নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ২৮

0
415

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৮

“তুই না-কি অয়নকে দুধ খেতে দিবি না বলে দুধের গ্লাস ভেঙে ফেলেছিস?” বলতে বলতেই হাঁটু গেড়ে আরুর পাশে বসে অপূর্ব। একতরফা অপূর্বর প্রতি তীব্র অভিমানের ভেলা ঘিরে ধরল চারপাশ থেকে। আরু মুখ ফিরিয়ে নিল পূর্ব দিকে। সেদিকে শেয়াল ডেকে চলেছে। ততক্ষণে গা ঘেঁষে অপূর্ব বসে নিজের মাথা আরুর কাঁধে ঠেকিয়ে দিয়েছে। চাপা অভিমান নিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে, “অপূর্ব ভাই, আপনিও আমাকে বুঝলেন না? আপনিও ভেবে নিলেন, আমি অয়নের জন্য গ্লাস ভেঙেছি?”

“নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। তুই যদি মুখ ফুটে সত্যিটা না বলিস, আমি সত্যিটা জানতে পারব না। আবার অন্যের কথার পরিপ্রেক্ষিতে তোকেও অবিশ্বাস করতে পারব না। আরুপাখি, বল কী হয়েছে?”

দিঘিতে মাছে বুটবুট করে তার সাথে আরুও নিজের বাক্য তোলে, “শেফালী কীটনাশক জাতীয় কিছু একটা দুধে মিশিয়ে সুমি ভাবীকে খাওয়াতে চেয়েছিল। আমি বাধা দিয়েছি বলে নিজে খেতে চাইল। সেই মুহুর্তে আমি দুধের গ্লাস নিয়ে বাইরে আসতেই অয়ন উঠে পড়ে লাগে দুধ খাবে। বোন হয়ে ভাইয়ের মুখে জেনে শুনে কীভাবে বি/ষ তুলে দেই। জোর করাতে ইচ্ছে করেই আমি গ্লাসটা ভেঙে ফেলেছি।”‌

আরুর এমন প্রত্যুক্তিতে অপূর্বর খোয়া গেছে বুলি। চোখজোড়া রসগোল্লার মতো হয়েছে। ঠোঁটের পল্লব জোড়া বিচ্ছিন্ন হয়েছে ঈষৎ। রাগে কাঁপছে অঙ্গ। ত্রস্তব্যস্ত হয়ে অপূর্ব বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল। এর ফলাফল অনুমান করে পথ আটকে দাঁড়াল আরু। বিহ্বল হয়ে বলে, “বাড়ির দিকে আপনি যাবেন না।”

রোষের গোঙানি তুলে আরুকে সরাতে সরাতে বলে, “আমার সামনে থেকে সরে যা আরু, ‘এই কাজটা করার আগে ওর কলিজা একবারও কাঁপেনি কেন?’ – আমি ওকে সেটা জিজ্ঞেস করব। সামলে থেকে সর।”

“আজকে তিয়াস ভাই সুমি ভাবী সবাই অনেক খুশি। এমন সময় যদি শেফালীর কথা জানাজানি হয় সবাই অনেক কষ্ট পাবে। দয়া করে, আপনি আজকে কিছু বলেন না। ছোটো মামা শুনলে কষ্ট পাবে।” অপূর্ব হাত ধরে আশা নিয়ে বলে আরু। আরুকে আশাহত না করে দৃঢ় করে ধরে হাতটা। অসময়ে ঝুম ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়। অতঃপর বৃষ্টি হতে ত্রাণ পেতে আশ্রয় নেয় নারিকেল গাছের নিচে। জড়সড়ো হয়ে বসে পাঞ্জাবির পকেট থেকে ছোটো একটা পলিথিন বের করে। প্রেমের বান ভেঙে বলে, “শুনেছি বিয়ের মিষ্টি খেলে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে হয়। এই মিষ্টিটা তুই খেয়ে ফেল। দেখি কবে আমাদের বিয়ে হয়।”

