#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_১৯
নিঝুম মিটিমিটি করে চোখ মেলে তাকাল। মুখ খুলতেই শান্ত’র মুখ দেখেই একটা চিৎকার দিলো সে। তার চিৎকারে শান্ত ছেড়ে দিল তাকে। নিঝুমও ছেড়ে দিল শান্তকে। ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল নিঝুম। মুখ তুলে তাকাল শান্ত’র দিকে। শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিঝুম বলে উঠে,
“আআআআ ! আমায় ফে*লে দিলেন কেন আপনি?
“তুমি চেঁচিয়ে আমার কান ধরে ফেলেছ তাই!
“এজন্য ফেলে দিবেন। জানেন প*ড়ে গিয়ে কতোটা ব্যাথা পেয়েছি আমি।
“ভালো হয়েছে পেয়েছ!
বলেই মুখ ভেংচি কাটলো শান্ত! নিঝুম মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শান্ত খানিকক্ষণ চিন্তা ভাবনার পর ভাবল হাত বাড়িয়ে নিঝুম কে উঠানোর কথা। কিন্তু যখন’ই সে হাত বাড়াতে অমনি আহনাফ এসে তুলল নিঝুম কে। শান্ত হাত গুটিয়ে নিল।
ফোনে কথা শেষ করে এখানে এসে আহনাফ দেখল নিঝুম নিচে বসে শান্ত’র সাথে ঝগড়া করছে। সবসময় সাপ বেজির মতো লেগে থাকে দুজন। আহনাফ হেসে এগিয়ে আসে নিঝুম কে তুলতে।
আহনাফ নিঝুম কে তুলে বলল, “পড়ে গেলে কিভাবে?
“এই অশান্ত ফেলে দিয়েছে আমাকে।
“একদম মিথ্যে বলবে না,আমার কানের সামনে এসে চেঁচিয়েছো তুমি।
“আপনি মিথ্যে বলছেন, আমাকে এসে ভয় দেখান নি আপনি। আপনাকে কারণে পড়ে গেছি আমি না রীতিমতো আমাকে ফে*লে দিয়েছেন আপনি।
শান্ত দাঁতে চেপে বলল “চশমিশ কোথাকার!
বলেই চলে গেল। নিঝুম তেড়ে গিয়ে বলল, “এই এই অশান্ত কি বললেন আপনি!
আহনাফ হেসে নিঝুমের হাত ধরে তাকে থামিয়ে বলল,”থামো থামো! বেশি ঝগড়া করে দাঁত পড়ে যাবে
“আপনাকে এই কথা কে বলল!
“কেন তুমি শোন নি।
“হ্যাঁ শুনেছি, কিন্তু এটা তো ছোটবেলায়। এখন কি কারো দাঁত পড়ে নাকি।
আহনাফ হেসে নিঝুমের মাথায় হাত রেখে বলে, “তুমি এখনো ছোট’ই আছো। বড় হও নি বুঝলে!
বলেই চলে গেল । নিঝুম মিটিমিটি হেসে তাকিয়ে রইল আহনাফের চলে যাবার পথে। এদিকে তানিশা দূর থেকে আহনাফ আর নিঝুম কে একসাথে দেখে ওয়াইনের বোতল আবারো মুখে পড়ল!
অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে একটু রাত করেই। তানিশা একদম নেশা*য় ডুবে আছে। আহনাফের হাত ধরে চিপকে দাঁড়িয়ে আছে আছে সে আর ঝুলছে। একবার পড়ে যেতে নিলে আহনাফ তার বাহু আঁকড়ে ধরল। নেশা করবার পর তানিশা আর জ্ঞানে নেই। আহনাফ কে কোনমতেই ছাড়ছে না সে। দিয়া আর রিয়া এসে একবার ছাড়ানোর চেষ্টা করল। কিন্তু তানিশা আহনাফের শার্ট শক্ত করে রইল। আহনাফ কে এই অবস্থায় দেখে মিটিমিটি হাসছে নীলাভ্র, শান্ত, আহিম আর আফিন। তিথি আর ইফা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। নিঝুম কি ভাবছে বোঝা মুশকিল। তাকে চোখ সরল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শেষে আহনাফ বলে উঠল, *তানিশা কে আমি বাসায় পৌছে দিয়ে আসছি।
সবাই তার কথায় মাথা নাড়ল। আহনাফ বলে উঠলো, “ইফা আমার সাথে আয়!
