তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼 মিমি_মুসকান #পর্ব_২০ [ বর্ধিতাংশ ]

0
220

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_২০ [ বর্ধিতাংশ ]

“হ্যালো কে?

“আমি নিঝুম!

“তুই! কি হয়েছে বল তো? আন্টি তো আমাকে কয়েকবার কল করল..

“ককককি‌ বলছিস তু…

টুং টুং করে লাইন কেটে গেল। ওপাশে তিথি অবাক চোখে ফোনের দিকে তাকাল। কথা শেষ না হতেই নিঝুম ফোন কেন কেটে দিল। এদিকে নিঝুম হ্যালো হ্যালো করতে করতে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখল ফোনের ব্যালেন্স শেষ। রেগে ঠোঁট কামড়ে ধরল সে। তাকিয়ে রইল বিছানার দিকে। আরেকজন ঘুমাচ্ছে আরামচ্ছে!

ফোন আবারো বেজে উঠল। নিঝুম চট করে ফোন ধরতেই ওপাশ থেকে তিথি চেঁচিয়ে বলে উঠল,

“কথা শেষ না হতেই ফোন কেন কেটে দিলি।

“কাটে নি ব্যালেন্স শেষ। শোন শোন শোন না! আমার একটা হেল্প কর প্লিজজজ!

“কিসের হেল্প। আর এখনো কোথায়ও তুই! আন্টি আমাকে কয়েকবার কল করেছিল।

“তততুই কি বললি? কি জিজ্ঞেস করল?

“আরে কল তো ধরতে পারি নি। শাওয়ার নিচ্ছিলাম!

নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল, “খুব বিপদে পড়েছি।

“আবার কি হলো?

“শোন না! তুই মা কে কল করে বলে দে আজ আমি তোর বাড়িতেই থাকবো। বাইরে প্রচুর বৃষ্টি তাই এখন আর আমাকে ছাড়বি না তুই।

“কিন্তু তুই তো আমার বাসায় নেই।

*আরে সেটা তো আমিও জানি।

“তুই কোথায় নিঝুম?

“পরে বলছি, অনেক কাহিনী! প্লিজ কাজটা করে দে! বাবু, সোনা লক্ষীটি।

“তোর কি আন্টি কে এতোই গাধা মনে হয়। উনি জিজ্ঞেস করবে না তুই থাকতে কেন আমি ফোন করছি।

“বলে দিবি আমার ফোনে টাকা নেই, আর তোরটা খুঁজে পাচ্ছিলি না। তাই!

“ইমারজেন্সি ব্যালেন্স!

“কিছুক্ষণ আগে সেটাই শেষ হলো।

“ফকিন্নি!

“অ্যাআআআআ করে দে না একটু!

“জ্বালিয়ে মারবি তুই আমায়!

“আর শোন যদি জিজ্ঞেস করে আমার কথা বলবি আমার ঘুমিয়ে পড়েছি ঠিক আছে।

“হ্যাঁ , তোর আম্মু আবার কল করেছে। দেখছি আমি!

“জানু! একটু করে দে..

“আচ্ছা কোন ছেলের সাথে আছিস তুই!

নিঝুম ঢোক গিলল। চোখ ফিরিয়ে পাশে তাকাল। বলল, “আআআআমি..

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি আছি অশান্তর… এই কি হলো। আবারো তাকাল ফোনের দিকে। ফোন বন্ধ! কয়েকটা থাপ্পর মেরে অন করতে গেল। কিন্তু ফোন অন হচ্ছে না। এর মানেই ফোনের চার্জ শেষ। ফোন হাতে মুঠো করে জোরে চেঁচিয়ে উঠল সে। এদিকে তিথি দ্বিতীয় বার বিস্মিত চোখে তাকিয়ে রইল ফোনের দিকে!

“এই অশান্ত’র মতো তার বাড়িও একটা অশান্তি। আসবার পর থেকে একেকটা কান্ড হয়েই যাচ্ছে। প্রথমে বৃষ্টি, ফোনের ব্যালেন্স আর এখন ফোনের চার্জ। ইচ্ছে তো করছে এই অশান্ত কে..

