আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে #লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী (১৫)

0
245

#আমৃত্যু_ভালোবাসি_তোকে
#লেখনীতে_সালমা_চৌধুরী
(১৫)

তানভিরের রুম থেকে খেয়ে আবির চলে গেছে নিজের রুমে। ১ মিনিটের মধ্যে মেঘও বের হয়ে গেছে, কোনো দিক না তাকিয়ে চলে গেলো আবির ভাইয়ের রুমে। দরজার বাহির থেকে ধীর কন্ঠে ডাকলো,

“আবির ভাই..”

কোনো সারা নেই। দ্বিতীয় বার আর একটু জোরে ডাকলো,

“আবির ভাই..”

আবির বললো,

“ভেতর আয়”

আবির আধশোয়া অবস্থায় ফোনে কি যেনো করছে। ফ্যানের বাতাসে আবিরের চুলগুলো এলোমেলো উড়ছে। মেঘ আবির ভাইয়ের পায়ের কাছে দাঁড়িয়ে চুপচাপ চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের হাতের পানে।

আবির অকস্মাৎ বলে উঠলো,
“কিছু বলবি?”

মেঘ কন্ঠ খাদে নামিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

“Sorry আবির ভাই, এতটা লেগে যাবে বুঝতে পারি নি। ”

আবির স্বাভাবিক কন্ঠেই উত্তর দিলো,

“আমি কি কিছু বলেছি তোকে?”

মেঘ পুনরায় বলে উঠলো,
“বেশি ব্যথা লাগছে? মলম লাগিয়েছেন?”

আবির গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,

“না! কিছু লাগাতে হবে না।”

মেঘ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চেয়ে, শক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

“লাগাতে হবে !”

মেঘের শক্ত কন্ঠের কথা শুনে আবির মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে অষ্টাদশীর পানে তাকালো৷ মেঘের চোখে মুখে অধিকারবোধ স্পষ্ট প্রতীয়মান হচ্ছে।

আবির নিরুদ্বেগ কন্ঠে বললো,

“তাহলে তুই ই লাগিয়ে দে!”

এতক্ষণ শক্ত থাকলেও এই কথা শুনার পর মেঘ আর শক্ত থাকতে পারলো না। বুকের ভেতর অনুভূতিরা ঢোল বাজিয়ে নৃত্য করছে। হাতপায়ের কম্পন তীব্র হতে শুরু করেছে৷ আবির ভাইকে মলম লাগিয়ে দিবে এটা ভাবতেই বার বার শিউরে উঠছে অষ্টাদশী।

আবির পুনরায় শক্ত কন্ঠে বললো,

“হয় নিজে লাগিয়ে দিয়ে যা, না হয় চুপচাপ ঘুমাতে যাহ! আমি লাগাতে পারবো না। ”

আশপাশে তাকাচ্ছে মেঘ। চোখ পরলো ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা মলমের দিকে।মলম টা হাতে নিয়ে আবির ভাইয়ের কাছাকাছি বসলো৷ হৃদপিণ্ড ছুটছে এদিক সেদিক। আঙুল কাঁপছে অষ্টাদশীর। শীতল হস্তে, আলতোভাবে মলম ছুঁয়ালো আবির ভাইয়ের হাতের সেই কাটা অংশে। হালকা কাঁ*পলো আবিরের হাত।মেঘ পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।

আবির ভ্রু গুটিয়ে, শান্ত কন্ঠে বললো,

“ভাবিস না তোকে দিয়ে খাটাচ্ছি আমি!
যে ভুল করবে, শাস্তি তো তাকেই পেতে হবে!”

মেঘ মনে মনে ভাবছে,
“এরকম হাজার হাজার শা*স্তি পেতেও আমি রাজি!”

আবির অভিভূতের ন্যায় নিষ্পলক চেয়ে আছে মেঘের দিকে । আবির ভাইয়ের দৃষ্টি বুঝতে পেরে মেঘ চিবুক নামালো, কোনোদিকে না তাকিয়ে কোনোরকমে মলম লাগিয়ে, চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। যেনো আর কিছুক্ষণ আবির ভাইয়ের কাছাকাছি থাকলে, নিজেকে বাঁ*চাতে পারবে না।

আবির একবার হাতের দিকে দেখলো তারপর অষ্টাদশীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে মৃদু হাসলো।

