ফ্লুজি #অনুপ্রভা_মেহেরিন [পর্ব ১১ ‘বাকি অংশ’ ]

0
234

#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১১ ‘বাকি অংশ’ ]

” ফ্লুজি ঘুমাও ভোর হতে চললো।”

“আরেকটু থাকুন আরশাদ।আমার ঘুম আসবে না আজ।”

আরশাদ চুপ করে রইল।রাত এগারোটার পর থেকে তাদের কথা শুরু হয়েছে আর এখন পাঁচটা বাজতে চললো।মেয়েটার যত এলোমেলো কথা আর‍শাদ মন দিয়ে শুনল।খুশবু কখনো প্রেম করেনি প্রেমিকের প্রতি একজন প্রেমিকার অনুভূতি কেমন সে তাও জানে না।রোহানের সাথে তার কথা হয়েছে খুব অল্প কিন্তু এই অল্প স্বল্প আলাপনে রোহানের কথাই ছিল সবচেয়ে বেশি।রোহান বলেছিল তার আগামী জীবনের পরিকল্পনার কথা,তার কি চায়,কি কিনবে,কি করবে এসব।নিজেকে নিয়ে খুশবু খুব বেশি কথা বলতে পারেনি।অথচ আরশাদের কাছে নিজেকে খুচরো পয়সার মতো জমাচ্ছে সে।

আরশাদ তার সবচেয়ে বড় শত্রু,অথচ আরশাদ এখন বন্ধু হলো কী করে?তবে কি খুশবুকে ভুলে গেছে সেই দিনের কথা,যখন হুমকির মুখে ফেলে তাকে বিয়ের জন্য বাধ্য করেছিল।

” আরশাদ আমার একটা কথা মনে এসেছে।”

” কী কথা জান?”

” কাল রোহানের জন্মদিন।”

আরশাদ চুপসে গেল।খুশবুর এই দিনটার কথা মনে রাখা কী খুব জরুরি ছিল?আরশাদের নিরবতা ফসফস শ্বাসের শব্দ বেশ ভালোভাবে বুঝতে পারলো খুশবু। দ্রুত সে কথা পালটে বলে,

” আমি…আমি বলতে চাইছি আসলে..”

” আসলে কী?”

” রোহান আমার কাছে একটা জিনিস চেয়েছিল।আমার কাছে সে একটি দামি ঘড়ি চেয়েছিল বাথডে হিসেবে তাই আরকি।”

” খুঁজে খুঁজে গিফট আদায়!ইন্টারেস্টিং।তা তুমি কি গিফট দিতে চাও?”

” সে আজ আমাকে যেসব কথা শুনিয়েছে এর পরেও..”

” আমার কথা শোনো তুমি গিফট দিতে যাবে এবং তার সাথে সুন্দর ভাবে কথা বলবে।”

” মাথা ঠিক আছে আপনার?”

” একদম ঠিক।এখন কোন কথা নয় ঘুমিয়ে পড়।”
.

অনিমার চেচামেচিতে ঘুম ভাঙলো খুশবুর।মেয়েটা ঘুমিয়েছে বেশিক্ষণ হলো না এর মাঝে এমন চেচামেচির টর্চার মানা যায় না।মুখ থেকে কাঁথা সরিয়ে পিটপিট চোখে তাকালো সে,

” আম্মু কি হয়েছে?”

” জামাইকে তুই কি বলেছিস?”

” আমি উনাকে কি বললাম!কই কিছু বলিনি।”

” এই ছেলে একশটা গোলাপ গাছ পাঠিয়েছে তোর জন্য। দুটো ভ্যান নিয়ে লোক দাঁড়িয়ে আছে গেটের বাইরে।”

খুশবু লাফিয়ে উঠলো।কই সে তো কিছু বলেনি।এত গোলাপ গাছ পাঠানোর মানে কী?