বলেই তার কাছে তেড়ে গেল। কিন্তু এখন এই ঘুমন্ত পাগলের সাথে আর কি করা যায়। হার মেনে সামনে মুখ ঘুরিয়ে নিল।‌ দাঁতে দাঁত চেপে চার্জার খুঁজতে লাগল। কিন্তু কিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। নিঝুম পুরো ঘর উলোটপালোট করে ছাড়ল। কিন্তু কিছুই পেলো না। অতঃপর বসার ঘরে এসে দেখল এক কোনে চার্জার। হাফ ছেড়ে বাঁচল সে। দ্রুত ফোনটা চার্জে দিল। এর মাঝেই বিকট শব্দে বাজ পড়ল।‌ নিঝুম ভয় পেয়ে ধপাস করে মেঝেতেই পড়ে গেল। সবকিছু শান্ত হতেই ঘন ঘন শ্বাস ফেলল সে। আবারো গুটি গুটি পায়ে হাজির হলো শান্ত’র ঘরে। তাকাল তার হাতের দিকে। এর তো একটা ব্যবস্থা করা লাগবে। নিঝুম পুরো ঘরে ফার্স্ট এইড বক্স খুঁজতে লাগল। অবশেষে দেখতে পেল আলমারি’র উপরে। যা তার উচ্চতা থেকে অনেক বড়। কোমরে হাত রেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল।‌ এই অশান্ত কেন এতো জ্বা*লাচ্ছে তাকে। এতো জায়গা থাকতে কেন সেখানেই ফার্স্ট এইড বক্স টা রাখতে হলো তার!

বহু কষ্ট করে সেটা নামাল নিঝুম। অতঃপর বিছানার কাছে এলো। শান্ত’র হাত থেকে রুমাল গুলে খুব সাবধানে তুলো দিয়ে রক্ত টা পরিষ্কার করতে লাগলো। অনেকটা রক্ত বের হয়ে গেছে। অতঃপর কোনমতে ঔষধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিল। কিন্তু সেটা সুবিধার হলো না। এই মনে হচ্ছে খুলে পড়ে যাবে তবে এই চেয়ে ভালো সে আর পারে না। নিঝুম উঠে যেতে নিল! ঠিক তখনই দেখল শান্ত’র চেহারায় ও চোটের দাগ। ঠোঁটের কোনে রক্ত জমাট বাঁধা। চেহারার এক পাশে ধুলো জমা। এতোক্ষণ মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার ফল এটা।

নিঝুম রান্না ঘরে এসে একটা বাটিতে পানি আবার তার ঘরে গেলো। পাশে থাকা তোয়ালে দিয়ে শান্ত’র মুখ খানা মুছতে লাগল। অতঃপর তার গালের কাছে একটু ঔষধ লাগিয়ে দিয়ে ঠোঁটের কাছে হাত দিল। হঠাৎ করেই কেমন চমকে উঠল সে। কিছু তো মনে পড়ছে তার। অতঃপর মনে পড়তেই হঠাৎ করেই লাফিয়ে উঠল নিঝুম। কয়েক পা দূরে চলে গেল সে। একি! এসব কি ভাবনা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। নিঝুম নিজের মাথা ঝাকালো। বেরিয়ে এলো ঘর ছেড়ে। পানির গ্লাস থেকে ঢক ঢক করে পানি খেল। হ্যাঁ এখন কিছুটা হলেও ভালো লাগছে তার। সেই ঘটনার কথা কবেই তো ভুলে গেছিল সে। আজ হঠাৎ করে কেন মনে পড়ল এইসব!

ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে ফোনের দিকে হাঁটা ধরল। হ্যাঁ কিছুটা চার্জ হয়েছে, ফোন অনও হলো। নিঝুম ফোনটা আবারো রেখে দিতেই একটা ঘর নজরে পড়ল তার। ঘরটার দরজা কিছুটা খোলা। নিঝুম হাত দিতেই দরজা খুলে গেল। ভ্রু কুঁচকে সামনে হাঁটা ধরল। অন্ধকারে আচ্ছন্ন ঘরে আলো জ্বালাতেই নিমিষেই চারদিক আলোকিত। নিঝুমের কাছে এটা একটা বাচ্চার ঘর মনে হলো। সব বাচ্চাদের জিনিস। শান্ত’র সাথে কোন বাচ্চা থাকে নাকি! এছাড়াও আরো কিছু আছে। কিন্তু বক্স! এছাড়া একটা আলনায় সাজানো কিছু ছবি। চারদিক জুড়ে বাচ্চাদের খেলনা। নিঝুম এগিয়ে গেল আলনার কাছে। একটা বাচ্চার’ই সব ছবি। দু একটা ছবির সাথে কাউকে দেখা যাচ্ছে। মনে হয় এরা এদের মা আর বাবা! তবে বলতে হবে বাচ্চাটা খুব গোলমুলু। নিঝুম হেসে উঠলো। বাচ্চা টা এখন থাকলে তার গাল ধরে টানতো সে। হঠাৎ একটা ছবি দেখলো সেখানে বাচ্চা টার সাথে আরেকজন কে দেখা যাচ্ছে। কেন জানি সেই বাচ্চা কে খুব চেনা চেনা লাগছে। নিঝুম খুব মনোযোগ দিয়ে দেখল। অতঃপর মাথায় হাত রেখে বলল, “আহনাফ! এটা আহনাফ! তার মানে এটার পাশে অশান্ত! ( বলেই মুখ টিপে হাসতে লাগল)

বলতে হবে অশান্ত ছোট বেলায় খুব গোলুমুলু ছিল। আউউ কি কিউট। আর আহনাফ! হ্যাঁ এখানকার মতোই হ্যান্ডসাম সে!

বলতে গিয়ে লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হয়ে গেল। কিন্তু শান্ত কে দেখতেই হেসে একাকার সে। কেউই বলবে না এটা অশান্ত। কোন মিল নেই এই দুই ছবির সাথে! নিঝুম জলদি করে ফোনটা নিয়ে এলো। আহনাফের ছবি টা তুলে রাখল সে। হঠাৎ কি মনে হলো, ফন্দি এটে অশান্ত’র ছবিটাও তুলে রাখল। মুচকি মুচকি হাসতে লাগল। এবার শান্ত কে একটা শিক্ষা তো দিতেই হবে। এতো যত্ন করে রাখা ছবি নিশ্চিত তার বন্ধুদের কাছে নেই। বন্ধুদের সাথে ছোট বেলার একটা ছবি নেই। ব্যতীক্রম আহনাফ। তার মানে আহনাফের সাথে বন্ধুত্ব অনেক পুরনো দিনের!

ফোন আবারো চার্জে রেখে নিঝুম এলো শান্ত’র ঘরে। অশান্ত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। নিঝুম এক কোনে ছোট একট সোফায় বসে পড়ল। হঠাৎ তার চোখে পড়ল, বিছানার সাথে থাকা ল্যাম্পশেডের কাছে ছবির ফ্রেম। নিঝুম সেটা হাতে নিয়ে আবারো বসে পড়ল। ছবিতে দুটি হাস্য উজ্জল মুখ! একটা আহনাফ আরেকজন অশান্ত।‌ নিঝুম মৃদু হেসে আহনাফের দিকে তাকিয়ে রইল।

