তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼 মিমি_মুসকান #পর্ব_২১ [ প্রথমাংশ ]

0
217

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
মিমি_মুসকান
#পর্ব_২১ [ প্রথমাংশ ]

নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে বাসায় সামনে। শুকনো ঢোক গিলে তাকাল হাতের ফোনের দিকে। মা একবারও কল করে নি। নির্ঘাত রেগে আছে, আর বাবা! বাবা’র কথা না বলাই ভালো। নিঝুম গুটি গুটি পায়ে এসে দাঁড়াল দরজার দিকে। হাত বাড়িয়ে কলিং বেল বাজাল সে। তাহমিনা বেগম এসে দরজা খুলতেই নিঝুমের শুকিয়ে যাওয়া মুখটা দেখে ভ্রু কুঁচকে নিল। নিঝুম হাসার চেষ্টা করল। কোন কথা ছাড়াই দরজা খুলে চলে গেলেন তিনি। নিঝুম আল্লাহর নাম দিয়ে ঘরে ঢুকল। তাহমিনা আবারো রান্না ঘরে ঢুকেছে। হিনা ঘরের থেকে উঁকি মেরে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। অতঃপর নিজের কোমরে বেল্ট বেঁধে স্কুলের জন্য তৈরি হতে লাগল। বাড়ির কেউ কিছু বলছে না এর একটাই অর্থ বাবা বাসায়।‌ আবারো ঢোক গিলে পা বাড়াল বাবা’র ঘরের দিকে।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছেন বাবা। নিঝুমের প্রতিচ্ছবি আয়নাতে দেখা সত্বেও তিনি এড়িয়ে গেলেন। নিঝুম দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলল, “বাবা আসবো!

বাবা কোন কথা বললেন না। নিঝুম ছুটে ঘরে ঢুকল। এসে দাঁড়াল বাবা’র সামনে। বাবার কাছে দাড়ালে তার ভয় কিছুটা কমে যায়। নিঝুম এক গাল হেসে বলল, “তৈরি হচ্ছো বাবা!

গম্ভীর কন্ঠে বাবা বলেন, “কখন এলে!

“এই তো একটু আগে।

“ভালো!

“বাবা তুমি রেগে আছো!

“রেগে থাকার আমরা কে? তোমার যখন যা ইচ্ছে তুমি তো তাই করছো। আমাদের কারো কথা ভাবো একবার। হ্যাঁ মানছি, বড় হয়ে গেছো। বুঝ নিতে শিখে গেছো তাই বলে মা বাবা কে একেবারেই অগ্রাহ্য করবে তা তো হয় না।

মাথা নিচু করে ফেলল নিঝুম। গলা ধরে আসছিল তার। এই কন্ঠেই বলল, “সরি বাবা! আর কখনো এমনটা হবে না।

“যা ইচ্ছে তাই করো।

বলেই ঘর ছেড়ে বের হলেন। নিঝুমের বেশ কান্না পেল। কাঁদতেই কাঁদতেই বাবা’র পিছু নিল সে। বাবা”র শার্ট টা একটু টেনে ধরল সে। বাবা মুখ ফিরিয়ে দেখলেন কাঁদতে কাঁদতে নিঝুমের হেঁচকি উঠে গেছে। বাবা কখনো কঠোর হন নি! তাই আজ এতটুকুতেই মেয়ের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। বাবা আর রাগ করে থাকতে পারলেন না। জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে। নিঝুম কাঁদতে কাঁদতে বলল,

“আমার কোন দোষ নেই বাবা! সব দোষ ওই বৃষ্টির। একদম অসময়ে চলে এলো। আমি এতো রাতে আর বের হতেই পারলাম। তুমি বিশ্বাস করো না, আমি এমনটা আর কখনো করবো না।

বাবা মাথায় বুলিতে জিজ্ঞেস করলেন,‌ “নাস্তা করেছো?

“না! আমি ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে চলে এসেছি!

মা এবার বলে উঠেন, “উদ্ধার করেছেন। এক ঘুম দিয়ে উঠে এসেছে এখানে তার বাবা’র ঘুম হয় নি। একটু পর পরই উঠে বসে থাকেন। আর বির বির করে, “মেয়েটা বাড়ি আসলো না! বলি কি বিয়ে হবার পর কি হবে !

