নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ২৩

0
218

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৩

ভাইবোনদের বাড়ির রাস্তায় পাঠিয়ে সুজনকে রিকশায় তুলে দিল অপূর্ব।‌ অতঃপর আরুকে নিয়ে হাঁটা দিল মৃধার বাড়িতে উদ্দেশ্যে। আরুকে আহসান বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনেক জোর করেছে তিয়াস, শেফালী, তুর ও তিস্তা।‌ আরু নিজ সিদ্ধান্তে অনড় থেকে বাড়িতে যাবে ঠিক করে। অপূর্ব জানে, আরুর অভিমানের কথা। মেয়েটাকে সে জোর করে শহরে নিয়ে গেছিল, এবার আর জোর করে না। সবার স্বাধীনতা প্রয়োজন।

অপূর্ব ফোনের আলো ধরে পেছনে পেছনে পা ফেলছে, আরু সামনে হেঁটে যাচ্ছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে আরু দ্রুত পা ফেলতে ফেলতে অপূর্বকে অনুরোধ করে, “অপূর্ব ভাই, এবার ফিরে যান। নদীর ধারে জঙ্গলের ভেতরে জোনাকিরা আমায় আলো দেখাচ্ছে। আমি সেই আলোর রেখা ধরে ঠিক পৌঁছাতে পারব। আপনি আমাদের বাড়িতে গেলে আর ফিরে আসতে পারবেন না।”

আরুর নিজের প্রতি অঢেল বিশ্বাস থাকলেও, অপূর্ব এই গ্ৰামের প্রতি নেই। রাস্তাঘাটে‌ মানুষ বা তারা যদি আরুর উপর আছড় করে তখন? তাছাড়া পারুল মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ঠিক বলবে, আমার মেয়েটাকে একা ছেড়েছে। অপূর্ব উলটা সুরে বলে, “তোকে বলেছে বৃষ্টি হবে? চৈত্রের কাঠফাঁটা রোদে বৃষ্টি হয়। এখন ফাল্গুন মাস।”

“মাটি ও প্রকৃতির সাথে আমার সখ্যতার কথা আপনি জানেন না। দূর আকাশে ঐযে দুটো তাঁরা। এর মানে বৃষ্টি হবে। তিনটা তাঁরার বেশি থাকলে বৃষ্টি হয়না, কম থাকলে বৃষ্টি হয়‌। ” বলতে বলতে আরু থেমে যায়। একটা ঠান্ডা হাওয়া শরীর শীতল করে তুলে। আরু তার পায়ের স্যান্ডেল খুলে হাতে নেয়। ঠান্ডা মাটিতে হাটতে বেশ লাগে তার। আরুকে সঙ্গ দিতে অপূর্বও নিজের জোতা খুলে ফেলেছে। কিছুটা দূর যেতেই ঝিরিঝিরি ধারায় বৃষ্টি শুরু হলো। ঘন এই বৃষ্টিতে কয়েক সেকেন্ড থাকলেও ঠান্ডা নিশ্চিত। আশেপাশে কারো অনুপস্থিত না পেয়ে অপূর্ব নিজের শার্ট খুলে ফেলল। অপূর্ব আংশিক ভিজে যেতেই আরু মুখ খোলে, “এতরাতে ভিজছেন কেন? ঠান্ডা লেগে যাবে।”

“তুই সেদিন বললি না, বৃষ্টির প্রথম কয়েক ফোটাতে ঘামাচি চলে যায়, সেটাই পরীক্ষা করছিলাম।” আকাশের দিকে দুই হাত তুলে বলে অপূর্ব। আরু নিজের আঁচলটা অপূর্ব-র মাথায় দিয়ে বলে, “আমি আপনাকে দিনে ভিজতে বলেছি, রাতে নয়। আমরা প্রায় বাড়িতে পৌঁছে গেছি, আরও কিছুটা পথ আছে। তাড়াতাড়ি চলুন।”

“আর কত? কত? কত তোমার রূপের মুগ্ধতা ছড়িয়ে দিবে আমায়? জলে ভাসা পদ্মও এমন মুগ্ধতা ছড়াতে পারেনা।

এক জোড়া মানব এলো কাক ভেজা হয়ে। দরজায় করাঘাত করার অনেক পরে পারুল বলে, “কে?”