——-

ফোনের টুং টুং শব্দে খুব ভোরে ঘুম ভাঙল আহনাফের। কারো মেসেজ এসেছে, তবে মেসেজ টা তার সকালের হাসির কারণ হয়ে দাঁড়াল। এতো সকাল সকাল একটা খুশির খবর পাবে ভাবতে পারে নি সে। কিছুক্ষণ পর পরই মুচকি হাসছে সে। পর্দার আড়ালে আলো লুকোচুরি খেলছে। আহনাফ উঠে এসে পর্দার সরিয়ে দিল। আকাশের দিকে তাকিয়ে আবারো হাসল সে। অতঃপর জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে ফোন দিল শান্ত কে। সবার আগে তাকেই শুনাবে খুশির খবর টা। কিন্তু কয়েকবার ফোন দেবার পর সেটা বার বার’ই বন্ধ পেলো সে। ভ্রু কু্ন্চিত হলো তার। দ্রুত মেসেজ অপশনে ক্লিক করল। শান্ত তার গতকালের করা মেসেজটার রিপ্লাই অবদি দেয় নি। হঠাৎ মনে পড়ল গতকাল একটিবার শান্ত’র সাথে তার কথা হয় নি। এখন আবার ফোন তুলছে না। ব্যাপারটা সহজে হজম হলো না তার। আহনাফ আরো কয়েকবার ফোন করল। কিন্তু বার বার ফোন সেই বন্ধ’ই আসছে। কোনমতে ফ্রেস হয়ে শার্ট টা পড়তে পড়তে বের হয়ে গেল সে। গাড়িতে এসে বসতেই আবারো কল করলো আহিমকে! কিন্তু তাদের কারো সাথেই নাকি গতকাল থেকে কথা হয় নি তার। চিন্তায় আহনাফ অস্থির। এতোটা দায়িত্ব জ্ঞানহীনদের মতো কাজ কিভাবে করল সে। গতকাল থেকে ছেলেটার একটা খোঁজ নেই অথচ তার কোন খেয়াল নেই। কিভাবে হতে পারে এটা! সে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল।

——

বাইরের আলো এসে পড়ছে শান্ত’র মুখে। শান্ত বিরক্ত হয়ে বালিশে মুখ গুজতেই হাতে ব্যাথা টন টন ব্যাথা অনুভব করল। ঘুম ঘুম চোখে হাতের দিকে তাকাল সে। হাতের ব্যান্ডেজ দেখে তড়িঘড়ি করে উঠে বসল। চোখ কচলে ঘরের চারদিকে তাকাল। মাথায় অসহ্য যন্ত্রনা!

দূরের কোনো সোফায় বসে থাকল দেখলো কাউকে। শান্ত উঠে দাঁড়াল। এসে বসল সোফার মাঝে। ছোট মুখখানি দেখতে লাগল চোখের পাতা ফেলে ফেলে। এটা কে ? শান্ত আরেকটু এগিয়ে গেল। এটা তার ভ্রম নাকি অন্যকিছু। নিঝুম এতো সকালে তার বাড়িতে কি করছে! শান্ত আরো মনোযোগ দিয়ে তাকাল।‌ নিঝুম এখন নড়ছে। শান্ত হতবাক! নিঝুম চোখ মেলে তাকাল শান্ত’র দিকে। ঘুম থেকে উঠতেই দুজন দুজনকে দেখে হতচকিয়ে গেল! “আম্মু” ডাকে দুজনেই এক লাফ দিল। নিঝুম আরো গুটিয়ে বসল। অন্যদিকে শান্ত দূরে লাফিয়ে গেল। হিমসিম খেতে বলতে লাগলো,

“ততততুমি! মিস চশমিশ ততততুমি আমার বাসায় কি করছো? তাও এতো সকাল সকাল!

“আআআআমি!

“হ্যাঁ তুমি!

“চেঁচাচ্ছেন কার উপর? আমি না থাকলে গতকাল রাতে বাড়ি এলেন কিভাবে? কি ভুলে গেলেন সবকিছু!

শান্ত বাকরুদ্ধ! গতকাল রাতের কথা মনে করতে ব্যস্ত সে। খানিকটা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বলল,

“তাই বলে সারারাত আমার বাসায় থাকবে তুমি। সেন্স নেই তোমার। একটা ছেলের বাড়িতে সারা রাত পড়ে থাকলে।

“যাহ বাবা! যার জন্য চুরি করি সেইই বলে চোর। গতকাল রাতে আপনাকে বাসায় রেখে দিয়ে যাবার পর পরই যে বৃষ্টি পড়ল তার খেয়াল কি আছে আপনার?