নিঝুম দ্রুত চোখ মুছে মুখ ভেংচি কেটে বলল, “তাও তো আমার বাবা আমার চিন্তায় ঘুমাতে পারে নি। কিন্তু তুমি তো ঠিকই ঘুমালে। এতোটুকু চিন্তা আছে নিজের মেয়ের।

“আমার কিসের ঠেকা তোমাদের কথা ভাবতো যাবো। নিজের টা নিজে ভেবে নাও!

বাবা হেসে খাবার টেবিলে বসলেন! হিনা মুচকি হেসে খাবার টেবিলে বসে বলল, “মা ঘুমিয়ে থাকলে বাবা’র বর্ণনা কিভাবে দিল আপু।

নিঝুম চোখ ছোট ছোট করে নিল। হ্যাঁ তাই তো! মা হিনার মাথায় বারি মেরে বলেন, “বেশি কথা বলতে শিখে গেছো। যখন একটা মানুষ কানের কাছে মাছির মতো ভন ভন করে তখন কার ঘুম আসে শুনি।

নিঝুম বলে উঠল, “একদম ঠিক বলেছ, এটাই হয়েছে। নাহলে তো এক মিনিটের জন্য আমিও ভেবে নিয়েছিলাম তুমি আমার জন্য…

মা চোখ রাঙিয়ে তাকালেন। নিঝুম মুখে আসা কথাটা গিলে ফেলল। বাবা হেসে বললেন, “মুখ হাত ধুয়ে খেতে আসো!

নিঝুম লাফাতে লাফাতে রুমের দিকে চলে গেল। মা পানি গ্লাসে ঢালতে ঢালতে বলেন, “মেয়ের পাখনা গজিয়েছে, দ্রুত কিছু একটা করার ব্যবস্থা করো।

“এই বয়সে এমনটা হবেই!

“এই বয়সটাই খারাপ!

বলেই রান্না ঘরে চলে গেল। বাবা রাগের মাত্রা বুঝতে পেরে আর কিছু বললেন না!

———

নিঝুম আজ ভার্সিটিতে খুশি মনেই ঘোরাফেরা করছে। আহিম, আফিন আর নীলাভ্র কে দেখে হাত নাড়িয়ে হাইও বললো। কিছু একটা হয়েছে এটা তো বোঝাই যাচ্ছে। নিঝুম দাঁত কেলিয়ে হেসে ফোনে থাকা শান্ত’র ছবিটাই দেখতে লাগল। এতোদিনে তাকে ফাঁদে ফেলা সম্ভব হয়েছে। হঠাৎ করেই ফোনটা কেউ ছো মেরে কেড়ে নিল। নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকাল তার দিকে। শান্ত বাঁকা হেসে বলল, “আমাকে হয়রানি করা! নাও এবার ফোনের লক খুলো নাহলে তোমার ফোনের বারোটা বাজাবে!

নিঝুম এক গাল হেসে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ! এই নিন পাসওয়ার্ড হলো ১৯৯৮ সাল!

“হ্যাঁ এটা কি রকম পাসওয়ার্ড!

“আরে আমার মা বাবার বিয়ের ডেট, মনে রাখতে সুবিধা আর কি!

শান্ত খানিকটা অবাক হলো। এতো সহজে পাসওয়ার্ড দিয়ে দিল। মনে হচ্ছে ভুল বলেছে। অবাক চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেল যখন দেখল পাসওয়ার্ড একদম ঠিক। চোখ ফিরিয়ে দেখল নিঝুম মিটিমিটি হাসছে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “ছবি কি অন্য কাউকে দিয়েছ ?

“হ্যাঁ তবে তেমন কেউ না, ওরা কেউ আপনাকে চিনে না।

“মমমানে, কাকে দিয়েছ?

“এই আমায় মা , বাবা, ছোট বোন, খালাতো বোন, মামাতো বোন, ফুফাতো ভাই, চাচাতো ভাই, আমার মামানী, দাদি আর নানুর হোয়াটসঅ্যাপ পাঠিয়ে দিয়েছি।

“চৌদ্দ গুষ্টির কাছে!

“হ্যাঁ হ্যাঁ আর বলে দিয়ছি ছবিটা যেন যত্ন করে সেভ করে রাখে, কারণ এটা আমার লাগবে। আপনি আমার ফোন থেকে ডিলেট করবেন আমি চট করে তাদের থেকে চেয়ে নেবো। ভালো আইডিয়া নাহ!

শান্ত তেড়ে গিয়ে বলল, “তোমাকে আমি!