ইফাও মাথা নাড়িয়ে গাড়ির দিকে চলে যেতে নেয়। আহনাফ নিঝুমের ব্যাপারে বলতে নিতেই আহিম বলে উঠে, “ওদের টা আমরা দেখছি। তুই চলে যা। অনেক রাত হয়েছে!
আহনাফ মাথা নেড়ে বলে, “আচ্ছা! নিঝুম আর তিথি সাবধানে যেও। শান্ত দেখে রাখিস এই পিচ্চি গুলো কে।
শান্ত মুখ ভেংচি কাটে। নিঝুম ও মুখ ফুলিয়ে বলে, “আমি পিচ্চি না, নিজের খেয়াল রাখতে পারি। আপনি তানিশা আপু কে নিয়ে বের হন!
আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে তাকাল তানিশা’র দিকে। তার হাতে মাথা ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে। অতঃপর আহনাফ তানিশা কে নিয়ে কোনমতে গাড়ির কাছে এলো। রিয়া আর আফিন সবার আগেই চলে গেছে বাইক নিয়ে! দিয়া নীলাভ্রের হাত টেনে বলে, “তুই আমার সাথে চল, বাবা কে ম্যানেজ করতে হবে।
“আরে আমি কেন?
“আমার বাবা তোর প্রশংসা বেশি করে তাই! চল এখন!
বলেই নীলাভ্র কে টেনে নিয়ে যায়। নিঝুম কাঁধের ব্যাগ শক্ত করে ধরে আহিম কে কিছু বলার আগেই আহিম হুট করে তিথির হাত টেনে বলে, “চলো তোমাকে আমি দিয়ে আসছি!
তিথি ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে রইল। নিঝুম চট করে বলে উঠল, “তাহলে আমি!
“তুমি ওই শান্ত আছে না ও তোমাকে নিয়ে যাবে!
শান্ত আর নিঝুম দুজনে দুজনের দিকে ফিরে বলে, “কোনমতে না!
আহিম হেসে বলে, “তাহলে তোমাদের ইচ্ছা। তিথি তুমি চলো!
তিথি বলে উঠে, “কিন্তু নিঝু…
“হ্যাঁ হ্যাঁ চলো চলো!
বলেই তাকে নিয়ে চলে গেল। একসাথে নীলাভ্র আর আহিমের বাইক বের হলো। নিঝুম মুখ ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে শান্ত’র দিকে। শান্ত চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে বের হয়ে গেল রাস্তায়। কাঁধের ব্যাগটা শক্ত করে ধরে রাস্তায় হাঁটা ধরল। হেঁটেই যাবে তবুও এই অশান্ত’র সাথে যাবে না সে। ভুলেও না!
মাঝরাস্তায় একা একা হাঁটছে নিঝুম। দোয়া দরুদ পড়তে পড়তে পা আগাচ্ছে। ভুতের অসম্ভব ভয় আছে তার। তবুও ওই অশান্ত’র হাতে পড়ার চেয়ে ভুত শতগুন ভালো। পারলে ওই অশান্ত কে পেত্নির সাথে বিয়ে পড়িয়ে দিত। পেত্নির পারফেক্ট স্বামী হতো ওই অশান্ত! হি হি হি!