বলে অপূর্ব মিষ্টিটা মুখে নিয়ে এগিয়ে ধরল আরুর দিকে। আরু ভেঙে নেওয়ার জন্য হাত বাড়াতেই অপূর্ব থামলো হাতের গতি। আরু বুঝে গেল তার করণীয় কাজ কী! দূরত্ব ঘুচিয়ে অপূর্ব থেকে আংশিক মুখে নিয়ে নতজানু হলো লজ্জায়। প্রিয় মানুষের দেওয়া লজ্জায় প্রিয় মানুষের বুকে মুখে গুজে দিল।
__
আরু দ্রুতহাতে ফুলের মালা গাঁথছে। বাসর ঘর সুন্দর করে সাজিয়ে বিছানার উপর সুমিকে রাখল। তাজা দুধ গরম করে নিজের হাতে এনে টেবিলের উপর রেখেছে আরু। ততক্ষণে দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে তিয়াস। ঘরে পা রাখার আগে অবরোধ জারি করে আরু বলে, “ঘর সাজাতে আমাদের অনেক খাটতে হয়েছে। এক হাজার টাকা দিলে বউ আর ঘর দুটোই আপনার। নাহলে আমরা আজ বাসর করব ভাবীর সাথে।”

“কী?” এক হাজার! তোরা কী ডাকাত? এত টাকা চাইছিস কেন? কম নে বোন।” তিয়াসের করুন অনুরোধ। পেছন থেকে অপূর্ব হেলান দিয়ে বলে, “এগারো শো।”

“মাত্র তো বলল, এক হাজার।”

“যত কথা বলবি, তত বাড়বে। তাড়াতাড়ি দে, নাহলে আরও বাড়বে। বারোশো।” অপূর্ব থামার আগেই তিয়াস ঘরের ভেতরে ঢুকল। টেবিল ক্লথের নিচ থেকে বারোশো টাকা বের করে আরুর দিকে এগিয়ে দিল। তুর তা ছিনিয়ে নিল। অপূর্ব আশেপাশে চেয়ে দেখে শেফালী নেই উপস্থিত। তুর টাকা গুনতে গুনতে বলে, “ভাইয়া, আপনি নতুন বউ পেয়েছেন। আমরাও ভাবী পেয়েছি। আমাদেরও তো একটা হক আছে ভাবীর সাথে বাসর করার।”

“তবে রে.. বলে এগোতেই তুর ছুটে গেল বাইরে। অপূর্বর সাথে বেরিয়ে যেতে যেতে আরু বলে, “টেবিলের উপর গ্লাস আছে। বড়ো মামি দিয়েছে।”

তিয়াস ছিটকিনি তুলে ধীর পায়ে এগিয়ে সুমির পাশে বসে। ঘোমটার কারণে মুখের কোনো অংশ দেখা যাচ্ছে না। তিয়াস ঘোমটা তুলে সুমিকে দেখে নিজের তৃষ্ণা মেটায়। দুহাত মেলে দিয়ে দেয় বুকে আসায় ইঙ্গিত। শরীরের মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে হুরহুর করে। সুমিকে এক হাতে জড়িয়ে জানালা খুলে দিল তিয়াস। বাইরে থেকে আসা বৃষ্টির ঝাপটায় উপশম হলো সেই রোগ। সুমির ওষ্ঠদ্বয় ঢাকা পড়ল প্রেমিকের ওষ্ঠের ভাঁজে। আকাশের ফালি চাঁদটা বহু আগে লজ্জায় লুকিয়ে গেছে মেঘের আড়ালে।
__
অপূর্বর বিছানা ঝেরে বালিশ‌ ঠিক করে দিল আরু। অপূর্ব হাত দুটো বুকে গুজে হেলান দিয়েছে দেয়ালে। আরুর কাজ শেষ করে পা গতিশীল করার পূর্বে টেনে ধরল অপূর্ব। আলমারিতে গুছিয়ে রাখা বিয়ের বেনারসিটা হাতে তুলে দেয়, দিল আরও একটি প্যাকেট। যা ভর্তি চুড়ি দিয়ে। আরু চমকে উঠে বাক্য সাজায়, “এগুলো আপনি আমাকে দিচ্ছেন কেন?”