নিঝুম এক পা পিছিয়ে গেল। শান্ত রেগে চোয়াল শক্ত করে নিল। মারাত্মক রেগে আছে সে। নিঝুম শান্ত’র হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বলল , “কুল কুল! রেগে যাবার মতো কিছু হয় নি। তারা কেউই তো চিনে না আপনাকে, তাই নিশ্চিত থাকুন। কিন্তু..

“কিসের কিন্তু!

“শুধু তিথি কে পাঠিয়েছিলাম।

“কিহহ?

“হ্যাঁ ! ( শব্দ করে হেসে) কিন্তু সে আপনাকে চিনতে পারে নি।

“ঝুমের বাচ্চা!

“আরে আরে অশান্ত! শান্ত হন! আমি কি ওকে বলেছি নাকি এটা আপনি। তবে হ্যাঁ আপনার খুব প্রশংসা কিন্তু করলো ও! খুব কিউট ছিলেন আপনি। একদম গোলুমুলু!

“একদম চটাবে না আমায়।

“ধুর! পাগল নাকি কেন এমনটা করবো বলুন তো।

“কি চাও তুমি!

“শান্তি! শান্ত এখন ভার্সিটিতে শান্তি বজায় রাখবে। বুঝতে পারলেন।

“অসম্ভব!

“আমি বরং ভার্সিটির গ্রুপে আপনার পিক পোস্ট করে দিই আর ক্যাপশন লিখি আমাদের গোলুমুলু অশান্ত। দারুন হবে তাই না বলুন!

বলেই নিঝুম ফোন টাইপিং শুরু করল। শান্ত তার মুঠো করে নিল।‌ বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল নিঝুমের দিকে। নিঝুম চোখের চশমা ঠিক করে বলল, “ঠিক আছে!

বলেই ফোনটা হাতে নিল।‌ অতঃপর শান্ত’র গাল দুটো টেনে বলল, “আপনি এতো স্লিম হয়ে গেলেন কি করে বলুন তো। আপনার ওই গোলুমুলু চেহারায় আপনাকে খুব সুন্দর লাগছিল ,জানেন !

বলেই শব্দ করে হেসে শান্ত’র গাল ধরে টানতে লাগল। শান্ত যথাসম্ভব রাগ সংগত করল। দূর থেকে তানিশা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। রিয়া বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠল, “আমি যা দেখছি তোরাও কি সেটাই দেখছিস!

দিয়া বলে উঠে,
“চোখ কি তোর একাই আছে নাকি! আমাদেরও আছে।

তানিশা থমথমে গলায় বলে উঠল, “এই মেয়েটা আসলে কি চাই বুঝি না। খানিকক্ষণ আগেও মনে হয় আহনাফ কে আর এখন…

“পাগল হলি নাকি! শান্ত আর ও, না কখনো না। তবুও আহনাফের সাথে একটা চান্স ছিল

তানিশা বিস্ফোরিত চোখে তাকাল দিয়ার দিকে। দিয়া সাথে সাথেই চুপ হয়ে গেল। রিয়া বলে উঠল, “মনে হচ্ছে শান্ত এবার বড়সড় কিছু একটা করবে!

তানিশা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। এদিকে নিঝুম ততোক্ষণে চলে গেল।‌ শান্ত’র চোখাচোখি হলো তানিশার সাথে। শান্ত মুখ ঘুরিয়ে বলল, মিস চশমিশ দাঁড়াও!

বলেই পিছনে চলে গেল।‌ তানিশার মনে হলো শান্ত পালিয়ে গেল! অবশেষে তানিশা ভেবে নিল কি করবে সে!

——-

ইফা নিঝুম কে খুঁজতে খুঁজতে ক্যাম্পাসের কাছে এসে বলল, “কিরে কি‌ হলো ওত রাতে। এতোবার কল করলি যে।

“তখন ধরিস নি এখন বলে কি লাভ।

“আরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু সকালে আমি ফোন করার পর ধরলি না কেন?

“বোঝাতে চাইলাম কতটা রাগ হয় যখন কেউ ফোন না ধরে।

“😒

তিথি ছুটতে ছুটতে এসে বলল , “এই নিঝুম গতরাত কোন ছেলের সাথে ছিলি তুই!

ইফা চমকে তাকাল। নিঝুম থমতম খেয়ে বলল, “ছেলে কোন ছেলে?

“তাহলে আমাকে বললি কেন বাসায় বলতে আমার সাথে আছিস। কিন্তু সত্যি তো এটা তুই আমার সাথে ছিলি না!

নিঝুম ঢোক গিলল। ইফা আর তিথি দুজনেই ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। প্রশ্ন এক, ‘কোন ছেলের সাথে ছিলি!