★★★★

সকাল বিকাল মেঘের নজর শুধু আবির ভাইয়ের হাতের দিকে। কেটে গেলো কয়েকদিন। খান বাড়ির প্রতিটা মানুষ ব্যস্ত নিজের কাজে। ইকবাল খান সিলেট থেকে গতকাল রাতে ফিরেছেন। সেই খুশিতে সবাই জড়ো হয়েছে ড্রয়িং রুমে সাথে বাহারি খাবারের মেলা৷ সবাই আড্ডা আর খওয়ায় ব্যস্ত থাকলেও বরাবরের মতোই আবির ব্যস্ত ছিল নিজের কাজে। সামনের মাসের ১ তারিখ নিজের অফিস শুরু হবে, তাই সবকিছু গুছাতে হচ্ছে । সাথে আবিরের বেস্ট ফ্রেন্ড রাকিব আর রাসেল তো আছেই।

রাকিব আর আবির প্রাইমারি স্কুল থেকে বেস্ট ফ্রেন্ড তারপর তাদের জীবনে আসে রাসেল। বর্তমানে তারা ৩ জনের জীবন এক সুতোয় বাঁধা। তাই কোম্পানিও শুরু করছে একসাথে। এছাড়াও আরও ২ বন্ধু আছে আবিরের, মোবারক এবং লিমন৷ এই ৫ জন প্রতি শুক্রবার একসাথে আড্ডা দেয় মাঝে মাঝে তানভিরও যুক্ত হয় তাদের সাথে। তবে সব বন্ধুর মধ্যেও একজন স্পেশাল ফ্রেন্ড থাকে যে সবকিছু জানে, সেটা হলো রাকিব ভাই।

সবার মাঝে আবির নেই বলে ইকবাল খান কয়েকবার আবিরকে কল দিচ্ছেন কিন্তু আবির কল রিসিভ করছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই বাসায় ঢুকলো আবির।

পকেট থেকে ফোন বের করতে করতে বললো,
“সরি,কাকামনি! বাইকে ছিলাম তাই রিসিভ করতে পারি নি।”

ইকবাল খান একগাল হেসে বললেন,
“সমস্যা নাই, আয় বোস এসে। ”

আবির ভাই আসতেই মেঘ সোফা থেকে উঠে জায়গা দেয় আবির ভাইকে। আবির এসে মেঘের জায়গায় বসে স্বাভাবিক কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“কেমন আছো কাকামনি? কাজ ঠিকঠাক হয়েছে?”

ইকবাল খান হাসিমুখে উত্তর দিলেন,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। সব ঠিকঠাক করে আসছি। আশা করি ২ মাসের মধ্যে আর সিলেটের পা দিতে হবে না।”

ইকবাল খান পুনরায় মজার ছলেই বললেন,
“তোর কোম্পানি কবে ওপেন করবি?আমাদেরকে দাওয়াত দিবি না?”

আবির মলিন হেসে উত্তর দিলো,
“ইনশাআল্লাহ আগামী মাসের ১ তারিখ! তোমাদের সবার জন্য কার্ড রেডি করছি খুব শীঘ্রই পেয়ে যাবে!”

ইকবাল খান অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন,

“কার্ড? এত VIP আমি?”

আবির এবার স্ব শব্দে হাসতে হাসতে উত্তর দিলো,

“কার্ড ডা স্পেশালি আব্বু আর চাচ্চুর জন্য , তুমি একা মিস যাবে কেনো তাই তোমাকেও দিবো!”

তারপর তারা দুজন ব্যস্ত হলো অফিসের আলোচনায়। এদিকে মেঘ বিমোহিত নয়নে আবির ভাইকে দেখছে আর ভাবছে,

“একটা মানুষ এত সুন্দর করে কিভাবে কথা বলে?”

আলী আহমদ খান ও মোজাম্মেল খান হাজির হলো এই আড্ডায় । তাই মেঘ নিজের রুমে গিয়ে পড়তে বসেছে।

★★★★

শুক্রবার মানেই খান বাড়িতে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। প্রতি শুক্রবারের মতো আজও বাড়িতে বেশ পদের রান্না করা হচ্ছে। মেঘ ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে ঘন্টা দুয়েক পড়াশোনা করেছে। নিচে নেমে মীম আর আদির সাথে আড্ডাও দিতে দিতে নাস্তাও করে এসেছে। কিন্তু আবির আর তানভিরের খবর নেই।