“ততততো বৃষ্টি হয়েছে তো কি হয়েছে?

*এই বৃষ্টির মাঝে এতো রাতে কে বাসায় পৌছে দিতো আমায় সেই কথা একবারও ভেবেছিলেন। আর সেই ছিনতাইকারী দের হাত থেকে বাঁচিয়েছে আপনাকে। কোথায় একটা ধন্যবাদ দিবেন তা না করে ঝগড়া করছেন!

“হাউ ফানি! আমার মুখ ব্যাথা করে তোমাকে কেন ধন্যবাদ দেবো আমি।

“আপনাকে বাঁচিয়েছি আমি!

“কেন বাঁচালে, আমি বলেছিলাম বাঁচাতে। এছাড়া তোমাকেও আমি সাহায্য করেছিলাম সেদিন আমায় ধন্যবাদ দিয়েছিলে!

নিঝুম দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। শান্ত মুখ ভেংচি কাটলো। নিঝুম বলে উঠল, “হ্যাঁ ঠিক বলেছেন, ধন্যবাদ বলি নি। এর বদলে গতকাল রাতে আপনাকে সাহায্য ঋণ পরিশোধ করে দিলাম আমি।

“উদ্ধার করেছ তুমি!

নিঝুম রেগে তেড়ে শান্ত’র সামনে এসে দাঁড়াল। অতঃপর জোরে জোরে বলে উঠল, “একটা অকতৃজ্ঞ আপনি অশান্ত! খুব অকৃতজ্ঞ। এতোটা সাহায্য করার পরও এভাবে কথা বলছেন আপনি। জানেন আপনি গতকাল রাতে কি কি করেছিলেন আমার সাথে। আপনি..

এর মাঝেই শান্ত নিঝুমের মাথায় হাত রেখে বলল, “মিস চশমিশ! বৃষ্টি নেই এখন। তোমার কি বাসায় যেতে হবে না?

নিঝুম রেগে মুখ ফুলাল। টেবিলে থাকা ফুলদানি ছুঁড়ে মারল শান্ত’র দিকে। শান্ত কোনমতে ধরে ফেলল তা। নিঝুম চেঁচিয়ে বলতে লাগলো, “অশান্ত একটা! অশান্তির মূল একটা। তার মতো তার বাড়িও একটা অশান্তি! যেখানে রায় সেখানেই অশান্তি শুরু করে দেয়।

“এই চুপ কর!

নিঝুম তেড়ে এলো! চোখের চশমা ঠিক করে বলল, “করবো না। যা ইচ্ছে তাই বলবো। অশান্ত অশান্ত অশান্ত!

শান্ত মুখ ঘুরিয়ে নিল। নিঝুম শব্দ করে শ্বাস ফেলে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বের হয়ে গেল। শান্ত গেল তার পিছু পিছু। বসার ঘরে এসে পিছনে ফিরে তাকাল শান্ত’র দিকে। শান্ত এগিয়ে গেল দরজার কাছে।‌ অতঃপর দরজা খুলতে যাবে অমনি কলিং বেল বেজে উঠল। তাও পর পর কয়েকবার। শান্ত অবাক চোখে উঁকি মেরে দেখল, “কে এসেছে এতো সকালে!

অতঃপর আহনাফ কে দেখতে পেয়ে শান্ত নিস্তব্ধ হয়ে গেল। নিঝুম বিরক্ত নিয়ে দরজা খুলতে এলেই শান্ত একটানে তাকে সরিয়ে ফেলল। নিঝুম কিছু বলতে নিল শান্ত তার মুখ চেপে ফিসফিসিয়ে বলল, “চুপ চুপ চুপ একটা কথাও বলবে না!

বলেই টেনে ঘরে নিয়ে গেল। নিঝুম উহুম উহুম শব্দ করছে। ঘরে আসতেই নিঝুম কে ছেড়ে দিল শান্ত। নিঝুম জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলল, “এতোক্ষণ ধরে বলছিলেন বের হও, বের হও! আর এখন যখন বের হতে যাচ্ছিলাম তখন আমাকে ধরে নিয়ে এলেন।

“আরে তুমি দেখলে না কলিং বেল বাজল।

“তো! কি হয়েছে ? কে এসেছে?

