#ফ্লুজি
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৩]
বন পালং ফুলটি ছিড়ে হাতে তুলে নিল আরশাদ।ফুলটার সৌন্দর্য অবলকন করে দু’ঠোঁটের সাহায্যে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দিল উদ্দেশ্যহীন।আরশাদের ফুঁ’তে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সকল পাপড়ি উড়ে ছিন্নভিন্ন।ডেইজি ফুল গুলো তার দিকে তাকিয়ে যেন হাসছে।আরশাদ একটি ডেইজি হাতে তুলে ভাবলো ফ্লুজির কথা।তার ভিলার ব্যাক ইয়ার্ডে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে একটি আপেল গাছ।এত এত আপেল গাছে ধরেছে যে এত আপেল কে বা খাবে?অধিকাংশ আপেল গাছের পদতলে পড়ে নষ্ট হয়ে আছে।নিজ হাতে আরশাদ সবটা পরিষ্কার করলো।হালকা গরমেও সে কেমন ঘেমে একাকার।
” ফ্রাটেলো আরশাদ।”
হাতের কু ড়া ল রেখে ঘুরে তাকালো আরশাদ।তার দিকে ছুটে আসছে একমাত্র ফুফাতো বোন এলিনা।মুহূর্তে তার ঠোঁট জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে চমৎকার হাসি।এলিনা ছুটে এসে জড়িয়ে ধরে আরশাদকে।ইতালিয়ান ভাষায় চলতে থাকে দুজনের বাক্যালাপ।
” কেমন আছো এলিনা?”
” অনেক অনেক ভালো।দিন দিন তুমি হ্যান্ডসাম হয়ে যাচ্ছ ভাইয়া।”
” সিরিয়াসলি?”
” ইয়াহ।”
এলিনা আরশাদকে ছেড়ে আপেল গাছটার কাছে গেল একটি আপেল ছিড়ে কামড় বসাতে বাঁধা দিল আরশাদ।
” না ধুয়ে খাওয়া ঠিক নয় এলিনা।”
” ভাইয়া তোমার গাছটা অনেক সুন্দর ভাবে বেড়েছে।”
” ফুফু এসেছে?”
” হ্যাঁ তোমার জন্য অপেক্ষা করছে চলো তুমি।”
এলিনার হাত ধরে ভিলার দিলে এগিয়ে গেল আরশাদ।
আরশাদের দাদা দাদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেও আরশাদের ফুফু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেননি।তিনি তার খ্রিস্টান ধর্মতে ছিলেন এবং আছেন।সেই সূত্রে এলিনা খ্রিস্টান ধর্মের মেয়ে।
আরশাদের হাত ধরে ঘরে ফিরলো এলিনা।আফরোজা তখন রান্নার কাজে ব্যস্ত।সেই ব্যস্ততাকে সঙ্গ দিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন আরশাদের ফুফু ‘গ্লোরিয়া’র সহিত।
আরিব ফোন চালাতে চালাতে বাইরে আসছিল তখনি অনুভব করে তার নাকে এসে সুড়সুড়ি দিচ্ছে মিষ্টি ঘ্রাণ।চকিতে তাকাতে আচমকা তাকে জড়িয়ে ধরলো এলিনা।মেয়েটার নরম হাতের ছোঁয়ায় আরিবের গলা ধরে ঝুলে আছে।এলিনার প্রতি তার অন্যরকম টান এই টান সামলাতে হিমশিমে পড়তে হয় ছেলেটাকে।অথচ এলিনার মেদহীন নরম শরীরটা তাকে আষ্টেপৃষ্টে জটিল সমীকরণে ফেলছে।আরিব বিভোর হলো দুহাতের শক্ত বন্ধনীতে জড়িয়ে ধরতে চেয়েও পারলো না।আরশাদ দাঁড়িয়ে, ভাইয়ের সামনে নিশ্চয়ই এই ভুল করা যাবে না।
” আরিব ভাইয়া কেমন আছো?”
” আ’ম গুড সুইটি।কোথায় ছিলে এতক্ষণ?”
” আরশাদ ভাইয়ার সাথে ব্যাক ইয়ার্ডে।”
” ওর ভুতুড়ে ভিলায় গেলে নাকি?যেও না কিন্তু।”
” ভাবি এলে সেই ভুতুড়ে ভিলায় পরির দেখা মিলবে।আমরা সেই পরির অপেক্ষায়।”
এলিনার কথায় দুই ভাই কিঞ্চিৎ হাসলো।তাদের হইহুল্লোড়ে এগিয়ে এলো আরশাদের ফুফু গ্লোরিয়া।আরিব এবং আরশাদকে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেলেন তিনি।
” বউকে ছাড়া দেশে এলে কেন?”
