নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ #পর্ব: ২৮ (বর্ধিতাংশ)

0
213

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
#পর্ব: ২৮ (বর্ধিতাংশ)

“অপূর্ব ভাই, আমাদের শেফালী বি/ষ খেয়েছে। মাটিতে পড়ে কেমন‌ কাঁতরাচ্ছে। কেউ আমার কথা শুনছে না।”
আরুর ব্যাকুল কণ্ঠে অপূর্বর ঘুম ঘুম ভাবটা অনায়াসেই দূর হয়ে গেল। তিন সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে ছুটে গেল শেফালীর ঘরে। শেফালীর কাতরানোর দৃশ্যটা সহ্য করতে পারে না অপূর্ব। পার্লস রেট চেক করতে করতে আদেশ দেয়, “রান্নাঘরে ডিম দেখেছি। তাড়াতাড়ি সেখান থেকে ডিম নিয়ে আয়।”

পরক্ষণেই উল্কার বেগে রান্নাঘরের দিকে ধাবিত হলো আরু। খাঁচি আর বাটি দুটোই তুলে নিয়ে এলো। তারপরে বাটিতে ভেঙে খাওয়ানোর সময় লক্ষ্য করল চামচ নেই। অপূর্ব রাগান্বিত কণ্ঠে বলে, “চামচটা কি আমি গিয়ে নিয়ে আসব?”

আরু ছুটে চামচ নিয়ে ফেরত এলো। এই সাধারণ দূরত্ব এতো জলদি আসা-যাওয়া করল যে, ওর পা যাতনায় টনটন করে উঠে। অপূর্ব শেফালীর মুখে কাঁচা ডিম তুলে দেয়। কাঁচা ডিমের গন্ধে শেফালীর পেট মোচড় এলো বমি। ভাসিয়ে দিল ঘর। অপূর্ব অনেকটা নিশ্চিন্ত হলো, অতঃপর বাজখাঁই গলায় বলে, “কে কোথায় আছো? তাড়াতাড়ি এখানে এসো। আমাদের শহরে যেতে হবে। শেফালী বি/ষ খেয়েছে।”

অপূর্বর চিৎকারে কিলোমিটার দূরে থাকা কাকটাও ডাল ছেড়ে উড়ে গেল। কিছুক্ষণের ভেতরে সবাই হাজির হলো ঘরে। ততক্ষণে অপূর্ব পাঁজাকোলা করে তুলে নিয়েছে শেফালীকে। শেফালীর জ্ঞান নেই। মেয়ের এমন অবস্থা দেখে মণি অস্থির হয়ে বলে, “আমার মেয়ের কী হয়েছে আরু? ওকে অপু কোথায় নিয়ে গেছে?”

“শেফালী কীটনাশক খেয়েছে মামি। অপূর্ব ভাই অনেকটা বের করে এনেছে, বাকিটা বের করার জন্য হাসপাতালে ছুটছে।” বলেই আরু ছুটে গেল। সবাই বিস্মিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, এখন করণীয় কাজটি করতে তারা ভুলে গেছে। ততক্ষণে ঘর থেকে বেরিয়ে এসেছে তিয়াস ও সুমি। ড্রয়িং রুমে মা চাচির হাহাকার শুনে ধারণা হলো অনেকটা। বাবা চাচারা ইতোমধ্যে ছুটেছে। পুরুষ মানুষদের মধ্যে তিয়াস একা গেল না। প্রাণহীন জড় পদার্থের ন্যায় ঘরে ফিরত এলো। পতির এমন অবনতি দেখে সুমি এলো ঘরে। ঈষৎ রাগান্বিত কণ্ঠে বলে, “সেদিন নাহয় শেফালী আমাকে নিয়ে একটা খা/রা/প কথা বলেছে। এতে খা/রা/প লাগলেও সত্যি। তাই বলে মেয়েটার এমন বিপদে ভাই হয়ে কা/পুরুষের মতো দরজায় খিল দিয়ে বসে থাকবে? আমার হাতের চুড়িগুলো নাও, হাতে দিয়ে বসে থাকো।”

বলতে বলতে আংশিক খুলে ফেলে সুমি। সুমিকে বাধা দিয়ে নিজের দুঃখ ভাগাভাগি করে তিয়াস, “তুমি তোমার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারবে সুমি?”