বলেই হাসতে থাকে। হঠাৎ করেই পেছন থেকে জোরে বাইক আসার আওয়াজ পায় সে। বাইক টা ধেয়ে তার কাছেই আসছে। নিঝুম ভয়ে রাস্তার এক কোনে ছুটে যায়। কিন্তু যেতে নিতেই ধপাস পড়ে যায় রাস্তার কোনায়। বাইক থামিয়ে হেলমেট খুলে শান্ত। মুখ টিপে হেসে বলে, “আহ! চশমিশ বেশি ব্যাথা পেয়েছো!
“আপনি! আপনি আমার সাথে এমন করলেন।
“কি করলাম আমি, তোমায় কে বলেছে দৌড়াতে!
নিঝুম নাক ফুলিয়ে চোখের চশমা ঠিক করে চট করে উঠে দাঁড়ায়। শান্ত’র সামনে এসে আঙুল তুলে বলে, “এই অশান্ত দেখে নিবো আপনাকে। একদম আমার পিছনে লাগতে আসবেন না।
শান্ত হেসে নিঝুমের আঙুল নামিয়ে বলে, “আজ ছেড়ে দিলাম। পড়ে এর শোধ তুলবো।
“শাসাছেন কাকে? ভয় পাই নাকি আপনাকে। আমি নিঝুম! বুঝলেন নিঝুম। নিঝুম কাউকে ভয় পায় না।
“তাই নাকি!
বলেই বাঁকা হেসে শান্ত বাইক নিয়ে চলে গেলে। নিঝুম রেগে দু একটা কথা শোনানোর জন্য বাইকের পিছনে চেঁচামেচি করতে লাগল। একটু আগাতে যেতেই আবার পড়ে গেল।
মাঝরাস্তায় বসে জুতোর হাতে নিয়ে তাকাল নিঝুম। ছিঁড়ে গেল জুতো টা। রেগে মাথা ঝাঁকিয়ে বলল, “সব দোষ ওই অশান্ত’র ! জুতোটা ওর কারণেই ছিঁড়ে গেছে। তাকে পেলে না বাঘ মামা’র লাঞ্চ করে ছাড়বো। জুতোটা ছিঁড়ে গেল! এখন হাটবো কিভাবে। ধ্যাত ছাই জিবনটাই অতিষ্ট! ভালো লাগে না কিছু!
অতঃপর এক বস্তা দুঃখ নিয়ে জুতো হাতে নিয়ে হাঁটা ধরল নিঝুম। আর একটু সামনে গেলেই মেইন রোড।সেখান থেকে বাস, রিক্সা কিছু একটা তো পাবে!
অনেকখানি পথ হাঁটল নিঝুম। খালি পায়ে হাঁটার কারণে আরো বেশি ক্লান্ত সে। পায়ের অবস্থা বেহাল! হাঁপিয়ে হাঁপিয়ে হেঁটে যাচ্ছে কিন্তু রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না। এখনো মেইন রোড চোখে পড়ল না। ব্যাপারটা কি?
ঘন ঘন শ্বাস ফেলে হেঁটে যাচ্ছে নিঝুম। পাশ থেকে শান্ত বলে উঠল,
“আরে ঝুম নাকি!
নিঝুম চোখ মুখ শক্ত করে ওপাশে তাকাল। চায়ের দোকানের কাছে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে চা খাচ্ছে শান্ত! নিঝুম কে দেখে একগাল হেসে বলল, “জুতো পায়ে পড়ার জিনিস কিন্তু তোমার মতো কিছু গাধি সেটা এখন মাথায় তুলে রাখবে।
নিঝুম হেসে শান্ত’র সামনে এসে দাঁড়াল। শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। নিঝুম হুট করেই জুতা জোড়া শান্ত’র মুখের সামনে তুলে ধরল। শান্ত চমকে পিছনে চলে গেল। নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “দেখছেন তো! জুতোটা ছিঁড়ে গেছে, এখন ছিঁড়ে যাওয়া জুতো কোন ভদ্রলোক পায়ে পড়ে বলুন তো।
“তাই বলে তুমি জুতো আমার মুখের সামনে ধরবে। সরো সরো!
নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলে দোকানের বেঞ্চে বসে পড়ল। দোকান একটা ছোট ছেলে বসা। বয়স এই কি ১২ – ১৩ হবে। নিঝুম তার দিকে ফিরে বলল, “একটু পানি দিবে ভাইয়া!
ছেলেটা এক গ্লাস পানি দিল নিঝুম। ঢক ঢক করে পুরো পানি খেলো নিঝুম। শান্ত চোখ ঘুড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। ফোন বাজছে। নিশ্চিত মা’র ফোন। নিঝুম কতোকগুলো বক বক করে ফোন রাখল। মা কে বলল, “এই তো আধ ঘণ্টায় চলে আসছি!
শান্ত হেসে বলল, “বাইক দিয়ে যেতেও এখন ঘন্টা খানিক লাগবে।
“কি? কি বলছেন এসব। এই তো সামনে মেইন রোড থেকে বাস নিলে ১০ মিনিটের পথ।
শান্ত চায়ের কাপ টা রেখে নিঝুমের সামনে এলো। নিঝুম দাঁড়িয়ে গেল। শান্ত তার মাথায় হাত রেখে পিছনে ঘুড়িয়ে হাত দিয়ে দেখিয়ে বলল, “এখান দিয়ে যেতে হবে। মিনিমাম আধঘন্টা লাগবে মেইন রাস্তায় যেতে। তারপর সেখান থেকে তোমার বাসা। ঘন্টা খানিক ছাড়া কথাই ভেবে না
“কি পাগলের প্রলাপ দিচ্ছেন। আমি তো এখান দিয়েই…. ( শান্ত’র দিকে ফিরে ) তার মানে আমি এতোক্ষণ ভুল রাস্তায় ছিলাম!
“জ্বি হ্যাঁ!
“আপনি জানতেন! তাও কিছু বললেন না। কতোটা পথ হেঁটে এলাম আমি আপনি জানেন।
“পথ তো তুমি ধরেছ!
“আপনি বলতে পারতেন!
“কেন বলবো!
বলেই মুখ ঘুরিয়ে নিল শান্ত। নিঝুম বের হয়ে যাবার পর’ই বাইক নিয়ে বের হয়েছিল শান্ত। ঠিক রাস্তা ধরে অনেক পথ সামনে এগিয়েও নিঝুম কে পেলো না সে। তখন ধরেই নিল নিঝুম উল্টো রাস্তা ধরেছে। আবারো সেখান থেকে ব্যাক করে এই রাস্তায় এলো সে।
এদিকে নিঝুম রেগে আরেক গ্লাস পানি নিল। শান্ত’র ঘাড়ে হাত রেখে তাকে ডাকতেই পানি তার মুখে ছুড়ে মারল। শান্ত চেঁচিয়ে বলল,
“এটা কি করলে?
“ঘুমিয়ে ছিলেন এতোক্ষণ তাই জাগিয়ে দিলাম!
বলেই রেগে হন হন করে হেঁটে চলে গেল। শান্ত রেগে তাকিয়ে আছে নিঝুমের দিকে। দ্রুত চায়ের দাম মিটিয়ে বাইকে বসল সে। মিস চশমিশ কে এখন পেলে আচ্ছা করে জব্দ করবে। কিন্তু খানিকক্ষণ পথ এগিয়ে দেখল নিঝুম হেলেদুলে হাঁটছে। শান্ত বাইকের গতি কমিয়ে দিল। নিঝুম খালি পায়ে এই রাস্তার মাঝে হাঁটছে। শান্ত এবার বাইক আনল নিঝুমের পাশে। শান্ত কে দেখেই দূরে সরে গেল নিঝুম।
রাস্তার এক কোনে হাঁটছে নিঝুম আর এপাশে শান্ত। বাইকের গতি কমিয়ে দিয়ে চালাচ্ছে। নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে বির বির করছে, “কতোটা অ*সভ্য লোক! বাইক ধীরে ধীরে চালাচ্ছে অথচ বলছে না আমার সাথে বাইকে বসো। আসলেই অশান্তি একটা!