“আমার আরেক বউ যে হসপিটালে।”
” সেটা বুড়ো হয়ে গেছে,তাকে বাদ দিয়ে দাও।”
” মায়া ফুফু মায়া।মায়া বড় ভয়ানক জিনিস।”
” বিদেশি বউ কি দেশি বউকে মানবে?দুই সতীন কিন্তু হেব্বি জমবে।”
ঘর জুড়ে হাসির রোল পড়লো।বহুদিন পর হাসলো সকলে।গ্র্যানির সুস্থতার খুশিতে সবার মাঝে বিরাজ করছে স্বস্তি আনন্দ উল্লাস।
.
আরশাদ ঘুম থেকে উঠার পর থেকে অনেকবার বার ফ্লুজিকে কল, ম্যাজেস করেছে কিন্তু মেয়েটা অনলাইনে আসেনি।আরশাদ ভেবেছে ও হয় ঘুমে তাই আর বিরক্ত করেনি।ইতালির ঘড়িতে সময় এখন সময় দুপুর একটা তাহলে বাংলাদেশ সময় বিকেল পাঁচটা আরশাদ ফ্লুজিকে না পেয়ে অনিমাকে ফোন করলো।একের পর এক বারোটি মিসকল্ড দেওয়া শেষ তাও অনিমা ফোন তুলেনি।সাহস নিয়ে বাহারুল হক’কে ফোন করলো আরশাদ।বাহারুল হক কিছুক্ষণ পরে ফোন তুললেন,
” আসসালামু আলাইকুম বাবা, আরশাদ বলছিলাম।”
” কে তোমার বাবা?”
” কেন আপনি।শ্বশুর বাবা।কেমন আছেন বাবা?”
” খবরদার বাবা ডাকবে না।”
” রেগে আছেন মনে হচ্ছে।মা ভালো আছে?আর খুশবু কেমন আছে।”
বাহারুল হক তাচ্ছিল্য হাসলেন।এই তো সুযোগ আরশাদকে বকে দেওয়ার।তিনিও আজ সুযোগ ছাড়লেন না মন মতো রাগ জেদ সবটা উজাড় করে দিতে প্রস্তুত হলেন।
” আমার মেয়েকে কী পেয়েছো তুমি?মানলাম তোমার বিপদে তুমি চলে গেছ।আমার মেয়েটা কতটা নাজুক সেকথা আমি জানি।সকাল থেকে তার জ্বরে গা পুড়ছে।তুমি একবারো খোঁজ নিয়েছো?জ্বর কমার কোন অবস্থা নেই।ডাক্তারের কাছে এনেছি খোঁজ নেওয়ার হলে নেবে না হলে ছেড়ে দাও আমার মেয়েকে।”
আরশাদ হতবাক,হতভম্ব।এমনটা যে হবে সে তো ভাবেনি।
” খুশবুকে দিন আমি কথা বলতে চাই তার সাথে।”
” কোন দরকার নেই।বাসায় গিয়ে কথা বলবে এখন রাখছি।”
আরশাদের হাঁসফাঁস বাড়লো।এক ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে হলো বাংলাদেশে।দু’হাতের সাহায্যে মাথার চুল খামছে টেবিলে সাজানো কাচের ফুলদানিটা মেঝেতে ছুড়ে ফেললো।আরশাদের ভিলায় আরিব নিচ তলায় এসে সবে দাঁড়িয়েছিল।কাচ ভাঙার শব্দে চমকে গেল সে।দেরি না করে দ্রুত দোতলায় উঠে আরশাদের হাঁসফাঁস অবস্থা দেখে ভীষণ ভয় পেল ছেলেটা।
” ব্রো কি হয়েছে?”
” সর সামনে থেকে সর।”
” প্লিজ এমন করছো কেন কি হয়েছে?”
” ব্লাডি বিচ সর।”
কফি মগটা আরশাদ ছুড়ে ফেললো আরিবের পায়ের কাছে।ভাগ্যিস ছেলেটা ছিড়কে দূরে সরেছিল।আরিব ভীষণ অবাক হলো ভাইয়ের এমন আচরণে।ফ্লুজি চলে যাওয়া নিয়ে আরশাদের জঘন্যতম আচরণের সাক্ষি হয়েছিল আরিব।তবে কি আবার শুরু হতে চলেছে?কিন্তু কেন?ফ্লুজি তো এখন তার স্ত্রী।দুরত্ব চাইলেও সহজে মুক্তি নেই।থরথর করে কাঁপতে থাকে আরশাদ আরিব দ্রুত আরশাদকে জড়িয়ে ধরে।
” ব্রো কি হয়েছে আমায় বলো।”
” আমি কি করেছি?আমার কি দোষ?”
