয়। এক বাটি আচার নিয়ে আসিস সাথে।” মায়ের কথায় মাথা নেড়ে দ্রুত চুলে তোয়ালে প্যাঁচিয়ে ফেলে আরু। অতঃপর জোতা জোড়া ধুয়ে আনে। সাথে এক মগ পানি। উঠানে রোদে দেওয়া আচার দেখে একটুখানি আচার বাটিতে তুলে অপূর্ব-কে দেয়। পারুল বলে, “আরু বানিয়েছে। আমের সময় অন্যের গাছের আম, আমড়া, জলপাই ওর জ্বালায় থাকে না। সব এনে আচার দিয়ে রাখবে। তারপরে ইমদাদ আসলে পাঠিয়ে দিবে। ইমদাদের হাই প্রেসার। প্রেসারে গরমিল হলে টক খেলে ভালো লাগে। এবার দিতে মনে নেই, রফিক ভাই যাবে। তাকে দিয়ে পাঠিয়ে দিবো।”

অপূর্ব কিছুটা আচার মুখে দিতেই মিষ্টিতে মুখটা মিষ্টি হয়ে এলো। সেই স্বাদ। বিদেশে থাকাকালীন অপূর্ব-র জন্য পারুলের পাঠানো আচারের সেই পুরনো স্বাদ। অপূর্ব-র বোধগম্য হলো এতদিন প্রিয় আচারটা প্রিয় মানুষটির হাতে তৈরি হয়েছে।
সম্পূর্ণ আচার শেষ করে অপূর্ব মুখ খোলে, “ফুফু, তিস্তাকে কেনাকাটা করতে আজ শহরে যাবো। সাথে শেফালী, তুর, তিয়াসকেও নিয়ে যাবো। আরু কেন একা থাকবে? সুজন ভাই বলল, সবাইকে নিয়ে যেতে।”

পারুল দুপুরের খাবার থালা সাজিয়ে অয়নকে খেতে দেয়। নিজেও নেয় এক থালা। অপূর্ব-র জন্য খাবার সাজাতেই নাকোচ করে সে, “আমি খেয়ে এসেছি ফুফু। আরুকে নেওয়ার অনুমতি দিলে, আমি ওকে নিয়ে রওনা দিবো।”

আরু নিজের থালা সাজিয়ে খাবার মুখে তুলে বলে, “আমার কাজ আছে মা, আমি টইটই করিনা। তোমার ভাইপো-কে তার টইটই না বোনদের নিয়ে যেতে বলো।”

অপূর্ব জানে, এখন তার করণীয় কাজটি কী? চোখমুখে বিষণ্ন একটা ভাব এনে উঠে দাঁড়াল। বাড়ির পথ ধরতে ধরতে বলে, “আচ্ছা তোকে যেতে হবে না। ফুফু আমি গেলাম।”

আরু নিশ্চল দৃষ্টিতে অপূর্ব-র গমন পথের দিকে চেয়ে আছে। না বলতেই চলে গেল! পায়েল চোখ পাকিয়ে তাকালো। অতঃপর তেজস্বী গলায় বলে, “দিলি তো ছেলেটাকে রাগিয়ে। একটু গেলে কী হবে? শান্তি হয়েছিস এবার।”

“নিশ্চয় কিছু একটা পাকিয়ে এসেছে। নাহলে বলতেই চলে গেল। এত ভালো তো তোমার বংশের লোক না। তোমার বংশের লোকেদের গিরায় গিরায় শ/য়/তা/নি।” এখনো অপূর্ব-কে আবছা দেখা যাচ্ছে। সেদিকে চেয়ে বলে আরু। পরক্ষণেই শোনা গেল পারুলের ঝাঁজালো গলা, “শ/য়/তা/নি বুদ্ধি দেখেই তো সারাজীবন শুধু খাটছি আর খাটছি। তোর কথায় মনে চায় সন্যাসী হয়ে যাই।”