“আহনাফ!

“ও আহনাফ! কিইই আহনাফ!

“হ্যাঁ আহনাফ!

“কিন্তু আমরা এতো ভয় পাচ্ছি কেন?

“তোমার কোন ধারণা আছে আহনাফ এতো সকালে তোমাকে আমার বাসায় দেখলে কি হবে?

“কি হবে? আমি বলবো আপনি গতকাল রাস্তায় মাত*লামি করছিলেন আর আমি তখন…

“এই এই চুপ চুপ! কে বলল আমি মাত*লামি করছিলাম।

“হ্যাঁ তাই তো করছিলেন!

“খুব খারাপ হবে আমাকে মা*তাল বললে কিন্তু?

“উনি খেতে দোষ নেই আর আমি বললেই দোষ।

“হ্যাঁ দোষ! তুমি এখনি লুকিয়ে পড়ো। জলদি!

“কিন্তু কেন ?

“আহ বুঝতে পারছো না, একটা ঘরে দুটো ছেলে মেয়ে একটা রাত কাটিয়েছে শুনলে মানুষ কি বললে!

“কি বলবে?

বলেই নিঝুম থেমে গেল। অতঃপর নিজের মাথায় নিজেই বাড়ি মেরে বির বির করে বলল, “নিঝুম! বাইরে তোর ক্রাশ দাঁড়ানো। সে যদি একবার জানতে পারে অন্য ছেলের সাথে তুই..

বলেই মাথা নাড়াতে লাগলো। শান্ত বলে উঠল, “মাথা নাড়াচ্ছো কেন?

“লুকাবো লুকাবো! কোথায় লুকাবো তাড়াতাড়ি বলুন!

“তোমার আবার কি হলো?

তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। দুজনে লাফিয়ে উঠল। এই এদিক এই ওদিকে করে যাচ্ছে। শেষে শান্ত নিঝুম কে আলমারিতে লুকিয়ে রাখল। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে গেল দরজা খুলতে!

দরজা খুলতেই আহনাফ বলে উঠলো, “এতোক্ষণ লাগে দরজা খুলতে! কি হয়েছে তোর?

“কিছুই না কি হবে?

“ফোন ধরছিস না কেন? কখন থেকে ফোন করে যাচ্ছি!

“আহহ আমার ফোন..

“তোর হাতে কি হলো?

“আহ এটাই বলছি! ফোন রাতে ছিন*০তাই হয়ে গেছে। আর এসব ছিনতা*ইকারীরা করেছে!

আহনাফ হাত দিয়ে শান্ত’র গাল ধরল। শান্ত লাফিয়ে উঠল।

“এতোটা মে*রেছে তোকে!

“হ্যাঁ!

“আর তুই একবার ফোন করলি না।

“আরে বললাম তো ফোন নিয়ে গেছে। ক্যাশও নিয়ে গেছে তাই কিছুই করতে পারে নি। তুই শান্ত হ!

আহনাফ শান্ত ভঙ্গিতে হাত ধরে বলল, “ব্যান্ডেজ করা হয় নি! চল ডাক্তারের কাছে চল।

শান্ত এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল ব্যান্ডেজের দিকে। নিঝুম করেছে এটা। আহনাফ আবার বলে উঠে, “কি রে?

“এতো সকালে কে ফার্মেসি খুলে রেখেছে।

“হাসপাতালে যাবো! চল…

“হ্যাঁ হ্যাঁ চল!

“দাঁড়া! এই পোশাকে যাবি নাকি? কতোটা ময়লা লেগে আছে তোর পোশাকে…

শান্ত নিজের দিকে তাকাল। অতঃপর বলল, “তুই এক মিনিট দাঁড়া আমি চেঞ্জ করে আসছি!