” আরে কি হয়েছে বলবে তো।”
” ফ্লুজি অসুস্থ আরিব।আঙ্কেল…আঙ্কেল আমার সাথে ধমক সুরে কথা বলেছেন।উনার প্রতিটা কথায় এটাই বুঝায় ফ্লুজির অসুস্থার জন্য আমি দায়ী।”
” তাই বলে তুমি এমন করবে?ডাক্তার তোমাকে কি বলেছে ভুলে গেছো?সহজে হাইপার হওয়া যাবে না।প্লিজ ক্লাম ডাউন।”
” আমি ফ্লুজির সাথে কথা বলবো।এক্ষুনি মানে এক্ষুনি।ব্যবস্থা কর আরিব যেভাবে পারিস ব্যবস্থা কর।”
” আমি দেখছি তুমি শান্ত হও।”
.
ডাক্তার দেখানো শেষে বাসায় ফিরলো খুশবু।জ্বরের দাপটে দু’চোখে যে ঝাপসা দেখছে সে।কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন চেক করে আরশাদের ম্যাসেজ দেখে এক চিলতে হাসি ফুটে ঠোঁটের কোনে।অনিমা বুঝতে পারেন মেয়ে কি চায় তাই তো তিনি খুশবুকে রেখে চলে যান অন্য রুমে।সেই সুযোগে আরশাদকে ভিডিও কল করে খুশবু।
” ফ্লুজি ঠিক আছো?”
আরশাদের এলোমেলো বিধস্ত অবস্থা দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয় সে।
” আপনাকে এমন লাগছে কেন?”
” তুমি খাওনি ঘুমাওনি অনিয়মে জ্বর বেঁধেছে তাই না?”
” না।”
” জিহ্বা টেনে ছি ড়ে ফেলবো।আমার সাথে কোন মিথ্যা কথা নয় বলো কি করেছিলে গতকাল।”
আরশাদের কথায় নমনীয়তা নেই আছে অধিকারবোধ জেদ।খুশবু ভয় পেল ঢোক গিলে চুপচাপ তাকিয়ে রইল আরশাদের পানে।
” রনিকে পাঠাব?পরিস্থিতি কিন্তু পালটে যাবে ফ্লুজি।”
রনি!সেই ছেলের নাম যে ছেলের মাধ্যমে আরশাদ খুশবুকে খুঁজে পেয়েছে।যে ছেলে আরশাদের ফোনে ম্যাসেজ দিয়েছিল বলে খুশবু সেদিন জেনেছিল তার বাবার অসুস্থতার কথা।আরশাদ নিজেই বলেছে রনি মোটেও ভালো ছেলে নয়।
” রনির হুমকি কেন দিচ্ছেন আরশাদ?”
” তা তো রনি গেলেই বুঝতে পারবে।পাঠাবো?নাকি তুমি বলবে।”
” আব্বু গতকাল থেকে এত এত কথা শুনিয়েছে যে আমার ধৈর্য কুলায়নি।সন্ধ্যা থেকে ওয়াশরুমে ভিজেছি,খাইনি ঘুমাইনি সব মিলিয়ে…”
” সাহস দেখে অবাক হই।সামনে থাকলে আবার গোসল করাতাম বে য়া দ ব মেয়ে।”
” গ্র্যানি কেমন আছে?”
” ভালো।সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আগামী সাপ্তাহে আবার ফিরবো।কিন্তু আমি ফিরছি না।আমি কি বলেছিলাম নিজের যত্ন নেবে।তুমি নাওনি নিজের যত্ন।তুমি আমার দেওয়া কথা রাখনি তাহলে আমি কেন কথা রাখবো?”
খুশবু আচমকা রেগে গেল।পালটা রাগ নিয়ে সে বলে,
“আসতে হবে না আপনাকে।আমি বলেছি আপনি আসুন?আপনি ছাড়াও আমার চলবে।শুধু চলবে না দৌড়াবে অন্তত এবার ফ্রিডম লাইফে ফিরছি।”
” সাহস তো তোমার কম না।”
খুশবু ফোন কেটে দিল।হাতের ফোনটি ছুড়ে ফেললে দূরে।এসব মানসিক যন্ত্রণা আর নেওয়া যাচ্ছে না।জীবনে শান্তি চাই শুধুই শান্তি।
অপরদিকে আরিব ভাই ভাবির ঝগড়া সবটাই পরখ করলো।তবে ছেলেটা কোন প্রতিক্রিয়া দেখালো না।ল্যাপটপ কোলে নিয়ে অনলাইনে প্লেনের টিকেট দেখছিল সে।আরশাদের কথা মতো আগামী সাপ্তাহে বাংলাদেশে যাওয়ার কথা।হঠাৎ আরশাদের মত পালটে গেল আরিবের উদ্দেশ্যে বলে,
” আরিব টিকেট দেখতে হবে না ক্যান্সেল কর।যাব না বাংলাদেশে।
চলবে…..
ঝামেলা লাগাই দিলাম 😒🔪জাতি কি এখন আমাকে মেনে নিবে?
আসসালামু আলাইকুম পাঠক।গল্পের ছোট্ট গ্রুপে আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রণ..
🔺গ্রুপ লিংক-https://facebook.com/groups/764407025608497/
🔺আইডির লিংক-https://www.facebook.com/profile.php?id=61555546431041