” আম্মু আমি উনাকে কিছু বলিনি।”

” তোর বাপের বাগানে কি গোলাপ গাছ নেই?এত গাছ দিয়ে এখন তুই নৃত্য কর।আমার হয়েছে যত জ্বালা।”

খুশবু নিজেই পড়লো দোটানায়।দ্রুত হাতে ফোন তুলতে দেখতে পেল আরশাদের মেসেজ,
‘ হ্যাপি রোজ ডে মাই রোজ।একশটা ফুল দিয়ে সেই ফুল পঁচিয়ে কি লাভ?আমি না হয় একশটা গাছ পাঠিয়ে দিলাম।সারা বছর গাছ থেকে ফুল ফুটবে তুমি দু’চোখ ভরে দেখবে এতেই আমার শান্তি।”

রোজ ডে!কিসের ডে ফে কি বলছে আরশাদ।জীবনে এসব ডে পালন করেনি খুশবু।তার সিঙ্গেল জীবনে এসব দিন পালন করা বিলাসীতা ছাড়া আর কিছুই নয়।আড়মোড়া কাটিয়ে উঠে বসে খুশবু।ঘড়িতে বাজে সবে দশটা।ভ্যানের লোকদের বাড়িতে ডুকতে দেয় কাজের ছেলেটা।ভ্যান থেকে একে একে নামানো হলো একশটা গোলাপ গাছে।না শুধু লাল হয় নানান রঙের গোলাপে সেজেছে আজ খুশবুদের উঠন।

অনিমা কাজের ছেলেটাকে আদেশ করলেন সব গাছ যেন বাগানে লাগানো হয়।ছেলেটা আগ্রহ নিয়ে চললো গাছ লাগাতে।সব গাছের মাঝে টকটকে লাল গোলাপটা ছিড়ে নিজের এলো কেশ সরিয়ে কানে গুজলো খুশবু।মেয়েটার মনে আজ প্রজাপতিরা উড়ো উড়ো করছে।
.
লাঞ্চের সময়টা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে এসেছে রোহান।খুশবু আজ তাকে ডেকে পাঠিয়েছে।এমন দিন যে তার কপালে আসবে স্বপ্নেও ভাবেনি ছেলেটা।একটি রেস্টুরেন্টে দুজন বসে আছে মুখোমুখি।খুশবু পিৎজার স্লাইসে কামড় বসিয়ে দূর থেকে আড়চোখে তাকালো আরশাদের পানে।আরশাদ রোহানের পেছনের টেবিলে বসে।ছেলেটা জহুরি চোখে পরখ করছে খুশবুকে সে চায় না রোহান খুশবুর সাথে পালটা কোন প্রতিক্রিয়া করুক।

” এই দুপুরে পিৎজা!অন্যকিছু অর্ডার করি।”

” না না আমি ঠিক আছি।পিৎজাতেই আমার হবে।”

” হঠাৎ ডাকলে কেন?গত কালের জন্য আমি সরি আসলে মাথা ঠিক ছিল না।”

” চোরের মায়ের বড় গলা কথাটা শুনেছিলেন কখনো?”

” মানে?”

” না মানে আপনি প্রেম করলেন আপনার জন্য এতসব অথচ আপনি দোষটা দিলেন আমার।ব্যপারটা হাস্যকর না?”

” সরি রাগের মাথায়…”

” রাগের মাথা তাতে কী বিবেক বুদ্ধি কি বিসর্জন দিয়েছিলেন নাকি?”

রোহান চুপসে গেল খুশবুর কথা সে কোন গায়ে মাখলো না।

” তোমার হাজবেন্ড কোথায়?আমার সাথে দেখলে রেগে যাবে না?”

” সে তো আর জানবে না আপনি আমি একসাথে।নিন আপনার জন্মদিন উপলক্ষে আপনার গিফট।”

রোহান হতভম্ব চাহনিতে তাকালো খুশবুর পানে।ঘড়ির বক্সটা এগিয়ে নিয়ে বলে,

” সিরিয়াসলি?”

” জি।পছন্দ হয়েছে?

