নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে #ইফা_আমহৃদ পর্ব: ২৯

0
193

#নীলপদ্ম_গেঁথে_রেখেছি_তোর_নামে
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৯

ভোরের আলো অস্ফুট থেকে স্ফুট হতে আরম্ভ করেছে। একটি রাত নির্ঘুম অতিবাহিত হয়েছে আহসান বাড়ির প্রতিটি সদস্যদের। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে থাকা শেফালীর চেতনা এখনো আসেনি, তবে বি/ষ সম্পূর্ণ পরিত্যাগ করা হয়েছে। অপূর্ব এই হাসপাতালের ডাক্তার বলে নিজেই শেফালীর চিকিৎসা করেছে। এখন সে বিপদ সীমার বাইরে অবস্থান করছে।

কিছুক্ষণ পর সূর্য উঁকি দিতেই মহিলারা হাজির হলো হাসপাতালে। পুরুষরা তখন বারান্দায় অপেক্ষারত। মণি হন্তদন্ত হয়ে সবার আগে এসে শাহিনুজ্জামানের জামা ধরে‌ টেনে বিচলিত কণ্ঠে বলে, “আমার মেয়ে কোথায়? কেমন আছে ও? সত্যিই কী ও বিষ খেয়েছে? বেঁচে আছে তো?”

একের পর এক প্রশ্ন অস্বাভাবিক নয় মায়ের। শাহিনুজ্জামান পিঠে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে বলে, “শান্ত হও, আমাদের শেফালী ভালো আছে এখন।”

মণি কাঁচ দিয়ে অচেতন শেফালীকে দেখল ভেতরে। ছ্যাত করে দরজা খুলে ধাবিত হলো শেফালীর কাছে। অচেতন শেফালীকে সপাং করে লাগাল চড়। সবাই তখন মণিকে ক্ষান্ত করতে নিযুক্ত হয়। ঘুমের কড়া ওষুধের ডোজ থেকে পরিত্রাণ পেয়ে চোখ মেলে তাকায় শেফালী। মণিকে এমন রূপ ধারণ করতে দেখে নত হয়। ক্রোধের গোঙানি তুলে মণি বলে, “যখন তুই বি/ষ খেয়েছিলি, তখন একেবারের জন্যও আমাদের কথা তোর মনে পড়ে নি? তুই আমাদের একমাত্র সন্তান। আদর ভালোবাসায় কখনো কমতি রাখিনি। মেয়ে হয়ে কিভাবে পারতি আমাদের নিঃসন্তান করার কথা ভাবতে।”

“মা..

শেফালী শব্দ স্ফুটিত করার প্রয়াস করলে মণি হুংকার দেয়, “আমি তোর মা না, তুই আমার মেয়ে না। একদম আমাকে মা বলে ডাকবি না।” বলে কাঁদতে থাকে মণি। তখন অপূর্ব সেখানে উপস্থিত হয়। আশেপাশে আরু নামক যুবতিকে না পেয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে না। অপূর্ব দৃষ্টির অর্থ আন্দাজ করে অনিতা বলে, “আরু কোথায়, ওকে দেখছি না যে?”

“আরু আমাদের সাথে আসেনি। ওকে আমি বাড়িতে ফিরে যেতে বলেছি।”

“কী বলিস? ও বাড়িতে ফিরে যায়নি। আমরা সবাই জানি, ও তোদের সাথে আছে।” অনিতার প্রতুক্তিরে অপূর্বর অন্তঃকরণে হানা দিল আতঙ্ক। নদীর অন্যপাশ দিয়ে যখন তারা হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল, তখন শুনেছে এক উগ্র কণ্ঠ। পারুল পাশ থেকে বলে, “ও মেয়ের অনেক জেদ। তুই নিয়ে আসিস নি এজন্য বোধহয় সোজা বাড়িতে চলে গেছে। আমরা সবাই ব্রিজ পর্যন্ত গিয়েছিলাম। সেখানে ও ছিল না।”