হঠাৎ করেই বাইকের গতি বাড়িয়ে দিয়ে চলে গেল শান্ত। নিঝুম হা হয়ে থাকা রইল। চেঁচিয়ে বলে উঠল, “কি অ*ভদ্র লোক , একা একটা মেয়ে কে এভাবে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চলে যাচ্ছে! হুহ।
শান্ত হেসে বাইক থামাল। দূরে বাইক থামতে দেখে নিঝুম এক দৌড়ে বাইকের কাছে চলে এলো। শান্ত একটা হেলমেট নিঝুমের দিকে এগিয়ে বলল, “পড়ে নাও! তোমার কিছু হলে কিন্তু আমি দায়ি থাকবো না!
নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে হেলমেট হাতে নিল। অতঃপর বসে পড়ল শান্ত’র বাইকে। শান্ত’র কাঁধে হাত রেখে বলল, “চলুন!
শান্ত ঠোঁট কামড়ে ধরে বলল, “জুতো গুলো ব্যাগে রাখো!
নিঝুম জিহ্বা কামড়ে হাত সরিয়ে নিল। জুতোসহ’ই শান্ত’র কাঁধে হাত রেখেছিল। নিঝুম দাঁত বের করে হেসে বলল, “সরি সরি!
শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। এই কোন মেয়ের পাল্লায় পড়ল সে!
অবশেষে দু’জনে এসে নিঝুমের বাড়ির সামনে থামল। নিঝুম শব্দ করে শ্বাস ফেলে বাইক থেকে নামল। শান্ত’র হাতে হেলমেট দিয়ে বাড়ির দিকে তাকাল সে। অতঃপর পেছনে ফিরে শান্ত কে ধন্যবাদ বলার আগেই সে দ্রুথ গতিতে চলে গেল। নিঝুম অবাক চোখে তাকিয়ে রইল। অতঃপর নাক ফুলিয়ে বলল, “ভাব কতো! ভালোই হয়েছে ধন্যবাদ দেই নি। কেন দেবো! অশান্ত কোথাকার। একদিন সুদে আসলে শোধ করে দেবো সবটা।
——-
গত রাতের কান্ডকারখানার জন্য আহনাফের সামনে যেতে লজ্জা লাগছে তানিশা’র। নে”শা করে এমনটা করবে কখনো ভাবি নি। ভাবতেই শরীর শিউরে উঠছে তার। ছিঃ ছিঃ কিভাবে এমনটা করল সে। আহনাফের সাথে নাকি চিপকে ছিল সারাক্ষণ আর কি কি অঘটন ঘটিয়েছে কে জানে। কিছুই মনে নেই তার!
শান্ত তানিশা কে এমন অস্থির দেখে মিটিমিটি হাসছে। তানিশা হালকা কেশে বলে, “হাসছিস কেন এভাবে কি হয়েছে?
“গতরাত তুই যা করলি সেটাই ভাবছি।
আফিন গলা পরিষ্কার করে বলল, “আহনাফ তুমি শুধু আমার, শুধু আমার! তানিশা রেগে পানির গ্লাসটাই ছুঁড়ে মার*তে চাইলো। কিন্তু না রাগ সংযত করতে হবে এখন।
সবাই হেসে উঠলো তার কান্ড দেখে। হুট করেই আহিম বলে উঠল, “আরে আহনাফ নাকি!