বিস্ময়ে আঁতকে উঠে তিয়াসের দিকে তাকায় সুমি। পরবর্তী বাক্য তুলতে বাধা দিতে হাত ঠেকিয়ে দিল তিয়াসের ওষ্ঠদ্বয়ে। ব্যথিত গলায় বলে, “কোনো নারী তার স্বামীর ভাগ কাউকে দিতে পারে না। আমিও একজন নারী। তোমাকে ভাগ করে নেওয়ার আগে আমি নিজেকে ভাগ করে ফেলবো।”

“শেফালী সেই ভাগটা চায়। শেফালী আমাকে নিজের স্বামী হিসেবে চায়। ও আমাকে ছোটো থেকে ভালোবাসে।” হাতটা সরিয়ে উৎকন্ঠিত হয়ে বলে তিয়াস। সুমি কাতর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এতক্ষণে সে ঠাওর করতে পারছে, শেফালীর এমন আচরণের মানে। বিয়ের এক সেকেন্ড আগেও যদি ব্যাপারটা আঁচ করতে পারব, ফিরে যেতে বাড়ি। সুমি আচমকা হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। তিয়াস নিজেই হতভম্ব। অল্পতেই হেঁচকি তুলে বলে, “তুমি আমাকে দোষী করে দিলে। ঐ বাচ্চা মেয়েটার কাছে আমাকে ঋণী করে দিলে‌। ওর যদি কিছু হয়ে যায়, আমাকে সারাজীবন চাচির একমাত্র সন্তান হারানোর অভিশাপ নিয়ে বাঁচতে হবে।”

“শান্ত হও, ওর কিছু হবেনা। আমি সব ঠিক করে দিবো।”

“তুমি আমার জীবন গুছিয়ে ওর জীবন কেড়ে নিবে?” দুহাতে পাঞ্জাবিটা মুষ্টিবদ্ধ করে কুঞ্চিত করে ফেলেছে অনেকটা। তিয়াস সুমির মাথায় হাত বুলিয়ে কেবল ওকে সান্ত্বনা দিয়ে চলেছে। বুক ছিঁড়ে প্রকাশ পেল একটা বিষাক্ত নিঃশ্বাস।
__
গা ছমছমে পরিবেশ। শেফালীকে কোলে তুলে ছুটে চলেছে অপূর্ব। তার পেছনে পেছনে লম্বা কদম ফেলে বাবা-চাচারা আসছে। তার পেছনে আসছে আরু। আরুর অনেকটা পেছনে আসছে অপূর্বর তিন চাচি ও মা।
ব্রিজ পর্যন্ত আসতেই বিপরীত দিক থেকে দুইটা বেবিট্যাক্সি এসে থামল সামনে। মোতাহার আহসান ফোন করে আসতে বলেছে বাড়ির কাছে। অপূর্ব শেফালীকে যত্ন করে বেবিট্যাক্সিতে তুলে দেয়। সেই বেবিট্যাক্সিটা শাঁ শাঁ করে গন্তব্যের জন্য রওনা হতেই অপূর্ব এলো অন্য বেবিট্যাক্সির দিকে। দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ছুটে আসা পদ্মাবতীর দিকে। আরুর দিকে কয়েকপা এগিয়ে কাঁধে হাত রেখে বলে, “স্যরি, তখন রাগের কারণে ওভাবে বলে ফেলেছি। আশা করি, তুমি আমাকে বুঝতে পারছ। এদিকে আর এসো না। বাড়িতে ফিরে যাও। চাচিকে সামলাও।”

“আমি রাগ করিনি। দেরি হয়ে যাচ্ছে, আপনি যান।”

“আসি।” বলেই অপূর্ব বেবিট্যাক্সিতে পা রাখতেই চালক দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলে। অপূর্বর সেজো চাচা প্রশ্ন করে, “কার সাথে কথা বললি?”