দ্রুতহাতে সাধারণ ক্রিম মাখে আরু। দ্রুত চোখে কাজল লাগাতে গিয়ে গেঁটে গেল অনেকটা। চোখের আশেপাশে ছড়িয়ে গেল। লিপস্টিকের ক্ষেত্রেও তাই। তোয়ালেটা চুল থেকে সরিয়ে দুইবার চিরুনি চালিয়েই ছুটে গেল আরু। যাওয়ার সময় তোয়ালেটা উঠান দড়ির সাথে মেলে দিল আরু।

অপূর্ব বড়োবড়ো কদমে অগ্রসর হচ্ছে। অপূর্ব ভাই বলে বেশ কয়েকবার ডাকল। অপূর্ব ফিরেও চাইল না, তবে তার মুখে বিশ্বজয় করা হাসি। অপূর্ব আরও দ্রুত কদম ফেলল। অনেকটা পথ এক জন দ্রুত হেঁটে তো একজন দৌড়ে এলো।

আরু হাঁটুতে হাত রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে অভিযোগ করে, “দাঁ-ড়া-ন না প্লীজ! পা ব্যথা করছে।”

শব্দটা কর্ণপথে যেতেই স্থির হয় অপূর্ব। প্রিয়সীর যাতনায় কোনো পুরুষ রাগ ধরে রাখতে পারে? অপূর্ব ফিরে তাকায় পেছনে। দৌড়ে নাজেহাল করেছে শাড়ির অবস্থা। খুলে পড়ে যাওয়ার উপক্রম। দুপুর হওয়ার দরুন রাস্তাঘাট রোদ্দুরে খাঁ খাঁ করছে। কাক পক্ষীর ছায়াও নেই। আশেপাশে চেয়ে লোকের উপস্থিতি অনুমান করে বলে, “কী অবস্থা করেছিস শাড়ির। দ্রুত এদিকে আয়।”

আরু ছুটে এলো। গতি রোধ করার পূর্বেই হামলে পড়ল অপূর্ব-র বুকে। আরুকে ধরে দুই কদম পিছিয়ে থামল অপূর্ব। কিছুক্ষণ হাঁপিয়ে আরু সরে দাঁড়ায়। করে অভিযোগ, “আপনার পা অনেক বড়ো বড়ো কদম ফেলে। একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখবেন পা নেই। কে/টে ফেলেছে আরু।”

“আমার পা কা/ট/লে কেউ তো আমায় বিয়ে করবে না। আমার কী হবে?” ভ্রু কুঁচকানো সন্দিহান গলা। আরু নতজানু হয়ে বলে, “আমি আছি-না?”

“কতজনের জন্য তুই আছিস? আমার জন্য আছিস, আবার কালাচাঁনের জন্যও আছিস।” আরু চুপসে যায়। পিছিয়ে যাওয়ার প্রয়াস করতেই অপূর্ব তার দৃঢ় হাতটা অগোছালো শাড়ি ভেদ করে আঁকড়ে ধরে উদর। দুজনের দূরত্ব শূণ্যতায় নামিয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে বলে, “এখন তুই আমার সাথে ক/সা/ইয়ের দোকানে যাবি। তোকে দুই টুকরো করে এক টুকরো কালাচাঁনকে দিয়ে আসব, অন্য টুকরো আমি আমার সাথে নিয়ে যাবো।”

আরু শত চেষ্টা করে সরে আসার। বলতে গেলে অপূর্ব-র বয়সের অর্ধেক সে। বলও দ্বিগুন। অপূর্ব নিজের হাতটা আরেকটু চেপে ঝুঁকে গেল। পাঁজাকোলা করে আরুকে তুলে অগ্রসর হলো। আরু নামার জন্য ছোটাছুটি করল। অপূর্ব ব্যঙ্গাতক হাসি দিয়ে বলে, “চণ্ডাবতীকে দুই টুকরো না করে তার প্রাণেশ্বর ছাড়বে না, ছাড়বে না, ছাড়বে না!”

চলবে.. ইন শা আল্লাহ
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

Page:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100092431226303

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here