তানিশা দ্রুত গিয়ে টেবিলের নিচে বসে পড়ল। হাসির রোল পড়ে গেল সেখানে। তানিশার বুঝতে বাকি রইল না সবাই তাকে নিয়ে মজা করছে। তানিশা রেগে শান্ত’র কান টেনে দিয়ে হন হন করে চলে এলো।
ক্যান্টিন থেকে বের হতেই মুখোমুখি হলো আহনাফের। লজ্জায় তানিশার গাল হয়ে যাচ্ছে। আহনাফ তাকিয়ে আছে তার দিকে। এদিকে তানিশা কাঁপছে। তার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে। দ্রুত সেখান থেকে চলে যেতে নিলে আহনাফ জিজ্ঞেস করে উঠলো,
“এখন কেমন আছো?
তানিশা থমকে গেল। ঢোক গিলে বলল, “ভালো!
অতঃপর দ্রুত চলে এলো সেখান থেকে। আহনাফ ব্যাপারটা নিয়ে আর এতো ভাবলো না!
——-
রাত্রি ১০ টা, বাসায় উদ্দেশ্যে হাঁটছে নিঝুম। এতোক্ষণ ছিল তিথি’র বাসায়। আজ তিথি’র জন্মদিন ছিল। সেই উপলক্ষে সেখানে এতোক্ষণ ছিল সে। খুব দেরি হয়ে গেছে। বার বার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে নিঝুম। মা এই ফোন করলো বলে। হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিয়েছে সে।
আজকের দিনটা তার জন্য বেশ ভালো ছিল। কিভাবে জানি আজ অশান্ত’র সাথে দেখাই হয় নি তার। অবিশ্বাস্য হলেও এটা সত্য। শান্ত আজ তাকে জ্বালা*তে আসে নি। নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসল। অনেকদিন এমন রাতের আকাশ দেখা হয় না তার। রাতের আকাশ ভারী সুন্দর!
তিথির বার্থ ডে উপলক্ষে আয়োজন তেমন বিশেষ কিছু ছিল না। তবে হ্যাঁ তিথির পাগলামি ছিল বটে। নিজ হাতে রান্না করে খাওয়াবে সে। রান্নাও করল কিন্তু সেই খাবার কারো মুখে রুচল না। ব্যাপারটা মনে করতেই হাসি পাচ্ছে নিঝুমের। এতো গুলো খাবার নষ্ট হলো। কিছুই মুখে তোলা যাচ্ছিল না। তিথির মুখটা দেখার মতো ছিল। বেচারি আরেকটু হলেই কেঁদে দিত। শেষমেষ আন্টি সামলে নিল তাকে। আবারো রান্না বসাল তাদের জন্য। এই জন্যই আজ এতো দেরি।
একটা দোকান খোলা দেখতে পেয়ে থেমে গেল নিঝুম। আইসক্রিম খেতে ইচ্ছে করছে তার। একটা আইসক্রিম কিনে হাঁটতে হাঁটতে খাওয়া শুরু করল। কিছুদূর হাঁটার পর’ই দেখতে পেল সামনে কিছু একটা হয়েছে। এখানকার দোকান পাট ও তেমন নেই। কেমন সব শান্ত নিরিবিলি। হুট করেই ভয় লাগতে শুরু করল। বাসার রাস্তা এখনো অনেক। ইফার বাড়ি বিপরীত দিকে ছিল বলে তাকে একাই আসতে হলো।
আইসক্রিম মুখে দিয়ে এগিয়ে এলো নিঝুম। ল্যাম্পপোস্টের নিচে দাঁড়ানো কিছু ছেলে কে দেখা যাচ্ছে। নিঝুমের মনে হচ্ছে এরা ছিন*তাইকারি। আরেকটু সামনে আগাল নিঝুম। হত*চকিয়ে উঠল সে। আরে এতো অশান্ত! দুটো ছেলে ধরে রেখেছে তাকে। সামনের থাকা ছেলেটা ছু*রি বের করতেই নিঝুমের মুখ ফসকে বেরিয়ে বলে,
“অশান্ত!
নিঝুমের কথা কানে গেল ছেলেগুলোর। তারা পিছন ফিরে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুম আতঙ্কি*ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরেকবার তার মুখে নামটা শোনা গেল, “অশান্ত!
#চলবে….