বলেই ঘরের দিকে গেল। আহনাফ ও গেল তার পিছু পিছু। শান্ত আলমারি খুলল। নিঝুম গুটি মেরে বসে আছে। আহনাফ বলে উঠলো, “ঘরের এই হাল কেন শান্ত। তুই তো সবসময় অনেক গুছিয়ে রাখিস। আজ কি হলো?

শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকাল নিঝুমের দিকে। নিঝুম দাঁত কেলিয়ে হাসছে। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “ভূতে ধরেছিল আমায় তাই!

“মানে!

“না কিছু না!

বলেই গায়ের হুডি টা খুলে ফেলে আরেকটা টি শার্ট নিতেই সামনে হাত বাড়ায়। নিঝুম হতবাক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। কি হলো বুঝতে সময় লাগল শান্ত’র। বুঝতে পেরেই দ্রুত ধপাস করে আলমারি বন্ধ করে দিল সে। নিঝুম মুখ চোখে হাত দিয়ে বসে আছে। শান্ত এতো হতচকিয়ে আছে। আহনাফ বলে উঠল, “কিরে কি হয়েছে?

শান্ত টি শার্ট পড়তে পড়তে বলল,
*কককিছু না!

“এমন তোতলাচ্ছিস কেন?

“আমার ক্ষিদে পেয়েছে?

“কি?

“আমি গতকাল রাত থেকেই খায় নি।

“আচ্ছা বাইরে খেয়ে নেবো।

“না তুই খাবার নিয়ে আয়। এইখানেই খাবো।

“কিন্তু?

“আহ! খুব ক্ষিদে পেয়েছে আমার। যা না তুই!

“শান্ত..

“আহ যা না!

বলেই আহনাফ কে বের করিয়ে ছাড়ল শান্ত। আহনাফ অনেকটা অবাক হলো। কি হচ্ছে কিছু্ই বুঝল না সে। শান্ত কান পেতে দাঁড়িয়ে রইল আহনাফের চলে যাওয়া অবদি!

অতঃপর আহনাফ যেতেই দৌড়ে ঘরের দিকে গেল। আলমারি খুলে দেখল নিঝুম মুখ চোখে হাত দিয়ে বসে আছে। শান্ত বলে উঠল, “এই বের হও!

নিঝুম হাত সরিয়ে তাকাল শান্ত’র দিকে। শান্ত তাকে টেনে বের করল। বলল, “তাড়াতাড়ি বের হও!

“আরে যাচ্ছি যাচ্ছি! এখানে থাকার কোন শখ নেই আমার।

“তোমাকে রাখারও কোন শখ নেই আমার।

নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে বের হয়ে এলো। শান্ত দরজা খুলে আশপাশ তাকিয়ে বলল, “বের হও!

নিঝুম মুখ ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেল। শান্ত দাঁত কেলিয়ে বলল, “বিদায়!

বলেই দরজা আটকাতে গেল। নিঝুম তখন’ই পেছন থেকে দরজা ঢেলে ধরল। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “আবার কি?

“আমার ফোন!

বলেই দৌড়ে ঘরে ঢুকল। চার্জের থেকে ফোন খুলে এসে দাঁড়াল শান্ত’র সামনে। শান্ত ভ্রু কুঁচকে বলল, “তোমাকে বাসা থেকে বের করা দেখছি মুশকিল হয়ে যাচ্ছে।

“অশান্ত কোথাকার?

“ঝুম ঝুমাঝুম ঝুম।

“আমার নাম নিঝুম!

“আর আমার নাম শান্ত!

“আপনি আমার নাম থেকে মাইনাস করেন কিভাবে?

“আর তুমি আমার নামের সাথে প্লাস করছো কেন?

“আপনি একজন নেগিটিভ!

“আর তুমি পজেটিভ! নেগেটিভ আর পজেটিভ কখনো মিলে না তাই আমাদের কখনো মিল হবে না। নাও গেট আউট!