তানভিরদের এমপি মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে তানভিরের ব্যস্ততা বেড়ে গেছে তিনগুন। তানভির ছোট থেকেই ভালো ছবি তুলতে পারে। রাজনীতি যেমন তার পছন্দ তেমনি ছবি তুলাও তার পছন্দের একটা কাজ। এমপি যেই না শুনেছে তানভির ভালো ছবি তুলতে পারে সেই থেকে দায়িত্ব দিয়ে দিয়েছে তানভিরের উপর। মনোনয়ন পাওয়ার পর একটা নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত এমপি কোনে জনসমাবেশ করতে পারবে না৷ তাই এমপির পক্ষ থেকে সভাপতি, সহ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সম্পাদক থেকে শুরু করে প্রত্যেকে মিলে নির্দিষ্ট জায়গায় জনসমাবেশের আয়োজন করে এবং এমপি বাড়ি থেকে ভিডিপ কনফারেন্সের মাধ্যমে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। এই টোটাল দায়িত্ব পরে গেছে তানভিরের উপর। সারাদিন শেষে বাকিদের থেকে ছবি সংগ্রহ৷ ইডিটিং৷ ভিডিও ক্রিয়েট সকল দায়িত্ব তানভিরের। সব কাজ শেষ করে ফিরতে ফিরতে রাত ১২-১ টা বেজে যায়। মাঝে মাঝে সময় পেলে একটু আগে চলে আসে। পুরোটায় এখন এমপির মতামতের উপর নির্ভর । ইদানীং আবির ৮-৯ টার মধ্যে বাড়িতে ফিরে আসে, সময় সুযোগ মিললে তানভির বাসায় এসে খেয়ে আবিরের বাইক নিয়ে আবার বের হয়। রাত করে ফেরার কারণ সকালে উঠতে একটু দেরি হয়ে যায়। আজ যেহেতু শুক্রবার তাই রিলাক্সে ঘুমাচ্ছে দুই ভাই।

কিন্তু এদিকে মেঘ ছটফট করছে। ১০ টার উপরে বেজে গেছে এখনও আবির ভাই কেনো উঠছে না তা ভেবেই কুল কিনারা পাচ্ছে না। আবির যে বৃহস্পতিবার রাতে ঘুমায় না তা তো অষ্টাদশী জানেই না। বৃহস্পতিবার রাত শুধু আবিরের শোকের রাত৷ ভোরবেলা নামাজ পরে ঘুমায়, উঠে ১২ টার দিকে। তারপর গোসল করে নামাজে যায়।

অষ্টাদশীর কোমল মনকে কোনোভাবেই মানাতে পারছে না। তাই এতকিছু না ভেবে ছুটে গেলো আবির ভাইকে ডাকতে৷ শান্ত হস্তে দরজা ধাক্কা দিলো, সহসা খুলে গেলো দরজা। জানালার পর্দা টানা, রুমে আলোর পরিমাণ সীমিত, ফ্যানের বাতাসে পর্দা উড়ছে এদিক সেদিক। মেঘ প্রথমেই বিছানার দিকে তাকায়৷ বার বার পর্দা সরে যাওয়ায় বাহির থেকে আসা সূর্যের আলো চোখে মুখে পরছে আবিরের।
মেঘ আপাদমস্তক দেখলো। আবির গভীর ঘুমে মগ্ন, উন্মুক্ত শরীর, পেট পর্যন্ত পাতলা কাঁথা দিয়ে ঢাকা। চোখ সরালো মেঘ, দৃষ্টি পরলো আবির ভাইয়ের তামাটে চেহারায়। কি অপরূপ সেই মুখমণ্ডল!

সবাই ফর্সা ছেলেদের পিছনে ছুটে আর মেঘ যেনো এই তা*মাটে চেহারা,গুরু-গম্ভীর, অনুভূতিহীন, হি*ট লার স্বভাবের লোকটার প্রতি মাত্রাতিরিক্ত দূর্বল হয়ে যাচ্ছে৷ মেঘের হৃদপিণ্ডের পিটপিট শব্দ যেন জানান দিচ্ছে,

“সামনে আগালে তোর মৃ*ত্যু নিশ্চিত! ”

তবুও মেঘ পা টিপে টিপে আগাচ্ছে আবির ভাইয়ের কাছে যেনো নুপুরের শব্দ না হয়। আবির ভাইয়ের কাছাকাছি গিয়ে থামে। আবির অবসন্ন চেহারাটা গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখছে মেঘ৷ ঘুমন্ত অবস্থাতেও আবির ভাইয়ের সৌন্দর্য যেনো একটুখানিও কমে নি বরং তা বেড়ে গেছে বহুগুণ । গাল ভর্তি ছাপ দাঁড়ি, সামনের দিকের লম্বা চুলগুলো ফ্যানের বাতাসে বারবার কপালে এসে পরছে। মেঘের মনে হচ্ছে, “আবির ভাইয়ের থেকে সুদর্শন পুরুষ দ্বিতীয়টি নেই। ”