“মা আমি আরু, দরজা খুলো।”

“এতরাতে আবার এলি কেন? ওখানে থেকে যেতি।” বলতে বলতে দরজা খুলে দিলেন পারুল। মাঝরাতে কেউ দরজা ধাক্কা দিলে খোলে না পারুল। ওপাশের মানুষের পরিচয় জেনেই দরজার খিলে হাত দেয়।

আরু দ্রুত ঘরে ঢুকে নিজের ঘরে চলে গেল। ভেজা শাড়িটা বদলে শুকনো একটা শাড়ি পরিধান করে। ভেজা শাড়িটা বালতিতে রেখে একটা বাটিতে ভাত নিয়ে খেতে বসে। অপূর্ব যাওয়ার জন্য পা ফেলতেই পারুল নাকোচ করে। বৃষ্টিতে ভিজে এসেছে, এভাবে গেলে ভাবী কী বলবে? ইমদাদ হোসেনের ইয়ং বয়সের একটা পাঞ্জাবি ও লুঙ্গি এনে ধরিয়ে দিল অপূর্বকে। পারুল আজ লালশাক রান্না করেছে।
পেছনের ঘরটাতে অপূর্ব আজ থাকবে। এটাতে কেবল আরুই থাকে। বিছানা ঝেরে পরিপাটি করে রাখে অপূর্ব-র জন্য। অপূর্ব ঘরে ঢুকে দেখল আরুর মুখ ভার। একটা প্যাকেট আরুর পড়ার টেবিলের উপর রেখে বলে, “এগুলো সব তোর। যখন যেটা মন চাইবে, পরে আমাকে দেখাবি।”

এটা আরু ঘরে কাটা কাটা ছবি দেখতে পেল অপূর্ব। সংশয় নিয়ে বলে, “এইতো মেহেরজান সিনেমার নায়ক পলক। এর ছবি তোর ঘরে কেন?”

“আমি অনেক সুন্দর। সবাই বলে আমি পলকের মতো জামাই পাবো। এজন্য পোস্টার কেটে ছবি এনে আঠা দিয়ে লাগিয়ে রেখেছিলাম এককালে। আর তুলতে ইচ্ছে করেনি।”

__
আলোয় আলোয় সেজে উঠেছে আহসান বাড়ি। বিয়ের গান গাইছে মহিলারা একজোট হয়ে। পাতা মেহেদি বেটে তা কাগজ দিয়ে সুন্দর করে নকশা তৈরি করতে পারে আরু। হলুদ রঙের শাড়ি পরিধান করে সবাই আরুর কাছে এসেছে হাত সাজিয়ে তুলছে। আরু ধীরে ধীরে তিস্তার হাত রাঙিয়ে দিচ্ছে। তিস্তা উঠে যেতেই সেখানে বসে পড়ে তুর। অতঃপর শেফালী। সবার জন্য সুন্দর করে মেহেদি দিতে দিতে আরুর হাত ব্যথায় টনটন করে উঠে। আরু হাত ঝাড়া দিয়ে আবার দিতে থাকে। অপূর্ব-র দেওয়া সেই নীল শাড়িটা আরুর কাছে নেই, তাই বাধ্য হয়ে হলুদ শাড়িতেই সেজেছে ও।
সবার হাতে মেহেদি দিয়ে হাঁফ ছেড়ে উঠতেই তিস্তা আলতা নিয়ে হাজির হলো। আরুকে একটু নরম স্বরে বলে,
“কষ্ট করে একটু লাগিয়ে দে না। মাকে বললাম সে ব্যস্ত তাই পারবে না। তুই বল হলুদে আলতা না লাগালে ভালোলাগে?”