“সেম ডিজাইনের চুড়ি খুঁজে পাইনি। তাই এগুলো সব নিয়ে এসেছি। আর বেনারসিটা আমার আরুপাখি পছন্দ করেছে। তাই আগাম নিয়ে এলাম।”

“বিয়ের সময় এমন সাদামাটা বেনারসি পরলে চেয়ারম্যান বাড়ির মান থাকবে?”

“রাতে এটা পরবি। আমি মুগ্ধ হয়ে দেখব কেবল।”

“এটা আপনার কাছে রেখে দিন। মা শাড়ি দেখলে প্রশ্ন করে আমার পাগল করে ফেলবে।” আরুর কথায় সায় দিয়ে অপূর্ব শাড়িখানা তুলে রাখে আলমারিতে। তবে এখন মুঠো চুড়ি আরুর হাতে পরিয়ে দিতে ভুলে না। আরু চুড়ির জোড়া ছুঁয়ে বলে, “শুভ রাত্রি।”

অতঃপর আরু তুরদের ঘরে গেল। তুর বসে বসে টাকা থুতু দিয়ে গুনতে ব্যস্ত। আরু দেখল সেখানে নেই শেফালী। মেয়েটা রাগে আজও আসেনি ঘুমাতে। আরু সেই ফাঁকা ঘরটাতে গেল। দরজাটা ফাঁক করতেই স্তম্ভিত হলো সে। দুধের গ্লাসে শেষ চুমুক দিয়ে টেবিলের উপর রেখেছে শেফালী। ছিটকিনির শব্দে শেফালী জানে আরু এসেছে। একটা ব্যঙ্গাতক হাসি দিয়ে বলে, “আরু তুই এবার আর আমাকে বাঁচাতে পারলি না। পারলি না, পারলি না। আমি ঠিক দুধ খেয়ে ফেললাম। জানিস আরু, আমার ভেতরটা পুড়ে ছাই হয়ে যায় ওদের একসাথে দেখলে। তিয়াস ভাইয়ের পাশে আমার থাকার কথা ছিল, কিন্তু আজ ঐ সুমি। আমি তিয়াস ভাইকে আপন করতে না পারি মৃত্যুকে ঠিকই আপন করতে পারব।”

শেফালী গলা চেপে ধরে ছটফট করেছে মাটিতে। ওর শরীরে মাটি লাগছে। আরুর শরীর কম্পনের জন্য অস্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। আরু ছুটে গেল তুরের কাছে। কিন্তু তুর ওকে পাত্তা দিল না। ছোটো মামার ঘরের দরজায় ধাক্কা দিতেই মণি বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। হাই তুলে বলে, “কী হয়েছে আরু মা? এতরাতে দরজা ধাক্কা দিলি কেন?

“শেফালী ঐ ঘরে একা শুয়েছে। ও কেমন করছে..

“ও গতকালও ঐ ঘরে ঘুমিয়েছে। দুইদিন থাকতে দে, নিজেই তোদের ঘরে চলে যাবে।” আরুকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ঘরের ভেতরে ঢুকে খিল দিল মণি। আরু অসহায় হয়ে পড়ে শেফালীর চিন্তায়। শেষ ভরসা হিসেবে ছুটে যায় অপূর্বর কাছে। দুহাতে একের পর এক ধাক্কা দেয় দরজায়। ঘুম ভেঙে যায় অপূর্বর। বিরক্ত হয়ে দরজা খুললে অপূর্বকে কথা বলার কোনো সুযোগ দিল না আরু। নিজে থেকে সাহস নিয়ে বলে, “অপূর্ব ভাই, আমাদের শেফালী বি/ষ খেয়েছে। মাটিতে পড়ে কেমন‌ কাতরাচ্ছে। কেউ আমার কথা শুনছে না।”

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here