মেঘের হৃদপিণ্ড ছুটছে দ্বিকবিদিক । নিশ্বাসের শব্দ জোড়ালো হলো।ফ্যানের নিচে দাঁড়িয়েও ঘামতে শুরু করেছে মেঘ। ভাবছে চলে যাবে, কিন্তু এই শোভিত পুরুষকে রেখে যেতে পারছে না। মেঘের ইচ্ছে করছে সারাজীবন এভাবেই আবির ভাইকে দেখতে।

মেঘ দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছে না। তাই আবির ভাইয়ের পাশে বিছানাতেই বসে পরেছে। আবির তখনও ঘুমের দেশে নিমজ্জিত। অষ্টাদশী অভিনিবিষ্টের ন্যায় চেয়ে আছে৷

সব বাঁধা পেরিয়ে, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেঘ আস্তে করে ডাকলো,

“আবির ভাই”

ঘুমন্ত আবিরের থেকে কোনো উত্তর আসে নি৷ মেঘের খুব ইচ্ছে করছে আবির ভাইকে ছুঁয়ে দিতে।

মেঘ আরেকটু এগিয়ে আবিরের কাছাকাছি বসলো। কাঁপা কাঁপা হাত ছুঁয়ালো আবির ভাইয়ের গাল ভর্তি ছোট ছোট দাঁড়িতে। সঙ্গে সঙ্গে শিউরে উঠলো সমস্ত শরীর। বোধশক্তি হওয়ার পর জীবনে প্রথমবার মেঘ নিজের ইচ্ছেতে কোনো পুরুষকে ছুঁয়েছে , যেই ছোঁয়ায় মিশে আছে ভালোবাসার, অন্যরকম অনুভূতি জাগিয়ে দিচ্ছে অষ্টাদশীর হৃদয়ে।

সহসা আবির ডান হাতে চেপে ধরলো নিজের গালে রাখা অষ্টাদশীর হাত।মেঘের হাত কাঁপছে, দুনিয়া ঘুরছে, বক্ষে উথাল- পাতাল ঢেউ। বরফের ন্যায় জমে যাচ্ছে সম্পূর্ণ শরীর৷

আবির ঘুমের মধ্যেই মেঘের আঙুলের ভাঁজে আঙুল ডোবায়। গাল থেকে তুলে নিজের হাতের মুঠোয় নেয়। আবিরের হাতের মধ্যে মেঘের আঙুলগুলো কাঁপছে দেখে আবির আর একটু শক্ত করে চেপে ধরলো।

মেঘের ভয়ে ভয়ে তাকিয়েছে আবির ভাইয়ের মুখের দিকে। আবির তখনও চোখ বন্ধ করেই শুয়ে আছে,

অকস্মাৎ আবির আধোঘুমন্ত কন্ঠে বলে উঠলো,
“আমি ছুঁয়ে দিলে সামলাতে পারবি তো মেঘ?”

মেঘ দুর্বোধ্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের মুখবিবরে আর ভাবছে,
“এখনও আধোঘুমে আছে মানুষটা, কিভাবে বুঝলো আমি এসেছি?”

আবির একহাতে কাঁথাটা পেট থেকে টেনে বুকে তুললো। আরেকহাতে তখনও মেঘের হাত চেপে ধরে আছে৷

আবি পুনরায় কন্ঠ ভারী করে বললো,

“এভাবে হুটহাট আমার রুমে আসবি না, যা তা হয়ে যাবে তখন আমায় কিছু বলতে পারবি না!”

সঙ্গে সঙ্গে শক্ত করে ঝাপটে ধরা হাতটাও ছেড়ে দেয়।
“মেঘ নির্বোধের মতো চেয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে। আবির ভাইয়ের কথাটা বুঝার চেষ্টা করছে কিন্তু মোটা মাথায় কিছুই ঢুকছে না। রুমে আসলে কি এমন হবে?”