রোহান দ্রুত হাতে বক্স খুললো।ঘড়িটি হাতে পেয়ে উচ্ছ্বাসিত সে।খুশবু অবাক হলো যে মেয়ের সাথে এই ছেলের সম্পর্ক ছিন্ন সেই মেয়ের কাছ থেকে এতটা সহজে কি করে গিফট গ্রহন করছে সে?আরশাদ ঠিকি বলেছে এই ছেলে বেহাইয়া।

রোহান ঝটপট ঘড়িটা হাতে পড়ে নিল।তার হাসি হাসি মুখ দেখে গা পিত্তি জ্বলে উঠলো খুশবুর।

” গতকালের জন্য আমি সরি আসলে..”

ওয়েটার এগিয়ে এলো।খুশবুর অর্ডারকৃত পুদিনা লেমন জুসটি দিয়ে হাসি মুখে প্রস্থান করলেন তিনি।রোহান দ্রুত হাতে জুসটি মুখে তুলে কুচকে ফেললো মুখ,

” এমন কেন?”

” পছন্দ হয়নি?এই রেস্টুরেন্টে এটা আমার ফেভারিট।প্লিজ আপনি পুরোটা খান,না খেলে আমার কষ্ট লাগবে।”

রোহান হাসি মুখে পুরোটা জুস সাবাড় করলো।মুহূর্তে ছেলেটার মুখে যেন বিষ্ফোরিত হলো।মুখ চুলকে খুশবুর পানে তাকালো সে,

” আমার মুখ চুলকাচ্ছে কেন?”

” আমি কী জানি?”

” সিরিয়াসলি প্রচন্ড চুলকাচ্ছে।”

রোহান অস্থির হলো।সামনে থাকা পানির বোতল ঠেসে ধরলো মুখে।ঠোঁট চুলকাতে চুলকাতে লাল হয়ে গেল তার সারা মুখ।খুশবু দাঁড়ালো টেবিলে ভর দিয়ে ঝুকলো রোহানের মুখোমুখি।

” গতকাল যা যা বলেছেন আমি কতটা আঘাত পেয়েছি আপনি জানেন?মানুষের জিহ্বা একটা ধারালো তরবারির সমান।শুধু একটা বাক্যে অপর মানুষের চিন্তা চেতনা ফালা-ফালা করে দিতে পারে।কুকুরের মতো ঘেউ ঘেউ গতকাল করেছেন আজ না হয় বোবা প্রাণি হয়ে থাকুন।ওটা পুদিনা পাতা ছিল না বিছুটি পাতা ছিল।আর রেস্টুরেন্টের নামে কেস মামলা থেকে বিরত থাকবেন না হলে ফলাফল খুব খারাপ হবে।”

খুশবু মুখ ভরতি থুথু ছুড়ে ফেললো রোহানের মুখে।গতকালের রাগ জেদ সবটাই তার এক নিমিষে গায়েব হলো।আরশাদ পেছন থেকে হাত তালি দিয়ে এগিয়ে এলো।খুশবুকে বাম হাতের সাহায্যে জড়িয়ে আগলে ধরে বুকে,

” ওয়েল ডান জান।”

শুরু থেকে শেষ সবটাই ছিল আরশাদের পরিকল্পনা খুশবু শুধু আদেশ মোতাবেক কাজ করে গেছে।
.
শান্ত স্নিগ্ধ দু’চোখের আদলে বারংবার হারিয়ে যাওয়ার কোন কারণ খুঁজে পায়না আরশাদ।যতটা দিন যাচ্ছে খুশবুর সান্নিধ্যে তার ধৈর্য ক্ষমতা কমে আসছে।কবে জানি ধৈর্য হারিয়ে কোন এক অঘটন ঘটিয়ে বসে সে নিজেও জানে না।আরশাদের বাদামী মনিজোড়া ঘোর লেগে আছে।পাশে বসে থাকা সুন্দরী রমনীর শরীর থেকে আসা মিষ্টি ঘ্রাণ তার নাকে সুড়সুড়ি দিচ্ছে।আরশাদ জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভেজালো বাম হাতের সাহায্যে এলোমেলো করলো বাদামি চুল।গ্র‍্যানির সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছে গ্র‍্যানি এর মাঝে বাচ্চার কথাও বলে ফেলেছে অথচ এমন এক হিটলার শ্বশুর যে দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছে সে কথা কি করে বোঝাবে আরশাদ।