“ফুফু আরু এটুকুতে এমন জেদ ধরবে না।” তুরের বিরক্তিকর গলা। অপূর্ব সেকেন্ড খানেক সময় নষ্ট না করে ছুটে গেল বাড়ির দিকে। তুরকে নিয়ে ফিরল বাড়িতে। সমস্ত বাড়িতে আরুর কোনো সন্ধান পেল না। উদাসীন হয়ে আরুদের বাড়ির দিকে পা ফেলল। রাস্তায় দেখতে পেল কয়েকটা চুড়ি ভাঙা। অপূর্ব পাত্তা না দিয়ে মৃধা বাড়িতে গেল। সেখানেও আরুর সন্ধান নেই। অপূর্ব দেখল ময়নাপাখি বাচ্চাদের নিয়ে খেলা করছে। তুর ছুটে গিয়ে ময়না পাখিকে উদ্দেশ্য করে বলে, “এই ময়না, আরু এসেছিল?”

“আরু! আরু! নেই! আরুপাখি নেই! আরুপাখি নেই!” ময়নার বাক্য শুনে অপূর্ব ছুটে গেল রাস্তায়। এতটা পথ সে হেঁটে ব্রিজ দিয়ে যেতে পারবে না বিধায় নদী পার হয়ে গেল। তখন নদীতে ভাটার টান পড়েছে। তাই টাকনু সমান পানি। ভেজা মাটির উপর কাউকে টেনে নিয়ে যাওয়ার একটা চিহ্ন নজরে এলো অপূর্বর। সেখানেও আরুর ভাঙা চুড়ি। অপূর্ব চুড়ি জোড়া গভীর দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করে বুঝে, গতকাল রাতে এই চুড়ি জোড়া অপূর্ব নিজের হাতে আরুকে পরিয়ে দিয়েছিল। অপূর্ব নিশ্চিত হয়ে বলে, “আমার মনে হয় আরুকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে।”

“আমারও তাই মনে হয় ভাইয়া, কিন্তু কে আরুকে তুলে নিয়ে যাবো? শেফালীর ঘটনাটা‌ হঠাৎ ঘটেছিল। কেউ জানত না, আরু এখানে আসবে। আপনি আরুকে ফিরিয়ে এনে দিন ভাই।”

বোনের কান্নায় অপূর্ব ধৈর্যধারণ করতে পারে না। তুরকে আগলে নিয়ে জানায়, সে খুঁজে আনবে আরুকে।
__
শেফালীকে হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আনা হয়েছে। এক মেয়ের দুঃশ্চিন্তার পর অন্য মেয়ের জন্য চিন্তিত আহসান পরিবার। পুলিশ তদন্ত করতে নেমে পড়েছে। কিন্তু আরুর সঠিক তথ্য জোগাড় করতে পারেনি। বাড়ির এই পরিবেশের মধ্যে তিস্তাকে নায়র আনার কথা মনেও নেই কারো। আহসান বাড়ির প্রাঙ্গণে বসে আরুর খোঁজ নিয়ে গবেষণা হচ্ছিল, তখন একটা রিকশা এসে থামে বাড়ির রাস্তায়। উপস্থিত সবাই তিস্তাকে দেখে হতবাক হয়। কীভাবে ভুলে গেল মেয়ের কথা?
তিস্তা রোষের সাথে ভাড়া মিটিয়ে বাড়ির ভেতরে ট্রাভেলিং ব্যাগসহ প্রবেশ করে। সবার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ভেতরে চলে গেল। তবে বউয়ের পথ অনুসরণ না করে সবাইকে সালাম দিয়ে খোঁজখবর নেয় সুজন। পর মুহুর্তে বাজখাঁই গলা শুনতে পায় তিস্তার, “ও, এজন্য আমার কথা সবাই ভুলে গেছে। বাড়িতে নতুন বউ এসেছে, মেয়ে তো পর হয়ে যাবেই।
তিস্তার ভুবন কাঁপানো চিৎকারে সকলে ছুটে যায় ঘরে। কেউ তাকে ক্ষান্ত চাইলে বিনিময়ে সে রেগে কেঁদে ফেলে। অশ্রু মিশ্রিত কণ্ঠে বলে, ”কীভাবে পারলে একদিনেই আমাকে ভুলে যেতে। সারাদিন তোমাদের জন্য ছটফট করেছি, এই বুঝি এসে পড়বে। কিন্তু কেউ আসোনি। দুইটা দিন ভিন্ন একটা পরিবেশে কেমন ছিলাম, আমিই জানি।”