হঠাৎ পেছন থেকে গলা ভেসে এলো, “এই চশমিশ!

তিনজন’ই ফিরল পিছনে। শান্ত হাতের আইসক্রিম ছুঁড়ে ফেলল নিঝুমের হাতে। নিঝুম কোনমতে তা ধরে ফেলল। শান্ত’র কর্মকান্ডে দুজনেই অবাক। নিঝুম নিজেও অবাক! আইসক্রিম তো সে চাই নি, তাহলে! শান্ত চলে যেতে নিতেই ইফা বলে উঠল, শান্ত ভাইয়া তোমার হাতে কি হয়েছে?

শান্ত ভ্রু কুঁচকে হাতের দিকে তাকিয়ে বলল, “কিছু না!

অতঃপর হন হন করে চলে গেল। ইফা আর তিথি মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে দেখল নিঝুম আইসক্রিম খাওয়া শুরু করে দিয়েছে। কারণ না জেনেই আইসক্রিম খাচ্ছে। গতরাতের কথাটা সেখানেই চাপা পড়ে গেল। গাছের আড়াল থেকে দিয়া সবটা দেখল!

শান্ত মুখ ভেংচি কেটে তাকাল হাতের দিকে। গতরাতের ঘটনা আবারো পুনরাবৃত্তি করিয়ে নিঝুম শুনিয়েছে তাকে। এক পর্যায়ে মিস চশমিশ বলে উঠল, “আপনার জন্য আমার সাধের আইসক্রিম খাওয়া আর হলো না, জানেন! কতোটা কষ্ট লাগছিল তখন?

“আমাকে বাঁচানোর সময়ও একটা আইসক্রিম’র কথা ভাবছিলে তুমি!

নিঝুম মুখ ঘুরিয়ে চলে গেল। সেই আইসক্রিম ফেরত দিল সে! অতঃপর সামনে তাকাতেই হতচকিয়ে গেল। রায়ান আংকেল দাঁড়ানো তার সামনে। শান্ত ঠিক দেখল দূর থেকে হেঁটে কবীর চৌধুরী আসছে! লোকটা তার জন্মদাতা তবুও তাকে দেখে শান্ত অস্থির। কিন্তু তাকে দেখলেই কেন যেন ভয় করে তার। ঠিক মিস আশফিয়া সামনে থাকলে যে অনুভূতি অবিকল সেই অনুভূতি।

শান্ত চলে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। কবীর চৌধুরী ইতিমধ্যে তার নাম ধরে ডেকে ফেলেছে। তিনি সামনে এগিয়ে এলেন। শান্ত চোখ নামিয়ে ফেলল। কবীর চৌধুরী জিজ্ঞেস করলেন, “কেমন আছো?

প্রশ্নোওর দিল না শান্ত। কবীর চৌধুরী হাতের দিকে তাকিয়ে বললেন, “আঘাত লাগলে কিভাবে?

“কিছু না!

“নিজের যত্ন নাও! আমি তোমার জন্য গার্ড পাঠালো তা রাখতে চাও না কেন?

“কোন দরকার নেই তার

“অ্যাকাউন্টে তোমার জন্য প্রতিমাসে টাকা পাঠানো সেটা জানো।

“কিন্তু আমি সেই টাকা ছুঁতে চাই না।

“কেন? একসময় আমার সব সম্পত্তির উত্তরাধিকারী তো তুমিই হবে!

“কিন্তু আমি তা অস্বীকার করি!

“ভার্সিটি থেকে তোমার নামে কমপ্লেন এসেছিল

“সেটা মিথ্যে প্রমাণ হয়!

“এমন কাজ করো যার জন্য আমার কাছে কমপ্লেন আসে।

“আমি কি করব না করব সেটা আপনি আমায় বলে দিবেন!

“শান্ত!

ধমকে খানিকটা চমকে উঠল শান্ত। কবীর চৌধুরী অস্থির হয়ে উঠেছেন। রায়ান আংকেল তার পাশে দাঁড়িয়ে শান্ত হতে বলে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত’র দিকে তাকালো কবীর চৌধুরী! অতঃপর নরম গলায় জিজ্ঞেস করে,

“এভাবে কেন কথা বলো আমার সাথে, আমার তোমার বাবা!

শান্ত চোয়াল শক্ত হলো। রাগে চোখজোড়া লাল হয়ে গেছে তার। কবীর চৌধুরীর চোখে চোখ রেখে বলে উঠে, “তুমি আমার বাবা নও!