আবির পুনরায় বললো,

“এভাবে চেয়ে থাকিস না, আমার শরম করে”

মেঘ সহসা চোখ গোল গোল করে তাকায়, কিন্তু আবির ভাইয়ের অভিব্যক্তি বুঝার ক্ষমতা তার এখনও হয় নি। মেঘ চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে গেছে।

★★★★

ঘন্টাখানেক পর আবির উঠে শাওয়ার নিয়ে কালো পাঞ্জাবি সাথে সাদা প্যান্ট পরে নামাজের উদ্দেশ্যে নামছে। ইকবাল খানও রেডি হয়ে বেরিয়েছেন রুম থেকে।

ইকবাল খান আবিরকে দেখে ডাকলো,

“কিরে নামাজে যাচ্ছিস?”

আবির ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
“হ্যাঁ, তুমি যাবে না?”

“হ্যাঁ যাবে তো, আদি আসছে ওকে নিয়ে যাই। দাঁড়া একটু! ” ইকবাল খান বললেন।

মেঘ সিঁড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে আবির ভাইকে দেখে ঠয় দাড়িয়ে পরে, সকালের ঘটনা মনে পরে যায় মেঘের। কালো পাঞ্জাবিতে মা*রাত্মক সুন্দর লাগছে আবির ভাইকে।

নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দিলো,
“কিছু সুন্দর জিনিস দূর থেকে দেখায় শ্রেয়, কাছে গেলে জ্ব*লসে যাবি!”

একপা একপা করে পিছন দিকে উঠছে। আবিরের দৃষ্টি পরে সিঁড়িতে থাকা অষ্টাদশীর দিকে। মেঘের কান্ডে আবির কপাল কুঁচকালো , তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চয়ে বুঝার চেষ্টা করলো।। আবির ভাইয়ের তাকানো দেখে মেঘ সহসা ছুটে রুমে চলে যায়।

আবির, আদি আর ইকবাল খানও নামাজের জন্য চলে গেছেন। তানভিরও রেডি হয়ে দ্রুত বেরিয়ে যায়। এই সুযোগে মেঘ খেতে আসে।

★★★★

৩ টায় মেঘের পরীক্ষা আছে টিউশনে। তাই রেডি হয়ে একেবারে বের হয়েছে রুম থেকে। পার্কিং এ গাড়ি আছে কিন্তু ড্রাইভার আংকেল নেই দেখে ফোন বের করলো কল দেয়ার জন্য। তখনি আবির আঙুলে চাবি ঘুরাতে ঘুরাতে বের হলো।

মেঘ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছে আবির ভাইয়ের দিকে।

আবির বাইকের দিকে যেতে যেতে বললো,
“আংকেল ছুটিতে আছে৷ কল দিয়ে লাভ নেই। ”

মেঘ নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না, রিক্সা দিয়ে চলে যাবে নাকি আবির ভাই নিয়ে যাবে কিছুই বুঝতে পারছে না।

আবির বাইক টেনে মেঘের সামনে এসে থামলো,
ছোট করে বললো,
“উঠ”

মেঘ লাজুক হেসে বাইকে উঠলো, আজ আর তাকে দ্বিতীয় বার বলতে হলো না, বাইকে বসেই আবির ভাইয়ের কাঁধে হাত রাখলো।

বাইক থামলো টিউশনের সামনে মেঘ নেমেই ভেতরে ঢুকে গেলো, আসার পথপ একটা কথাও বলে নি কেউ। কে ই বা বলবে, মেঘ তে সকালের ঘটনা নিয়েই এখনও আপসেট আর অন্যদিকে আবির তো স্ব ইচ্ছেতে কথায় বলে না।

মেঘ ভিতরে ঢুকে বন্যর পাশে বসলো। দুই বান্ধবীর ২-১ টা কথা বলতে বলতে আবির ঢুকলো ভিতরে। স্যারকে সালাম দিতেই স্যার তাকালো আবিরের দিকে,

কয়েক মুহুর্ত পর স্যার বলে উঠলেন,
“তুই আবির না?”

আবির হাসিমুখে উত্তর দিলো,
“জ্বী৷ কেমন আছেন স্যার?”

স্যার হাসিমুখে উত্তর দিলো,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তোকে কতবছর পর দেখলাম৷ দেশে আসলি কবে?”

“২০-২২ দিন হবে, বাসার সবাই কেমন আছে স্যার?”