তিয়াস সান্ত্বনা দিতে পারে না। আপন ভাই তিয়াসের প্রতিও তার অঢেল রাগ। সবাই যখন হার মেনে নিল তখন এগিয়ে গেল অপূর্ব। তিস্তার চোখের পানি দেখে আলতো হাতে মুছে দিয়ে বলে, “তোকে যে চিঠিটা দিয়েছিলাম বোনু, সেটা দেখেছিস?”

“না। কোথায় রেখেছি, আর খুঁজে পাইনি। মনে হয় বাচ্চারা নিয়ে গেছে।” একটু নতজানু হয়ে জবাব দেয় তিস্তা। অপূর্ব এটাই সন্দেহ করেছিল এতক্ষণ। অতঃপর আবার বাক্য তোলে, “সেই কাগজে সুমির কথা লিখে দিয়েছিল তিয়াস। আমি তোকে বলেছিলাম, একা পড়বি। বলেছিলাম তো?”

“হ্যাঁ! সেটা নাহয় বুঝলাম, কিন্তু আমাকে কেউ কেন নিয়ে আসতে যায়নি?” ততক্ষণে রোষ নিয়ন্ত্রণে এসেছে। সম্পূর্ণ রোষ দমাতে তিস্তাকে পানি এগিয়ে দেয় অপূর্ব। তিস্তা পাত্র গ্ৰহণ করে পানি পান করা শেষ হলে অপূর্ব বলে, “শেফালী গতকাল বি/ষ খেয়েছে। রাতে ওকে নিয়ে ছুটেছি। সকালে বাড়িতে এসে দেখি আরু নেই। রাস্তায় ওর চুড়ি ভাঙা আর নদী দিয়ে টেনে নৌকায় করে কেউ নিয়ে গেছে ওকে। এত চিন্তার মাঝে তোর কথা মনে থাকে?”

তিস্তা চমকালো ভীষণ, প্রথম বাক্যের শেষে শেফালীর কথা ভেবে শান্ত হয়, পরবর্তী বাক্য আরুর জন্য অস্থির হয়ে বলে, “ভাইয়া কী বলছেন আপনি? শেফালী বি/ষ খেয়েছে মানে কী? আমি তোমাদের পর হয়ে গেছি যে, এই গুরুত্বপূর্ণ একটা সংবাদ আমাকে জানানো হয়নি?
আরু নিখোঁজ। আর তোমরা হাত-পা গুটিয়ে বসে আছো কেন?”

“শেফালী এখন বিপদ মুক্ত, দুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাবে আর পুলিশ আরুকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে।” অপূর্ব থামতেই তিস্তা ছুটে গেল ঘরে। শেফালীর সাথে দেখা করে ব/কে দিল কয়েক দফা। ফিরে এসে অপূর্বকে বলে, “কালাচাঁন নামের একটা ছেলে আছে যে, আরুকে প্রচুর ডিস্টার্ব করে। আমার মনে হয় ও কিছু করেছে‌।”

“আমার মনে হয় না, কালাচাঁন। কারণ ওকে আমি শিক্ষা দিয়েছি।” অপূর্ব ভেবে বলে।

তবুও তিস্তার মন সায় দেয় না। “সাবধানের মা/র নেই। চলুন আমরা একবার কালাচাঁনের বাড়িতে খুঁজে আসি। হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার চেষ্টা নিশ্চিত হয় ভালো।”

অতঃপর কয়েকজন যুবক যুবতি মিলে সংঘবদ্ধ হয়ে ছুটে যায় কালাচাঁনের বাড়ির দিকে। সাথে নিয়ে যায় আরুকে পাওয়ার এক আশা।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

রেসপন্স করার অনুরোধ রইল 💚

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here