বউ যদি প্রেমিকার মতো দূরে দূরে ঘুরে তাহলে বাচ্চা তো দূরের কথা আরশাদের এই জন্মে আর দেহের ক্ষুদা মিটবে না।গত রাতে ঘুমায়নি খুশবু আরশাদের সাথে বকবক করার মাঝে গাড়িতে ঘুমিয়েছে সে।এখন সময় রাত আটটা।বাহারুল হক দুই বার ফোন করে আরশাদকে ধমক দিয়েছেন কিন্তু আরশাদ খুশবুর ঘুম ভাঙায়নি।বউটা কাছে ঘুমিয়ে আছে ঘুমাক,সে চায় না জ্বালাতন করতে।
আরশাদের বাহুতে ঝুকে ঘুমিয়ে আছে খুশবু।আরশাদের ভ্রম হয়েছে, সব এলোমেলো ঠেকছে তার কাছে।আর কিছুক্ষণ যদি তার ফ্লুজি তার কাছে থাকে তবে আজ কিছু একটা ভুল হবেই।

এই ভুল হয়তো হওয়ারি ছিল নড়ে চড়ে আরশাদের সহিত আরো গভীরে লেপটে গেল খুশবু।ছেলেটা নিজের ধৈর্যের প্রশংসা জানিয়ে বিদায় জানালো ধৈর্যকে।ঝটকায় কোলে তুলে নিল খুশবুকে।অন্ধকার গাড়িতে আচমকা চোখ খুলে দিশাহীন মেয়েটা।

” আরশাদ আমি কোথায়।”

” আমার কাছে ফ্লুজি।

আরশাদের দেহের সাথে চেপে আছে খুশবু।নিজের অস্ত্বিত্ব বুঝতে পেরে লজ্জায় পড়লো সে।

” আপনার খালি দুষ্টুমি।আমাকে উষ্কে দিয়ে আপনি ভেগে যান।”

” তোমার বাবাকে বলো তোমাকে আমার কাছে পাঠাতে তাহলে তো আর সমস্যা নেই।”

” তখন তো অনেক সমস্যা।”

” কী সমস্যা?”

” না বলবো না।আমাকে ছাড়ুন আরশাদ আজ আর আপনার কোন কথায় আমি সাড়া দেব না।”

” সত্যি?”

” সত্যি।”

” আমিও দেখবো ফ্লুজি।”

আরশাদ শ্লেষ হাসলো খুশবুর গলায় আঙুল ছোঁয়াতে ছিটকে দূরে সরতে চাইলো সে।আরশাদ কি করে বুঝলো তাকে সিডিউস করার মতো সহজ মাধ্যম গলা।খুশবু নিজেকে ছাড়াতে চাইলে আরশাদ বাঁকা হাসে।উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়ায় ছুঁইয়ে দিতে থাকে মেয়েটার গলদেশ।আরশাদের প্রতিটি ছোঁয়ায় নিজের জেদের কাছে সহজে হেরে গেল খুশবু।আরশাদের চুল খামছে জানান দিল তার চাওয়া।তৎক্ষনাৎ বেজে উঠলো আরশাদের ফোন।বাহারুল হক ফোন করেছেন।খুশবু রেগে গেল অসহায় চোখে তাকালো আরশাদের পানে।তার মনের কামনা বাসনা প্রতিবার এভাবে বিফলে যায়!আরশাদ তাকে উষ্কে দিয়ে কি মজা পায়?খুশবুর রাগান্বিত চাহনিতে ঠোঁট উল্টে আরশাদ বলে,

” সরি জান আমার কী দোষ?”
চলবে___

আজ ভাবছি গল্প দিব না।পেইজে তেমন কোন রিয়েক্ট নেই।গল্প পড়ে চলে যান।আপনাদের সাড়া না পেলে আমি গল্প কেন দিব?অথচ সেসব পেইজ গল্পটা কপি করে দিচ্ছে সেসব পেইজে রিয়েক্ট কমেন্ট আমার পেইজের থেকেও বেশি।এমন চলতে থাকলে আমি গল্প দিব না গল্প দেওয়ার মতো আমার কোন ইচ্ছাও রইবে না।🙃

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here