“আরু। দৌড়াতে দৌড়াতে চলে এসেছে। আশেপাশে কাউকে দেখতে পারছি না। তাই বাড়িতে যেতে বলেছি। (বিরতি টেনে) আরু যদি সঠিক সময়ে আমাকে খবর না দিতো। তবে যে.. বাক্য শেষ করার আগেই বেবিট্যাক্সিতে থাকা তিনজন পুরুষের দেহে অতি মাত্রায় কেঁপে উঠে। অনেকটা পথ পেরিয়ে যেতেই দুশ্চিন্তা নিয়ে মুখ খোলে মেজো চাচা, “তুই নিজেই তো একজন ডাক্তার। তাহলে শেফালীকে হাসপাতালে না নিয়ে তুই নিজেই ওর চিকিৎসা করতে পারতি।”

“আমি মনোচিকিৎসক চাচা। এইসব ধরণে আমার মোটামুটি অভিজ্ঞতা থাকলেও, যন্ত্রপাতি নেই।”
__

গমন পথের দিকে তাকিয়ে দুফোঁটা পানি ফেলে ফিরতি পথে পা বাড়ায় আরু। আনমনে সে অঢেল কামনা করে শেফালীকে ফেরত পাওয়ার। ব্রিজের দিক থেকে কয়েকটা ছেলে এগিয়ে আসছে আরুর পেছনে পেছনে। পেছনের শব্দ কোনো দুষ্টু তাদের ভেবে আরু পায়ে ঘর্ষণ করে হেঁটে চলে। কিন্তু তাদের পায়ের শব্দে আরু পেছনে ফিরলে ছেলেদের দল দেখে ব্যাকুল হয়ে উঠে। কীভাবে পরিত্রাণ পাবে? আরু দ্রুত কদম ফেলতেই যুবকের দলও গতি বাড়িয়ে দেয়। এর মাঝে আরুর দেহ ঘেঁষে হাঁটে কালাচাঁন। কিঞ্চিৎ ভরকে পাশে তাকিয়ে বিরাগী পোষণ করে বলে, “সরে হাঁটুন। রাস্তা যথেষ্ট বড়ো।”

সরে হাঁটতে হাঁটতে প্রতুক্তি করে, “এতরাতে এদিকে কোথায় গিয়েছিল গোলাপী?”

“শেফালী বি/ষ খেয়েছে। এজন্য বাড়ির সমস্ত পুরুষেরা ওকে হাসপাতালে গেছে।” বলতে বলতে আরু হাঁটে। বাড়ির কাছাকাছি এসে ডান দিকে বাঁক নেওয়ার পূর্বে আরুর হাত ধরে ফেলে কালাচাঁন। আরু ব্যতিব্যস্ত হয়ে হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বলে, “কালাচাঁনের বাচ্চা হাত ধরেছিস কেন তুই? আমার হাত ছাড়।”

“তোর সাথে আমার একটু কথা আছে। ওদিকে আয়।” দৃঢ় গলায়।

“আমার কোনো কথা নেই। তোর কোনো কথা থাকলে কালকে দিনে বলিস।” রাগান্বিত কণ্ঠে বলে আরু হাত ছাড়াতে থাকে। কিন্তু তার চেষ্টাকে বৃথা করে পেছন থেকে আঁকড়ে ধরে আরুকে। নদীর ধারে জঙ্গলের ভেতরে নিয়ে যেতে থাকে। পুরুষালি শক্তির কাছে আরুর শক্তি তুচ্ছ। এর ফলাফল জেনে আরুর শরীর কেঁপে উঠছে। কাঁতরাতে কাঁতরাতে অশ্রুপাত করে বলে, “আমাকে ছেড়ে দিন। আমার কোনো ক্ষতি করবেন না।”

“তোমার কোনো ক্ষতি করব না, তবে তোমাকে আমার করব।” পেছন থেকে অন্য একজন আরুর মাথায় আ/ঘা/ত করে। আরুর শক্তি লোপ পেয়ে চেতনা হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে কালাচাঁনের বুকে। কালাচাঁন আরুকে আপন করে নিয়ে বলে, “ওকে কেন মারলি? ওকে একটা ফুলের টোকাও দিবি না।”

“আরে আ/ঘা/ত না করলে সহজে আসত না ভাই।” বন্ধুর কথায় তবুও দ্বিমত করে আরুকে পাঁজাকোলা করে নিয়ে এগিয়ে যায় সামনের দিকে। ততক্ষণে কালাচাঁনের বন্ধুরা নৌকা এনে ভিড়িয়েছে পাড়ে।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
রেসপন্স করার অনুরোধ রইল

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here