“আলহামদুলিল্লাহ সবাই ভালো আছে। মেঘ ই তো তোর বোন? ”

“জ্বি স্যার, চাচাতো বোন!” আবির উত্তর দিলো।

স্যার হাসিমুখে বললেন,

“ও তো পড়াশোনায় খুব ভালো, মনোযোগী কিন্তু মাঝে মাঝে একটু ফাঁকি দেয়। তুই একটু নজর রাখিস। ”

“জ্বি স্যার, আমি আসি তাহলে । আসসালামু আলাইকুম স্যার।”

মেঘ আর বন্যা এতক্ষণ অবাক চোখে তাকিয়ে আবির ভাই আর স্যারের কথোপকথন শুনছিলো। এক বান্ধবী আরেক বান্ধবীর দিকে তাকাচ্ছে বার বার৷ এরমধ্যে স্যার পরীক্ষা শুরু করে দিয়েছেন।

১ ঘন্টা পরীক্ষা দিয়ে বের হলো দুই বান্ধবী। আবির ভাই রাস্তার পাশে বাইকে বসে ফোন চাপতেছিলেন। মেঘকে দেখেই বাইক থেকে নেমে দাঁড়ালেন। মেঘ বন্যার থেকে বিদায় নিয়ে আবির ভাইয়ের কাছে এসে প্রশ্ন করলো,

“আপনি যান নি?”

আবির সবসময়ের মতো গম্ভীর কন্ঠে উত্তর দিলো,
“না”

আবির পুনরায় স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,

“কিছু খাবি?”

মেঘ মাথা দিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো৷

আবির বললো,
“কি?”

মেঘ ভয়ে ভয়ে বললো,
“বকবেন না তো?”

আবির গুরুভার কন্ঠে বললো,

“কি খাবি বল”

মেঘ কন্ঠ খাদে নামিয়ে বললো,
“ফুচকা”

আবির সহসা বললো,
“উঠ ”

বাইক স্টার্ট দিলো থামালো এসে একটা ফুচকার দোকানের সামনে। মেঘ নেমে সাইডে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আবির বাইক থেকে নেমে হেলমেট খুলতেই, দূর থেকে রাকিব দৌড়ে এসে ঝাপটে ধরে আবিরকে।

আকস্মিক ঘটনায় কিছুটা নড়ে উঠে আবির৷

রাকিব ঠাট্টার স্বরে বললো,
“কিরে বন্ধু, এই জীবনে তো তোকে ফুচকার দেকানে দেখি নি৷ তা হঠাৎ এখানে কেনো? কেউ আসবে নাকি?”

আবির চোখে ইশারা দিতেই রাকিবের চোখ পরে মেঘের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে আবিরকে ছেড়ে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ায় ।

রাকিব হাসিমুখে জিজ্ঞেস করে,
“কেমন আছেন ভা… সরি আপু?”

মেঘ আবির ভাইয়ের দিকে তাকি স্বাভাবিক কন্ঠে উত্তর দিলো,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো,আপনি কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমি রাকিব। তোমার আবির ভাইয়ের ছোটবেলার বেস্ট ফ্রেন্ড। তুমি মেঘ তাই তো?”

মেঘ উত্তর দিলো,” জ্বি”

” ফুচকা খেতে এসেছো?” প্রশ্ন করলো রাকিব ভাইয়া।

মেঘ পুনরায় ছোট করে বললো,
“জ্বি।”

রাকিব এবার হাসিমুখে বললো,
“আজ আমার পক্ষ থেকে তোমার জন্য ফুচকা ট্রিট। আনলিমিটেড ফুচকা খেতে পারো!”

মেঘ কিছু বলার আগেই আবির রাগান্বিত কন্ঠে বললো,

“তোর ট্রিট দিতে হবে না। আনলিমিটেড ফুচকা খাওয়ানোর ক্ষ*মতা আমার আছে। ”

রাকিব স্ব শব্দে হেসে বললো,

“আরে বন্ধু রাগ করছিস কেন, তুই তো খাওয়াবিই সারা….”

এতটুকু বলতেই আবির রাকিবের মুখ চেপে ধরে। রা*গে ফুঁসতে ফুঁসতে বলে,

“নিজের কাজে যা৷ আমার টা আমাকে বুঝে নিতে দে!”

রাকিব কিছুটা আহত হলো৷ মেঘের থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময় আবিরের দিকে তাকিয়ে বললো,

“সন্ধ্যার পর চলে আসিস ”

আবির সহসা বলে উঠলো, ‘ঠিক আছে”।

চলবে………..
সবাই আমার গ্রুপে জয়েন করুন 👇👇
https://facebook.com/groups/1278469586175304/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here