আরু মুচকি হাসি দিয়ে আলতার কৌটা নিয়ে মাটিতে বসে। তর্জনী কৌটায় ডুবিয়ে তিস্তার পা রাঙিয়ে দেয় লাল আলতায়। অবিলম্বে সেখানে হাজির হয় তুর ও শেফালী। তিস্তার আলতা শেষ করার আগেই তুর বলে, “আরু, আমাকে একটু দিয়ে দে না।”

“তুরকে দিলে আমাকেও দিয়ে দিবি কিন্তু।” শেফালী খালি গলাতে আরুকে শাসায়। আরু সায় দিয়ে তিনজনের পরানো সমাপ্তি ঘটায়। তুরে উঠতে গিয়ে অসাবধানতায় পা লাগে আলতার কৌটায়। আরুর শাড়িতে আলতার রং পড়ে যায়। তুর তড়িগড়ি করে হাত দিয়ে আলতা ফেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা করতেই হিতে বিপরীত হলো। হাতের মেহেদি লেপটে গেল অনেকটা। তুর করুন গলায় বলে, “আমি ইচ্ছে করে তোর শাড়িতে ফেলি নি আরু, বিশ্বাস কর পড়ে গেছে।”

“সমস্যা নেই।” আরু অবশিষ্ট মেহেদি বাটা নিয়ে ঘাটলার কাছে গেল। আলোতে ঐদিকটা একদম পরিষ্কার। আরু নিজের শাড়ির কিছু অংশ ভিজিয়ে রং দূর করে। অতঃপর শাড়িতে হাত মুখে হাতের তালুতে বৃত্তের মতো করে মেহেদি পরে। আঙুলের মাথায়ও লাগায় কিছুটা। হাত টানটান করে রাখে কিছুক্ষণ। হাতের ব্যথা একটু হ্রাস পেতেই আরু অগ্রসর হয় বাড়ির দিকে। উপর থেকে অপূর্ব ডেকোরেটের লোকদের সাথে কথা বলতে বলতে নামছিল। আরু নিজের হাত দেখতে দেখতে উঠছিল। মুখোমুখি দুজনের সংঘর্ষ হতেই আরু আঁকড়ে ধরে অপূর্ব-র পাঞ্জাবি। অপূর্ব ফোন ফেলে আরুকে ধরে। দুই মিনিট স্থির থেকে আরু দিল এক ভূষণ ভোলানো চিৎকার। হাতের এবড়োথেবড়ো মেহেদি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। অপূর্ব নিজের পাঞ্জাবির কলার ধরে অনুভব করল সেই যাতনা। ফোনটা মাটি থেকে তুলে দেখে বন্ধ হয়ে গেছে। একটা চাপা রাগ নিয়ে বলে, “এটা তুই কী করলি? একটু‌ দেখেশুনে..

আরুর ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে পারে না অপূর্ব। আরু তার আঁচল দিয়ে অপূর্বর পাঞ্জাবির মেহেদিটুকু মুছে বলে, “স্যরি অপূর্ব ভাই। আমি বুঝতে পারিনি, এভাবে আপনার পাঞ্জাবিতে লেগে যাবে। আপনার পাঞ্জাবিটা আমি নষ্ট করতে চাইনি। অনুষ্ঠান শেষ হলে ধুয়ে নিবো।”

আরু দ্রুত পা ফেলে ভেতরে চলে গেল। অপূর্ব সেদিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে। মেয়েটা তার শাড়িটা অনায়াসে শেষ করে ফেলল।

তিস্তাকে গায়ে হলুদ দিচ্ছে সবাই। মুরুব্বিদের পর গায়ে হলুদ দিল মধ্যবয়স্করা। তারপরে ভাইবোনেরা। সবাই দিলেও আরুর দিতে ইচ্ছে করল না। ওর ঘুম ঘুম পাচ্ছে। আচলটা কোমরে গুঁজে ছাদের অন্যপাশে মাদুর বিছানো ফাঁকা জায়গায় শুয়ে পড়ল। তিস্তার নানা বাড়ি থেকে অনেক লোক এসেছে। ঘরে জায়গা হবে না।

ঘুম থেকে উঠে কোমরে একটা ঠান্ডা বস্তু আবিষ্কার করল আরু। হাত দিতেই দেখল মেহেদি শুকিয়ে দলা পাকিয়ে আছে। আরুর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখে মেহেদির গাঢ় রঙ, কিন্তু ছিটেফোঁটাও নেই মেহেদি। গতকাল রাতে সব মেহেদি তুলে হাত ধুয়ে ফেলেছিল আরু।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
জন্মদিনে গিফট পাওয়া বৃষ্টি বিলাস পড়ছি বৃষ্টির দিনে। মনে নেই গল্প দেওয়ার কথা 😷

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

Page:
https://www.facebook.com/profile.php?id=100092431226303

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here