কবীর চৌধুরী থমকে তাকিয়ে থাকেন। এই যেন তার সামনে সেই ছোট শান্ত, আজ থেকে ১২ বছর আগে তার সামনে যেভাবে অভিমানী স্বরে বলে উঠে, “তুমি আমার বাবা নও, নও তুমি আমার বাবা! অতঃপর সেই রাত্রিবেলা ছুটে বের হয়ে যায় বাড়ি থেকে। সেদিনও কবীর চৌধুরী থমকে ছিলেন। তার এই ছোট ছেলের কন্ঠে সেদিন শুধু অভিমান ছিল না সেই সাথে তার চোখে একরাশ ঘৃণা দেখতে পেয়েছিলেন। আজও তাই দেখছেন! শান্ত আর এক মুহূর্তও দাঁড়ালো না। রাগে তার ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মুখ ফিরিয়ে নিল সে। দাঁতে দাঁত চেপে চলে আসতে নিল সেখান থেকে। তখনই পেছন থেকে আবারো ধমকের সুরে কবীর চৌধুরী বলে উঠে, “শান্ত! আমার কথা এখনো শেষ হয় নি!

শান্ত স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। কবীর চৌধুরী ঘন ঘন শ্বাস নিচ্ছেন। রাগ সংগত করতে পারছেন না উনি। কিছু বলার প্রয়াস করতেই আহনাফ বলে উঠল, “আপনার বলার থাকলেই যে শান্ত’র তা শুনতে হবে এমনটা নয়!

কবীর চৌধুরী মুখ ফিরিয়ে তাকালেন আহনাফের দিকে। একটু অবাকও হলেন। আহনাফ হেঁটে এসে শান্ত’র পাশে দাঁড়িয়ে বলল, “সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত শান্ত”র ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া বন্ধ করুন!

অতঃপর শান্ত’র দিকে ফিরে বলে, “চল!

শান্ত নির্বিকারে হেঁটে চলে যায় আহনাফের সাথে। কবীর চৌধুরী তাদের চলে যাবার দৃশ্য দেখতে থাকেন স্থির চোখে। এর মধ্যেই প্রিন্সিপাল স্যার ছুটে আসেন কবীর চৌধুরী’র সাথে। তার সাথে কুশল বিনিময় করেই চলে যান তিনি। প্রিন্সিপালের শত অনুরোধও এক মুহুর্ত থাকেন না এখানে। তার দম যেন এখানে থাকলেই বন্ধ হয়ে যাবে!

নিঝুম, ইফা আর তিথি ক্লাসের উদ্দেশে সেখান দিয়ে যাবার মুহুর্তেই দেখতে পান কবীর চৌধুরী কে। রায়ান আংকেল কে দেখে নিঝুম শুধু অনুমানের উপর বলে উঠে, “অশান্ত’র বাবা!

ইফা তার কথা মাথা দোলায়। স্পষ্ট স্বরে বলে উঠে, “শান্ত ভাইয়ার সাথে তার বাবা’র সম্পর্ক ভালো না!

নিঝুম বলে উঠে, “তাই উনি একা থাকেন!

ইফা আবারো মাথা দুলাতেই ভ্রু কুঁচকে আসে তার। অতঃপর নিঝুমের দিকে ফিরে বলে, “কিন্তু তুই জানলি কি করে?

নিঝুম নির্বাক! মুখ ফসকে কি বলে ফেলল এটা সে। তিথি চোখ বাঁকিয়ে বলে, “নিঝুম! তুই এটা বলিস না গতরাতে তুই আর অশান্ত…

নিঝুম ঠোঁট কামড়ে মাথা দোলায়। দুজনেই হা হয়ে তাকিয়ে থাকে। তিথি বলে উঠে, “পুরো এক রাত, তোরা একসাথে ছিলি!

নিঝুম চোখ মুখ খিচে আবারো মাথা দোলায়। ইফা চোখ বাঁকিয়ে বলে, “সত্যি বলছিস তো তুই নিঝুম। আমার কিন্তু বিশ্বাস হচ্ছে না। শান্ত ভাইয়া তোকে রাখতে রাজী হলো কিভাবে!

নিঝুম ঢোক গিলল। সে ভেবে পেলো না ওদের কিভাবে বলবে শান্ত নেশা করে ছিলো। তার সাথেই বাকিটা রাত পার করলো সে। বিশ্বাস করবো তো ওরা! নাকি বলবে বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বলছে!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here