বলেই নিঝুমের হাত ধরে তাকে বের করে দিল। মুখের উপর ধপাস করে দরজা বন্ধ করে দিল। নিঝুম হা হয়ে তাকিয়ে রইল। এতো বড় অপমান তাকে। রেগে দাঁতে দাঁত চেপে কলিং বেল বাজাতে লাগল। শান্ত রেগে হাত দু’টো মুষ্টি বদ্ধ করে নিল। ঘন ঘন শ্বাস ফেলে রাগ সংগত করার চেষ্টা করছে। অতঃপর ঠোঁট ভিজিয়ে দরজা খুলে বলে, “এখন আবার কি?

নিঝুম দাঁত কেলিয়ে ফোনটা তুলে ধরে শান্ত’র সামনে। শান্ত ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। অতঃপর তার ছোট বেলার ছবি থেকে আঁতকে উঠে। মুখ ঘুরিয়ে তাকায় ওই ঘরের দিকে। ঘরের দরজা খোলা। এর মানে নিঝুম ঢুকেছিল ওই ঘরে! শান্ত সামনে ফিরতেই নিঝুম হাওয়া। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে দূরে নিঝুম দাঁড়ানো। সে জোরে বলে উঠে, “আমি জানি এটা আপনি! সবাইকে দেখাবো আমি! হি হি হি!

বলেই ভো দৌড়! শান্ত রেগে তার পিছনে দৌড়াতে থাকে। এই ছবি কাউকে দেখালে সাড়ে সর্বানাশে কান্ড ঘটবে। এদিকে নিঝুম সিঁড়ি দিয়ে নেমে ভাবতে থাকে লিফট থাকতে সিঁড়ি দিয়ে কেন নামছে সে। অতঃপর দ্রুত লিফটের কাছে এসে সুইচ চাপতে থাকে। লিফটের দরজা খুলতেই দ্রুত সেখানে ঢুকে পড়ে। বার বার বোতাম চাপছে সে। এদিকে শান্ত নিঝুম কে খুঁজতে খুঁজতে লিফটের কাছে এসে দেখে দরজা বন্ধ হচ্ছে। নিঝুম হেসে তাকে বিদায় দিচ্ছে! শান্ত দৌড়ে লিফটের কাছে যেতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল। শান্ত রেগে নিজের মাথার চুল নিজেই টেনে ধরল! লিফটের মধ্যে দাঁড়িয়ে থেকে নিঝুম হাসতে থাকে।‌ এটা তার বিজয়ের হাসি।

—–

শান্ত অসহায় ভাবে হাঁটতে হাঁটতে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে আসে। মিস চশমিশ কে আজ দেখে নিবে সে। এভাবে তার ঘরে ঢুকে লুকিয়ে তার ছবি তোলা। যদি উচিত শিক্ষা না দিয়েছে তাকে। সামনে আসতেই চমকে উঠে। আহনাফ তার দিকে তাকিয়ে বলে, “তুই নিচে কোথায় গিয়েছিলি!

“আহ আমি হাঁটতে গিয়েছিলাম একটু!

“জুতো ছাড়া!

শান্ত নিজের পায়ের দিকে তাকাল। ঝুমের পিছনে খালি পায়েই দৌড় দিয়েছিল সে। আহনাফ শান্ত’র কাঁধে হাত রেখে বলল, “সত্যি করে বল তো কি হয়েছে তোর?

“কককিছু না! ক্ষিদে পেয়েছে! খাবার এনেছিস দে!

বলেই প্যাকেট হাতে ঘরে চলে গেল। আহনাফ তার পিছন পিছন হাঁটতে হাঁটতে ঘরে এলো। কিছু একটা তো হয়েছে। শান্ত কিছু লুকাচ্ছে তার থেকে। কিছু জিজ্ঞেস করতে যেয়ে সোফায় বসতেই ছবির ফ্রেম হাতে এলো তার। শান্ত’র দিকে ফিরে বলল, “এটা এখানে কি করছে?

শান্ত তাকাল ছবির ফ্রেমের দিকে। মিস চশমিশ ঘুমিয়ে ছিল এখানে।‌ এই ছবির ফ্রেম নিয়ে সে কি করছিল!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here